জীবনের প্রথম কম্পিউটার পাওয়ার অনুভূতি
ফেইসবুক থেকে প্রাপ্ত : আমার ভাইঝি পুটু আড়াই বছর বয়স থেকেই ল্যাপটপ চালানো শিখেছে
ছোটবেলায় কোনোদিনও ভাবিনি বড় হয়ে কম্পিউটার চালিয়েই খেয়ে পরে বাঁচতে হবে । নব্বইয়ের দশকের ছেলেবেলা আমার । তখন ইউরোপ আমেরিকায় কম্পিউটার খুবই জনপ্রিয় হলেও উপমহাদেশে তখন রঙিন টিভি আর ভিসিআর জনপ্রিয় । আমাদের গ্রামের বাড়িতে নিজেদের একটা লাইব্রেরী ছিলো । পারিবারিক লাইব্রেরি । দুঃখের বিষয় ছোটদের কোনো বই ছিল না সেখানে । ছোটদের গল্পের বই কেনা শুরু করে আমার অগ্রজ । আমার জীবনের প্রথম গল্পের বইটিও তারই কিনে দেওয়া । আমার দাদা বয়সে আমার থেকে অনেক বড় । তাই, আমি যখন খুদে ছিলাম একেবারে, দাদা তখন মাধ্যমিক দিচ্ছে । তো, দাদা তখন বেশ কিছু বিদেশী পত্রিকা কিনতো নিয়মিত । সেই বিদেশী পত্রিকার মাধ্যমেই জীবনে প্রথম কম্পিউটার এর পরিচয় পেলাম ।
রঙিন টিভির মতো মনিটর দেখে টিভির সাথে কম্পিউটার এর প্রভেদ করতে পারতাম না তখন । উইন্ডোজ ৯৫ এর বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হতো সেই পত্রিকা গুলোতে । বিশ্বের প্রথম জনপ্রিয় GUI (Graphical User Interface) সম্বলিত অপারেটিং সিস্টেম হলো windows 95 । আমার মনে আছে তখন ভাবতাম উইন্ডোজ মানে তো জানালা, সেটা আবার কম্পিউটারে ঢোকে কি করে ?
এ সব হলো ৯৭ সালের ঘটনা । ছোট ছিলাম তাই বুঝতাম না কিছুই । আর দাদা মাধ্যমিক দিচ্ছে, তাই অনেক কিছু জানতো । পড়ার একটু ফাঁক পেলেই কম্পিউটার এর সম্পর্কে পড়তো । আর গল্প বলতো আমাকে । কম্পিউটারে সব করা যায় । পড়াশোনা, গান শোনা, ভিডিও দেখা, সিনেমা দেখা, টিভি দেখা, গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা আর গেম খেলা । কম্পিউটারে নাকি যে কোনো লেখা বা আঁকা এবং ছবি তাৎক্ষণিক প্রিন্ট করা যায় । শুনে মনে হতো আলাদিনের প্রদীপ মনে হয় এই কম্পিউটার ।
যাই হোক, খুউব ছোট্টবেলা থেকেই কম্পিউটার নামক এই অত্যাশ্চর্য বস্তুটির প্রতি অসীম ভালোবাসা জন্মালো । এটা কি কেনা যায় না ? আমাদের ফ্যামিলির আর্থিক স্বচ্ছলতা মোটামুটি ভালোই ছিল । মধ্যবিত্ত পরিবার বলতে যা বোঝায় আর কি । অতএব স্বপ্ন দেখতে মানা ছিলো না । দাদা আবদার করলো বাবার কাছে । মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করলে চিন্তা ভাবনা করে দেখবে - বাবা জানালো ।
আমি তখন কল্পনায় কত গেম খেলতাম । আনন্দমেলার একটা পূজাবার্ষিকীতে পড়েছিলাম আশ্চর্য সব কম্পিউটার গেমসের বর্ণনা । পড়ে আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম এ জিনিস না হলে আমার চলবে না । যাই হোক, দাদা মাধ্যমিকে খুবই ভালো রেজাল্ট করলে বাবা বললো - "উচ্চ মাধ্যমিক আরো কঠিন, এখন কম্পিউটার কিনলে আর লেখা পড়া হবে না কিছুই । আগে পাশ করো ভালো করে এবং মেডিকেলে চান্স পাও তারপরে কিনে দেব । "
এই কথা শুনে দাদা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়লো ঠিকই তবে নতুন উদ্যমে আবার পড়াশোনা শুরু করলো । ১৯৯৯ সালে দাদা মেডিকেলে চান্স পেলো । আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাবা তার কথা রাখলো । ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় বাড়িতে কম্পিউটার ঢুকলো । সে এক অবাক করা কাহিনী । এক মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির বড় ছেলের স্বপ্নপূরণ । তখন কম্পিউটার এর খুবই উচ্চ মূল্য ছিল । এভারেজ কনফিগারেশনের ডেস্কটপ কম্পিউটার এর মূল্য ছিল ৫৫,০০০ থেকে ৮০,০০০ এর মতো ।
