ফ্যান্টম -এর জন্ম (The Birth of Phantom)
Image link : link || Copyright & Royalty Free || Original Creator : DeviantArt
1924 সাল । আমেরিকার মিসৌরির তখনকার একটি ছোট্ট শহর সেন্ট লুইস । বিখ্যাত মিসিসিপি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরটি আজকে বৃহৎ একটি আধুনিক শহর । কিন্তু, ১৯২৪ সালে এ রকম ছিল না । এই ছোট্ট শহরটির বুকে রাজ করতো অন্ধকার আর ত্রাসের রাজত্ব । ছোট্ট লিওন বাড়ি ফিরছে বন্ধুদের সাথে । বিকেলের আলো ফুরিয়ে এসেছে । সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো । এমন সময় ছোট্ট লিওন যার ডাক নাম লী একটা ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হলো ।
চোখের সামনে দেখলো এক জন বৃদ্ধের সর্বস্ব লুঠ করে তাঁকে মারাত্মক ভাবে আহত করলো দুর্বৃত্তরা । সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসলেও রাস্তায় লোক জন যথেষ্ঠ ছিলো । কিন্তু, সবাই প্রস্তরবৎ দাঁড়িয়ে থাকলো । কেউ এগিযে এলো না প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে । দুর্বৃত্তরা মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধ লোকটিকে আহত করে চলে যাওয়ার পরেও কেউ এগিয়ে এলো না তাঁকে সাহায্য করতে ।
মানবতার এই করুণ লজ্জাজনক পরাজয় প্রত্যক্ষ করলো সেই কিশোর ছেলেটি । বিস্ময়ে, দুঃখে, শোকে সে কাতর হয়ে পড়লো । বন্ধুদের সাথে কোনোরকমে বাড়ি ফিরেই সেই রাতে তার জ্বর এলো ।পরের দিন সকালে খবর কাগজে বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলো । আহত অবস্থায় সমস্ত রাত খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোয় প্রবল ঠান্ডা ও রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধের ।
প্রবলভাবে কিশোর মনকে আলোড়িত করলো এই ঘটনাটি । মনের ভিতর জন্ম নিতে থাকলো এক সুপার হিরো-র । অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা জীবন সংগ্রাম আর অসহায়-দুর্বলদের কাছে পরিত্রাতা সেই সুপার হিরো । না তার কাছে কোনো অলৌকিক শক্তি নেই সুপারম্যান, স্পাইডার ম্যান এর মতো, নেই কোনো আধুনিক টেকনোলজি ব্যাটম্যানের মতো । আছে শুধু প্রবল দৈহিক শক্তি, তীক্ষ্ণধার বুদ্ধি, মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসা আর বদমায়েশদের জন্য তীব্র আঘাত ।
মাত্র তেরো বছর বয়সে যে সুপার হিরো এর জন্ম হয়েছিল লী-র কিশোর মনে সেই সুপার হিরো অবশেষে মানুষের সম্মুখে এলো ফেব্রুয়ারীর ১৭ তারিখ, ১৯৩৬ সালে । ঠিক ১২ বছর পরে ওই ঘটনার । জন্ম হলো সুপার হিরো "ফ্যান্টম" এর । অসাধারণ গল্প আর ইলাস্ট্রেশন । মন জয় করে নিলো দ্রুত সবার । লী তাঁর "ফ্যান্টম" এর চরিত্র গড়েছিলেন অরণ্য ও পশু পাখি প্রেমী হিসাবে, আরেক বিখ্যাত চরিত্র এডগার রাইজ বারোজ এর "টারজান" এবং রুডিয়ার্ড কিপলিং এর "মোগলি" অবলম্বনে । তখন বেলজিয়ামের আরেক নক্ষত্র হার্জের "টিনটিন" সারা দুনিয়া জয় করা শুরু করেছে । সেই প্রতিযোগিতায় কিন্তু "ফ্যান্টম" হেরে যায়নি । নিজের শক্ত অবস্থান করে নিয়েছিল অগণিত পাঠকদের মনে ।
