উপমহাদেশীয় দেশসমূহের রাজনীতিতে ধর্ম নিরপেক্ষতা
কপিরাইট ফ্রী ইমেজ সোর্স : পিক্সাবে
উপমহাদেশীয় দেশসমূহের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা টার্মটি বারেবারে মুখ্য আলোচনায় ফিরে আসে । এই তিনটি দেশই একসময় অভিবক্ত ভারত হিসেবে পরিচিত ছিল । ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগের পর থেকে এই তিন দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে "ধর্ম নিরপেক্ষতা" জায়গা করে নিয়েছে । প্রথেম ভারত ভেঙে দু'টি পৃথক দেশে পরিণত হয় - ভারত এবং পাকিস্তান । পাকিস্তানের একটা টুকরো ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিতি লাভ করে যেটা পরে ১৯৭১ সালে এক সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থানে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ "বাংলাদেশ" হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ।
তিনটি দেশের জন্মলগ্নে দেশনেতাদের ধর্ম নিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল দেখে নেওয়া যাক । ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় দেশনেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা, আর তাই ভারতের সংবিধানে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে মর্যাদা প্রদান করা হয় । কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের কাছে একটা ভোট-অস্ত্র হিসেবে মান্যতা পেয়ে আসছে । প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা অমিল ভারতীয় রাজনীতিতে । অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্মই হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে । তাই পাকিস্তান জন্মলগ্ন থেকে এখনো অব্দি "ধর্ম অনিরপেক্ষ" তকমা ঘোচাতে পারেনি, সেই চেষ্টাও অবশ্য দেশনেতাদের কেউই কখনো করেছেন বলে শোনা যায় নি ।
এবার আসা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় প্রথম সারির সব রাষ্ট্রনায়কদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল "ধর্ম নিরপেক্ষতা" যেটি সময়ের সাথে সাথে বিবর্ণ হতে হতে এখন শুধুই একটা কথার কথা ছাড়া আর কিছুই নয় । বাংলাদেশ এখন আপদমস্তক একটি "ধর্ম অনিরেপক্ষ" দেশ, মৌলবাদের শেকড় গভীরে তার শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আছে । সাধ্য কি সেই অবস্থা থেকে দেশকে উত্তরণ করার ।
তবুও, ভারত আর বাংলাদেশে এখনো "ধর্মনিরপেক্ষতা" বিষয়টি বেশ চর্চিত । কারণ ? এর পেছনে কারণ একটাই । ধর্মীয় বিভেদকরণের নগ্ন রাজনৈতিক জটিল সমীকরণ । দু'টি দেশেই সংখ্যালঘুরা ভোটে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর । পাকিস্তানে অবশ্য তা নয় । কারণ, পাকিস্তানে গণতন্ত্র একটা হাসির কথা ছাড়া আর কিছুই নয় । পাকিস্তান প্রকৃতপক্ষে একটা সামরিক শাসিত দেশ । গণতান্ত্রিক ভোটটা জাস্ট একটা খেলা ছাড়া আর কিছুই নয় । আর তাই, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণ তেমন একটা দৃষ্টিগোচর হয় না ।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় শতাংশ হারে নগন্য - মোটে ৮.৪৫ শতাংশ । আর তাই, ভোটেও তাদের প্রভাব কম হওয়ার কথা । কিন্তু, বাস্তবে প্রভাব ততটা কম নয় । এর কারণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভোট বিভাজনের হার এত নগন্য যে সেটাকে নেই বললেই চলে । আর তাই একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলকেই তারা একজোট হয়ে ভোট দেয় । ভোটের ময়দানে কোনো রাজনৈতিক দলের যদি ৮-১০% এর একটা ভোটব্যাংক থাকে তবে সেই দলকে খুবই কঠিন প্রতিদন্দ্বী দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে । আর তাই, বাংলাদেশে এখনো ধর্ম নিরপেক্ষতার মেকি বুলি আওড়ানো হয়ে থাকে, আর সেটা করা হয় বিশেষ করে ভোটের ময়দানে । প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা এখানে একটা কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয় ।
এবার কথা শেষ করবো ভারতের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা কতটুকু তা বলে । ভারতে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক ২১শতাংশের কাছাকাছি । বিশাল দেশ, ৩৬টি রাজ্য, ১৪০ কোটির বিশাল জনসংখ্যা, অগণিত রাজনৈতিক দল । আর তাই এখানে বাংলাদেশের চাইতে হিসেবটা একটু জটিল । ভারতের রাজনীতিতে "ধর্মনিরপেক্ষতার" সংজ্ঞা বেশ হাস্যকর । ভারতে মূলতঃ ৭-৮ টি রাজনৈতিক দলই বৃহৎ । তবে, এদের মধ্যে সর্বভারতীয় দলগুলোর কথাই আজ বলবো । সব বৃহৎ আঞ্চলিক দলগুলোর কথা বলতে গেলে আর্টিকেলটা অনেকটা লম্বা হয়ে যাবে ।
