ছোটবেলার স্মৃতি : বড়শি দিয়ে মাছ ধরা
Copyright Free Image Source: PixaBay
গত কয়েকদিন ধরে কলকাতার আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছিল । চৈত্র মাস মনেই হচ্ছিলো না, শ্রাবণ মাসের সাথেই বরং মিল ছিল বেশি । জানালা দিয়ে বাইরের অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে দেখে ছোটবেলার কিছু মধুর স্মৃতি মনে পড়ে গেলো । গ্রামের ছেলে, তাই খুব ছোটবেলা থেকেই মাছ ধরা শিখেছিলাম । তবে, জাল দিয়ে ধরতে পারতাম না, ওটা শেখা হয়নি । আমি মাছ ধরতুম বড়শি দিয়ে ।
আমার বেশ কয়েকটা মাছ ধরার ছিপ ছিল । বড়শিও ছিল বেশ ক'রকমের । গ্রামের মুদিদোকানে মাছ ধরার বড়শি পাওয়া যেত । টিফিনের পয়সা জমিয়ে কিনতাম আমরা । তারপরে নাইলনের শক্ত সুতো দিয়ে বড়শির গোড়া শক্ত করে বেঁধে অপর প্রান্ত ছিপের মাথায় বাঁধতাম বেশ করে । ছিপ বানাতাম বাঁশের কঞ্চি চেঁছে ।
পুঁটি মাছ ধরার জন্য সব চাইতে খুদে সাইজের বড়শি লাগতো । তেলাপিয়া, ট্যাংরা, সরপুঁটি, খলসে, কৈ, ল্যাটা মাছের জন্য মাঝারি আকারের বড়শি আর রুই, কাতলা, শোল, মাগুর, ভেটকি, বেলে মাছের জন্য বড় সাইজের বড়শি । তাই তিন রকমের ছিপ ছিল আমার । গ্রামে মাছ ধরার সব চাইতে প্রকৃষ্ট সময় ছিল আষাঢ়-শ্রাবণ মাস । এই সময় পুকুর-ডোবা, খাল-বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত । সহজেই বড়শি দিয়ে ধরা যেত ।
বর্ষাকালে স্কুলে খুব কম যেতাম আমি । পড়তামই তো খুব নিচু ক্লাসে । তার ওপর গ্রামের যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিল আমার বাবা । তাই স্কুল কামাই করলেও কোনো টীচার জীবনেও কোনো কিছু বলেনি আমাকে । আমিও মনের সুখে স্কুল কামাই করতাম । বিশেষ করে বর্ষাকালে । এই সময়টাতে গ্রামে এমনিতেই জল কাদা থাকে প্রচুর, তাই বাড়ি থেকেও স্কুলে না যাওয়ার জন্য কিছু বলতো না ।
সকাল ঘুম থেকে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে আগে পড়তে বসতাম । সকালের খাওয়া অব্দি বিশাল পড়াশোনা চলতো, কিন্তু যে খাওয়া হয়ে যেত সেই আর পড়তে বসতাম না । খাওয়া শেষ হতে না হতেই সঙ্গী সাথীরা এক এক করে এসে জুটতো আমাদের বাড়ি । আমি খাওয়া শেষ করে মুখ ধুয়েই অমনি সঙ্গী সাথী নিয়ে হৈ হুল্লোড় করে পুকুর পাড়ে চলে আসতুম ।
এক জনকে পাঠাতাম কেঁচো খুঁড়তে । ভাত, আটার দলা, চিংড়ি মাছ এসব দিয়েও টোপ হতো, তবে সব চাইতে বেস্ট টোপ ছিল কেঁচো । কেঁচো দিয়ে খুব সহজে মাছ ধরা যেত । পুঁটি মাছ অবশ্য কেঁচো গিলতো না । পুঁটি মাছ ধরার জন্য ভাত বা আটার দলার টোপ থাকতো । আর ভেটকি মাছের জন্য বেস্ট টোপ ছিল চিংড়ি মাছের টোপ । বাকি সব মাছ চোখ বুজে কেঁচোর টোপ গিলতো ।
