বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী -পর্ব ০৩
Copyright Free Image Source : Pixabay
প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর আগে ডলফিন ও তিমিদের আদিপুরুষের বিবর্তন শুরু হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয় । ডলফিন ও তিমিদের এই আদিপুরুষদের Cetacea বলে ডাকা হয় । ডলফিন ও তিমিদের এই আদিপুরুষ ছিল তখন পৃথিবীর একমাত্র সব চাইতে বুদ্ধিমান প্রাণী । এমনকি বর্তমানেও মানুষের পরে ডলফিনরাই হলো একমাত্র সব চাইতে বুদ্ধিমান প্রাণী । এদের পরেই রয়েছে বাঁদরদের অবস্থান ।
যে কোনো প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে তাদের শরীরের ওজনের তুলনায় ব্রেনের ওজন কতটুকু তার উপরে । সোজা কোথায় দেহের ওজন ও ব্রেনের ওজনের রেশিওর পরে নির্ভর করে সেই প্রাণীর গড় বুদ্ধিমত্তা । বুদ্ধিমত্তার এই লেভেলকে EQ (Encephalization Quotient) নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে । বুদ্ধিমত্তা মাপার এই স্কেলটি সর্বজনগ্রাহ্য । EQ যদি ১০ হয় তবে তাকে সুপার ব্রেনের অধিকারী বলা হয়ে থাকে ।
মানব জাতির বিবর্তনে ক্রমশ তাদের EQ বৃদ্ধি পাচ্ছে । আদিম মানুষদের EQ ২-৩ এর কাছাকাছি ছিল মোটে, আর এখন ৭.৪-৭.৮ । অর্থাৎ, মানব জাতি বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে নিজেদের EQ লেভেল দ্রুত বৃদ্ধি করছে । EQ এর স্কেল ১ এর উপরে গেলেই তাকে মোটামুটি বুদ্ধিমান প্রাণী বলা হয়ে থাকে ।
ডিএনএ এর সিকোয়েন্স এ মানুষের সাথে সব চাইতে মিল বেশি শিম্পাঞ্জিদের । অর্থাৎ, মানুষের পূর্বপুরুষদের মতোই শিম্পঞ্জিরা । তারপরেও কিন্তু শিম্পাঞ্জিদের বুদ্ধিমত্তার লেভেল ডলফিনদের অনেকটাই নিচে । এবার একটা বিভিন্ন প্রাণীদের বুদ্ধিমতা লেভেলের (EQ) চার্ট দেখা যাক -
প্রাণী | বুদ্ধিমত্তা লেভেল |
---|---|
মানুষ | ৭.৮ |
শিম্পাঞ্জি | ২.৫ |
বিড়াল | ১ |
কুকুর | ১.২ |
ঘোড়া | ০.৯ |
ভেড়া | ০.৮ |
বাঁদর | ২.১ |
হাতি | ১.৩ |
খরগোশ | ০.২ |
কাক | ২.৪৯ |
ডলফিন | ৫.৩ |
উপরের বুদ্ধিমত্তার স্কেলের ওই লিস্টটা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বুদ্ধিমত্তায় মানুষের একমাত্র কাছাকাছি প্রাণী হলো ডলফিনেরা । মানুষের অনেক আগেই এই পৃথিবীতে তাদের উৎপত্তি । আদিম মানবদের চাইতেও তাদের বুদ্ধি অনেকটাই বেশি ছিল । তারপরেও তারা ইতর প্রাণী ভুক্ত । সভ্যতা গড়তে ব্যর্থ তারা । কিন্তু, কেন ?
