বিশ্বের প্রথম হ্যাকার, ডিজিটাল চোর

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)


কপিরাইট ফ্রি ইমেজ সোর্স : পিক্সাবে


কাল লিখেছিলাম চোরের একাল সেকাল । বর্তমানের ডিজিটাল চোরেদের উত্তরসূরি কিন্তু সেই ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম ডিজিটাল চুরিটা করেন । তখনো ইন্টারনেট আবিষ্কৃত হয়নি, কম্পিউটার ছিল বিশালকায় আকৃতির । শুধুমাত্র গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হতো । কমার্শিয়াল কোনো কাজে ইউজ হতো না । তাই, তখনকার দিনে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে চোরের চুরি করার কোনোও সুযোগ ছিল না । সেই যুগেই সর্বপ্রথম ডিজিটাল চুরি করেন জন ড্র্যাপার (John Draper) ।

ড্র্যাপার ছিলেন একজন ক্ষুরধার কম্পিউটার প্রোগ্রামার । ছোটবেলা থেকেই রেডিওর প্রতি ঝোঁক ছিল তার খুব । কিশোর বয়সেই রেডিও স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন বাড়িতেই । তরুণ বয়সেই নিজে নিজেই একটি রেডিও ট্রান্সমিটার বিল্ড আপ করেন । আর এই রেডিও ট্রান্সমিটিং এর সময়েই মাত্র ২৮ বছর বয়সে ড্র্যাপার সর্বপ্রথম হ্যাকিং এর ঘটনায় নিজেকে জড়িত করেন । এই রেডিও স্টেশনটির অডিয়েন্সদের থেকে ফিডব্যাক পেতে ড্র্যাপার একটি ফোন নাম্বার ট্রান্সমিট করেন । এই নাম্বার দিয়েই তিনি তাঁর অডিয়েন্সদের সাথে যোগাযোগ করতেন ।

তখনকার দিনে ফোন কল যথেষ্ঠ ব্যায় সাধ্য ছিল । এখনকার মতো মোবাইলের যুগ নয় তখন । তারের টেলিফোনই ছিলো একমাত্র দ্রুতগতির যোগাযোগের মাধ্যম । টেলিফোন অপারেটর দ্বারা কল রিসিভ ও সংযোগ করতে হতো তখন । টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে তখন ম্যানুয়ালি একজনের কলের সাথে আরেকজনের কল জুড়ে দেওয়া হতো এবং বিচ্ছিন্নও করতেন এক্সচেঞ্জ অফিসের অপারেটররা ।

মেধাবী ড্র্যাপার টেলিফোন বিলের এই বিশাল ব্যয় সংকোচনের চিন্তা শুরু করলেন । বহুদিন ধরে অবজার্ভ করলাম বিষয়টি । এবং এক সময় টেলিফোন কোম্পানি AT & T -র ব্যবস্থাপনায় একটা ফাঁক খুঁজে পেলেন । যে কোনো হ্যাকারদেরই সর্বপ্রথম কাজ হলো সিস্টেমের vulnerability খুঁজে বের করা এবং সেই ফাঁক দিয়ে ঢুকে কাজ হাসিল করে ফেলা ।

তো, ড্র্যাপার দেখলেন AT & T টেলিফোন কোম্পানির অপারেটররা ফোনে কথা বলা শেষ হয়েছে বুঝতে পারেন যখন ফোনটি ক্র্যাডলে রেখে দেওয়া হয় । এবং ফোনটি ক্র্যাডলে রেখে দেওয়া মাত্র AT & T কোম্পানির ফোন থেকে একটি হুইসল বাজে, যেটি শুনে অপারেটর বুঝতে পারেন যে কাস্টমার ফোন রেখে দিয়েছেন । এই হুইসলটা যেহেতু শুধুমাত্র অপারেটর শুনতে পেতেন তাই অনেকেই এটার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না । আর এটা স্বয়ংক্রিয় ভাবে তখনই শুধু বাজতো যখন টেলিফোনের রিসিভার এবং মাউথ পিস ফোন ক্র্যাডলে রেখে দেওয়া হতো ।

