গণতন্ত্র ও রাজদন্ড
কপিরাইটফ্রী ইমেজ সোর্স : পিক্সাবে
গণতন্ত্র কি এবং কেন ? এর সুফল কি ? এ সম্পর্কে আমাদের সবারই একটা স্বচ্ছ ধারণা আছে । কারণ, আমরা একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি । স্বাধীনতার পর থেকে আজ অব্দি কখনো গণতন্ত্র ব্যতীত দেশে স্বৈরশাসন জারি হয়নি । যদিও নেহেরু তনয়া ইন্দিরা গান্ধী এক বার চেষ্টা করেছিলেন স্বৈরশাসক হওয়ার, এবং দেশের জনসাধারণ তাঁর সে প্রচেষ্টা সফল হতে দেয়নি কখনো ।
গণতন্ত্র আধুনিক শাসন ব্যবস্থার সব চাইতে সর্বোৎকৃষ্ট উপায় । জনসাধারণই এখানে নিজেদের মধ্যে থেকে জনপ্রতিনিধি বাছাই করে এবং তাঁদের হাতেই দেশের শাসন ব্যবস্থা ন্যস্ত করে থাকে । এর ফলে জনসাধারণের মধ্যে ম্যাক্সিমাম যাঁরা যে জনপ্রতিনিধিকে সাপোর্ট করে থাকেন তিনিই নির্বাচিত হন । এর অর্থ, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন ভিন্ন দেশের শাসন ব্যবস্থায় কেউই নাক গলাতে পারবেন না ।
কিন্তু, সত্যিই কি তাই ? সব সময়ই যে এমনটা হয় তা কিন্তু নয় । তা যদি হতো তবে আমাদের দেশ আজ দুর্নীতিমুক্ত, অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ, সামরিক শক্তিতে বলীয়ান এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উন্নত হতো । তা না হওয়ার কারণই হলো জনগণ সঠিক শাসক নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু কেন ?
এটার উত্তর কিন্তু খুবই সোজা । গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার নির্বাচনে জনগণের হাতিয়ার মাত্র একটিই । আর তা হলো ভোট প্রদান । আর এখানেই যত গন্ডগোল । আমাদের দেশে নির্বাচনের সময়ে জনগণের ভোটকে চরমভাবে প্রভাবিত করা হয় । এর উপর আছে জনগণের একটা বৃহৎ অংশের ভোট বিমুখতা, ভোটারদের মধ্যে একটা বড় অংশের সুশিক্ষার অভাব এবং সর্বোপরি জনগণের মধ্যে একতা না থাকা ।
আজকে আমি রাজনীতির কচকচানির মধ্যে যাবো না । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জটিল কোনো কিছুর মধ্যেও যাবো না । খুবই সহজ সরল উপায়ে ব্যাখ্যা করতে চাই ঠিক কি কারণে গণতন্ত্র ব্যর্থ হয় ? ঠিক কি কারণে গণতন্ত্রের সুফলতা আমরা ভোগ করতে পারি না ?