ফ্যান্টম জঙ্গলে থাকে । অরণ্যবাসীরা বন্ধু ।সর্বক্ষণের সঙ্গী তাঁর দুধের মতো সাদা ঘোড়া হিরো আর প্রচন্ড শক্তিধর নেকড়ে বাঘা । খুলি গুহায় বাস তাঁর । নিজেকে সব সময় লুকিয়ে রাখে আঁটোসাঁটো কস্টিউম আর মুখোশ পরে । শয়তানদের যম । যেখানেই অন্যায় সেখানেই ফ্যান্টম । বদমায়েশদের ঠান্ডা করে আর নিরীহদের বাঁচায় ।
কি মিল খুঁজে পাচ্ছেন তো ? কিশোর বয়সে যে অন্যায় নিজের চোখের সামনে দেখেও কিশোর লী কিছুই করতে পারেনি, সেই ক্ষোভ থেকে জন্ম নিলো পরবর্তীতে "দি ফ্যান্টম" । অন্যায়ের প্রতিবাদকারী, সারা জীবন শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই তার জীবন কাটে । প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সেই ধারা অব্যাহত থাকে ।এক ফ্যান্টম এর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে ফ্যান্টম হয়, তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে ফ্যান্টম হয় । এই ভাবেই প্রজন্মের পরে প্রজন্ম চলতেই থাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম । তাই ফ্যান্টম অমর, অবিনশ্বর, কেননা ফ্যান্টম এর তো মৃত্যু নেই , ফ্যান্টম রা মরে না । অনন্তকাল চলে তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আর ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম ।
বীরযোদ্ধা ফ্যান্টমের গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে দাদা। এককথায় গল্পটি পড়ে সম্পূর্ণ মুগ্ধ হয়ে। গল্পের মধ্যে দারুন কিছু বুঝিয়েছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রবল উৎসাহ জাগিয়েছেন এ গল্পের মাধ্যমে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুগ যুগ ধরে ফ্যান্টমের মত বীর যোদ্ধারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জন্মগ্রহণ করেছে। গল্পের মধ্যে আরও একটি বাস্তব কথা উল্লেখ করেছেন দাদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে কষ্টের প্রয়োজন নেই তীব্র মনোবল এবং প্রখর বুদ্ধি ধরা সব রকম অন্যায় কে প্রতিহত করা সম্ভব। দাদা অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর গল্প বাদ দেয়ার জন্য।
দাদা আপনি ফ্যান্টমের কাহিনী এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন যে মনে হচ্ছিল যেন চোখের সামনে দেখছি।ফ্যান্টমের জন্ম ইতিহাস আমার জানা ছিল না আপনার এই পোস্টের কল্যাণে আজ তা জানতে পারলাম।আপনার সঙ্গে একমত হয়ে আমিও বলতে চাই ফ্যান্টমরা কখনোই মরে না। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে যেমন অত্যাচারী আর অন্যায় আছে তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফ্যান্টম রাও বারে বারে ফিরে আসে। আপনার ভেতরের ফ্যান্টম দীর্ঘজীবী হোক এই কামনা করি
####আমিও আশির্বাদ করি বংশানুক্রমে, "ফ্যান্টম"'দের
১৯২৫ সাল পেরিয়ে, ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৬ সময়টা পুরোই একযুগ।
এ দীর্ঘ সময়টি চোখের ইশারায় পার হয়ে যায়নি। এ দীর্ঘ সময় লী'দের আরও হাজারো মৃত্যুর সাক্ষী সাজতে হয়েছে।
মনের গভীরে প্রোথিত আরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
"ফ্যান্টম" জন্ম নিয়েই, সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে নাই।
তাকে বড় হতে হয়েছে। বুঝার বয়স থেকেই, মানুষ সহ পশুপাখির সাথে সৌহার্দ্যে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে।
