বিরল ইতিহাস: চৌদ্দ ভবনের বট গাছের সাথে রাণী বেহুলা সুন্দরী ও লখিন্দরের এক বিরল ইতিহাস
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
রবিবার, ২৩ ই জুন ২০২৪ ইং
প্রতিটি এলাকার মধ্যেই কোন না কোন রহস্যজনক স্থান থাকে। ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের এলাকায় চৌদ্দ ভবন জায়গা টি একটি রহস্য জনক জায়গা।এই জায়গাটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। বাংলাদেশে এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যে জায়গা গুলোর মধ্যে প্রাচীন কালে কিছু ইতিকথা এখন পর্যন্ত জড়িয়ে রয়েছে। ঠিক অনুরুপ ভাবে আমাদের চৌদ্দ ভবনের বট গাছের মধ্যে একটি বিশাল আকারের গল্প রয়েছে। আজকে আমি আমার মতো করে চৌদ্দ ভবনের পুরো ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো। তবে আপনারা আমার এই ব্লগ টি পড়লে নতুন একটি ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।আর সব সময় নিত্যনতুন ইতিহাস জানতে পারলে আমাদের মন মস্তিস্ক কে সতেজ করে তোলে।
এই চৌদ্দ ভবন জায়গা টি বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের দলবাড়ি গ্ৰামের পাশেই অবস্থিত। আমাদের খোঁড়াগাছ ইউনিয়নের মধ্যে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে।তার মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো দলবাড়ি চৌদ্দ ভবন। এই চৌদ্দ ভবনের বয়স প্রায় চৌদ্দ বছরের ও অধিক হবে।আমি এটি শুনতে পেরেছি আমাদের গ্ৰামের একজন প্রবীণ ব্যক্তির কাছে থেকে। এখন আপনাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে, কিভাবে তারা এই চৌদ্দ ভবনের বয়স বের করেছে! এখন এটির উত্তর হচ্ছে আমাদের গ্ৰামের প্রবীণ ব্যক্তিরা তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে থেকে এই তথ্য খুঁজে বের করেছে।আর এই চৌদ্দ ভবনের নামকরণের মূল কারণ হলো, প্রায় তিনশ' বছর আগে রাণী বেহুলা সুন্দরী ও তার স্বামী বালালক্ষী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন তাদের দুজনের মাঝে নৌকা ভ্রমণ করার ইচ্ছা জাগে।
এক সময় তাঁরা নৌকা ভ্রমণ করা শুরু করে দেন। নৌকা ভ্রমণ করা অবস্থায় এক পর্যায়ে তারা চৌদ্দ ভবনের এই বটগাছের মধ্যে এসে পড়েন। তখন তারা এই বটগাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেন এবং এই বটগাছের নিচে কয়েকদিন পার করে দেন। দীর্ঘ দিন এই বটগাছের মধ্যে থাকার পর তারা এই এলাকার বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করা শেষে, তাদের দুজনের এই এলাকার সৌন্দর্য তাদের মন কে আকুল করে তোলে। একদা তারা তাদের বাড়ি ফিরার জন্য নৌকায় উঠে পড়েন।তারা নৌকায় উঠার পর একটি জিনিস লক্ষ্য করে দেখতে পান, তৎক্ষণাৎ নদীর মধ্যে চৌদ্দ টি দ্বিপের সৃষ্টি হয়ে যায়। তখন তারা স্বামী-স্ত্রী অনেক টা অবাক হয়ে যান। মূলত কয়েকশ' বছর আগে এই পুরো আবাদি জমি গুলো নদী ছিল, কিন্তু বর্তমান পানি শূন্যতার কারণে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর তারা আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করেন, দুটি বড় দ্বিপের মাঝ দিয়ে পানির স্রোত বইছে।আর এই পানির স্রোত থেকে যদি কোন জীবিত মাছ বাম পাশের দ্বিপের মধ্যে লাফ দেয়, তখন সে মাছ গুলো মারা যাচ্ছে।আর ডান পাশের দ্বিপের মধ্যে লাফ দিলে মারা যাচ্ছে না।তারা এই বিষয় টি দেখে আরো বেশি হতভাগ হয়ে যান। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী সেই বট গাছের নিচে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে উঠে আবার দ্বিপের মধ্যে ঘুরতে যান, তখন ও তারা ঠিক আগের মতোই দেখতে পান। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী এলাকার সব মানুষ কে একত্র করেন। এরপর এলাকার সকল মানুষ এই দৃশ্য দেখে অনেক টা হতভম্ব হয়ে যায়। এরপর তারা এলাকার সকল মানুষ কে নিয়ে এই জায়গার নাম রেখে দেন চৌদ্দ ভবন।
কিন্তু বর্তমানে এই চৌদ্দ ভবন আর আগের চৌদ্দ ভবনের মতো নেই। এখন বিলীন হয়ে গিয়েছে সেই আগের চৌদ্দ ভবন। তবুও এখনও ইতিহাসের পাতায় এই চৌদ্দ ভবন কে সুন্দর ভাবে লেখা রয়েছে।প্রতি বছর ঈদের সময় এই চৌদ্দ ভবনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ মানুষ এই চৌদ্দ ভবনে ঘুরতে আসে। তবুও এই জায়গার মধ্যে এখন ও একটি বিশাল বড় বিল রয়েছে।এই বিলের মধ্যে এখন ও অনেক মানুষ মাছ চাষ করে। আমরা গত ঈদুল ফিতরের দিন এই চৌদ্দ ভবনের মধ্যে ঘুরতে গিয়েছিলাম বেশ কয়েকজন বন্ধু সহ। চৌদ্দ ভবনের বট গাছ টি এখনো আগের মতই রয়েছে। শুধু বিলিন হয়ে গিয়েছে দ্বিপ গুলো। হয়তো আজ পর্যন্ত এই দ্বীপ গুলো থাকলে, খোড়াগাছ ইউনিয়নের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হয়ে গড়ে উঠতো।
আমি সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তবে ইতিহাসের পাতায় আরো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা আছে।
সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Device | Redmi 10C |
---|---|
Camera | 48 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বেহুলার ঘটনা সবাই মোটামুটি জানে।এটি নিয়ে নাটক সিনেমা অনেক দেখা হয়েছে।চৌদ্দ ভবন জায়গাটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম।এটি বর্তমান একটি ঐতিহাসিক জায়গা হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে।অনেক মানুষ ঘুরতে আসে যেহেতু।আসলে পুরোনো ঘটনা গুলো নিয়ে অনেক আগ্রহই দেখা যায় সবার মনে কম বেশি আছে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
বাহ্ বাহ্ দারুন তো আপনার পোস্টের মাধ্যমে তো দারুন একটি বিষয় জানতে পারলাম। আপনি তো বেশ সুন্দর করে এই কাহিনীটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে এমন কাহিনী আমি এর আগে কখনও শুনিনি। আজ আপনার পোস্ট পড়ে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। ধন্যবাদ সুন্দর এই পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া চৌদ্দভবন নিয়ে কথা গুলো।লক্ষীনদর ও বেহুলার ভ্রমণ ও বটগাছের নিচে রাত্রি যাপনও জায়গার নামকরণ সব মিলিয়ে অসাধারণ সুন্দর। আমি চেষ্টা করবো কখনো না কখনো এই চৌদ্দ গ্রামে যাওয়ার। কারণ আপনার পোস্ট টি পড়ে যেতে মন চাচ্ছে। ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।