আমার জানা মতে আমাদের এই উপমহাদেশের সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিক রাজা ছিলেন মহারাজাধিরাজ শ্রী গোপাল দেব । পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই । গৌড় সম্রাট শশাঙ্কের পতনের ফলে বাংলায় দেখা দেয় ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা । আইনের কোনো শাসন ব্যবস্থা ছিল না । চারিদিকে ছিল শুধু বিদ্রোহের আগুন, হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি । দেশে কোনো স্থায়ী রাজা ছিলেন না । যিনিই সিংহাসনে বসতেন কিছুদিন যেতে না যেতেই তাঁকে হত্যা করা হতো । মূলতঃ ক্ষমতা ছিল সেনাবাহিনীর হাতে । তারা দেশ শাসন করার চাইতে লুটপাটেই উৎসাহী ছিল ।
দেশের রানী আর প্রধান মন্ত্রী ছিলেন আসল কুচক্রী । একজন পুতুল রাজা বসতেন ঠিকই তাঁরা, কিন্তু যখনই সেই রাজা তাঁদের অবাধ্য হতেন তখনই তাঁকে হত্যা করা হতো । অনেক ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন বাংলায় তখন বিরাজ করছিলো "মাৎস্যন্যায়" । এটি একটি সংষ্কৃত শব্দ । এর অর্থ বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে গিলে খায়, ঠিক তেমনি দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে বাংলা তখন আচ্ছন্ন ।
এই সংকটকালে দেশের জনগণ তাদের নিজেদের মধ্যে থেকেই একজন সাধারণ সৈনিকের ছেলে গোপাল-কে রাজা হিসেবে নির্বাচিত করেন । এটি দেশের সেনাবাহিনী বা তৎকালীন শাসকদের কেউই সমর্থন করেনি । কিন্তু, দেশের বিপুল জনসাধারণের সমর্থন ছিল রাজা গোপালের প্রতি । জনগণ একাট্টা হয়ে লড়েছিল তাঁর জন্য ।
একজন অতি সাধারণ সৈনিকের ছেলের হাতেই শেষমেশ পতন ঘটলো সেই কুচক্রী প্রধান মন্ত্রী ও রানীর । রানীকে হত্যা করে নিজের সিংহাসন নিষ্কন্টক করেছিলেন গোপাল । সেনাবাহিনীকে কঠোর হস্তে দমন ও নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন । তাঁর হাত ধরেই এক সময়ের বিপর্যস্ত বাংলায় গড়ে ওঠে সুবিখ্যাত পাল সাম্রাজ্য ।
এ তো গেলো ইতিহাসের কচকচানি । এবার আসি একটা গল্পে :
একটা কারখানার শ্রমিকদের প্রতিদিন দুপুরের খাবার হিসেবে দেওয়া হতো সেদ্ধ আলু, পরিজ আর রুটি । প্রতিদিন নিরামিষ খাবার পেয়ে পেয়ে শ্রমিকরা একদিন বিদ্রোহ করে বসলো । তাদের দুপুরের চিকেন বরাদ্দ করার দাবি জানালো । যথারীতি শ্রমিক ইউনিয়ন মালিক পক্ষের সাথে মিটিং করে ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত নিলো । মালিকপক্ষ বললো সংখ্যাগরিষ্ঠ ফুড সাজেশনটাই একসেপ্ট করা হবে ।
মোট শ্রমিক ছিল ১০০ জন । ভোটের আগের দিন শ্রমিকদের একটা দল দেখা করলো মালিক পক্ষের সাথে । এক প্যাকেট করে সিগারেট আর এক বোতল করে মদের বিনিময়ে তারা মালিকপক্ষকে জানালো যে তারা আলু-পরিজ-রুটি কেই সমর্থন করবে । আর এদিকে বাকি শ্রমিকদের মধ্যে শুরু হলো মতানৈক্য । কিছুতেই তারা একমত হতে পারলো না । তাদের মধ্যে কেউ চিকেন, কেউ মাটন আবার কেউ বা মাছ আবার কেউ ডিমকে সমর্থন করলো ।
পরের দিন সুষ্ঠ ভাবে ভোট হয়ে গেলো । ব্যালট পেপারের ফল ছিল চমকপ্রদ :
১. আলু-পরিজ-রুটি - ২৫ ভোট
২. চিকেন - ২৪ ভোট
৩. মাটন - ২০ ভোট
৪. মাছ - ১৫ ভোট
৫. ডিম - ১০ ভোট
৬. ভোট পড়েনি - ৬
ফলে সেই পুরোনো আলু-পরিজ-রুটিই বরাদ্দ রইলো । মালিক পক্ষের টাকা বেঁচে গেলো । ১০০ জন শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ৩ ভাগের ১ ভাগ জনগণ অর্থাৎ ২৫ জনের পছন্দই এখানে জয়ী হলো ।
হ্যাঁ, এটাই গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা । ১০০ জনের মধ্যে ৬৯ জনই আমিষ চেয়েছিলো, কিন্তু সেই নিরামিষই জয়ী হলো ।