বিজেপি, কংগ্রেস, বহুজন সমাজবাদী পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি এই দল ক'টিই সর্বভারতীয় বৃহৎ দল । আর আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস হলো বৃহৎ শক্তির আঞ্চলিক দল । এই সকল দলগুলিই "ধর্মনিরপেক্ষতার" নামে দ্বিচারিতা করে । বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক হলো "হিন্দুরা", আর তাই তাদের কাছে ধর্মনিরপক্ষেতার সংজ্ঞা বলতে একটাই - "হিন্দু ধর্মালম্বীদের কল্যাণ এবং হিতকর উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং অহিন্দুদের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুই বঞ্চনা । কংগ্রেসের কাছে "ধর্মনিরপেক্ষতার" সংজ্ঞা হলো - "যত ভাবে পারো হিন্দুধর্মের বিরোধী কর্মকান্ড করে যাও, কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে অহিন্দুরা তেমনভাবে কোনো প্রায়োরিটি পাবে না" । বহুজন সমাজবাদী পার্টির কাছে "ধর্মনিরপেক্ষতা" আবার একটু জটিল - "হিন্দুদের মধ্যে জাতপাতের বিভেদ তৈরী করে ভোটব্যাংক গড়ে তোলো, আর মুসলিমদের তোষণ করো কিন্তু অমুসলিম সংখ্যালঘুদের বঞ্চনা করে যাও ।" কমুনিস্ট পার্টির কাছে "ধর্মনিরপেক্ষতার" সংজ্ঞা হলো - "যেভাবে পারো হিন্দুধর্মকে দুনিয়া থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করো, কিন্তু অন্য ধর্মে আমাদের এলার্জি নেই, সেসব থাকুক আর উন্নয়নের ক্ষেত্রে শুধু বড় বড় বুলি কপচাও কিন্তু হিন্দু-মুসলিম কারো উন্নয়ন না করে নিজের পকেট ভরো । " সবশেষে নিজের রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের ক্ষেত্রে বলবো তাদের ক্ষেত্রেও "ধর্মনিরপেক্ষতা" বলতে শুধু হিন্দুধর্মের বিরোধিতা, হিন্দুদের বঞ্চনা করা এবং মুসলিমদের তোষণের রাজনীতি চালানো ঠিক হচ্ছে না ।
রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থ ধর্মকে কোনো ফ্যাক্টর হিসেবে না দেখে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকলের কল্যাণার্থে, সকলের হিতার্থে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে দলকে ব্যপৃত রাখা । প্র্রয়োরিটি দেওয়া হোক ধর্ম-বর্ণ বা জাতি দেখে নয়, যোগ্যতম দেখে । তবেই, উপমহাদেশীয় দেশসমূহের রাজনীতিতে "ধর্ম নিরপেক্ষতা" আর অবান্তর হয়ে উঠবে না, ক্রমে এটি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে ।
সব শেষে বলবো, শাসকের ক্ষেত্রে একটিমাত্র দৃষ্টি ভঙ্গিই দেখতে চাই আমরা - "ধর্মীয় ভিত্তিতে শাসন নয়, জয় হোক মানুষের, জয় হোক মানবতার" ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫৫৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 555 trx)
তারিখ : ০৩ মার্চ ২০২৪
টাস্ক ৫১৬ : ৫৫৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫৫৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : f6b78ac976309ddd135eed8a6340ece4aac2734208e9ec60a3c646855aa4e1be
টাস্ক ৫১৬ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
দারুন লিখেছেন দাদা। আমার কাছেও মনে হয় ধর্মীয় শাসন নয় বরং মানবিকতা কিংবা মানবতার জয় হওয়া অনেক বেশি জরুরী। দাদা আপনি নিজের মতামত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং আমাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Congratulations, your post has been upvoted by @upex with a 58.64% upvote. We invite you to continue producing quality content and join our Discord community here. Keep up the good work! #upex
This is a very interesting post with lots of information you have shared.
I never knew that Bangladesh and Pakistan were a part of india, but now I know.
Thank you so much Dada for this information ❤️❤️❤️
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 100 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Once again you have written a wonderful post, this time on secularism in India and bangladesh and on the religious sentiment prevalent in the Indian society. I believe in other for this to be combated the society needs to work together to achieve one true goal that's beneficial for everyone.
Thanks for sharing.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমাদের উপমহাদেশের এখনকার রাজনীতি হচ্ছে একেবারে নোংরা রাজনীতি। নেতা বা নেত্রীদের রাজনীতি করার প্রধান কারণ হচ্ছে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। আবার কিছু কিছু রাজনৈতিক দল এই ধর্ম অপছন্দ করে, সেই ধর্ম অপছন্দ করে। প্রকৃতপক্ষে এটা তো কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তিবর্গের করা উচিত নয়। তাদের উচিত দল, মত,ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে কাজ করা। যাতে করে দেশের নাগরিকরা ভালো থাকতে পারে এবং সর্বোপরি দেশটাকে উন্নত করা যায়। প্রকৃত রাজনীতিবিদদের চিন্তা ভাবনা এমনটাই হওয়া উচিত। তাহলেই সে প্রকৃত রাজনীতিবিদ। প্রকৃত নেতা ছিলেন আমাদের হযরত উমর ফারুক (রাঃ),তিনি উনার শাসনামলে রাতের বেলা ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষদের দুঃখ দুর্দশা দেখার চেষ্টা করতেন। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
দাদা আপনি উপমহাদেশীয় দেশসমূহের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যে আলোচনা করেছেন। তিনটি ভিন্ন দেশের ভূ রাজনীতির কারণে বর্তমান যে পরিস্থিতি তা নিখুত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সত্যিই ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে। প্রত্যেকটা দেশে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন ভাবে ধর্মীয় গুড়ামি নিয়ে কাজ করে চলেছে। অনেক সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছেন দাদা ভালো লাগলো। এই নোংরা রাজনীতির কারণে মানবিকতা সমাজ সবকিছু ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে।