শীতের কুয়াশামোড়া সন্ধ্যায় গ্রামের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

অনেকদিন আগে প্রায় বছর দু'য়েক আগে এক শীতের সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে পল্লীগ্রামের এক জনবিরল মাঠের মধ্যে খালের ধারে । চারিদিকে সবে তখন কুয়াশা তার মায়াজাল বিস্তার করতে শুরু করেছে । হিমেল হাওয়া জেগেছে তেপান্তরের সেই মাঠের বুকে । কচুরিপানায় ঢাকা ছোট্ট খালের ধরে বসে আমরা ক'জন বন্ধু । অপলক চোখে দেখছি গ্রামবাংলার নিঃসর্গ রূপ । অপরূপ । ঘাসের ডগায় তখনি শিশিরবিন্দু জমতে শুরু করেছে । আমাদের প্রত্যেকের পরনের জিনসের প্যান্ট তখন জলসিক্ত । কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আমাদের ।

আমরা দেখছি সন্ধ্যায় কুলায় ফেরা পাখিদের ঝাঁক, সাদা বকের ওড়াওড়ি, খালের জলে পানকৌড়ির দুরন্ত ডুব । আমরা দেখছি খালের ধারের নরম মাটিতে মৃত অসংখ্য শামুক খোল, দিনশেষে কর্মব্যস্ত গ্রাম্য মানুষের ঘরে ফেরা, জেলেদের মাছ ধরার জাল, নৌকা, ছোট্ট একটা কালভার্ট আর তিনটি পথ কুকুর (stray dogs) ।

আর ঘন্টা খানেক পরে আমরা বিষণ্ণ মনে ঘরে ফিরলাম । অস্তরাগের রবি তখন পশ্চিমাকাশে ঘন আবিরের রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে , যে কোন সময়ে টুপ্ করে ডুব দেবে ।

IMG_20191206_160816.jpg

কচুরিপানায় ঢাকা ছোট্ট খাল , জলের দেখা প্রায় পাওয়াই ভার কচুরিপানার ঠেলায়

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ০৯ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_161050.jpg

খালের ধারে কে বা কারা আগুন জ্বেলে পিকনিক করেছিল, আগুনে ঝলসে গেছে ঘাস

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ১০ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_161210.jpg

খালের অপর পাড়ে এক কৃষক সাইকেলে করে ঘাস বোঝাই করে বাড়ি ফিরছে

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ১২ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_161257.jpg

খালের ধারে নরম মাটিতে ঘাসের মধ্যে মৃত শামুক খোল

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ১২ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_161753.jpg

খালের পাড়ে নৌকা তুলে রাখা

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ১৭ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_162045.jpg

খালের জলে বাঁশের সাঁকো

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ২০ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_162117.jpg

খালের ওপর ছোট্ট কালভার্ট

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ২১ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_162146.jpg

পলিথিনের বিষাক্ত দূষণ এই তেপান্তর মাঠেও

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ২১ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_163519.jpg

IMG_20200217_163742.jpg

IMG_20200217_165508.jpg

IMG_20200217_165612.jpg

খালের জলে এক জেলে ডিঙি বাঁধা আছে, আর জেলে বাঁশের মাচায় বসে জালের দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে; কখন মাছ পড়বে সেই আশায় ।

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ৩৫ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_163650.jpg

কুচুরিপানায় ভর্তি খালের অপর পাড়ে দূর দিগন্ত রেখায় সূর্য্য পাটে বসেছে

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ৩৬ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191206_163828.jpg

IMG_20200217_165702.jpg

IMG_20200217_165729.jpg

মাঠের বুক চিরে রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে, দূরে বহুদূরে

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ৩৮ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191219_162058.jpg

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ৩৮ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20191219_162227.jpg

IMG_20191219_162452.jpg

IMG_20191219_162644.jpg

IMG_20191219_162745.jpg

খালের ধারে নরম মাটিতে ঘাসের মধ্যে মৃত অসংখ্য শামুক খোল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ১৭ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