একটা বড় সাইজের নারকোলের মালায় মাটির সাথে কেঁচো রাখতাম । এরপরে সঙ্গীদের কেউ এক জন কেঁচো বঁড়শিতে গেঁথে দিলে তারপরে পুকুরপাড়ে একটা সুবিধাজনক স্থানে বড়শি পেতে মাছের জন্য wait করতুম । পুকুরে প্রচুর মাছ থাকার কারণে জলে ছিপ ফেলার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বড়শি ঠোকরানো শুরু হতো ।
হাঁসের পালকের গোড়ার অংশ বা শোলা অথবা কলমি শাকের ডগা দিয়ে ফাৎনা তৈরী করতুম । ফাৎনাটা বড়শির সুতোর মাঝামাঝি স্থানে বেঁধে দিতাম । বড়শি জলে তলিয়ে গেলেও ফাৎনা জলের ওপর স্থির হয়ে ভেসে থাকতো । মাছ এসে টোপ ঠোকরালে ফাৎনা নড়তো । আমিও বুঝতে পেতাম যে মাছ এসে টোপে ঠোকর মারছে । আর যেই মাছ টোপ গিলে ফেলতো সেই ফাৎনাটা জলের নিচে তলিয়ে যেতো । আমিও বুঝে যেতুম যে মাছে টোপ গিলেছে, এইবার এক হ্যাঁচকা টান মারলেই বড়শি বিঁধে যাবে মাছের গলায় বা ঠোঁটে ।
বড়শি মাছ ধরার মধ্যে অন্যরকম একটা বাড়তি উত্তেজনা আছে যেটা জাল দিয়ে মাছ ধরায় নেই । কী হয় ! কী হয় ! এমন একটা উদ্বেগ থাকে সারাক্ষণ । আর তারপরে বড়শিতে মাছ গেঁথে গেলে জল থেকে সেটাকে টেনে তোলার মধ্যে দারুন একটা উত্তেজনা থাকে । অদ্ভুত ভালো লাগার একটা অনুভূতি কাজ করে মনের মধ্যে । তবে, যেসব পুকুরে মাছ খুব কম সেখানে বড়শি বাইতে গেলে চূড়ান্ত ধৈর্য্যের পরীক্ষা হয়ে যায় ।
ছোটবেলায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরায় ব্যাপক আনন্দ পেতুম । সারা সকাল থেকে দুপুর অব্দি বসে থাকতাম পুকুর পাড়ে । মাছও পেতুম ভালোই । ট্যাংরা, পুঁটি, তেলাপিয়া, কৈ, বান,মাগুর, শোল, ল্যাটা এসবই ধরতুম । রুই-কাতলাও ধরেছি, তবে সংখ্যায় অতি নগন্য । নিজের হাতে ধরা মাছের ঝোলের কী অপূর্ব স্বাদ ! আহা !
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
দাদা আপনার তো দেখছি ছোটবেলা বরশি দিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা ভালই ছিল ।আপনি যে মাছ ধরার স্মৃতি বিজড়িত কথাগুলো শেয়ার করলেন তার সাথে ছোট্টবেলার জীবনের কতটা মিল। আমরাও এভাবে মাছ ধরতাম দারুন মজা যখন মাছ বড়শিতে বাধতো । সেই ফিলিংসটাই অন্যরকম থাকতো অনেক ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 100 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.