এই আলোচনা শুরু করার পূর্বে, আসুন খুব সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নেওয়া যাক ডলফিনদের বিবর্তন সম্পর্কে । আজ থেকে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানে ১ কোটি বছর পূর্বে ডলফিন ছিল চার পা এবং দীর্ঘ লেজ বিশিষ্ট একটি সর্বভুক প্রাণী । মুখটি ছিল অনেকটাই লম্বা ও ছুঁচালো । চার পা বেশ কিছুটা লম্বা ছিল, কিন্তু বিশাল সাইজের শরীরের তুলনায় পাগুলো বেশ ছোট ও দুর্বল ছিল, এটা বলা যেতে পারে । এই প্রাণী মানুষের মতোই সর্বভুক ছিল - অর্থাৎ একই সাথে তৃণভোজী ও মাংসাশী ।
দীর্ঘ বিশাল দেহ ও ছোট দুর্বল পা নিয়ে প্রাণীগুলোর চলাফেরা ছিল মন্থর গতি সম্পন্ন । অথচ শিকার ধরতে হলে দ্রুত গতির প্রয়োজন । না হলে শুধু লতা পাতা খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে । ফলে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এরা নদী ও সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস শুরু করলো এবং শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে অগভীর জলে মাছ ধরে খাওয়া শুরু করলো । ক্রমে দেখা গেলো মাংস এবং শাক লতা-পাতার চাইতে তাদের মাছই একমাত্র খাদ্য হয়ে উঠলো । মাছের পাশাপাশি অবশ্য তারা জলজ শ্যাওলা, উদ্ভিদ এগুলোও খেতো । কিন্তু, মাছই ছিল তাদের প্রধান খাদ্য ।
এই সময়টাতে তারা ডাঙায় খুবই কম সময়ে কাটাতো । দীর্ঘ সময় ধরে নদী ও সমুদ্রের জলে কাটানো শিখলো । একটা সময় পর এরা আর ডাঙায় ওঠা ছেড়ে দিলো । জলেই কাটতো তাদের দিন-রাত । কিন্তু, যেহুতু আদতে তো তারা ছিল ডাঙ্গার প্রাণী তাই নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য বেশিক্ষন জলে ডুবে থাকতে পারতো না । আর ঘুম ও সন্তান জন্ম দেয়ার সময়টাতে তারা তীরের বালিতে বা অগভীর জলে আশ্রয় নিতো যেখানে ডুবে যাওয়ার কোনো ভয় থাকে না ।
ডলফিন ও তিমির বিবর্তন
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জলে কাটাতে কাটাতে ক্রমশ জলজ পরিবেশে অভিযোজিত হতে থাকে তারা । দুর্বল ছোট ছোট পাগুলি ক্রমশ হাঁসের পায়ের মতো চ্যাটালো হতে থাকে যাতে জলে সাঁতার কাটতে সুবিধা হয় । গায়ের লোমের বিলুপ্তি ঘটে । ফুসফুস ১০ গুন্ বেশি সময় ধরে অক্সিজেন ধরে রাখতে সমর্থ হয় । পেছনের সুদীর্ঘ লেজটা চ্যাপ্টা হয়ে মাছের লেজের মতো হতে থাকে, সাঁতারে সুবিধার জন্য ।
আরো লক্ষ লক্ষ বছর পরে একসময় পাগুলোর পুরো বিলুপ্তি ঘটলো । পায়ের জায়গায় পাখনার সৃষ্টি হলো, লেজেও নিখুঁত মাছের মতো পাখনা তৈরী হলো । একবার বাতাসে অক্সিজেন নিয়ে জলের নিচে প্রায় ২০-৩০ মিনিট কাটানো শিখে গেলো । সন্তান জন্ম দিয়ে অগভীর জলে এনে দুধ খাইয়ে তাদের লালন পালন করা শুরু করলো ডাঙায় আর না উঠে । ক্রমশ ডলফিনের পূর্বপুরুষ ডাঙা ভুলে গেলো ।
এক কোটি বছর পরে চার পা আর লেজ ওয়ালা বুদ্ধিমান প্রাণীটি আর ডাঙ্গার জীব থাকলো না । বিবর্তনের মাধ্যমে জলজ ডলফিন আর তিমিতে পরিণত হলো । এখন একবার বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে ফুসফুস ভর্তি করতে পারলে প্রায় ৪ ঘন্টা অব্দি জলের নিচে রাখতে পারে তারা । সন্তান জন্ম ও দুধ খাওয়ানোর জন্য এখন আর তাদের অগভীর জলের প্রয়োজন হয় না । অনেক সুবিধা হলো সত্যি কিন্তু জলজ পরিবেশে অভিযোজিত হয়ে তারা সভ্যতা গড়তে পারলো না । তাদের চাইতে বুদ্ধিতে খাটো আদিম মানব ধীরে ধীরে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বুদ্ধিমত্তায় সবার শীর্ষে গেলো এবং সভ্যতার স্বর্ণশিখরে আরোহন করলো ।
কিন্তু, ডলফিন কেনো পারলো না ? আর ভবিষৎবাণীটাই বা কি ? জানতে হলে নেক্সট এপিসোড পড়তে হবে । আজ এ পর্যন্তই ।
[ক্রমশ ...]