IMG_20200217_163643.jpg

খালের কালভার্টের কাছে ঘোরাঘুরি করছে তিনটে পথ কুকুর

আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ৬ই ডিসেম্বর ২০১৯, সন্ধ্যা ৪ টা বেজে ২০ মিনিট
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

ক্যামেরা পরিচিতি : HUAWEI
ক্যামেরা মডেল : LLD-AL20
ফোকাল লেংথ : ৩ মিমিঃ

Sort:  
 3 years ago 

লেখকদের লেখার একটা প্যাটার্ন থাকে। কোন মানুষের লেখা পড়লে একটা জিনিস বোঝা যায় যে তার ভেতর একটি লেখক সত্তা আছে কি না। আপনার লেখাগুলি পড়লেও ঠিক তেমনটা বোঝা যায় দাদা। আপনার শব্দ চয়ন এবং বাক্য গঠন সাধারণ মানুষের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। চমৎকারভাবে নিজের স্মৃতিচারণ করেছেন। বন্ধুদের সাথে এভাবে অনেক সময় কাটিয়েছি জীবনে। আপনার লেখা পড়ে আবার সেই সময়ের কথা মনে পড়ে গেল। ছবিগুলি খুবই সুন্দর হয়েছে বিশেষ করে শেষের ছবি কয়েকটা। আমাদের সঙ্গে এত সুন্দর একটি লেখা শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার লেখা উপস্থাপন এবং বাচনভঙ্গি খুবই সুন্দর মধুর এবং মন মুগ্ধকর। আপনার লেখা পড়তে গেলেই এক লাইন পড়ার পর আগ্রহ প্রকাশ হয় পরের লাইনটি পড়ার জন্য।

 3 years ago 

ভাই,আপনাকে প্রথম ধন্যবাদ যে উপরোক্ত ছবিগুলো প্রায় দুই বছর সংরক্ষণ করেছেন আপনার ডিভাইসে।

আরো ধন্যবাদ যে আলোকচিত্রসহ চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের কাছে শেয়ার করেছেন।

Screenshot_20210912-175316.png

আরো ধন্যবাদ যে আপনি আমার ছোট বেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।
কারণ ছোট বেলায় পাশ্ববর্তী চতরা নামের একটি বিলে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে, তাও আবার খালি পায়ে।হুট করে একটি সামুক আমার পায়ে বিধলো, আর রক্তপাত শুরু হলো।সঙ্গে সঙ্গে বাড়ী এসে দুর্বা ঘাস দিয়ে ব্যান্ডেস করলাম।
আপনার জন্য শুভ কামণা রইল।

 3 years ago 

এটি পশ্চিমবঙ্গ নাকি আমার বাংলাদেশ আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। পশ্চিমবঙ্গ ভারত এবং আমার বাংলাদেশ এর রূপ যেন একই রকম। দুই বাংলার রূপ সৃষ্টিকর্তা একই রূপে রূপান্তরিত করেছে।

সত্যিই চিরচেনা গ্রামের-মাছ-ধরার-দৃশ্য গুলো থেকে শুরু করে ধুলোবালি যুক্ত রাস্তা এবং কুয়াশা এবং পুকুরের কচুরিপানা সব কিছু দৃশ্য যেন আমার গ্রামের দৃশ্য গুলো কে ইঙ্গিত করে।

সত্যিই অসাধারণ

শীতের কুয়াশায় গ্রাম বাংলার দৃশ্য দেখে ও পড়ে অনেক ভালো লাগলো দাদা। ওই দিন আপনি ও আপনার বন্ধুদের সাথে অনেক সুন্দর দিন কাটিয়েছেন। তবে দাদা যুগে যুগে শহর বদলালেও গ্রাম বাংলার কোন বদল হবে না। গ্রাম বাংলার রুপ ও প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েই যাবে, বছরের পর বছর।

 3 years ago 

সত্যি দাদা আলোকচিত্র গুলো খুবই সুন্দর হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে একেবারে পল্লিগ্রাম। শীতের দিনে এসব গ্রামের সৌন্দর্য বদলে যায়। শীতের সকালে তেপান্তরের মাঠে শুধু কুয়াশা।

image.png
আমরাও এইরকমটা করে থাকি। মূলত পুকুর বিল বা জমির ঘাস পরিষ্কার করতে এভাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে খুব অল্প সময়ে অনেক ঘাস পরিষ্কার করা যায়।

