অথ ট্রাফিক-জ্যাম উপভোগ্য একটি দিন অতিবাহিত ঢাকা শহরের বুকে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


গতকাল দুপুরের দিকে হঠাৎ ভাবলুম একটু শপিং মলে ঘুরে আসি । নেটে সার্চ করে দুটি বেশ বড় শপিং মলের নাম পেলুম - বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স আর একটা হলো "যমুনা ফিউচার পার্ক** । এর মধ্যে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স মঙ্গলবার বন্ধ পেলুম । তাই যমুনা ফিউচার পার্ক -এ যাওয়াই মনস্থির করলাম ।

আমি যেখানে আছি সেখান থেকে বেশ কাছেই এই যমুনা ফিউচার পার্ক । গাড়িতে যখন উঠলুম ঘড়িতে তখন ২ টো বেজে ১০ মিনিট । রাস্তায় বেরিয়ে কোনো যানজট পেলুম না । খুব দ্রুত মাত্র ২০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম যমুনা ফিউচার পার্ক-এ ।


যমুনা ফিউচার পার্কের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছি


বিশাল বড় একটা শপিং মল । অনেকগুলো গেট । আমরা গিয়েছিলাম বাংলাদেশে মন্ত্রণালয়ের গাড়িতে করে । এই গাড়ির বিশাল একটা সুবিধে আছে । যেখানে সেখানে পার্কিং, নো পার্কিং ফীস, নো টোল ট্যাক্স, রং ওয়ে এন্ট্রি এন্ড ড্রাইভ সব কিছুই ভ্যালিড । আমি যে কয়দিন ঢাকায় থাকবো সে কয়দিনের জন্য এই গাড়িটি পেয়েছি বেড়ানোর জন্য । ভোর থেকে রাত অব্দি । যেখানে যেতে চাইবো সেখানেই নিয়ে যাবে ।

তো, গাড়িটি একদম main গেটের সামনে রেখে আমরা ঢুকে পড়লুম যমুনা ফিউচার পার্কের ভেতর । বিশাল বড় এক একটা ফ্লোর । শপিং কমপ্লেক্সের মোট জমির আয়তন ৩৩ একর । মোট ৭ টি তলা রয়েছে । একদম টপে রয়েছে ফুড কোর্ট, সুইমিং পুল, জিম, বাচ্চাদের পার্ক আর অসংখ্য খাবারের শপ । বাকি ৬ তলায় রয়েছে প্রায় ৫০০ টির মতো নানান পণ্যের দোকান । এক একটা ফ্লোর আয়তনে এতো বিশাল যে আমরা বার বার পথই হারিয়ে ফেলছিলাম ।


যমুনা ফিউচার পার্কের মধ্যে ৩ তলা উঁচু বিশাল একটা ক্রিসমাস ট্রি


কেনাকাটা করলাম । পোশাক, খেলনা আরো কিছু টুকটাক । এরপরে বার্গার কিং এ ঢুকলাম কিছু খেতে । এরপরে আবার ঘুরলাম । তবে, পোশাকের দাম অনেক বেশি এখানে । তনুজা একটা ড্রেস চয়েস করেছিল । দাম লেখা ছিল ১৮,০০০ টাকা, কোয়ালিটির দিক থেকে ইন্ডিয়ার প্যান্টালুনস এর সেম । তো প্যান্টালুনস এ এই রকম একটি ড্রেস এর দাম বড়োজোর ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা । এখানে ১৮,০০০ । এবার আমি একটা পছন্দ করে দিলাম । দাম দেখে মরে যাওয়ার দশা । বেশি না মাত্র ৪২,০০০ টাকা ।


যমুনা ফিউচার পার্কের ভেতরের কিছু দৃশ্য


কোনোমতে ডাকাতদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ঘুরতে ঘুরতে বারবার পথ হারিয়ে ফেলে অবশেষে বের হওয়ার গেট খুঁজে পেয়ে বের হলুম । বের হয়েই দেখি গাড়ি দাঁড়িয়ে । ড্রাইভার হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আর শপিং কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি গার্ড কাঁচুমাঁচু মুখ করে দাঁড়িয়ে । সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে পার্ক করা আমাদের গাড়ি । সম্পূর্ণ রুলস ব্রেক করে । তবে ড্রাইভার এটা করেছেন আমাদের সুবিধার্থে । না হলে খুঁজে বের করতে পারতাম না গাড়ি ।

তো এবার ডাইরেক্ট বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা । ঘড়িতে তখন বাজে ৫ টা ৩২ । বেরিয়েই গুলশানের বাড্ডাতে এক বিশাল গাড্ডায় পড়লুম । ট্রাফিক জ্যাম ভালো বাংলায় যার নাম যানজট । খারাপ বাংলায় নরকের রাস্তা । বাড্ডা থেকে ফ্লাইওভার অব্দি আসতে টাইম লেগে গেলো এক ঘন্টা । ফ্লাই ওভার থেকে নেমে এমব্যাসি অব্দি আসতে আমাদের সবার পিন্ডি চটকে গেলো একদম । টিনটিন বিশাল কান্না চেঁচামেচি জুড়ে দিলো । আমাদের সাথে আর একটি বাচ্চা ছিল । তার এসবে অভ্যাস আছে । সে ঘুমে তলিয়ে গেলো । ঘুমের আগে আমাদের বলে গেলো ২ ঘন্টা পরে তাকে ডেকে তুলতে ।

