সব সম্পর্কের নাম হয় না: দাদুর গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

নামহীন সম্পর্কের গল্প: দাদুর পিঁয়াজুর দোকান

দু'দিন ধরে মায়ের ঔষধ আনতে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু, বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বেরিয়ে বাজার পর্যন্ত গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানেই থামতে হয়েছে। আবার বৃষ্টি শুরু হল, ফিরতে হল। আজও সকাল থেকে বৃষ্টি। ভেবেছিলাম, ভিজেই যাবো। তবে, বিকেলে বৃষ্টি থেমেছে, আমি বের হতে পারলাম।

এই রাস্তায় একটা জায়গায় প্রায়ই পিঁয়াজু খাই। এক বয়স্ক লোক ওখানে পিঁয়াজু বিক্রি করেন। তার বয়স বেশী হলেও তিনি খুবই হাসি মুখে আমাকে নাতী বলে ডাকেন। আর আমি তাকে দাদু। দাদুর দোকানে গেলে নিজের হাতে পিঁয়াজু তুলে খাই, পরে দাম মিটিয়ে দিই।

IMG_20240702_185417_192.jpg

দাদুর দোকানের পিঁয়াজু ও সিঙ্গাড়া খেতে খুবই সুস্বাদু। এত সুস্বাদু এবং তাও মাত্র ২ টাকায়! এমন কালে যখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে, তখনও তিনি ২ টাকায় পিঁয়াজু বিক্রি করছেন, ভাবা যায়! দাদু শুধু বিকালে বসেন আর রাত ৮টার মধ্যে উঠে যান। এই ২ টাকার পিঁয়াজু বিক্রি করেই তার সংসার চলে।

IMG_20240702_185335_847.jpg

আজকে পিঁয়াজু ও সিঙ্গাড়া খেতে খেতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “দাদু, এই সময়ে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, তুমি কিভাবে এখনো এই ব্যবসা করো? কেউ যদি আমার বয়সের চেংড়া এসে খেয়ে মিছা কথা বলে চলে যায়, তুমি কি জানবে?”

IMG_20240702_185411_168.jpg

দাদু হেসে বললেন, “মোক ঠগাইবে তায় নিজে ঠগবে, কারন আল্লাহ কি নাই?”

এই কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। দাদুর এই সরলতা ও বিশ্বাস আমাকে মুগ্ধ করল। দাদুর জন্য মনে মনে দোয়া করলাম, যেন তিনি আরো অনেকদিন বেঁচে থাকেন। দাদুর মত মানুষেরা আমাদের জীবনে এক ধরনের আলোর উৎস।

পিঁয়াজু খেতে খেতে আর সিঙ্গাড়া শেষ করতে করতে দেখলাম, আজ খেয়েছি ৮টি পিঁয়াজু আর ৬টি সিঙ্গাড়া। বিল আসলো ২৮ টাকা। দাদুকে ১০০ টাকার নোট দিলে তিনি আমাকে ৭৫ টাকা ফেরত দিতে চাইলেন। আমি বললাম, “দাদু, ৭০ টাকা দাও। আর লস করিস না।” কারণ, আমি তো সবসময় আসতে পারি না। এখন বাইরে থাকি, আর বাড়ি এলে পিঁয়াজু খাওয়াও কম হয়। তাই বললাম, “তুই ভুলিস না।” দাদু হাসলেন, তার চোখে মুখে এক ধরনের সন্তুষ্টি।

IMG_20240702_185237_868.jpg

তখন ভাবলাম, আজ দাদুকে নিয়ে লিখবো। তাকে বললাম, “দাদু, একটু এদিক তাকাও,” আর ছবি তুলে নিলাম। আসলে, সব সম্পর্কের নাম হয় না। কিছু সম্পর্ক নামহীন হলেও আমাদের জীবনের অংশ হয়ে থাকে। দাদুর সাথে আমার সম্পর্কটা তেমনই।

এই ধরনের সম্পর্ক আমাদের জীবনে অনেক কিছু শেখায়। দাদুর মত মানুষেরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনটা কত সহজ এবং সুন্দর হতে পারে। এই নামহীন সম্পর্কগুলোই আমাদের জীবনের আসল সম্পদ।

