আমার গ্রাম এবং কিছু স্মৃতিমূলক অনুভূতি||
আমার গ্রাম নিয়ে আমার খুব একটা স্মৃতি নেই।কেননা আমি খুব ছোট থেকেই বাড়ির বাইরে থাকি আব্বুর কর্মসূত্রে।শুধুমাত্র দুই ঈদেই আমার বাড়িতে যাওয়া হয়।আগে বাড়িতে যেতে ভালো লাগতোনা।তবে একটা বিষয় প্রতিবারই হতো আমার যাওয়ার সময় যেতে ইচ্ছে করতোনা আর আসার সময় আসতে ইচ্ছে করতো না।আমাদের পঞ্চম শ্রেণীতে দেশপ্রেম নিয়ে একটা অধ্যায় ছিল সেখানে আমাদের প্রিয় নবীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে সুন্দর একটি লেখা ছিল মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত এর গল্প ।সেখানে তার মাতৃভূমি ছাড়তে অনেক খারাপ লাগে।তো আমারও মনে হতো এটা আমার মাতৃভূমি এজন্যই এরকম লাগে হয়তোবা ।যখন ছোট ছিলাম তখন কারো সাথে কথা বলতাম না সেইভাবে লাজুক টাইপের হওয়ার কারণে বেশ সমস্যায় পড়তে হতো আমার।কিন্তু যখন অষ্টম নবম শ্রেণীতে উঠলাম তখন থেকে এই বিষয়টা কেটে গিয়েছিল ।সবার সাথেই মিশতে পারতাম তখন আর বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম সবাই আমার নিজের মানুষ।এখন আমার বাড়ি যেতে বেশ ভালোই লাগে।কারণ বুঝি যে এটাই আমার শিকড়।আগে এটা সেইভাবে বুঝতাম না।আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকতে হলো এজন্য আমার নিজের এলাকা সর্ম্পকে খুব একটা ধারণা নেই।সব মিলিয়ে ধরতে গেলে আমার দুই যুগের জীবনে ১০০ টা দিনও থাকা হয়েছে বলে মনে হয়না।এজন্য কয়েকবছর যাবৎ বাড়িতে গেলে আমার আর আসতে ইচ্ছে করেনা।মনে হয় আর কিছুদিন থাকি তারপর যাব।
আমাদের বাড়িটি একদম মাঠের ধারে।সেজন্য দক্ষিনা বাতাস বেশ ভালো লাগে।বিশেষ করে আমাদের ঘরটা দক্ষিণমুখী।আর ঘরের পিছনের দিকে দরজা থাকায় অনেকটা বাতাস লাগে রুমে দরজা খুললে।প্রথম ছবিতে যেই ব্রিজটি দেখতে পারছেন এটা আমাদের বাড়ির সামনের ব্রিজ।এখানে আগে আমরা চাঁদ দেখতে আসতাম।তাছাড়া গ্রামের লোকরা ব্রিজে বসে থাকতো বিকেল টাইমে এখানে।গ্রামের লোক বলতে আমাদের নিজেদের লোকরাই এখানে আড্ডা দিতেন।তার বাম দিক দিয়েই রাস্তাটি আমাদের বাড়ির প্রবেশ পথ।অনেক উচু সুপারি গাছগুলো দেখতে পারছেন এগুলো আমাদের বাড়ির পিছনের দিকে।আবার মাঠের মধ্যে আমগাছ এগুলোও আমাদের। এই গাছের আম সাইজে ছোট কিন্তু খুব মিষ্টি। আমাদের বাড়ির পিছনের দিকের সব গাছগুলো যতদূর সম্ভব আমার দাদার হাতে লাগানো ।
মানুষ থাকেনা কিন্তু স্মৃতি ঠিকই রয়ে যায়।আমার সেইভাবে দাদা দাদী বা কারো উপর টান ছিলনা। কিন্তু তাদের খুব মিস করি আসলে বেঁচে থাকতে সেইভাবে বুঝিনি যে তাদের জন্যও আমার মনে বিশেষ জায়গা ছিল।হঠাৎ করে ঈদে যাওয়া হতো সবাইকেই পেতাম কোনো শূন্যতা ছিলনা ।এখন বাড়িতে গেলে দাদা দাদীর ওই রুমের দিকে গেলে খুবই কষ্ট লাগে যেটা বলে বোঝানোর মতো না।দাদী থাকলে তার কাছে গিয়ে বসা হতো,দাদার ইয়ার্কি গুলো মিস করি প্রচুর।আর দাদার ইয়ার্কি গুলোর জন্য দাদী আবার দাদাকে ধমক দিতেন।দাদা সেগুলো হেসে উড়িয়ে দিয়ে আবার দাদীকে রাগাতেন ।দুই বছরের মধ্যে সবই শেষ হয়ে গেল।দাদা মারা যাওয়ার পর করোনা শুরু হলো ওই দুই বছর আর আমাদের বাড়িতে যাওয়া হলোনা।আর পৃথিবীর পরিস্থিতি যখন ঠিক হলো দাদী মারা গেলেন।ওই ঈদটা বাড়িতে করে দাদীকে বাসায় নিয়ে আসার কথা ছিল আমাদের।