শুনে আমার মাথা একদম ঘুরে গেলো । বলে কী ! ড্রাইভার হাসিমুখে জানালো ২ ঘন্টার বেশি লাগবে । আমার আর তনুজার তখন মুখ শুকিয়ে গিয়েছে । টিনটিন একদমই জ্যাম সহ্য করতে পারে না । কলকাতায় তো জ্যাম নেই একটুও । তাই ওর অভ্যাস নেই । কলকাতায় সিগন্যালে ২-৩ মিনিট গাড়ি দাঁড়ালেই যে ছেলে অস্থির হয়ে পড়ে তার কাল কি অবস্থা হয়েছিল আপনারা অনুমান করে নিন ।

চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্না কাটি শুরু হলো । আর গাড়ি ১০ মিনিট পর পর এক ইঞ্চি দুই ইঞ্চি করে এগোতে লাগলো । অবশেষে ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে পৌঁছতে পৌঁছতে রাত গভীর হয়ে গেলো । অবশেষে নিষ্কৃতি মিললো । বিকেল ৫ টা ৩২ এ বেরিয়ে ২০ মিনিটের রাস্তা আসতে ঘড়িতে বাজলো রাত ৮ টা ১০ । খুব একটা শিক্ষা হলো আর যাই হোক ।

ভেবেছিলাম আরো কয়েক জায়গা ঘুরবো । প্ল্যান ক্যানসেলড । খুব শীঘ্রই ঢাকা ছাড়ছি । তবে বাংলাদেশ নয় । বাংলাদেশ ত্যাগ করবো ১০-১১ তারিখের মধ্যে । কলকাতায় প্রচুর কাজ জমে আছে আমার । আমার ভাই অলরেডি চলে গিয়েছে কলকাতায় । ঢাকায় আসলেই দমবন্ধ করা অবস্থা । জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া আর জ্যামে নরক ভেঙে পড়ে । বসবাসের অযোগ্য শহর ।




Sort:  
 2 years ago 

টিনটিন বাবা কতই না কষ্ট করল,সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।আমি নিজেও জ্যামের মধ্যে থাকতে পারিনা।আর টিনটিনের তো একদম নাজেহাল অবস্থা।তবে আপনাদের এই খারাপ অভিজ্ঞতা শুনে বেশ কষ্ট লাগলো।ঢাকা শহরে বসবাস যারা করে তারা প্রতিনিয়তই ভোগান্তির স্বীকার।

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

টিনটিনের কথা ভেবে সত্যিই খারাপ লাগছে দাদা। বাচ্চাটা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে 😔😔। ইন্ডিয়ার তুলনায় এখানকার জিনিসপত্রের দাম সত্যি অনেক বেশি। কালকে গিয়েছিলাম প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে। সেখানে ইন্ডিয়ার ট্যাগ লাগানো আছে 122 টাকা আর দোকানের লোকটি আমার কাছে ৫৫০ টাকা চাইছে। আমি বললাম এত ডিসটেন্স কেন? বলল বাহিরের প্রোডাক্ট তাই দাম বেশি। আগে তো ডাবল দাম নিত। এখন চার গুন বাড়িয়ে ফেলেছে। তবে ঢাকা শহরের তুলনায় আমাদের দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে তুলনামূলক জ্যাম খুবই কম। বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় ঘুরে দেখতে পারেন দাদা। অনেক অনেক শুভকামনা রইল। আপনার ভ্রমণ সুখের হোক এই প্রত্যাশাই করি।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago (edited)

দাদা কি যে বলবো কিছু বলার নাই। আপনারা তো আজ বাদে কাল কলকাতায় ফিরে যাবেন। আর আমাদের এই সমস্যা গুলো নিয়েই বাচঁতে হচ্ছে। কিছু বলার নাই। শুভ হোক আপনার বাংলাদেশ জার্নি।

 2 years ago (edited)

ঢাকায় আসলেই দমবন্ধ করা অবস্থা । জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া আর জ্যামে নরক ভেঙে পড়ে । বসবাসের অযোগ্য শহর ।

দাদা এই বসবাসের অযোগ্য শহরে সত্যিই কোন রকমে বেঁচে আছি। আপনাদের বেশ কষ্ট হচ্ছে দাদা 😕 বুঝতে পারছি। যাক যতটুকু সম্ভব আনন্দ করুন দাদা 🙏
তবে মন্ত্রণালয়ের গাড়ি পাওয়াতে কিছুটা সুবিধা হলেও জ্যাম বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে

 2 years ago 

কিচ্ছু বলার ভাষা নেই। শুধু এটুকুই বললাম যে খুবই কষ্ট পেয়েছি।

 2 years ago 

প্রথম যাত্রায় একটু স্বস্তি পেলেও ফেরার পথে যানজটের ভালই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ঢাকা শহরের মানুষ কতটা কষ্টে এবং তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে এই যানজটের কারণে সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। যাইহোক, দাদা আমাদের দেশে এসেছেন ঘুরছেন খুবই ভালো লাগলো।

 2 years ago 

যমুনা ফিউচার পার্কে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম কিন্তু এত উচ্চ মূল্য দেখে কখনো কিছুই কেনা হয়নি। ড্রেসের এত দাম শুনে চোখ কপালে উঠে গেছে।
সন্ধ্যার ওই সময়টায় অফিস ও মিল ফ্যাক্টরি ছুটি হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি জ্যাম থাকে। জ্যামের কারণে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে আমি কখনো ঢাকা যাই না। টিনটিন বাবুর অবস্থা যে খুব খারাপ হয়েছিল নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি।
ভালো কাটুক বাকি দিনগুলি এই প্রত্যাশা করি।

Your post has been rewarded by the Seven Team.

Support partner witnesses

@seven.wit
@cotina
@bangla.witness
@xpilar.witness

We are the hope!

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.19
JST 0.034
BTC 91046.79
ETH 3087.94
USDT 1.00
SBD 2.87