ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় -পাঠ ০২।। ১০%বেনিফিশিয়ারিshy-fox এবং ৫%বেনিফিশিয়ারিabb-schoolকে।।
বার-রবিবার
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়:
ডিপ্রেশন থেকে পরিত্রাণের জন্য সর্বপ্রথম যেটা জরুরী সেটা হচ্ছে নিজের ইচ্ছাশক্তি। একমাত্র প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে একজন মানুষ খুব সহজেই এই মানসিক রোগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। ডিপ্রেশন দূর করার উপায়গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-
- নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: যেহেতু ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে গেলে সর্বপ্রথম আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাই সর্বপ্রথম চেষ্টা করবেন নিজেকে কাজের মধ্যে রাখতে। অবশ্যই চেষ্টা করবেন নিজেকে কাজের মধ্যে রাখার কিন্তু সেটা চাপ নিয়ে নয়। যেকোন কাজকে জটিল হিসেবে না নিয়ে সহজ আঙ্গিকে করার চেষ্টা করবেন।সেক্ষেত্রে আপনি আপনার শখের কাজগুলো করতে পারেন। যে কাজটা আপনার পছন্দের ভালো লাগে করতে।
- মেডিটেশন ও শরীরচর্চা: প্রতিদিন মেডিটেশন ও শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুললে একজন মানুষের ডিপ্রেশন দূর হয়, শরীর ভালো থাকে। যেকোন কাজে উদ্যম আসে,মন ভালো থাকে,কনফিডেন্স বাড়ে,মন স্থির হয়। সকল প্রকার অস্থিরতা দূর হয়।যদি শরীরচর্চা সম্ভব না হয়,তাহলে প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘন্টা হাটলে শরীর ভালো থাকে,মনের অস্থিরতা কাটে এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পজেটিভ চিন্তাভাবনা: ডিপ্রেশনের রোগীরা সাধারণত সর্বদাই নেগেটিভ চিন্তাভাবনা ভাবনা করে থাকে,যা ডিপ্রেশনকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এজন্য অবশ্যই যেকোন বিষয়ে দুশ্চিন্ত করা বাদ দিতে হবে। যেকোন বিষয়কেই হালকাভাবে নিতে হবে।দুশ্চিন্তা বাদ দিতে হবে।আমি পারবো না,আমাকে দিয়ে হবে না,এ সকল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবসময় পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। র্আথাৎ আমি পারবো, আমাকে দিয়ে সবকিছু সম্ভব ইত্যাদি।
ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন:অতিরিক্ত ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং থেকে দূরে থাকুন।দিনে নির্দিষ্ট কিছু সময় ডিভাইস ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন। অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে দিন। শুধুমাত্র প্রয়োজনেই ব্যবহার করুন।
প্রকৃতির সাথে সময় কাটান:মানুষের মনের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক যেন সেই পূর্বকাল থেকেই। দিনে কিছু সময় প্রকৃতির সাথে কাটানো উচিত। আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন মানুষের মনকে যেভাবে পরিবর্তন করে সেভাবে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক জায়গায় ঘুরতে যাওয়াও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার কারণ হতে পারে ।
বই পড়ুন ও জ্ঞানচর্চা করুন:বই জ্ঞানকে বিকশিত করে।তাই নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করুন এবং প্রাপ্ত জ্ঞান ব্যক্তি জীবনে কাজে লাগান। ডিপ্রেশন কাটাতে বই পড়া অনেকটাই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এজন্য বইয়ের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কেননা বই কখনো আপনাকে ধোঁকা দিবেনা।বরং বই পড়ে প্রাপ্ত জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে ধোঁকার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।
বন্ধুদের সাথে সময় কাটান:মানুষের জীবনে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বন্ধু সংখ্যা কমতে থাকে এবং একাকীত্ব বাড়তে থাকে।এজন্য অবশ্যই ভালো বন্ধু নির্বাচন করুন এবং এবং তাদের সাথে সময় কাটান। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো বন্ধু নির্বাচন করুন যাতে তাদের সবসময় যেকোন অবস্থাতেই আপনার পাশে পান। খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে থাকুন।কারণ কথাই আছে," সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ"। নিয়মিত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করুন,আড্ডা দিন, মজা করুন। ডিপ্রেশন কেটে যাবে এবং মন ভালো থাকবে।
