কৃষ্ণাঙ্গ মানব শিশুকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে কুমির শিকার তথাকথিত সভ্য সাদা মানুষদের

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

copyright expired photography : courtesy : wikimedia commons


উত্তর আমেরিকা । ১৮শ থেকে ১৯ শতকের মাঝামাঝি অব্দি আমেরিকায় কুমিরের চামড়ার ব্যাপক চাহিদা পরিলক্ষিত হয় । কুমিরের চামড়ার ব্যাগ, জুতো, বেল্ট, সুটকেস, জ্যাকেট তখন সৌখিন জিনিস হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । একটা কুমির মারতে পারলেই তখন ব্যাপক লাভ ।

অষ্টাদশ শতকে আমেরিকায় ক্রীতদাস প্রথা ব্যাপক হারেই প্রচলিত ছিল । ১৮৫২ সালে প্রকাশিত "আঙ্কল টম'স কেবিন" উপন্যাসে হ্যারিয়েট বিচার তৎকালীন আমেরিকান সমাজ ব্যবস্থায় ক্রীতদাসদের উপর কেমন অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো সেটা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সারা বিশ্বের কাছে মেলে ধরেছেন । বইটি বের হওয়া মাত্র সারা বিশ্ব শ্বেতাঙ্গদের এই ক্রীতদাস প্রথার অমানবিক দিকটির সম্যক পরিচয় পেয়ে অবাক বিস্ময়ে আত্মহারা এবং ভয়ে শিহরিত হয়ে যায় ।

আমেরিকান শ্বেতাঙ্গরা নিগ্রো ক্রীতদাসদের কখনোই মানুষ ভাবতো না । পশুর মতোই নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হতো সেই সব হতভাগ্য আফ্রিকান নিগ্রো ক্রীতদাসেরা । একজন ক্রীতদাসের জন্ম থেকে মৃত্যু অব্দি কাটতো একজন মানুষ হিসেবে নয়, বরং তার প্রভুর সম্পত্তি হিসেবে । একজন শ্বেতাঙ্গের পূর্ণ অধিকার ছিল বিনা প্রশ্নে, কোনো কারণ ছাড়াই তার ক্রীতদাসের গলা কেটে ফেলার । তৎকালীন আমেরিকান বিচার ব্যবস্থায় একজন নিগ্রো ক্রীতদাসের জীবনের কানাকড়ি মূল্যও ছিল না । ছাগল, গরু, মুরগির মতোই দেখা হতো তাদের । তাদের চাইতে বরং ঘোড়াকে অনেক দামি প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হতো ।

তো সেই সময়ে যখন কুমিরের চামড়ার ব্যাপক চাহিদা দেখা যায় তখন হুজুগে আমেরিকানরা দক্ষিণের বিস্তৃত জলা জঙ্গল অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যাপকহারে কুমির শিকার শুরু করলো । এক একটা কুমির মারতে পারলে তখন বেশ কয়েক ডলার লাভ হতো । ডলারের লোভে উন্মত্ত হয়ে উঠলো শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের দল । পুরো দুটি শতক জুড়ে চললো এই তান্ডব । কুমির আর মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠলো তথাকথিত সভ্য আমেরিকানদের দুটি হাত ।

কুমিরের রক্ত ঠিক আছে, কিন্তু আবার মানুষের রক্ত কেন ? জানলে অবাক হয়ে যাবেন, সেই সাথে হৃদয়টা এখনো মোচড় দেবে এক করুন বীভৎস ইতিহাস জেনে । কুমির শিকার যখন আমেরিকার অনেক প্রফিটেবল একটা পেশা তখন কিন্তু এর ঝুঁকির দিকটাও ছিল বেশ ভয়াবহ । কুমির শিকার করতে গেলে অগভীর জলে নামতেই হতো শিকারিদের, নতুবা ছোট ডিঙিতে করে জলাভূমিতে ঘুরে বেড়াতে হতো তাদের কুমিরের আশায় । আর তা করতে গেলেই প্রায়শই নানান ধরণের ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে হতো শিকারিদের ।

তখনকার দিনে এতো আধুনিক রাইফেল ছিল না । একবার গুলির পরে বেশকিছুক্ষন টাইম লাগতো নতুন করে লোড করতে । আর তখনি শিকারী নিজেই পরিণত হতো শিকারে । প্রত্যেক বছর বহু শ্বেতাঙ্গ শিকারী হয় কুমিরের কবলে পড়ে মারা পড়তো, নতুবা হাত, পা, আঙ্গুল প্রভৃতি অঙ্গের হানি ঘটতো তাদের।

