সততার মূল্য সবাই দিতে পারে না
হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।
আমাদের সমাজে এখনো অনেক সৎ ব্যক্তি রয়েছে। যাদের কারণেই সমাজে যেন আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারি। সমাজের মধ্যে এখনো শৃঙ্খলা বোধ রয়েছে। আর এই সৎ ব্যাক্তিরাই সমাজের আলোকিত মানুষ। এখনকার দিনে সৎ ব্যক্তি পাওয়া খুবই কঠিন, কারণ প্রত্যেকটা মানুষই অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার আকাঙ্খায় নিজেকে যেন বিলিয়ে দেয়। তারা সৎভাবে জীবন গড়তে পারে না, কারণ অর্থ সম্পদের লোভ থাকে বেশি। আর অর্থ সম্পদের বেশি লোভের কারণে তারা সৎভাবে জীবন পরিচালো না করতে পারেনা। অসৎ পথ বেছে নেয়, আর অসৎ পথের মাধ্যমেই তারা হাজার হাজার টাকা অর্থ উপার্জন করে শান্তিতে থাকতে চায়, কিন্তু অর্থ সম্পদ দিয়ে সুখী হওয়া যায় না, শান্তি পাওয়া যায় না। হয়তো অনেক টাকার মালিক হওয়া যায় কিন্তু শান্তি আর সেই জীবনে আসে না।
আজকে আমি তেমনি একজন সৎ ব্যক্তির কথা আপনাদের কাছে শেয়ার করছি। সেই ব্যক্তিটি হল রফিক স্যার, রফিক স্যার আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক। সে দীর্ঘ 15 টি বছর আমাদের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। যে সব সময় সততার সাথে জীবন পরিচালনা করে এবং স্কুলের যত কাজ রয়েছে সকল ক্ষেত্রে তিনি সৎভাবে পরিচালনা করে থাকে। যার কারণে স্কুলের সকল শিক্ষার্থীরা তাকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে এবং ভালোবাসে। গ্রামের সকল মানুষই এই রফিক স্যারকে অনেক ভালো এবং সৎ ব্যাক্তি হিসেবে চেনে। আর রফিক স্যারের অবদান আমাদের স্কুলের জন্য অনেক বেশি। কারণ সৎ থাকার কারণে এই স্কুলে দুর্নীতি টিকে থাকতে পারে না, তার কারণেই স্কুলের পড়াশুনা থেকে শুরু করে স্কুলের সকল কার্যক্রম খুবই ভালোভাবে হয়ে থাকে।
সমাজের মধ্যে কিছু ভালো মানুষ থাকলেও বেশিরভাগ মানুষই যেন অসৎ হয়ে থাকে এবং খারাপ মানুষও বসবাস করে। যারা এই সৎ ব্যক্তিদের সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে পারে না। তেমনি একজন মানুষ আমাদের গ্রামের নাম শাহিন, এই শাহীন সুদের ব্যবসা করে এবং সব সময় মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। একদিন এই রফিক স্যারের সাথে শাহিনের দেখা হয়। আর রফিক স্যার হেঁটে যাচ্ছিল, কোন কথা না বলে, তখন শাহীন রফিক স্যারকে ডাকলো এবং বলল আপনার কত বড় সাহস আমাদের গ্রামে আপনি মাস্টার গিরি করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমার মেয়েকে আপনি পাস করিয়ে দিচ্ছেন না। আমার মেয়েকে আপনি ওই ভাবে দেখেন না। আপনি জানেন না আমার অবস্থান সমাজে কেমন। রফিক স্যার তখন বলল আপনার অবস্থা কেমন এটা আমি তো জানব না, আমি আমার স্টুডেন্টদের সমানভাবে দেখি। আপনার মেয়ে ভালো পড়াশোনা করছে না, যার কারণে সে পাশ করতে পারছে না। আমিএখানে আমার তো কোন দোষ নেই।
রফিক স্যারের এই কথা শুনে শাহীন আরো খারাপ ব্যবহার করে। শাহীন ভাবে যে তার অনেক অর্থ সম্পদ রয়েছে। সমাজের মানুষ তাকে দাম দেবে তার কথাতেই সকল কিছু হবে। যার কারণে সেই স্যারের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, এক পর্যায়ে রফিক স্যারকে সে মারতে গিয়েছিল। যার কারণে সমাজের মানুষ তখন দৌড়ে এসে এই শাহীনকে ধরে এবং শাহীনকে বলে তুমি কিসের ক্ষমতা দেখাও, তুমি স্যারের সাথে খারাপ ব্যবহার কর।তখন শাহীন বলে এই স্যারের কত বড় সাহস অন্য গ্রাম থেকে এসে আমাদের গ্রামে মাস্টার গিরি করায় আর আমার মেয়েকে কোন দাম দেয় না।