এতদিন হয়তো আড়াই যুগ চলে গেছে, একজনের "ফ্যান্টম" হতে।
আমি মনে করি,কোন কিছু খুব সহজে আসেনা।
এর জন্য, প্রয়োজন হয়,সময়,ধৈর্য ও অধ্যাবসায়। অমর হোক "ফ্যান্টম"দের বিজয়ী পথচলা।
আশীর্বাদ কামনায় ---
দাদা, অসাধারণ একটি গল্প জানতে পারলাম আপনার পোস্টর মাধ্যমে। সত্যি বলতে শয়তানের জম ফ্যান্টম আছে বলেই পৃথিবী টিকে আছে। আমাদেরও সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত ফ্যান্টমের গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষাই পাই। প্রতিবাদের এক নাম "দি ফ্যান্টম।
ধন্যবাদ দাদা, সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
অসাধারণ একটি গল্প পড়লাম ,আমি এই ফ্যান্টম নামের অর্থ মনে মনে খুঁজে বেড়াতাম ,কিন্তু আজ আমার কাছে একদম পরিষ্কার। ফ্যান্টম অন্যায়ের বিরুদ্ধ কারী , তিনি বছরের পর বছর এভাবেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবেন । আর এক জনের পর একজন টিনটিন দিনের পর দিন নিজেকে প্রস্তুত করে আবার ও এক ফ্ল্যান্টমে পরিণত হবে।
তবে সেই গল্পের ফ্যান্টম কে দেখিনি , কিন্তু আজ যে ফ্যান্টম আমাদের সামনে আছেন তিনি হচ্ছেন এক মাত্র আপনি দাদা। আপনার চলার পথ আরো সুগম ও শক্তিশালী হোক। সেই আর্শিবাদ করি।
প্যান্টম এর গল্প পড়ে সত্যি দাদা খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর করে ফ্যান্টমের গল্পটি তুলে ধরেছেন। আমি আগে এ গল্প সম্পর্কে কিছু জানতাম না আপনার লেখাটি পড়ে ফ্যান্টমের জীবন কাহিনী জানতে পারলাম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী যুবক। আমাদের সবারই রকম হওয়া উচিত। মনে শক্তি এবং সাহস থাকলে এভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায়। এত সুন্দর গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
😐পুরোটাই পড়লাম সত্যি বলতে পুরো অবাক হয়েছি কারন ছোট বেলার সেই ক্ষোপ যে বড় হয়ে সুপার হিরো হয়ে যাবে এটা অবাক করার মতো।
এই লাইন পড়ে মনে হইয়েছিলো রাজার ছেলে রাজা তার ছেলে রাজা এইভাবেই যেমন দায়িত্ব নেয় সেইভাবে ফ্যান্টমের ছেলে তার ছেলে দায়িত্ব নিয়েছে ❤️ভালো লাগছে
চরিত্র টি অনেকটাই ব্যাটম্যান এর মত লাগল আমার কাছে। ফ্যান্টম এরবরিজিন স্টোরি টা জানতে পেরে বেশ ভাল লাগলো। তবে অনেক সুপারহিরোর মধ্যে ফ্যান্টম এর নাম জানা ছিল না আগে আমার তেমন। এখন জানতে পারলাম। ধন্যবাদ দাদা।
ফ্যান্টম টিনটিন আপনারা তো দেখছি দাদা বীর এর উওরসরী। ফ্যান্টম এর এই ইতিহাস আমি আগে জানতাম না। ছোট সেই লী তার সামনে হওয়া অন্যায়ের ক্ষোভ থেকে আজকের বীর ফ্যান্টম এর জন্ম। যদি সেদিন ঐ ঘটনা তার সামনে না ঘটত আমরা হয়তো ফ্যান্টম এই বীরের দেখা পেতাম না।
সম্পূর্ণ টা খুবই শিক্ষনীয় ছিল।
এই রকম পরিস্থিতি অতীতে যেমন ছিলো, বর্তমানেও তেমন আছে হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে এবং তাদেরকে সাহায্য করতে ধারাবাহিকভাবে ফ্যান্টমদের জন্ম হতে থাকবে এবং মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা চলতে থাকবে।
ফ্যান্টম এর বিষয় নতুন কিছু তথ্য জানতে পারলাম আপনার মাধ্যমে। ধন্যবাদ