দাম শুনে তো বাবার চোখ কপালে উঠে গেলো । ১৯৯৯ সালে ষাট-সত্তর হাজার টাকার মূল্য অনেক ছিল । যাই হোক, কম্পিউটার শপের মালিক জানালো যদি অপারেটিং সিস্টেম পাইরেটেড নেওয়া হয় তবে দাম প্রায় ১৫,০০০ কম পড়বে । উপায় ছিল না কোনো, তাই দাদা বাধ্য হয়ে রাজি হলো । তো, পাইরেটেড উইন্ডোজ সহ কম্পিউটার এর দাম পড়লো ৫২,০০০ এর মতো । বাজেট স্বল্পতায় ভালো মানের স্পিকার আর মাউজ, কি-বোর্ড কেনা গেলো না ।
আমার জীবনের প্রথম কম্পিউটার এর কনফিগারেশন হলো -
Processor : Intel Pentium III 733 MHz
Motherboard : ASUS
Monitor : SAMSUNG CRT 14''
RAM : 128 MB SD
Graphics Card : 8 MB
Sound Card : 24 BIT
Hard Disk : Quantum Fireball 40 GB
CD ROM : SONY
Floppy Disk Drive : SAMSUNG 1.44 MB
Keyboard : Eagle Touch Multimedia
Mouse : Ball Mouse
Speakers : General
Operating System : Windows 98
অবশেষে স্বপ্নপূরণ । উইন্ডোজ ৯৮ তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে । চমকপ্রদ গ্রাফিক্স । দারুন দারুন সব গেম্স্ । জীবন একেবারে রঙিন হয়ে গেলো । আমরা তখন গ্রাম ছেড়ে শহরে থাকা শুরু করেছি । বিদ্যুৎ নিরবিচ্ছন্ন ছিল । ইন্টারনেট ছিল না । যা কাজ করার, গেম খেলার সব অফলাইনে । এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটার এ ডাটা দেওয়া নেওয়া করার সব চাইতে ইজি ওয়ে ছিল ফ্লপি ডিস্কেট এর মাধ্যমে । পেনড্রাইভের আবিষ্কার হয়নি ।
দিন রাত যখনই সময় পেতাম কম্পিউটারে গেম খেলতে বসে যেতাম । জীবনে প্রথম খেলা কম্পিউটার গেম হলো Road Rash । এরপরে খেলেছি House of The Dead, Virtual Cop 2, Cossacks European Wars, Age of Empire, Need for Speed, Cricket Captain, Cricket 2000, FIFA World Cup 98, Hitman এমন অসংখ্য গেম । ফটোশপে ছবি আঁকা শিখতাম, আর MS Paint তো দারুন প্রিয় ছিল । Microsoft Office এর word এ কত কিছু আবোল তাবোল লিখতাম । দুঃখ তখন একটাই ছিল, বাংলায় লেখা যেত না ।
এভাবেই কখন জানি কম্পিউটারকে জীবন দিয়ে ভালোবেসে ফেললাম আমি । দাদা মেডিকেলে ভীষণ বিজি হয়ে গেলো । কম্পিউটার আর তাকে টানেনি । কিন্তু, ঠিক আরেক জনকে টানলো, ভীষণ ভাবে । কম্পিউটার তার জীবনে প্রথম প্রেম । তেইশটা বছর ধরে কম্পিউটার তার জীবনে মিশে আছে, হয়তো মৃত্যুর আগে অব্দি এভাবেই মিশে থাকবে ।
Sir Please like my post
Hii
চিন্তা করা যায় দাদা ১২৮ এম বি রেম আর ৪০ জিবি হার্ড ড্রাইভ। তারপরও কম্পিউটার ভাল গতিতেই চলতো। আর এখন আমরা সব চাইতে কম হলেও ৮ জিবি রেম এর নিচে কোন কাজই করতে পারি না। আর হার্ড ড্রাইভ তো এক টেরা । সত্যি অদ্ভুত এক আনন্দ হয়েছিল আপনার। আমার বাড়ীতে ২০০৪ সালে প্রথম কম্পিউটার ঢোকে। আমি যেহেতু একমাত্র ছেলে তাই সব কিছুই আমার মতন। আমারও 128 রেম ছিল। হার্ড ডিস্ক ৪০ । তবে তাতে আমি মিষ্টিরিয়াস আই ল্যান্ড গেম খেলেছি। উইন্ডোজ এক্স পি ব্যবহার করতাম।
দাদা আপনার কম্পিউটার পাওয়ার অনুভূতির গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো। বিশেষ করে আপনার দাদার চেষ্টার কমতি ছিল না লেখাপড়া করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আপনার বাবার মনকে জয় করে ফেলেছিল দাদা। আপনার দাদার স্বপ্ন পূরণের সাথে সাথে সেই সাথে আপনিও কম্পিউটার চালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। বিশেষ করে কম্পিউটারে কিনার আগে স্বপ্নে কম্পিউটার চালাতে এবং গেম খেলার স্বপ্ন দেখতেন যেটা পড়ে একটু হাসি পেয়েছি দাদা। যাইহোক, অনেক ভালো লেগেছে চালানোর অনুভূতির গল্প পড়ে।