উপরের, দুটি আখ্যান পড়লে একটি জিনিসই নজরে আসবে আপনাদের । আর সেটি হলো গণতন্ত্রের সফলতা নির্ভর করে শতভাগ জনগণের একতার উপর । অর্থাৎ, বিভক্ত জনসাধারণের কাছে গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করা অধরা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয় । ভালো শাসক নির্বাচিত করতে হলে জনগণকে একাট্টা হয়ে তাঁকেই শুধু সাপোর্ট করতে হবে । নতুবা, আপনি যাঁকে চাইবেন না সেই আসবে ক্ষমতায় । এটাই বাস্তব । আর এটাই হয়ে আসছে আমাদের দেশে বছরের পর বছর ।
আমাদেরই দ্বিধাবিভক্তির সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় আসছে বছরের পর বছর ধরে অযোগ্য ব্যক্তিই ।
গণতন্ত্রের রাজদন্ড আজ জনগণের হাতেই নেই আর তাই ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)
তারিখ : ১০ মে ২০২৩
টাস্ক ২৬১ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫১৩ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : 9892d5f716e4a55195efa4ac9f8bfa51bd8f53a2eaf5d9bc559e29de94f48f25
টাস্ক ২৬১ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
দাদা গণতন্ত্র কে নিয়ে বেশ সুন্দর একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। আগে ছিল জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। আর এখন আমার তো মনে হয় জনগন হলো হাতের পুতুল। জনগন আজ নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর জনগন এখন কোন ক্ষমতার উৎস নয় দাদা। এখন ক্ষমতার উৎস হলো রাজনৈতিক নেতারা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
অনেক সুন্দর উদাহরণ দিয়ে গণতন্ত্রের পরিমাপকে বুঝিয়েছেন দাদা।আসলেই এখন সবই নামে মাত্র হয়ে থাকে।যেখানে জনগন একত্রিত হয়ে একটি শাসক নির্বাচন করতে পারে সেখানে এখন তার কোনো মূল্যই থাকছে না।জনগণ এখন হাতের পুতুল হয়ে গেছে ক্ষমতাধারী কিছু অযোগ্য মানুষের জন্য।ধন্যবাদ দাদা।
দাদা আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে গণতন্ত্র বিষয়ের অনেক কিছু অজানা জানা হয়ে গেল। আসলে দাদা আপনি ঠিকই বলেছেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র আর জনগণের হাতে নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই দেখেন না কেন পর পর একই সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে টিকে রয়েছে অথচ আমরা জনগণ একতা না হওয়ার কারণে আমাদের দেশের গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে।
দাদা আপনার উদাহরণ দুটি দারুণ হয়েছে। আমাদের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বাছাই করার কথা থাকলেও, সেটা একেবারেই হয় না। কারণ বেশিরভাগ মানুষ ভোট দিতেই পারে না। ভোটারদের ভোট নির্বাচনের আগের রাতেই দেওয়া হয়ে যায়। এমনকি মৃত ব্যক্তিদের ভোটও দেওয়া হয়ে যায়। আর কিছু কিছু মানুষ তো আগে থেকেই টাকা খেয়ে অযোগ্য জনপ্রতিনিধিদের ভোট দিয়ে দেয়। এই হচ্ছে আমাদের উপমহাদেশের গণতন্ত্রের অবস্থা। যাইহোক দারুণ একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছেন দাদা। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
দাদা আপনি আপনার লেখার মাধ্যমে চিরন্তন সত্য কথা তুলে ধরেছেন। আসলে আমরা নামে মাত্র গণতন্ত্র পেয়েছি। এছাড়া কিছুই নয়। আসলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র আর এখন জনগণের হাতে নেই। সবকিছুই শুধু নামে মাত্র। অনেক অনেক ভালো লাগলো দাদা আপনার লেখাগুলো পড়ে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
গল্পটি চরম সত্য। মানুষের মধ্যকার লোভ, একতার অভাব , হিংসা এগুলোই ওই ২৫% অসাধু গুষ্টিকে বিজয়ের হাসি হাসায়। আর এই জন্যই যুগ যুগ ধরে সংখ্যায় অল্প অসৎ মানুষেরাই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপর শাসন শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে।