তরুণ বয়সের একটা মজার ঘটনাsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

man-4336975_1280.jpg
Copyright Free Image : Source - PixaBay


আজকে আমার জীবনের খুবই ছোট্ট অথচ দারুন মজাদার একটা ঘটনা শেয়ার করছি । ছোটবেলা থেকেই আমার শরীর বেশ বড়সড় । আমার সমবয়সীদের তুলনায় আমার দেহের আকার আকৃতি ও গঠন অনেকাংশেই বৃহৎ ছিল । এ জন্য বিড়ম্বনায় কম পড়তে হয়নি জীবনে । আমি খুবই কম বয়সে আমার স্কুলজীবন শুরু করি অথচ ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় প্রায়ই অপরিচিত মানুষ আমাকে ক্লাস টেনের ছাত্র ভাবতো । আর ক্লাস টেনে পড়ার সময় ইউনিভার্সিটিতে পড়ি ভাবতো ।

ফলে অপরিচিত মানুষের মনে ধারণা জন্মাতো যে আমি মনে হয় ক্লাসে ফেল করে করে এক ক্লাসে বেশ কয়েক বছর ধরে আছি । তো এবার আসি মূল ঘটনায় । আমি তখন সদ্য একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি । পুজোর ছুটির আগের কথা । হঠাৎ, করে আমার মামা বাড়ি যাওয়ার একটু প্রয়োজন পড়লো । মা যাবে । কিন্তু, বাবার স্কুল, তাই যেতে পারবে না । দাদা ভিন শহরে মেডিকেলে পড়ে । ভাই ছোট । ফলে মা-কে মামা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়লো আমার ঘাড়ে ।

বাবা বললো - "দু'এক দিন ক্লাস মিস গেলে কোনো প্রব্লেম নেই, তুমি তোমার মাকে মামাবাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসো। " খুশিতে তো আমি লাফাতে লাগলাম । আমার মামাবাড়ি গ্রামে । তো গ্রামে গেলে মজা হতো ভীষণ । গ্রামের পরিবেশ আমার ভীষণ পছন্দের । সকাল সন্ধ্যা পড়াশোনার ঝামেলা নেই । পুকুরের টাটকা নানা রকমের মাছ, হাঁসের ডিম, টাটকা শাক সবজি, সকালে-বিকালে ক্রিকেট, সন্ধ্যায় আড্ডা । সে এক আনলিমিটেড মজা ।

তাই গ্রামে যাওয়ার কথা শুনলেই আনন্দে আমার মন উদ্বেলিত হয়ে উঠতো । তো পরের দিন ভোরবেলা ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে । বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়লাম আমরা তিনজন - আমি, মা আর আমার ভাই । আমার ভাইয়ের সিট ছিল একদম বাসের পিছন দিকটায় । সামনের দিকের সিটে মা আর আমি বসলুম মায়ের ঠিক এক সিট পরে পেছনে। কিছুক্ষণ পরে বাস ছেড়ে দিলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ।

মায়ের বাম পাশের সিটে একটা লোক বসে অনেক্ষণ ধরে আমাদের অবজার্ভ করছিলো । বাস ছেড়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ বাদে দেখি লোকটি আমার মায়ের সাথে নিচু গলায় কি জানি বলছে । আমি তখন গল্পের বই পড়ছিলাম । কিন্তু, বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টুকরো টাকরা কথা কানে আসছিলো আমার । বিয়ে, মেয়ে, সুন্দরী, টাকা-পয়সা ইত্যাদি বিচ্ছিন্ন কিছু শব্দ কানে আসছিলো । যাই হোক, লোকাল বাস । প্রতিটা স্টপেজে থামে আর পিলপিল করে লোক ওঠে । দেখতে দেখতে বাস পুরো ভর্তি হয়ে গেলো । ভীড়ের ঠেলায় আর কিছু শুনতে পেলুম না ।

