বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজলো আমার শহর
কপিরাইট ফ্রী ইমেজ সোর্স : পিক্সাবে
গত সোমবার । সকালবেলা হঠাৎ ঘুম থেকে উঠেই দেখি অন্ধকার । কী ব্যাপার ! এখন তো বেলা প্রায় সাড়ে ন'টা । অন্ধকার কেনো ঘর ? দ্রুত জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখি আকাশ ঘোর কালো আঁধারে ঢাকা। আসন্ন বৃষ্টির পূর্বাভাস । কিন্তু, মন খুব একটা নেচে উঠলো না । সেই শুক্রবার থেকেই এমনটা হচ্ছে । আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়, কিন্তু বৃষ্টি শেষমেশ আর পড়ে না ।
আশায় আশায় গেলো শুক্রবার, শনিবার, রবিবার । কিন্তু, হৃদয় শীতল করা সেই বৃষ্টির ধারায় ভিজলো না আমার শহর । অথচ এই তিনদিন ধরেই প্রত্যেকদিন আকাশ কালো করে মেঘের ঘনঘটা শুরু হয় আর শেষমেশ কোথায় যেন তারা উবে যায় মন্ত্রবলে । বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও হয় না ।
কিন্তু, এদিনের মেঘ অন্যান্য দিনের দিনের মতো ছিল না মোটেও । জলভরা ঘন কালো মেঘে পুরো দিগন্তরেখা ঢেকে আছে, চরাচর ছেয়ে গিয়েছে সন্ধ্যার মতো আঁধারে । মন বলতে লাগলো এবার বৃষ্টি আসবেই । বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজবো ভাবতেই নিমেষে মনটা নেচে উঠলো একরাশ খুশিতে । আমি বৃষ্টি ভালোবাসি । খুব বেশিই ভালোবাসি । বৃষ্টি আমার মন ভালো করে দেয়, বৃষ্টি আমাকে আনমনা করে তোলে । জানালা দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়া পড়তে দেখতে দেখতে স্মৃতি রোমন্থনে ভেসে যাই অতীতে ।
মনে পড়ে ছোটবেলার বর্ষার স্মৃতি । গ্রামে থাকতাম যখন তখন বর্ষার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত । শহরের ইঁট, কাঠ, পাথরে ঘেরা খাঁচায় বসে বৃষ্টির সৌন্দর্য তেমন একটা উপভোগ্য নয় । বর্ষাকালে আমাদের গ্রামের বাড়িতে টিনের চালার উপরে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার শব্দে মনটা নেচে উঠতো । অতীতের স্মৃতিচারণা করলাম নিচের কয়েকটা লাইনে -
"বর্ষাকাল, প্রায় সারাদিনই শ্রাবণের ধারা অঝোর ধারায় ঝরে চলেছে । এমন দিনেই তো তেলেভাজা জমে ভালো, সাথে সর্ষের তেল, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মুড়ি আর...... ভূতের গল্প । বাইরে এলোমেলো দমকা জোলো হাওয়া, থেকে থেকে কখনো ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে আবার কখনও বা মুষল ধারায় । সন্ধ্যার পরে ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকা আর বৃষ্টি পড়ার শব্দ , মাঝে মাঝে আকাশের এ মাথা থেকে ও মাথা অব্দি বিদ্যুতের ঝিলিক, মেঘের গুরু গুরু ডাক সব মিলিয়ে শ্রাবনের সন্ধ্যা একটা অদ্ভুত মায়াবী আশ্চর্য সন্ধ্যা । এই রকম সন্ধ্যে বেলায় কোনো কালেই ক্লাসের বই ছুঁতাম না । গ্রামের ছেলে, বিদ্যুৎ ছিল না, হ্যারিকেনের কাঁপা কাঁপা আলো, দেয়ালে অদ্ভুত আলো-ছায়ার খেলা, খোলা জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছাঁট- ভূতের গল্পের বই খুলে বসতাম । আর সাথে থাকতো কখনো আলুর চপ, কখনো পেঁয়াজী-বেগুনি, ডাল-পুরি, সিঙ্গাড়া, ফুলুরি আর অবশ্যই বড়ো একবাটি সর্ষের তেল আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাখা মুড়ি ।"
আজকের দিনে পুরোনো কথা খুব বেশি করে মনে পড়তে লাগলো । এসব কথা ভাবতে ভাবতে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে এক ঝলক এলো হাওয়া এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার মুখে । আহঃ কি শীতল স্পর্শ ! মনটা এক নিমেষে সজীব হয়ে উঠলো । একটু পরে খেতে বসলাম । ক্রমশঃ বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখলাম । সেই সাথে আরো আঁধার হচ্ছে চরাচর । খাওয়া শেষ হতে না হতেই হঠাৎ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু করলো ।