প্রফিটের ব্যবসায় রিস্ক ছিল লাইফের । এই রিস্ক কমাতে চাইলো শ্বেতাঙ্গরা । ভাবতে লাগলো তারা কি ভাবে লাইফ রিস্ক কমিয়ে আনা যায় এত সাধের লাভের ব্যবসায় । ভাবতে ভাবতে চমৎকার একটা বুদ্ধি এলো তাদের মাথায় । এই না হলে আমেরিকান । বিশাল বুদ্ধি ধরে তারা ।

আমেরিকান কুমিরদের বলা হয়ে থাকে এলিগেটর । ক্রোকোডাইলের সাথে তাদের পার্থক্য সুস্পষ্ট । এলিগেটরগুলো বেঁটে মোটা হয়ে থাকে । শিকার ধরে তক্ষুনি খাওয়া শুরু করা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটি । আর শিকার গলাধঃকরণের সময়ে তাদের বাহ্যজ্ঞান থাকে না কোনো । যেখানেই শিকার ধরে সেখানেই খাওয়া শুরু করে । এই সময়টাতে তারা হয়ে পড়ে শ্লথ । তখন, খুব সহজেই গুলি করে মারা যায় তাদের ।

আর তাই অনেক ভেবে আমেরিকানরা কুমির শিকার করতে টোপ ব্যবহার করতে চাইলো । অগভীর জলাশয়ের তীরে কুমিরের টোপ হিসেবে কোনো জীবন্ত প্রাণী রাখলে কুমির মারতে আর জলে নামা লাগবে না । কুমির নিজেই ডাঙায় উঠে আসবে আর রাইফেলের পাল্লায় পড়ে যাবে । আর সব চাইতে মস্ত সুবিধা হলো কুমিরের খোঁজে জলে নেমে আর প্রাণ বা অঙ্গহানির কোনও রিস্ক থাকলো না ।

কিন্তু, কি টোপ ব্যবহার করা যায় ? প্রথম দিকে তারা খরগোশ, হাঁস, মুরগি, ভেড়ার বাচ্চা এসব টোপ হিসেবে ব্যবহার করতো । কিন্তু, কিছুদিন পরে হঠাৎ একদল বুদ্ধিমান আমেরিকানের মাথায় আসলো যে এই সব খরগোশ, হাঁস, মুরগি, ভেড়ার বাচ্চা এগুলোর তো দাম কিছুটা হলেও আছে । বাজার থেকে কিনতে তো হয় এগুলো । কিন্তু, ক্রীতদাসের বাচ্চাদের তো কোনো মূল্যই নেই । কী সুন্দর সমাধান !


copyright expired photography : courtesy : wikimedia commons
একটি আমেরিকান পোস্টকার্ড । কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের কে রাখা হয়েছে কুমির শিকারের টোপ হিসেবে

এরপর থেকে তাই নিগ্রো ক্রীতদাসের কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চারাই হলো কুমির শিকারের টোপ । বাবা মায়ের বুক খালি করে এই সব কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের কেড়ে নিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে রাখা হতো কুমির ভর্তি অগভীর কোনো জলাশয়ের ধারে । রক্তের গন্ধে বিশাল কোনো কুমির এসে পড়তো ঠিকই । আড়ালে থাকা শ্বেতাঙ্গ শিকারী অপেক্ষা করতো কখন কুমিরটি বাচ্চাটাকে খেতে শুরু করবে । অর্ধেক খাওয়ার পরে কুমিরটি যখন শ্লথ আর অসাবধানী হয়ে পড়তো তখন গুলি করে সেটাকে খতম করতো শ্বেতাঙ্গ শিকারী । সভ্য দেশের সাদা মানুষ । বিদ্যা বুদ্ধিতে তারাই নাকি পৃথিবীর সব চাইতে সেরা মানুষ ।

ধিক্কার জানাই তথাকথিত সেই সভ্যদের !! ধিক !!!


copyright expired photography : courtesy : wikimedia commons
আরো একটি আমেরিকান পোস্টকার্ড । ফ্লোরিডায় কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের কে রাখা হয়েছে কুমির শিকারের টোপ হিসেবে


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ২৭৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৪র্থ দিন (275 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 04)


trx logo.png



সময়সীমা : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২


টাস্ক ৫৩ : ২৭৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

২৭৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 1887f33e6c3b71002f5faca66677a17c3b794724829f9172b768a64dce5a0816