আমাকে মা কিনে দিয়েছিল ক্লাস এইটে বৃত্তি পাওয়ার পরে , তবে সেটা সম্ভবত 2004 কি 2005 সালের দিকে হবে । আমার ঐ কম্পিউটারটা এখনো আছে ভাই । তবে সেটা আমার আগের বাসাতে । কত স্মৃতি , কত কিছু । কম্পিউটারটা এখনো রেখে দিয়েছি । আপনার অতীতটাও বেশ আবেগপ্রবণ ছিল ভাই । ভালোই লাগলো পুরো লেখাটা পড়ে ।
৯৭ সালের ঘটনা,তখন আমি জন্মগ্রহণ করিনি।ভগবান জানেন কোন দুনিয়ায় ছিলাম।সেই কালে বেশ চড়া দামে কম্পিউটার কিনে স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন দাদা।একজনের স্বপ্ন পূরণের সঙ্গে সঙ্গে অন্যজনের হাতে খড়ি তারপর কম্পিউটার জীবনসঙ্গী।দারুণ লাগলো বড়ো দাদার সঙ্গে সঙ্গে আপনার স্বপ্ন পূরণ পড়ে।ধন্যবাদ দাদা,শুভকামনা রইলো আপনার পরিবারের সকলের জন্য।।
কম্পিউটার প্রেমিক মানুষ।আপনার মত আমার বড় ভাই মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর তাকে ল্যাপটপ কিনে দেওয়া হয়েছিলো ৫১০০০ টাকা দিয়ে। আমি তখন সভেন কিংবা এইটে।ভাইয়া যখন কম্পিউটার অন করতো সামনে বসে থাকতাম। মনে পরে গেলো অতীতের কথা।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
Thank You for sharing...
ওই সময় আপনার বাবা কম্পিউটার কিনে দিয়েছিল বলেই হয়তো আজকে আপনি কম্পিউটারের খুঁটিনাটি সবকিছু নখদর্পণে করতে পেরেছেন । অবশ্যই এর জন্য আপনার দাদা বিশাল বড় ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমাদের বাসায় যখন প্রথম কম্পিউটার এলো তখন ও আমাদের একটি নেশাই ছিল গেমস খেলা । সবাই মিলে পাল্লা দিয়ে গেম খেলতাম।আপনার আজকের পোষ্টের মাধ্যমে সে কথা মনে পড়ে গেল।
এতদিনে আপনার প্রথম প্রেমকে খুঁজে পাওয়া গেল অবশেষে।
আপনি প্রথম দিকে কম্পিউটারের সংস্পর্শে আসেন। 2003 সালে যখন আমি আমার ইমেল অ্যাকাউন্ট খুলি তখন আমি প্রথমবারের মতো একটি কম্পিউটার পরিচালনা করি এবং 2009 সালে আমি আমার প্রথম ডেস্কটপ পাই কারণ আমার বাবা শিক্ষিত নন তাই তিনি কম্পিউটার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।
আমি যখন প্রথম উইন্ডোটি শুনেছিলাম, তখন আমি ভেবেছিলাম এটি একটি বাড়ির জানালা ছিল না জেনে এটি একটি অপারেটিং সিস্টেমের একটি সংস্করণ। এটা মজার কারণ আমরা হাই স্কুলে কম্পিউটার কোর্স শিখিনি। এখন, 1 বছর বয়স থেকে শিশুরা কম্পিউটার চালানো শুরু করেছে। তাদের আগে আয়ত্ত করার একটি খুব বড় সুযোগ রয়েছে কারণ অনেক লোক এখন একটি কম্পিউটার কিনতে পারে যখন এটি ব্যয়বহুল ছিল এবং শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিরা এটি বহন করতে পারে। পৃথিবী সত্যিই বদলে গেছে। প্রথম উইন্ডোজ ৮-এর তুলনায় এখন আমাদের কাছে অত্যাধুনিক অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। দারুণ পোস্ট।
Thank You for sharing Your insights...
জীবনে প্রথম কম্পিউটার পাওয়ার অনুভূতি আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন, যা আমার কাছে অনেক ভালো লাগল আপনার অনুভূতির কথা গুলো পড়ে। দামের দিক থেকে সেই সময় খুবই উচ্চ মূল্য ছিল বলে অনেকেই এটিকে স্বপন পূরনের একটি বস্তু ছিল। জীবনে নতুন কিছু পাওয়ার আখাংকা সত্যি এরকম হয় দাদা। আমি যখন লেপটপ কিনেছিলাম, সেই সময়টা আমার রাতে ঘুম হত না ,মনে হত আমি ঘুমের মধ্যে সেখানে বসে আছি। এই যে একটা অন্যরকম আগ্রহ প্রকাশ হয় , এটি জীবনের আনন্দের মুহূর্র্ত । শুভকামনা দাদা