আমার ছেলে টিনটিন "বৃষ্টি" "বৃষ্টি" বলে চেঁচাতে চেঁচাতে সারা বাড়ি মাথায় করে তুললো । এক লাফে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়েই অমনি টিনটিনকে কোলে তুলে নিয়ে ছুট দিলাম । আমার লক্ষ্য ছাদ । পিছনে তনুজা ছুটে এসে বার বার বারণ করতে লাগলো আমাকে । কিন্তু, কে শোনে কার কথা ! ততক্ষণে টিনটিনকে কাঁধে নিয়ে আমি ছাদে ।
বৃষ্টি ততক্ষণে আর ঝিরি ঝিরি নেই । বড় বড় করে ফোঁটা পড়া আরম্ভ হয়েছে । আর সেই সাথে তুমুল ঝোড়ো হাওয়া । অসম্ভব ঠান্ডা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো । দু'হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মেখে নিতে লাগলাম সারা গায়ে, মুখে, চোখে, ঠোঁটে, চিবুকে সর্বত্র । টিনটিন নাচতে লাগলো বৃষ্টির মধ্যে । আহা ! সে কি এক অপূর্ব অনুভূতি ।
ভিজলো আমার শহর, ভিজলো আমার ছাদ, ভিজলো আমার শরীর, ভিজলো আমার হৃদয় । কী যে এক অপূর্ব প্রশান্তিতে মনটা ছেয়ে গেলো আমার তা বলে বোঝাতে পারবো না ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)
তারিখ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩
টাস্ক ২৪৭ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : b4b36143d26907aff1f10d12f57aad6241dfdb2c80132598f3b4552651c03279
টাস্ক ২৪৭ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Hello friends, if you support me, I will support you too. If you follow me, I trust you too.
Check here :- @ashutos
হ্যালো বন্ধুরা, আমাকে সমর্থন করলে আমি আপনাকেও সমর্থন করবো। আপনি আমাকে ফলো করলে, আমি আপনার উপর বিশ্বাস করবো
নতুন বছরের প্রথম বৃষ্টিতে তাকে খুশি দেখে আমার অনেক আনন্দ হয়। দাদাবাদী
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দাদা ঈদের আগের দিন বিকেলে আমাদের ঢাকায় হাল্কা একটু ঠান্ডা বাতাস আর অল্প বৃষ্টি হয়েছিল।আমি ইফতার বানাচ্ছিলাম।কিন্তু এত আনন্দ লাগছিল সেদিন বৃষ্টি দেখে আমি ডিসকোডে এসে লিখেছিলাম বৃষ্টি হচ্ছে।সত্যি তা এক দারুন অনুভূতি। আর সেই অল্প বৃষ্টিতে আজও শহর অনেকটাই শীতল।প্রিয় মানুষের সাথে বৃষ্টিতে ভিজলে ভাল লাগাটা আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। সুন্দর অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে।শুভকামনা রইলো।
সর্ষের তেল আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাখা মুড়ির মুড়ির কথা শুনেই খেতে ইচ্ছে করছে দাদা😍। আসলে বৃষ্টির দিনকে ঘিরে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। বিশেষ করে শৈশব স্মৃতি গুলো আরো বেশি মধুর ছিল। দাদা আপনি এবং টিনটিন দুজনে বৃষ্টিতে ভিজেছেন জেনে ভালো লাগলো। বৃষ্টির শীতলতা হৃদয় শীতল করেছে। আসলে ভিন্ন রকমের একটি অনুভূতির সাক্ষী হয়েছেন। অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখাগুলো পড়ে।
দাদা আপনার আজকের ব্লগটি পড়ে অনেক ভাল লাগলো। মূলত ব্লগ যাকে বলে সেই ব্লগের মজা পেলাম। আমরা গত শুক্রবারে এই বছরের প্রথম বৃষ্টি দেখেছিলাম। তবে আমি অভাগা ভিজতে পারি নাই। দাদা আপনি ভিজেছেন,আপনার শহর ভিজলো তাহলে টিনটিন কোথায় গেল..। টিন টিন বাবুতো আপনার সাথেই ছিল,টিন টিন ভিজে নাই...?