ড্র্যাপার দেখলেন যে, হুইসল শোনা অব্দি টাইমটুকুর ফোন বিল যোগ করেন অপেরাটররা । কিন্তু, তখনও লাইনটি আসলে সজীব থাকে । এই হুইসল বাজলে টেলিফোন অপারেটর নোট করে রাখেন যে ট্রাঙ্ক কলটি নতুন কলের জন্য এখন প্রস্তুত, আগেকার ফোনটি শেষ হয়ে গিয়েছে ।

বিশ্বের আর কারো মাথায় যা খেলেনি ড্র্যাপার এর মাথায় তাই খেললো । উনি একটা খেলনা হুইসল তৈরী করে ফেললেন একদম নিখুঁতভাবে ।


ফোটো কপিরাইট : © [email protected] ।। ক্রিয়েটিভ কমন লাইসেন্স

এই সেই খেলনা হুইসল

তাঁর তৈরী এই হুইসল দিয়ে একদম নিখুঁতভাবে ২৬০০ হার্জ ফ্রিকোয়েন্সির হুইসল বাজানো যেতো যেটি ছিল হুবহু AT & T এর সেম ফ্রিকোয়েন্সির হুইসল এর কার্বন কপি । ১৯৭১ সালের এক সকালবেলা ড্র্যাপার একটি ট্রাঙ্ক কল করলেন, কথা বলা শেষ করেই ফোনের রিসিভার আর মাউথ পিস্ ক্র্যাডলে না রেখে নিজের তৈরী হুইসলটি বাজালেন । অপরপ্রান্তে অপারেটর ভাবলেন কল বুঝি শেষ । ছোট্ট এমাউন্টের একটা বিল যোগ হলো । অথচ তখনও ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেই যাচ্ছেন উনি । ২ ঘন্টার ট্রাঙ্ক কলের বিল হলো ৬ মিনিটের মাত্র ।

এরপর থেকে লাগামছাড়া চললো এই হ্যাকিং । দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পরে অবশেষে কোম্পানির নজরে এলো বিষয়টি । ততদিনে ড্র্যাপার কয়েক হাজার ঘন্টার কল ফ্রি করে ফেলেছেন । ব্যান করলো তাঁকে টেলিফোন সংস্থাটি । একটি মামলাও করা হলো তাঁর বিরুদ্ধে । বেশ কিছু জরিমানা গুনতে হলো তাঁকে ।

তরুণ ছেলেটি এর কয়েক বছর পর থেকে এসব কাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ডেভেলপিং এ মন প্রাণ সব উজাড় করে দিলেন । ১৯৭৭ সালে apple computer এ, ১৯৭৮ এ IBM এ, ১৯৮৬ তে Autodesk এ, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ অব্দি ছিলেন বিখ্যাত সিকিউরিটি কোম্পানি ShopIP র চীফ প্রোগ্রামার । ক্ষুরধার এই সফটওয়্যার ডেভেলপার আজও কাজের মধ্যেই ডুবে থাকেন । তবে, এখন ফ্রীল্যান্স রাইটিং -এই তিনি নিজেকে নিমজ্জিত রেখেছেন বেশি । পৃথিবীর সর্বপ্রথম হ্যাকার তিনিই । জন থমাস ড্র্যাপার (John Thomas Draper) ।


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ১২৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ১ম দিন (125 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 01)


trx logo.png




টার্গেট ০২ : ৮৭৫ ট্রন স্টেক করা


সময়সীমা : ২৪ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ২৪ জুলাই ২০২২


টাস্ক ০৮ : ১২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

১২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : ca8c779f518ad8c332f5a3456acaf95d76b16a936ce5164c78ffcefd47bc77d8

টাস্ক ০৮ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Wallet Address
TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

Sort:  
 2 years ago 

দাদা কয়েকদিন ধরে কি নতুন নতুন বিষয় নিয়ে পোষ্ট করেন পড়তে শুধু ভালই লাগে। লেখা শেষ হয়ে গেলে মন খারাপ হয়ে যায়, মন চাই আর একটু বেশি লেখা থাকলে ভাল হতো। আপনার পোষ্ট পড়ে অনেক নতু নতুন জ্ঞান অজর্ন করতে পারি। ধন্যবাদ দাদা এমন পোষ্ট দিলে ভালই লাগে।