রফিক স্যারের সাথে শাহিনের এই ব্যবহারটি অনেক খারাপ হয়েছে। শাহিনের ব্যবহারের কারণে গ্রামের মানুষ অনেক কষ্ট পেয়েছে এবং রফিক স্যারের কাছে মাফ চেয়েছে। কিন্তু রফিক স্যার মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে, বলল দীর্ঘ ১৫টি বছর আপনাদের গ্রামে মাস্টার হিস্বে আছি, কারো সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করলাম না, আজকে আমার এই দিন দেখতে হল। আমি আর আপনাদের গ্রামে থাকবো না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই স্কুল থেকে ট্রান্সফার নিয়ে আমি চলে যাব। তখন গ্রামেন অনেক বড় বড় মাতবার ছিল সকলেই এক হয়ে বসলো, যে আমরা সবাই মিলে শাহিনের বিচার করবই, আপনি মনে কষ্ট নিয়েন না।
তারপরে গ্রামের সকলেই একসাথে হয়ে বিচার বসানো, সেখানে শাহিনের অনেক দোষ রয়েছে। সবাই বলল যে শাহিনের কিছু টাকা হয়েছে আর সুদের ব্যবসা করে বেড়ায় যার কারণে সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ও কারোরই সম্মান দেয় না, আমাদের সমাজে অনেক সৎ ব্যক্তি রয়েছে তাদেরকেও কখনো দাম দেয় না। তখন সবাই মিলে বলল যে শাহিনের এই সুদের ব্যবসা বন্ধ ও আর গ্রামে কারো কাছেই সুদের ব্যবসা করতে পারবে না। যদি এই ব্যবসা করে তাহলে ওকে সবাই মিলে পুলিশে ধরিয়ে দেবো এবং গ্রাম ছাড়া করা হবে।
https://x.com/rayhan111s/status/1885997105858384159?t=j9MVlfcID8Lgsd1fF_UqMQ&s=19
আমরা জানি সততা হচ্ছে মানুষের মহৎ গুণ। এই মহৎ গুণটা সবাই যেমন অর্জন করতে পারে না। সকল মানুষ এই মহৎ গুন কে মূল্যায়ন করতেও জানেনা। তবে সততার মূল্য সব সময়। বর্তমান সময়ে রফিক স্যার আর শাহিনের মত অনেক শিক্ষক ও স্টুডেন্ট রয়েছে। যেখানে কিভাবে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে হয়, আর শিক্ষকদের নিজের সম্মান কিভাবে ধরে রাখতে হয়; সেগুলো যেন দিন দিন অবক্ষয়ের দিকে।
সততা একটি অমূল্য গুণ, যা সবসময় সহজে অর্জন করা যায় না। আমাদের সমাজে অনেক সময় নানা চাপ বা প্রলোভন আসে, যেখানে সততা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে যারা সততার পথ বেছে নেন, তারা একদিকে যেমন নিজের মূল্যবোধে দৃঢ় থাকেন, তেমনি অন্যদের কাছে একটি সুন্দর উদাহরণ হয়ে ওঠেন।শাহিনের বাবা তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছেন, আর রফিক স্যার সততার সাথে তার শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মান প্রদর্শন করেছেন। এমন পরিস্থিতি আমাদের শেখায় যে, ক্ষমা এবং সদিচ্ছা সবার মধ্যে সৌহার্দ্য এবং একতা সৃষ্টি করতে পারে।
আসলে আমাদের সমাজে সততার মূল্য অনেক সময় পাওয়া যায় না। অনেকে সততার মূল্য দিতে পারে না এটা খুবই সত্য কথা। আসলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। সত্য বিজয় সব সময় অবধারিত তা শুধু সময়ের ব্যাপার। শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রের মানে কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তা সুন্দর ভাবে সমাধান করাটাই উত্তম। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপনার লেখা পড়ে আমার সত্যি খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। সব মানুষ কিন্তু সততার মূল্যায়ন করতে জানেনা। কারণ সততা এমন একটা জিনিস নিজের মধ্যে ধরে রাখাটা যেমন কঠিন সে সততাকে মূল্যায়ন করাটাও পেশ করছেন। যারা সত্যতার মূল্যায়ন করতে জানে আমি মনে করি তাদের মধ্যে সততা রয়েছে বলেই মূল্যায়ন করার সক্ষমতা রয়েছে। ঠিক তেমনি আপনার আজকের বিষয়বস্তু আর ঘটনা। এই সময়ে শিক্ষকরা ছাত্রদের দ্বারা অনেক অবহেলিত। শিক্ষকের কিভাবে মর্যাদা দিতে হয় সেটা কিন্তু জানেনা। যার জন্য স্টুডেন্টদের এত অবনতি।
একজন সৎ মানুষের সততা, আদর্শ ও ন্যায়পরায়ণতার যে শক্তি, তা আপনার গল্পের রফিক স্যারের মধ্য দিয়ে ফুটে তুলেছেন ভাই। সমাজের কিছু অসৎ মানুষের বাধার পরও সত্য ও ন্যায়ের জয় যে অনিবার্য, সেটাই এই গল্পে প্রমাণিত হয়েছে। এমন চরিত্রগুলো সমাজের সত্যিকারের আলোকিত মানুষ, যাদের কারণে আমরা শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার দেখতে পাই। অসাধারণ এক শিক্ষণীয় গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।