 3 years ago 

দাদা আপনার লেখার মাঝে অনেক গভীরতা লুকিয়ে থাকে।যাতে অনেক ভাবনা জাগায় আমার মনে।ছোট ছোট কথা আপনি অনেক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার লেখার তুলিতে।শীতের দিনে গোধূলি সন্ধ্যাবেলার দৃশ্য সত্যিই নতুন চমকের সৃষ্টি করে মনে।একটি অজানা অনুভূতির ভাবাবেষ ঘটায় মনে।যা স্মৃতি হয়ে থাকে স্মরণীর পাতায়।তাইতো দুই বছর পরে ও আপনার সুন্দর মুহূর্তটির কথা এখনো মনে জ্বলজ্বল করছে।ছবিগুলো খুবই সুন্দর, একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে আছে।ধন্যবাদ দাদা।

 3 years ago 

এটি গ্রাম বাংলার এক চিরচেনা এক অপরুপ দৃশ্য,পথ-প্রান্তরে খোলার আকাশের নিচে ঐ গ্রামের মেঠো পথে কৃষকের ফলসের মাঠে, বন্ধুরে আড্ডার ছলে আগুনে পুড়িয়ে শীতের রাতের গরম আভাস নিয়ে, বিকালের স্নিগ্ধ বাতাস বয়ে নদীর কুলে,শামুকের আবারণ সরিয়ে ধীরে চলে ফলসের মাঠে, রাস্তার ধারে ব্রীজের উপরে কুকুর খেলা করে। সূর্য নামে ঐ পশ্চিম আকাশের কোলে।আপনার ফটোগ্রাফি অসাধারণ হয়েছে ভাইয়া।

 3 years ago 

শেষের দৃশ্যটির ব্যাখ্যা পড়ে বেশ মজা পেলাম, তবে ওদের পথ কুকুর না বলে পথের লিডার বললে বেশী মানানসই হতো, হি হি হি

তবে দৃশ্যগুলোর সাথে লেখাগুলো খুব মিল খুঁজে পেলাম, মনে হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে উপস্থিত থেকে নিজেই এই রকম কিছু উপভোগ করছি। বিশেষ করে সবুজ ঘাসের মাঝে শামুকের দৃশ্যগুলো ছিলো অসাধারণ।

শুকনো ঘাষগুলোর পুড়া দৃশ্য দেখে শৈশবের কথা মনে পড়ে গেলো, আমরা ঠিক এইভাবেই সন্ধ্যার পর নদীর পাড়ে শুকনো ঘাষের গায়ে আগুন ধরিয়ে বেশ জমজমাট আড্ডা দিতাম। মাঝে মাঝে অবশ্য এগুলো মাঝে গোল আলু দিয়ে রাখতাম। পুড়া আলু খেতে বেশ লাগতো।

আমি একজন প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে এটাই বলবো যে, এই সুন্দর চোখগুলোকে তৃপ্তিময় করার জন্য প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ব্যতিত আর কোনো কিছুই হতে পারেনা। আমরা সৌন্দর্য্য পিপাসুরা এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার সৌন্দর্য্য গুলো উপভোগ করার মাধ্যমে যেমন নিজেদের তৃষ্ণা মেটাই ঠিক তেমনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও যেনো এই সুন্দর পৃথিবীটা রেখে যেতে পারি সেই দায়িত্বটাও আমাদেরকেই নিতে হবে। দাদাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সাধারণের মাঝেও অসাধারণ কিছু ছবি শেয়ার করার জন্য। সত্যি বলতে, দুই বাংলার প্রকৃতির রূপ যে অভিন্ন এক আত্মার মেলবন্ধন তা ছবি গুলোই আমাদেরকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57621.01
ETH 3094.14
USDT 1.00
SBD 2.32