 2 years ago 

এত এত বুদ্ধিমান একটা ছেলে । সেই নাকি নতুন একটা দোয়ার খুলে দিল যা এখন চেয়ে বড় আতংকের নাম ।
জ্ঞান থাকা জরুরী এবং এর প্রয়োগটা যেন কল্যানের পথে হয় এটা নিশ্চিত করা আরো বেশী জরুরী ।

যায় হোক পরবর্তী জীবনে তার সময় গুলো ভাল কাজে ব্যয় করার জন্য সাধুবাদ জানাই ।
ধন্যবাদ প্রিয় দাদা । অনেক মজা পেলাম হ্যাকার গুরুর তথ্য জানতে পেরে ।

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

পুরো লেখাটা পড়ে এক কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মানুষ কতটা তীক্ষ্ণবুদ্ধির অধিকারী হতে পারে। আর মানুষ চাইলে কি না করতে পারে। অসাধারণ একটা বিষয়বস্তু নিয়ে আজকে আলোচনা করেছেন দাদা। হ্যাকার হ্যাকার নাম শুনে আসি কিন্তু বিশ্বের প্রথম হ্যাকার কে সে সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। আজ অনেকটাই খুঁটিনাটি জানতে পারলাম। মাঝে মাঝে মনে হয় এই মানুষগুলোর মেধার জোরেই আজকের বিশ্ব এত সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।

 2 years ago 

দাদা আপনার পোস্টের কল্যাণে বিশ্বের প্রথম হ্যাকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারলাম। আসলে প্রয়োজনই উদ্ভাবনের প্রসূতি। স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন তার নিজের চাহিদা পূরণ করতে পারে না তখনই তার মাথায় বিকল্প পদ্ধতির চিন্তা আসে। আর এ থেকেই মনে হয় এই ড্রপার সাহেবের হ্যাকিংয়ের বুদ্ধিটা মাথায় এসেছিল। তবে আর যাই হোক হ্যাকারদের বুদ্ধি যে সত্যিই অসাধারণ তাতে কোন সন্দেহ নেই।

 2 years ago 

জন থমাস ড্র্যাপার সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারলাম দাদা। তিনি বিশ্বের প্রথম হ্যাকার এটা জেনে বোঝাই যাচ্ছে তিনি অনেক মেধা সম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো আপনি সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এবং আমাদেরকে জানার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।♥️♥️

 2 years ago 

কি বুদ্ধিরে বাবা। যাই হোক সে পরবর্তীতে তার বুদ্ধিকে খারাপ কাজে না লাগিয়ে ভালো কাজে ব্যবহার করেছেন। আপনার কল্যানে বিশ্বের প্রথম হ্যাকার এবং হ্যাকারের বুদ্ধি সম্পর্কে জানলাম। ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

দাদা আপনার পোস্টের কল্যাণে বিশ্বের প্রথম হ্যাকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারলাম। বেশ ধারণা হলো বিশ্বের প্রথম হ্যাকারের বিষয়ে ৷ আসলে মানুষ চাইলে কি না করতে পারে ৷ অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে , দারুণ এবং শিক্ষনীয় একটি বিষয় আমাদের মাঝে সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য ৷

 2 years ago 

দাদা আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল হ্যাকার সম্পর্কে জানতে পারলাম। এই তথ্যগুলো আমার কাছে একেবারেই অজানা ছিল। তবে এই তথ্যগুলো জানতে পেরে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন দাদা। আমাদেরকে এই তথ্যগুলো জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা।

 2 years ago 

বেশ মজা পেলাম,আসলে এদের মাথা বড়তি মেধা।যদিও চোর তবুও এরা বেশ ব্রিলিয়ান্ট। শুধু সৎ কাজে লাগায় নি তখন।পরে কাজে লাগিয়ে বেশ উন্নতি করছে।ভালো ছিলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.20
JST 0.034
BTC 92452.51
ETH 3105.57
USDT 1.00
SBD 3.16