Congratulations, your post has been upvoted by @upex with a 41.10% upvote. We invite you to continue producing quality content and join our Discord community here. Keep up the good work! #upex
একেবারে হুবহু শৈশব। ছোটবেলায় ছোট বড়শি যেগুলো এক টাকায় ৫-১০ টি কিনতাম সেগুলো দিয়ে পুটি, ট্যাংরা, বাইলা, ছোট টাকি ধরতাম। টাকি আর বাইলা ধরার টেক্নিক একটু ভিন্ন।
বাবাকে দেখতাম বড় বড়শি দিয়ে কার্ফু, রুই এগুলো ধরতেন, পাশের আমরা শুধু পুটি ধরতাম। জাল ফেলাটা আমারও শেখা হয়নি। বাবা জাল ফেললে সাথে যেতাম। সে এক অন্যরকম শৈশব। এখনকার ছেলেমেয়েরা এগুলো বুঝবে না। পুরা নস্টালজিক করে দিলেন দাদা
You really had a memorable childhood experience.
When I was younger, I wasn't allowed to go fishing and I still look forward to those memories.
Thanks for sharing this with us Dada ❤️❤️❤️
দাদা, আপনার পক্ষে সেই নিষ্পাপ স্মৃতিগুলোকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তোলার জন্য সময় ম্যানেজ করা কি সম্ভব নয়? শৈশবের স্মৃতি সবসময় নিষ্পাপ এবং আনন্দে পূর্ণ। এমন স্মৃতির সাথে কোন কিছুর তুলনা করা যায় না।
আমি আশা করি আপনি আবার মাছ ধরার জন্য কিছু সময় পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
দাদা যারা গ্রামে থেকেছে বড়শি দিয়ে ছোটবেলায় মাছ ধরার স্মৃতি কতটা যে সুমধুর তারা খুব ভাল করেই জানে। দাদা আপনার শৈশবের জীবনটা গ্রামে কেটেছে আর সেই মধুর শৈশবের স্মৃতিময় গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আপনার মত আমরাও টিফিনের টাকা জমিয়ে মাছ ধরার জন্য বরশি কিনতাম, সীসা কিনতাম আরো ময়ূরের পালক কিনতাম। আমার জীবনেও প্রচুর মাছ ধরার স্মৃতি রয়েছে সত্যি সেগুলো কখনোই ভোলার মতো নয়। ছোটবেলায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরার স্মৃতিময় গল্প আমাদের সাথে অনেক সুন্দর ভাবে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
সত্যি দাদা এখন বসন্ত কাল মনে হয় না। আপনার বড়শি দিয়ে মাছ ধরার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার মতো মজা আর কিছুতেই নেই। তবে আপনি দেখছি অনেক মাছ পেতেন। আসলে এভাবে মাছ পেলে ধরতেও অনেক ভালো লাগে। ধন্যবাদ দাদা ছোট বেলার কথা মন করিয়ে দেওয়ার জন্য।
আসলেই দাদা এখনকার ওয়েদার দেখলে মনে হয় যে বর্ষাকাল চলছে। চৈত্র মাসে এতো বৃষ্টি দেখিনি। আমাদের এদিকেও রমজান মাসে ইতিমধ্যে ৫/৬ দিন বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। যদিও বৃষ্টি বেশি হওয়ায় রোজা রাখতে একেবারেই কষ্ট হচ্ছে না। যাইহোক ছোটবেলায় বঁড়শি দিয়ে আমি শুধুমাত্র পুঁটিমাছ ধরতে পারতাম। হাতেগোনা কয়েকবার ধরেছিলাম আটা দিয়ে পুঁটিমাছ। অনেকে দেখতাম কেঁচো দিয়ে কৈ মাছ ধরতো। তাদের কেঁচো ধরা দেখে আমার কাছে কেমন যেনো লাগতো। যাইহোক আপনার সাথে তো সঙ্গীরা ছিলো, তারা কেঁচো বঁড়শিতে গেঁথে দিতো,আর আপনি মাছ ধরতেন। আপনারা যেটাকে ফাৎনা বলেন,আমরা সেটাকে টোম বলে থাকি। আপনার ছোটবেলার স্মৃতি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো দাদা। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।