দাদুর পিঁয়াজু খাওয়ার এই ছোট্ট অভ্যাস আমার জন্য বড় আনন্দের। তার সাথে সম্পর্কটা মধুর এবং গভীর। যখনই তার দোকানে যাই, মনে হয় যেন একটা শান্তিময় স্থানে ফিরে যাচ্ছি। তার সাথে কথোপকথন আমার মনের অনেক চিন্তা দূর করে দেয়।

দাদুর মত সরল মানুষেরা আমাদের জীবনে বড় ভূমিকা পালন করেন। তারা আমাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তোলেন। দাদুর কথা ভাবতে ভাবতে মনে হলো, তাকে নিয়ে লিখতে হবে, তার গল্পটা সবার সাথে শেয়ার করতে হবে। তার মত মানুষেরা আমাদের জীবনের গোপন রত্ন, যারা আমাদের জীবনকে আলোকিত করে।

দাদুর জন্য আমার হৃদয়ে সবসময় একটা বিশেষ স্থান থাকবে। তার মত মানুষেরা আমাদের জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। দাদুর সাথে আমার সম্পর্কটা নামহীন হলেও তার মূল্য অপরিসীম।

দাদুর জন্য আমার দোয়া, তিনি যেন সুখে থাকেন, সুস্থ থাকেন। তার মত মানুষেরা আমাদের জীবনে সবসময় থাকুক, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আনন্দময় করে তুলুক।

দাদুর ছবি তুলে রেখে ভাবলাম, এই মানুষটার জীবনটা কত সুন্দর আর সরল। তার মত মানুষেরা আমাদের জীবনের অংশ হয়ে আমাদের জীবনের মানে বদলে দেয়। সব সম্পর্কের নাম হয় না, কিন্তু নামহীন সম্পর্কগুলোই আমাদের জীবনের আসল সম্পদ। দাদুর সাথে আমার এই সম্পর্কটা ঠিক তেমনই।

দাদুর জন্য দোয়া করি। তিনি যেন আরো অনেকদিন বেঁচে থাকেন, আমাদের জীবনে তার মত মানুষেরা সবসময় থাকুক। যেহেতু এই দাদুকে নিয়ে লিখলাম তাই মাকে নিয়ে তেমন কথা বলিনি কিন্তু তাই বলে আপনারা আমার মায়ের কথা ভূলে যাইয়েননা। সবার কাছে আমার মায়ের জন্যেও দোয়ার দরখাস্ত রইলো। উনি যেনো খুব দ্রুত সুস্হ হয়ে যান। আজকের মতো এখানে বিদায় নিচ্ছে ততক্ষণ অব্দি সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

IMG-20231210-WA0005.jpg

আমি রিদওয়ান হোসাইন। পরিবারের শেষ সন্তানটি আমি। পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি নিয়ে। ভ্রমণ করা, গান গাওয়া ও শোনা এবং ফটোগ্রাফি করা আমার খুবই পছন্দ। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে লেখা শুরু করি, তাই "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব, আমার ভালোবাসা। নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে নিজের মনের ভেতর জমে থাকা হাজারো কথা তুলে ধরা যায়।
Sort:  
 2 days ago 

প্রায় প্রতিটা পাড়া মহল্লায় এরকম একজন দাদু থাকে, দাদুর হাতের জাদুর কারণে তার বানানো জিনিসপত্রের অসাধারণ স্বাদ পাওয়া যায়। আমাদের এখানকার একজন দাদু রয়েছে, যিনি প্রায় বৃদ্ধ হয়ে গেছেন কিন্তু তেনার হাতের সিংগারা, সমুচা খেতে অসাধারণ লাগে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 yesterday 

আপনার কাচ থেকেও এমন দাদুর কথা শুনেখুব ভালো লাগলো। আসলে, তাদের মতো মানুষেরাই আমাদের ছোট ছোট আনন্দের অংশ। ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্য আমার সাথে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 56608.36
ETH 2976.28
USDT 1.00
SBD 2.15