পরিশিষ্ট
প্রতিদিন ১২৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৪র্থ দিন (125 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 04)
টার্গেট ০২ : ৮৭৫ ট্রন স্টেক করা
সময়সীমা : ২৪ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত
তারিখ : ২৭ জুলাই ২০২২
টাস্ক ১১ : ১২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
১২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : d6e727e06745768725d0389f5c335bbe5796bdfa7633215b375c43f67adeaded
টাস্ক ১১ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
Wallet Address
TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
RME, Thank You for sharing Your insights...
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
টান টান মূহুর্তে এসে শেষ হলো! পরের পর্বের জন্য আগ্রহ আরো খানিকটা বেড়ে গেলো।
আমি কদিন আগেই Pakicetidae নিয়ে পড়ছিলাম। তিমির পূর্বপুরুষেরা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকেই উৎপত্তি পেয়েছে।
Thank You for sharing...
বেশ ভালো লাগছে প্রতিটা এপিসোড। দাদা আমি ও জিরাফ নিয়ে একটা কথা শুনেছিলাম, জিরাফের গলা এত লম্বা হলো কি করে।ডলফিনের বিবর্তন জেনে ভালো লাগলো।কত কি পরিবর্তন হয়ে গেলো।ধন্যবাদ
দিলেন তো আকর্ষণটা বাড়িয়ে, জানতে হলে পরবর্তী এপিসোডের জন্য বসে থাকতে হবে। এই এপিসোডগুলোর মাঝে কোন গ্যাপ দিয়েন না দাদা, দারুণ একটা আকর্ষণ কাজ করছে।
আজকের এপিসোডে বেশ বিস্তারিত ব্যাখা ছিলো, পুরো বিষয়টি একদম পানির মতো পরিস্কার হয়ে গেলো। আর কাকের বুদ্ধিমত্তার লেভেল দেখেতো আমি পুরাই অবাক, এতো বুদ্ধি দিয়ে এরা করে কি? হা হা হা। ধন্যবাদ
Thank You for sharing Your insights...
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Thank You for sharing...
দাদা টানটান উত্তেজনায় লেখাটা শেষ করে দিয়েছেন। হিহিহিহি। পরের পর্বের জন্য মন একদম ছটফট করছে। এত এত বছর আগে এত কিছু ঘটে গেছে ভাবতেও নিজের কাছে অবিশ্বাস্য লাগে মাঝে মাঝে। আজকের লেখার ভেতর সবথেকে মজা লেগেছে বুদ্ধিমত্তার টেবিলটি।
Thank You for sharing...
ডলফিনের এই বিবর্তনের পুরো গল্পটি পড়ে যে সারমর্মটি উপলব্ধি করতে পারলাম তা হলো "শর্টকাট পথ ধরে বাঁচার পথ সুলভ হয়, কিন্তু যুদ্ধ জয় করে সামনে এগিয়ে গেলে জীবনের সঠিক লক্ষ্য পৌছানো যায়"
ডলফিনের প্রথম পুর্বপুরুষ এবং এখনকার প্রজাতি দেখে বিস্মিত হয়ে গেছি । উপরের সারির দুইটার অস্টিত্বই এখনো আছে কিনা জানা হলো না ।
Thank You for sharing Your insights...
ডলফিনের বিবর্তন নিয়ে সত্যি বলতে বিন্দু পরিমাণ ও জ্ঞান ছিলো না দাদা।অবাক হতে হলো শুরু থেকে শেষটা দেখে।
ডলফিনের বুদ্ধিমত্তা এতটা তীক্ষ্ণ সেটা আগে জানা ছিল না। তবে বরাবরই নতুন কিছু জানতে পেরে অনেক ভালো লাগে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।