হ্যাঁ দাদা শুক্রবার থেকে এমন ওয়েদার থাকায় সোমবার দিনও প্রথমে মনে হচ্ছিল না বৃষ্টি হবে বলে। কিন্তু শেষমেষ তো প্রচন্ড হাওয়া দিলো তারপর তো হয়েই গেল এক পশলায় বৃষ্টি। আপনি তো দেখছি বৃষ্টি প্রচন্ড ভালোবাসেন দাদা। অতীতের স্মৃতিচারণার লাইনগুলো ছিল সত্যি গ্রামে না থাকলে সেসব অনুভূতি অনুভব করা যায় না। টিনটিনকে কোলে নিয়ে ছাদে চলে গেলে আপনার সাথে সাথে নিশ্চয়ই টিনটিনও খুব খুশি হয়ে গিয়েছিল।
আজকের পোস্টটা তুমি এত সুন্দর করে লিখেছ দাদা যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুধু পড়লাম। আমার মনে হয় না কোন ভালো লেখকও বৃষ্টি নিয়ে এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারবে। তবে দাদা তুমি ঠিকই বলেছ, শহর অঞ্চলে বৃষ্টির যে ফিলিংস সেটা এই ইট বালি, সিমেন্টের জঙ্গলে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। বৃষ্টির মজা হল গ্রামে। টিনের চালের উপর বৃষ্টির ফোটা পড়বে আর সাথে থাকবে মুড়ি মাখা সরিষার তেল দিয়ে। তোমার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার কথাই মনে পড়ে গেল আরো একবার।
তিনদিন বৃষ্টি ফাঁকি দেওয়ার পর গত সোমবার আপনার শহর ভিজিয়ে দিয়েছে।আমাদের তো একসপ্তাহ যাবৎ ফাঁকি দিয়েই যাচ্ছে।ঠিকই বলেছেন কিন্তু দাদা গ্রামে বর্ষার সময় বেশ উপভোগ করা যায়।টিনটিন বাবুকে নিয়ে ছাদে গিয়ে বৃষ্টির জল উপভোগ করলেন।বেশ আনন্দ করেছিলেন বাবা ছেলে।আর এটা কিন্তু ঠিক বৃষ্টি শৈশব সহ অনেক পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।অনেক ভালো লেগেছে আপনার পোস্টটি ।ধন্যবাদ দাদা সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপনার লেখা সেই কয়েকটা লাইনে অতীতের স্মৃতি খুব ভালোভাবেই ফিরে পেলাম দাদা। আপনি একদম ঠিক বলেছেন বৃষ্টি দিনের আনন্দ গ্রামবাংলায় যেরকম ছিল শহরে তার ছিটেফোটাও পাওয়া যায় না। টিনটিন বাবুকে নিয়ে ছাদে বৃষ্টিতে ভেজার মুহূর্ত গুলো কল্পনা করতে খুব ভালো লাগছে দাদা।