রহস্যগল্প 'মাশরুম" - পর্ব ০১

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)


copyright free image source pixabay

-"মাশরুম?"
-"হ্যাঁ, মাশরুম। আমার গবেষণার বিষয় মাশরুম নিয়ে ।"
-"মানে মাশরুম চাষ-বাস করা নিয়ে গবেষণা ?"
-"না একটু ভিন্ন ধরনের।আমি আসলে মাশরুমের জিনোম সিকুয়েন্স চেঞ্জ করে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মাশরুম উৎপাদনের চেষ্টা করছি।"
-"সম্পূর্ণ নতুন ধরনের?"
-"হ্যাঁ, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের।"
-"এই মাশরুম কি খাওয়া যায়?
-"না, না এটা নতুন প্রজাতির। টক্সিক। "
-"তাই বলুন আমিও তাই ভাবি। আমেরিকা ফেরত গবেষক কি আর মাশরুম চাষ করবেন !"

উত্তরে মৃদু একটা হাসি দিলেন ড: সোম । আমেরিকা থেকে বছর দু'য়েক আগে মধ্যপ্রদেশের এই পাণ্ডববর্জিত জঙ্গলের মধ্যে একটা গবেষণাগার স্থাপন করেছিলেন উনি। সম্প্রতি গবেষণাগার পরিদর্শনের জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকার একজন পরিদর্শক পাঠিয়েছন , মি: ভি. বালাপোরিয়া ।

সারাদিন গবেষণাগার পরিদর্শন ও গবেষণার কাগজপত্র পরীক্ষা করে কেটে গেল । সন্ধ্যায় বারান্দায় ইজি চেয়ারে মুখোমুখি দু'জন বসে। মাঝে মাঝে কেয়ারটেকার ছোট্টুলাল এসে কফি দিয়ে যাচ্ছিলো ।

-"কফির স্বাদটা কিন্তু দারুন, মি: সোম ।"
-"খোদ দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল থেকে আনানো ভালো তো হবেই।"
-"ব্রাজিল ? গেছিলেন নাকি?"
-"হ্যাঁ, অনেক বার, আমি যে সব ধরণের মাশরুম নিয়ে গবেষণা করি সেগুলি শুধুমাত্র ব্রাজিলেই জন্মে থাকে ।"
-"তাই নাকি ? ও, হ্যাঁ, একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি। আপনার গবেষনাগারে কোনো মাশরুম দেখতে পেলাম না কেনো ?"
-"দেখুন, মি: বালাপোরিয়া, আমার গবেষণাটা মূলত জিন নিয়ে গবেষণা করার জন্য । আপনি মাশরুমের সংগ্রশালা দেখতে চাইলে ওই যে জঙ্গলের মধ্যে লম্বা টানা প্লাস্টিকের শেডের যে ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন, ওখানে যেতে হবে ।"

বেশ কিছুটা দূরে , ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে প্রায়ান্ধকার একটি প্লাস্টিকের শেড দেয়া লম্বা টানা ঘরের কিছু অংশবিশেষ এই রাতেও আবছা দেখা যাচ্ছে । ড: সোম সেই দিকেই নির্দেশ করলেন ।

-"তাহলে তো যেতেই হচ্ছে ।"
-"এই রাত্রে !!"
-হ্যাঁ, কোনো অসুবিধা ? আলো আছে তো ।"
-"না, তেমন কোনো অসুবিধা নেই, আলোও আছে, তবে ...."
-"তবে ?"
-"রাতের বেলা যেতে আমি সবাইকে নিষেধ করে থাকি।"
-"কী জন্য জানতে পারি কী ?"
-"নিরাপত্তার জন্য।" --- ড: সোমের গলায় দ্বিধা ।

-"নিরাপত্তা ? কিসের নিরাপত্তা ? এই জঙ্গলে তো শুনেছি কিছু নেকড়ে , শেয়াল আর অল্প কিছু চিতা আর ভালুক ছাড়া আর তেমন কোনো হিংস্র প্রাণী নেই । আমি আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারছি না মি: সোম । কিসের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ? খুলে বলুন তো ।
-"দেখুন, এটা আমার গবেষণার গোপনীয় বিষয় । তবে আপনি যদি কথা দেন যে, কোনও মাশরুমকে আপনি টাচ করবেন না, তাহলে আপনাকে আমি এলাও করবো যেতে।"

-"আপনি ভুলে যাচ্ছেন ডঃ সোম ।আমি সরকারের প্রতিনিধি । সবকিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্যই আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে ।"
-"আমি কিছুই ভুলে যাইনি মি: বালাপোরিয়া । আমি আপনার নিরাপত্তার জন্যই বললাম শুধু । যাই হোক, আপনি নিতান্তই যখন দেখবেন , তো, চলুন আপনাকে সব দেখাই । শুধু ভুলেও কোনো মাশরুমকে আপনি টাচ করবেন না যেন ।"

উত্তরে শুধু একটা মৃদু হাসি দিলেন বালাপোরিয়াজী ।
রাত ন'টা বাজে । আকাশে ফাগুনী পূর্ণিমা । জঙ্গলে রাত ন'টা মানে অনেক রাত । মৃদু মৃদু হাওয়া দিচ্ছে । জোনাকি দেখা যাচ্ছে দূরে ঝোপে ঝাড়ে । মাঝে মাঝে শেয়াল বা নেকড়ের ডাক ভেসে আসছে দূর থেকে ।