কিন্তু সবই কিভাবে শেষ হয়ে গেল।এজন্যই সময় থাকতে আমাদের যেকোনো কিছুর মূল্য দিতে হবে।পৃথিবীতে সবচেয়ে টেম্পোরারি হচ্ছে মানুষ, যাদের নিয়ে কোনো ধরনের গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়।কদিন বাড়িতে থেকে বেশ ভালোই কাটলো দিনগুলো। ব্রিজের দুই পাশের যে রাস্তা দেখতে পারছেন আমরা ক্যানাল বলি এটিকে। এখান দিয়ে হাঁটতে বেশ ভালো লাগে প্রচুর বাতাস। এখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পিছন সাইডে যাওয়া হতো সেখানে সুইচ গেটে গিয়ে বসে থাকা আর মাঠের বাতাস উপভোগ করা সব মিলিয়ে দারুন সময় পার করছি বলা যায়।আমার গ্রাম আপনাদের কেমন লাগলো বন্ধুরা কমেন্টে জানাবেন অবশ্যই অপেক্ষায় থাকব।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | রিয়েলমি ফাইভ আই |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rahnumanurdisha |
লোকেশন | ঝিনাইদহ |
Post by-@rahnumanurdisha
Date-19th June,2024
VOTE @bangla.witness as witness
OR
VOTE @bangla.witness as witness
অসাধারণভাবে নিজের গ্রামের পরিচিতি তুলে ধরেছেন আমাদের মাঝে। দুই যুগে আপনি নিজ গ্রামে ১০০ দিনও ছিলেন না বিষয়টা আসলেই দুঃখজনক। নিজ গ্রামের প্রতি সবারই একটা আলাদা ভালোবাসা থাকে। অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি অনুভূতিময় পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
জি ভাইয়া সব মিলিয়ে হিসাব করতে গেলে এরকমই হবে দিন সংখ্যা,ধন্যবাদ ।
আপনার বাবা যেহেতু বাহিরে চাকরি করতেন তাই তো আপনারা গ্রামে খুব একটা থাকার সুযোগ পাননি আপু। গ্রামে কাটানো মুহূর্ত গুলো সত্যি অনেক দারুন হয়। আর আপনি অনেক সুন্দর ভাবে নিজের অনুভূতি তুলে ধরেছেন আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকেও ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য আপু।
আপু আমরা যখন সব সময় কাউকে পাশে পাই তখন তার শূন্যতা বুঝতে পারি না। যখন তাকে পায় না বা হারিয়ে যায় তখন তার শূন্যতা বুঝতে পারি। আপনার দাদা-দাদির জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো আপু। তবে আপনাদের গ্রামটি সত্যি অনেক সুন্দর। আপনার পোস্ট দেখে ও পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু।
আসলেই দাঁত থাকতে আমরা দাঁতের মর্যাদা বুঝিনা,ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।
বেশ ভালো লেগেছে আপু আপনার গ্রাম নিয়ে স্মৃতি মূলক কথাগুলো। আপনি গ্রাম নিয়ে লিখলেন অনেক ভালো লেগেছে। প্রতিটি মানুষের কাছে গ্রামের কিছু স্মৃতি জড়িয়ে থাকে যারা গ্রামে বড় হয়েছে। যা আপনার লেখা স্মৃতির সাথে গ্রামের দৃশ্য গুলো খুবই ভালো লেগেছে।
আমি গ্রামে বড় হইনি আপু,ধন্যবাদ আপনাকে।
ফটোগ্রাফি গুলা ভীষণ সুন্দর হয়েছে। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে মনে হচ্ছে আপনাদের গ্রামটি ভীষণ সুন্দর এবং খুব নির্জন। আমরা যখন কোন কিছু সব সময় পাই তখন সেটা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু যখন সেটা থেকে অনেক দূরে চলে যাই বুঝতে পারি সেটা আমাদের জীবনে কত আনন্দদায়ক ছিল। আপনার মনের অনুভূতিগুলো জেনে বেশ ভালই লাগলো। খুব সুন্দর ভাবে সবকিছু উপস্থাপনা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু।