গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০১
copyright free image source pixabay
এক
সাতসকালেই লালবাজারের হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টে একটা ফোন-কল এলো । রহস্যমৃত্যু, উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের এক এপার্টমেন্টে । স্থানীয় থানার বড়বাবু ভীষণ হিমশিম খাচ্ছেন এই কেসটি নিয়ে । খুনটা হয়েছে গতকাল, অথচ ২৪ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পরেও কোনোরকম সূত্র নেই পুলিশের হাতে । আর যিনি খুন হয়েছেন তিনি ভিআইপি পার্সন । তাই পুলিশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে কেসটা নিয়ে খুবই ।
ফোন পাওয়ার পরেই সঙ্গে সঙ্গে তলব দুঁদে ডিটেক্টিভ ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্রের । এটা একটা স্পেশ্যাল কেস, তাই দ্বায়িত্বটাও গভীর । ইন্সপেক্টর মিত্র আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে অকুস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন । সোজা ভিক্টিমের এপার্টমেন্টেই যাবেন তিনি সবার আগে । ফোন করে স্থানীয় থানার বড়বাবুর সাথে কথা বলে নিলেন । বড়বাবুও থাকবেন স্পটে ।
ড: পি কে সেন, সাবেক কিউরেটর, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস বোটানিক্যাল গার্ডেন ।নেমপ্লেটে এই লেখাটাই জ্বল জ্বল করছে । এপার্টমেন্ট লোকে লোকারণ্য । এলাকায় খুব বেশি পপুলার না হলেও এটা একটা বিরাট রহস্যমৃত্যু তাই এত মানুষের কৌতূহল; অবশ্য মিডিয়া আসার কারণে ভীড়টা একটু বেশি আজ ।
ইন্সপেক্টর মিত্র ইশারা করলেন, সঙ্গে সঙ্গে বড়বাবু বীরত্ব দেখালেন -
-"সরুন, সরুন আপনারা, বাড়ি যান সব, পুলিশকে তার কাজ করতে দিন। ভীড় করবেন না মোটেও । তাহলে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়াতে উল্টে আপনাদের নামে কেস দিয়ে দেব।"
বড়বাবুর বাঘা হুঙ্কারে তেমন একটা কাজ হলো না । জনতার তাতে বিন্দুমাত্র চলে যাওয়ার কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা গেলো না । কারণ, মিডিয়া । মিডিয়া যেখানে জনতার ঢল সেখানে ।এপার্টমেন্টের অন্যান্য বাসিন্দারা ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন । খুন, পুলিশ, মিডিয়া, জনতার ঢল তাদের প্রাত্যহিক কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি করছে ।
ভীড় ঠেলে প্রফেসর সেনের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়লেন ইন্সপেক্টর মিত্র; পিছন পিছন বড়বাবু । দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন ইন্সপেক্টর মিত্র। মিডিয়া আর জনতার মুখের উপর ধড়াম করে ফ্ল্যাটের মেইন ডোর বন্ধ করে দিলেন বড়বাবু । কাজটা করে তিনি খুব তৃপ্তি অনুভব করলেন । মিডিয়ার উপর তার খুব রাগ । তাঁকে অকম্মা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে মিডিয়া ।
প্রফেসর সেন অকৃতদার । ফ্ল্যাটে একই থাকতেন; শুধু ভৃত্য হরিসাধন থাকতো তার সাথে । হরিসাধনের বয়স হয়েছে । আগে প্রফেসর সেনদের বাড়িতেই গৃহ পরিচারক হিসাবে ছিল সে । প্রফেসর সেন তাঁর নিজ বাড়ি থেকে যখন আলাদা থাকার ডিসিশন নেন তখন হরিসাধনকে নিজের কাছে এনে রাখেন । হরিসাধনই বাজার করা, ঘর গোছানো থেকে রান্না বান্না সব কিছুই করতো ।
হরিসাধনকে প্রাথমিক জেরা করে এই তথ্য গুলোই পেলেন ইন্সপেক্টর মিত্র । এর পর খোঁজ নিলেন খুন হয়ে যাওয়া প্রফেসর সেন সম্পর্কে ।
প্রফেসর সেনের পুরো নাম প্রফুল্ল কুমার সেন । উনি এক সময় আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস বোটানিক্যাল গার্ডেনস এর কিউরেটর ছিলেন । এর পর কর্মবিরতি নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের সাও পাওলোতে চলে যান 'ফ্লোরা' নিয়ে গবেষণার জন্য । ওনার রিসার্চের বিষয় ছিল 'অর্কিড (orchid)' । রিসার্চের মাঝামাঝি উনি বোটানিক্যাল গার্ডেনের কিউরেটর এর পদটা ছেড়ে দেন । তারপরে দীর্ঘদিন ওঁনার তেমন একটা খোঁজখবর পাওয়ায় যায়নি সেভাবে । পরিবারের লোকজন শুধু জানতো রিসার্চের কাজে আমাজন জঙ্গলের একটা অংশে অজ্ঞাতবাস করছেন ।
ব্যাস আর কোনো খোঁজ মেলেনি এর পর বছর তিন চার । সম্প্রতি মাত্র মাস ছয়েক হলো দেশে ফিরেছেন । দেশে ফিরেই বাড়িতে মাত্র দিন পনর ছিলেন । এর পর এই ফ্ল্যাট কিনে এখানে এসে ওঠেন । আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলে বড়বাবু এটা বেশ বুঝতে পেরেছেন যে প্রফেসর সেন বেশ মোটা অর্থের মালিক বনে গিয়েছিলেন ।
সেক্ষেত্রে তাঁর মৃত্যুর একটা মোটিভ হতে পারে অর্থ ও উত্তরাধিকার ।কারণ প্রফেসর সেন বিয়ে করেননি এবং তার প্রচুর টাকা ।
-"হুঁ, অর্থম- অনর্থম । হতেও পারে তবে ..."
কী যেন দ্রুত চিন্তা করলেন ইন্সপেক্টর মিত্র । এক মিনিট চুপ করে থেকে তিনি বললেন -
-"আচ্ছা, হরিসাধন আমি তোমাকে যা যা বলবো তার ঠিক ঠিক জবাব দেবে, কেমন ?"
-"হ্যাঁ, হুজুর ।"
-"তোমার বাবুকে তুমি এই বসবার ঘরেই মৃত দেখতে পেয়েছিলে, কেমন ?"
-"হ্যাঁ, হুজুর ।"
-"সেদিনকার ঘটনাটা তুমি আগাগোড়া সব খুলে বলো তো, কিচ্ছু বাদ দেবে না; ঠিক আছে ? কোনো ছোট ঘটনাও নয় ।"
-"ঠিক আছে, হুজুর । আমি সব বলছি ....."
-"বলো হরিসাধন সব ঠিকঠাক বলো, না হলে থানায় নিয়ে গিয়ে পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো ...." - বড়বাবু উবাচ ।
-"আ: বড়বাবু কি সব যা তা বলছেন, বেচারীকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন কেন খামোখা ?"
ইন্সপেক্টর মিত্র বললেন ঈষৎ বিরক্ত স্বরে ।
-"আপনি জানেন না স্যার, এগুলো মহা বদমাশ, মারের ভয় না দেখালে পেট থেকে কথা বের করবে না !"
-"আপনি থামুন তো মশাই !!! আপনাদের জন্যই পুলিশ ডিপার্টমেন্টের এত বদনাম ।" - কড়া স্বরে বললেন ইন্সপেক্টর মিত্র ।
নিমেষে চুপ হয়ে গেলেন থানার বড়বাবু । বিড় বিড় করে বললেন -
-"বদমাশদের তো আপনারা ঠ্যাঙান না স্যার, আমরা ঠেঙাই আমরা জানি কি ভাবে পেট থেকে কথা বের করতে হয় । না পেঁদিয়ে কীভাবে কথা বার করেন দেখি !"
-"শুনুন, বড়বাবু, এই কেস সম্পর্কে আপনি ফাইলে খুব কমই লিখেছেন । আমি তেমন কিছুই জানতে পারিনি । ভিক্টিম একটা বই পড়তে পড়তে হঠাৎ দুম করে মরে গেলো, সেটা তো হত্যা না হয়ে নরমাল ডেথও হতে পারে । আপনি মার্ডার বলেছেন কেন ?"
-"স্যার, মুখের দু'পাশে গ্যাঁজলা উঠেছিল, সাদা ফেনা । ডাক্তারবাবুও বললেন বড়বাবু এটা পিওর মার্ডার । আপনি পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ নিয়ে যান ।"
-"ডাক্তার, কোন ডাক্তার ?"
-"এই তো স্যার, নেক্সট ডোরে থাকেন ডক্টর প্রভাত সরকার ।উনি ফার্স্ট এক্সামিন করে বললেন এটা পুলিশ কেস । তখন এপার্টমেন্টের সিকিউরিটি গার্ড থানায় ফোন করে জানালো । অমনি বেরিয়ে পড়লাম । শত হলেও একজন ভিআইপি মারা গেছেন । দেরি করলে চলে ? এসে দেখলুম ..."
-"থাক, পরে শুনছি আপনার কথা । আগে হরিসাধনের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে নিই" - বাধা দিলেন ইন্সপেক্টর মিত্র ।
-"বিস্তারিত কিছু নেই স্যার, আমি এসে দেখলুম প্রফেসর সোফায় বসা অবস্থায় ফুটুস । মাথা পিছনে হেলে আছে, চোখ দুটো গোল্লা গোল্লা হয়ে ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে । সারা ঘরে কোনো ক্লু নেই । নো ফিঙ্গারপ্রিন্টস , নো weapon , নো poison, নো জুতোর ছাপ । খুনীর কোনো চিন্হ নেই, খুনের কোনো ট্রেস নেই । বলুন তো স্যার একেবারে হ য ব র ল ।" - বড়বাবু খোলসা করলেন ।
-"আরে মশাই থামুন তো আপনি, বাংলা টাও ঠিকঠাক বলতে পারেন না । ওটা "হ য ব র ল" হবে না, হবে "কিংকর্তব্যবিমূঢ়" । যাই হোক আপনি প্লিজ চুপ করুন, পরে আপনার কথা শুনবো । আগে হরিসাধনের মুখ থেকে সব ডিটেইলে শুনি নিই ।
-"বলো , হরিসাধন। ...."
গল্পটা পড়ে মনে হচ্ছে গল্পের মোড় ঘুরবে দারুণ একটা রহস্য নিয়ে। বেশ সাবলীল ভাষায় গল্পের মাঝে কি করে টান টান উত্তেজনা আনা যায় তার মূর্ত প্রতীক আপনার আজকে এই গল্প দাদা।
খুব দারুণ হচ্ছে দাদা। আপনার গল্প গুলো এক পর্ব পড়লে অন্য পর্ব পড়ার জন্য অধীর আগ্রহ জাগে। তার একমাত্র কারণ আপনার লেখার ধরণ।
অপেক্ষায় রইলাম দাদা এর পরের পর্বের জন্য 🥰🥰😍
CLICK HERE 👇
Come and visit Italy Community
ইদানিং দাদার গল্পগুলো বেশ রহস্যজনক। আজকের এই গল্পের মোড় কোথায় গিয়ে থামনে জানিনা। গল্পটির মধ্যে লুকিয়ে আছে বেশ রহস্য। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
রহস্য গল্প পড়তে আমার দারুণ লাগে।রহস্য উন্মোচন করতে প্রচুর বুদ্ধির প্রয়োজন এবার গল্পের আসল মজা।তাছাড়া এই ধরনের রহস্য গল্প পড়লে ও আমাদের বুদ্ধি খুলবে।দারুণ লাগছিল গল্পটি পড়তে।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।ধন্যবাদ আপনাকে।
রহস্যময় গল্প পড়তে আমার অনেক ভালো লাগে। আপনার গল্পটি পড়ে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। তাই গল্প পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেল। দেখা যাক গল্পটি কোন দিকে মোড় নেয়। দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
গল্পোটি খুবই রহস্যময় দাদা ।আরও সামনের পর্বগুলি ভালোই হবে ।ভালো লাগবো খুব।
দাদা রহস্যময়' গল্পটা পড়তে পড়তে আমিও মনে হয় রহস্যর মধ্যে ঢুকে পড়েছি পুলিশের বেসে। সত্যি দাদা গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। হ্যাঁ দাদা অবশ্যই চলবে। শুভেচ্ছা আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে।
দাদা মানেই এখন রহস্য গল্প।তবে গতবারের থেকে এবারের রহস্যটা মনে হয় একটু জটিল হবে।কারণ এবার চরিত্রগুলো গতগল্পের থেকে বেশি।অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো দাদা দ্বিতীয় পার্টের জন্য....
গল্পটা খুবই রহস্যময় মনে হচ্ছে। ইন্সপেক্টর মিত্র থানার বড়বাবুকে নিয়ে প্রফেসর সেনের বাসায় প্রবেশ করেছে তার মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে। ইন্সপেক্টর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। জানিনা তদন্তের ফল কি হবে। পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
দাদা অনেক সুন্দর হইছে ❤️❤️