ছোট্টুলাল আগে আগে টর্চ হাতে । পিছনে মি: বালাপোরিয়া , আর সবশেষে প্রফেসর সোম । কারো মুখে কোনো কথা নেই । নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছেন তারা "মাশরুম" ঘরের দিকে ।

মাশরুম ঘরের চারিদিকে পাতলা প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে ঘেরা । উপরে প্লাস্টিকের শেড । একটা আনুমানিক ৫০ ফিট লম্বা, ২০ ফিট চওড়া ঘর । ছ'টা সারি পর পর নানান আকৃতির নানান রঙের মাশরুম টবের ভিতর । কোনোটা খুবই ছোট, কোনোটা খুবই বড়, কোনোটা সাদা ধবধবে, কোনোটা কমলা, কোনোটা লাল আবার কোনোটা কালো কুচকুচে ।

মি: বালাপোরিয়া হতবাক । জীবনে এত ধরণের বাহারি মাশরুম কোনোদিন চোখে দেখেননি । কোনোটায় হাত দেয়া নিষেধ । উনি তাই শুধু দেখতে দেখতে একদম ঘরের শেষ প্রান্তে চলে গেলেন ।

এমন সময় নাকে একটা অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ এলো । গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে তিনি একটি কাঠের স্ট্যান্ডের উপর বেশ বড় একটা পেতলের গামলা দেখতে পেলেন । ভেতরে কালো মাটি । কিন্তু কোনো মাশরুম দেখতে পেলেন না । আরেকটু ভালো ভাবে দেখার জন্য পেতলের গামলাটার খুবই কাছে গিয়ে মাথা ঝোঁকালেন ।

গামলার মাটিতে কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র দেখতে পেলেন শুধু । কিন্তু কোনো মাশরুম নেই সেখানে।

এমন সময় হাঁ হাঁ করে ছুটে এলেন প্রোফেসর সোম । বেশ কর্কশ ভাবে বালাপোরিয়াকে সরে যেতে বললেন ওই গামলাটার কাছ থেকে । মি: বালাপোরিয়া তো অবাক । তিনি তো কোনো কিছু টাচ করেননি, তবু এহেন আচরণ কেন প্রফেসরের ?

মি: বালাপোরিয়া ফিরে তাকালেন, দেখলেন প্রফেসরের মুখ রাগে গনগনে লাল । কী এমন হলো যে এত রাগ করছেন উনি ?
.......[চলবে ]

Sort:  

পড়তে অনেক ভালো লাগলো । পরের অংশ পড়ার জন্য অপেক্ষায় আছি।

 3 years ago 

সত্যিই লেখা টা অনেক সুন্দর হয়েছে 🥰

 3 years ago 

অনেক ভাল লিখেছেন! গল্প টা পড়তে পড়তে কখন যে শেষ হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি।মাশরুম নিয়ে এতো সুন্দর চেতনা আমাকে মুগ্ধ করেছে! 😱

বাহ দাদা প্রথম পর্বতেই ভালো টুইস্ট মনে হল। অধীর আগ্রহে দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি। খুব সুন্দর একটি সিরিজ হবে এটি আশা করি

 3 years ago 

দাদা আপনি মাশরুম সম্পর্কে অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন, আপনার উপস্থাপনাটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে এবং মাশরুম সম্পর্কে অনেক জ্ঞান আহরণ করতে পারলাম, আপনার দিকে চেয়ে রইলাম কবে পাব আবার নেক্সট পর্ব। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা আপনাকে।

কি উত্তেজনাপূর্ণ গল্প !!!
মাস্টারের মুখ রাগে লাল হয়ে গেল কেন?
আমি জানতে চাই গল্পের শেষে কি হয় ...
আমি মাশরুম পছন্দ করি এবং আমি সবসময় সুন্দর মাশরুম খুঁজতে বনে যাই।

 3 years ago 

বাহ দাদাতো খুব দারুণ লিখেছেন, খুবই ব্যতিক্রমী একটি টপিক। অনেক ভালো লেগেছে ?অপেক্ষায় রইলাম দ্বিতীয় পর্বের।

আহ এমন জায়গায় আজকের পবটা শেষ করলেন দাদা। এখন তো সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খাবে যে এরপর কি হবে? দারুন লিখেছেন দাদা। আমি এমনিতেই থ্রিলারের ভক্ত। মনেই হচ্ছে না অ্যামেচার কারো লেখা পড়ছি। খুবই সুন্দর হচ্ছে দাদা।চালিয়ে যান।

 3 years ago (edited)

কি হতে চলেছে। যতই পড়ছিলাম তো তাই মনে হচ্ছে সামনে কিছু না কিছু হতে চলেছে, হতে চলেছে। কিন্তু দাদা হঠাৎ করেই থামিয়ে দিলেন। পরের পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো। খুব তাড়াতাড়ি দিবেন । পড়তে আগ্রহ পাচ্ছি

 3 years ago 

গল্পটি পড়তে পড়তে অনেক রহস্যময় লাগছিল।অসাধারণ হয়েছে গল্পটি।খুব শীঘ্রই গল্পের পরবর্তী অংশের অপেক্ষাই রইলাম দাদা।ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.20
JST 0.038
BTC 94819.33
ETH 3557.02
USDT 1.00
SBD 3.79