আমাদের স্টপেজ হলো একদম শেষের দিকে । তাই ক্রমে বাসের ভীড় পাতলা হয়ে এলো । দেখি সেই লোকটি এখনো মায়ের সাথে কথা বলছে । বাসে তখন বেশ কিছু সিট ফাঁকা হয়ে গিয়েছে । তো লোকটি একরকম জোর করে আমাকে তার পাশে এনে বসালো । তারপরে আমার নাম টাম, কি করি এসব জিজ্ঞেস করলো । তারপরে আবার মাকে বললো, "দিদি, একটু ভেবে দেখুন এমন মেয়ে পাওয়া কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার । তারা চায় শুধু সুন্দর দেখতে একটা ছেলে । তা যেমনটি চাই একদম তেমনটি পেয়ে গিয়েছি । আপনার ছেলেকে দেখালেই তারা পছন্দ করবে ।"

মা বললো তখন , "আমার ছেলের এখন বিয়ে দেব কি করে আপনাকে তো বললাম আমি । ও এখনো পড়াশোনা করে । বয়স একেবারে কম। " তাও লোকটা খুব ঝোলাঝুলি করতে লাগলো । মাকে মোবাইল নাম্বার লিখে দিলো । আমার নাম্বার নিলো । এতক্ষণে আমার মাথায় ঢুকলো ব্যাপারটা । লোকটা ঘটক । বাসের মধ্যেই মায়ের সাথে ঘটকালি করছে । দারুন সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে নাকি আমার সম্বন্ধ করতে চায় । শুনে আমি তো অবাক । লোকটা বারবার বলতে লাগলো - "দিদি আপনার ছেলের উপযুক্ত এই মেয়ে । দারুন ফর্সা, ফেস কাটিং দারুন, কোমর অব্দি চুল । মেয়ের বাপের মাছের ভেড়ি আছে । বিস্তর টাকা পয়সা । কিন্তু, তেমন একটা শিক্ষিত ফ্যামিলি নয় । মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ছে । মেয়ের বাপ চায় শিক্ষিত ফ্যামিলিতে মেয়ে দিতে । তো সব দিক দিয়ে আপনারা উপযুক্ত । আপনাদের ফ্যামিলি শিক্ষিত । আপনার স্বামী শহরের স্কুল টীচার । আপনারা শহরে থাকেন । আপনার ছেলে সুন্দর দেখতে, লেখা পড়া জানে । একদম রাজযোটক যাকে বলে ।"

আমার মাথায় তখন খালি ঘুরছে - "মেয়ে সেভেনে পড়ে মানে তো বাল্য বিবাহ । কভি নেহি ।" আমার মা সব কথা শোনে আর হাসিমুখে ঘাড় নাড়ায় শুধু । দেখতে দেখতে আমাদের স্টপেজ চলে এলো । লোকটা তখন বলতে গেলে ক্ষেপে গিয়েছে একদম । আমাদের কথা আদায় করে ছাড়বেই সে যে করে হোক । অতি কষ্টে তার হাত থেকে রেহাই মিললো । এরপরে বহুদিন অব্দি আমি মাকে বলতাম - "দিতে পারো বিয়ে । যদিও বাল্য বিবাহ হবে । তবুও অসুবিধা নেই । আমি রাজি আছি ।" মা শুনে খালি হাসতো ।

তবে এতদিন পরে বলতে বাধা নেই - বছর খানিক ধরে আমার মাথায় বিয়ের ভূত চেপেছিল । ভাবতাম আহা ! এখন যদি বিয়ে করতে পারতাম ! জীবনটা আমার ধন্য হয়ে যেতো ।


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫২৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 525 trx)


তারিখ : ২২ জুলাই ২০২৩

টাস্ক ৩৩২ : ৫২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 5113a62d00db3bef4ec533584e8669111e38ae92e94182066bd508a3133dc5d5

টাস্ক ৩৩২ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


steempro....gif

Sort:  
 2 years ago 

আরেকটু হলেই বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে যাচ্ছিলো, বাল্য বিবাহ করে মণ্ডপ থেকেই সোজা শ্রীঘরে। হাঃ হাঃ।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

শুধু বিয়ের কথা ভাবতেন নাকি বাচ্চা কাচ্চার কথাও। 😜😜

ছবিতে বাচ্চাদের জুতা দেখা যায় 🤭

 2 years ago 

হু তা তো ভাবতাম । সেটা ওখানে লিখিনি । বিয়ের পর আমার মা তনুজাকে সব ফাঁস করে দিয়েছে । আমি মাকে বলতাম - "আগে বিয়ে দিয়ে দাও আমাকে । না হলে ছেলে মেয়ে মানুষ করবো কখন ?"