টাস্ক ৫৩ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Sort:  
 2 years ago 

ভাবা যায়!!কি সাংঘাতিক ব্যাপার এসব।পাগল ছিলো নাকি এরা দাদা নাকি অমানুষ! একটু কষ্ট ও লাগতোনা বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়েও।

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

আমেরিকান রা বরাবরই এরকম। তারা আমেরিকার আদি নিবাসী রেড ইন্ডিয়ান দের উপরেও গণহত্যা চালিয়েছে।কিন্তু এসব ইতিহাস তারা সামনে আনতে চায় না।অথচ অন্যদেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের মাথা ব্যথার শেষ নেই।

 2 years ago 

দাদা আপনার লেখাগুলো ছল ছল চোখে অবাক হয়ে পড়ছিলাম। যাদের শরীরে মিশে আছে অর্থের জন্য মানুষ এবং কুমিরের রক্ত নিয়ে খেলার ইতিহা্‌স, তারা আজও সভ্য জাতির আড়ালে মানুষের রক্ত নিয়ে খেলে যাচ্ছে ভিন্নভাবে। ধিক্কার জানাই সেই অসভ্য বর্বর জাতি কে।

 2 years ago 

বুকটা কেঁপে উঠলো দাদা। এই সত্যটা আমি আগে জানতাম না। হাস মুরগির দাম আছে বলে তাদেরকে চারা হিসাবে ব্যবহার না করে ক্রীতদাসদের বাচ্চাদের চারা হিসেবে ব্যবহার করতো। মানুষ হয়ে জন্মে মানুষদের সাথে এই নির্মম অত্যাচার। সত্যিই অনেক কষ্ট পেলাম দাদা। জানিনা ইতিহাসের পাতায় এরকম আরো কত নির্মম ঘটনা লুকিয়ে আছে। এরকম একটি তথ্য দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

বর্তমানে এরাই পৃথিবীতে নিজেদের তথাকথিত সভ্য জাতি হিসাবে দাবি করে। ভাবতেই গা শিউরে উঠে। ওই সময় সাদা চামড়ার মানুষেরা কতটা নির্দয় ছিল।

 2 years ago 

ক্রীতদাসের কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চাদের দিয়ে অমানবিক ভাবে ওই সময় কুমির শিকার করা হতো। প্রিয় দাদা আপনার পোস্টটি পড়ে উত্তর আমেরিকার পুরনো একটি ঘটনা জানতে পারলাম কিন্তু এ ঘটনাটি জানতে পেরে আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। যেখানে খরগোশ, হাস-মুরগির বাচ্চাদের মূল্য দেয়া হতো কিন্তু ক্রীতদাসের কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চাদের প্রতি করা হতো জঘন্য অন্যায়। দাদা পোস্টটি পড়ে রাগে, ক্ষোভে, এবং প্রচন্ড দুঃখে আমার মন খুবই খারাপ হয়ে গেছে। প্রিয় দাদা, আমি ধিক্কার জানাই সেই সময়কার সভ্য নামের অসভ্য এবং জঘন্য মানুষদের প্রতি।

কি ভয়াবহতা! আমি এটা একবার যে মত ছিল জানেন না... এটা কল্পনা করা কঠিন কিভাবে নিষ্ঠুর মানুষ কখনও কখনও হতে পারে. তারা কি মানুষ?

 2 years ago (edited)

কিন্তু, ক্রীতদাসের বাচ্চাদের তো কোনো মূল্যই নেই । কী সুন্দর সমাধান !

কথাটা শোনা মাএই নিজের মধ্যেই তো মোচড় দিয়ে উঠলো। এদের কে আমরা শিক্ষিত সভ‍্য জাতি বলি যাদের কাছে মানুষের জীবনের দাম খরগোশ পাখি এদের থেকেও কম আফসোস। এর আগে আপনি হ‍্যাংআউটে বলেছিলন এই সম্পর্কে। আজ পুরোটা জেনে ভালো লাগল।

 2 years ago 

কত বড় জঘন্য হলে মানুষের মাথায় এসব চিন্তা আসতে পারে। ওদের মাথায় কি কখনোই আসতো না যে ওদেরও আমাদের মতন ব্যাথা লাগে!!

হায়রে অসভ্যের ঝাড়। এরা আবার এখন মানুষকে মানবতা শিখায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.25
JST 0.039
BTC 96923.38
ETH 3370.74
USDT 1.00
SBD 3.55