 2 years ago 

না হলে ছেলে মেয়ে মানুষ করবো কখন ?"

এটা শুনে কাকি কী বলতো তখন?

হু তা তো ভাবতাম । সেটা ওখানে লিখিনি ।

সত্যিই বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে নিয়ে অনেক মজার মজার কল্পনা করতে মন্দ লাগতো না। 😜
আর সেগুলো পোস্টে না লেখাই ভালো। হিহিহি। 🤭🤭

 2 years ago 

আহ! বিয়েতে সত্যি মজা, খালি খাওন আর খাওন। হা হা হা হা।
দাদা তো দেখছি সেই রকম একটা সুযোগ মিস করেছেন, দেখতে সুন্দর, চেহারা ফর্সা, কোমর অবদি চুল, পুরো জবরদস্ত একটা সম্বন্ধ ছিলো, হি হি হি। দাদা বৌদিকে কি এই গল্পটা শুনিয়েছিলেন, আর শুনিয়ে থাকলে বৌদির উত্তর কি ছিলো?

 2 years ago 

আমি আর কি শোনাবো ? অনেক আগেই আমার মা-ই সব ফাঁস করে দিয়েছে তনুজার কাছে :)

 2 years ago 

হা হা হা, সেটা শুনে নিশ্চিত বৌদির চরম হাসি পেয়েছিলো। জীবনে এই রকম কিছু মুহুর্ত থাকাটা জরুরী, মাঝে মাঝে মনে করে হাসা যায়।

 2 years ago 

বৌদি মনে হয় ঘটকরে খুঁজতেছে। 😆

হা হা হা... ঘটককে একবার বৌদি খুঁজে পেলে তাকে হয়তো আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না।

রীতিমতো কিশোর বয়সেই বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে গিয়েছিলেন দাদা। আঁকার আকৃতিতে বড়সড়ো হওয়ার এই এক সুবিধা। অবশ্য এত ভালো প্রস্তাব পায়ে ঠেলা উচিত হয়নি। হা হা হা... বৌদি এই কমেন্ট পড়লে আমার খবর আছে।

 2 years ago 

আসলেই, মিস হয়ে গেলো :)

Hi, friend.
I think that if you had married at a very young age, your destiny would have been another, maybe you would not be in steemit and you were not a software developer, we do not know what was best for you was what happened next.

 2 years ago 

ha ha :) You are right I think :)

 2 years ago 

দারুন মজা পেলাম দাদা,হিহিহি।😃তবে ওই ভুতটাকে আর বাঁচতে দিয়েন না,মেরে ফেলেন।শান্তিতে আছেন,সুখে আছেন তাই থাকেন।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটা অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

তরুণ বয়সে তরুণী পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি থাকে 😎 ঘটকের ভাব এমন যে, বাসের ভিতর বিয়ে দিতে পারলেই শান্তি পেতো মনে হয় 😁 তরুণ বয়সে বিয়ের ভুত মাথায় চাপে অনেকেরই তবে এটা সামাল দিতে সামর্থ্যের প্রয়োজন যেটা আপনার ছিলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

এত কম বয়সে মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব আসে জানতাম । ছেলেদেরও যে বিয়ের প্রস্তাব আসে আপনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম। বিয়ে না করলেন , ঠিকানা নিয়ে প্রেম তো করতে পারতেন । কি সুন্দর পাত্রী ছিল আহা! মিস করলেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.25
JST 0.039
BTC 105094.83
ETH 3305.12
SBD 4.16