পরিবারকে সময় দিন:নিয়মিত পরিবারকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন।আপনি যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন নির্দিষ্ট একটি সময় বের করে পরিবারের সাথে সময় কাটান, গল্প করুন ,তাদের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন,তাদের পাশে দাঁড়ান।আপনার কোন সমস্যা হলে পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।সব সময় পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।বিবাহিত হলে জীবনসঙ্গীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এতে দাম্পত্য কলহ কমবে। পরিবারের সুখ শান্তি বজায় থাকবে এবং ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকবেন।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন:প্রতিটি মানুষেরই আবেগ আছে তবে অতিরিক্ত আবেগ ডিপ্রেশনের কারণ। অতিরিক্ত আবেগী মানুষ অল্পতেই ভেঙে পড়ে। আবেগ দিয়ে বাস্তব চলে না। এটি মেনে নিয়ে নিজেকে বাস্তববাদী করে তুলুন। বাস্তববাদী হলে জীবনে সহজেই পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন। কিন্তু আবেগী হয়ে থাকলে জীবনে কখনোই পরিবর্তন আনতে পারবেন না। এজন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন, সহজেই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
প্রার্থনা: ডিপ্রেশন কাটানোর অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা। প্রতিটা মানুষের উচিত নিজ ধর্ম অনুসারে সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করা। সৃষ্টিকর্তা যা কিছু দিয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন এবং সর্বদা তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন।ধর্মচর্চা, নিয়মিত প্রার্থনা,ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ুন। এগুলোর মাধ্যমে আপনি ডিপ্রেশন থেকে খুব সহজেই বেরিয়ে আসতে পারবেন।
সামাজিক কার্যকলাপ:আপনি চাইলেই বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপে অংশ নিতে পারেন। অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে পারেন,ঝড় ও বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ করতে পারেন,পথশিশুদের লেখাপড়া শিখাতে পারেন। এতে আপনার মন উদার ও প্রফুল্ল হবে।আপনি সহজেই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
ভ্রমণ করুন: বছরে কয়েকবার ভ্রমণে যান। ভ্রমণ করতে গেলেই যে সব সময় দূরে টাকা খরচ করে যেতে হবে,এমন বিষয় না।আপনি কাছে কোথাও ভ্রমণ করতে পারেন।যেমন- সমুদ্র,পাহাড়,ঐতিহ্যবাহী স্থান ইত্যাদি। এতে করে আপনার মন ভালো থাকবে।আর মন ভালো থাকলেই আপনি সহজেই ডিপ্রেশন কাটাতে পারবেন।
ধৈর্য ধারণ করুন: মানুষ ডিপ্রেশনে থাকলে তাদের মধ্যে সব সময় অস্থিরতা কাজ করে। যেকোনো সমস্যই তাদের তাৎক্ষণিক সমাধান দরকার হয়। তাৎক্ষণিক সমাধান না পেলেই তারা অস্থির হয়ে পড়ে।
এ সময়ে তাদের সবচেয়ে বেশি দরকার হয় ধৈর্য ধারণ করা। মনে বিশ্বাস রাখা যে সব কিছুতে সমাধান আছে এবং সব ঠিক হয়ে যাবে।মনে বিশ্বাস রেখেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। যেকোন অবস্থাতেই ধৈর্য ধারণ করার অভ্যাস করতে হবে।কারণ মানুষের জীবনেই সফলতা,ব্যর্থতা বিদ্যমান।এটা মেনে নিয়ে ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষা করতে হবে ভালো সময়ের জন্য।কাউন্সিলিং করুন:ডিপ্রেশনের মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।সাইকোলজিস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কাউন্সিলিং করুন। মাথায় রাখবেন সাইকোলজিস্ট আপনাকে সমাধানের পথ আপনার মাধ্যমেই বের করে দিবেন।তাই আপনাকে অবশ্যই তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে। এভাবে কাউন্সিলিং করে ডিপ্রেশন কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।
সর্বোপরি,ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই যেকোনো অবস্থাতেই চেষ্টা করুন হাসিখুশি থাকার। নিজেকে ভালোবাসুন।অন্যদের কথা হালকাভাবে নিন। নিজেকে ছোট না মনে করে যেই কাজ পারেননা সেই কাজ অন্যদের থেকে শিখে নিন।জীবনের সমস্যাগুলোকে সাধারণভাবে নিন। যেকোন কাজ স্ট্রেস না নিয়ে করার চেষ্টা করুন।সময়ের কাজ সময়ে করুন।ফলে কোন কাজ পেন্ডিং থাকবেনা। অনেক সময় পেন্ডিং কাজ ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে আপনি ডিপ্রেশন থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।
সবশেষে বলবো, ডিপ্রেশনে যারা আছেন,তারা এটিকে প্রসারিত না করে সময়মতো হিলিং করুন।সময়মতো হিলিং না করলে একটা সময় বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।সবসময় পজেটিভ চিন্তা করুন।উপরিউক্ত বিষয়গুলো মেনে চলুন। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকুন।
সবাইকে ধন্যনবাদ।আমার লেখাটি পড়ার জন্য।আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আবার নতুন কোন লেখা নিয়ে হাজির হবো খুব শীঘ্রই।সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
সত্যিই আপনার কথাগুলো যদি বাস্তবে মানা যায় ডিপ্রেশন থাকবে না আমি মনে করি। এটি যদি মানুষ সঠিকভাবে পড়ে তাহলে তাদের কষ্টগুলো থেকে হালকা হবে আপনার পোস্টে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথাটা আমার বেশি ভালো লেগেছে। সত্যিই এই দুইটি জিনিস থাকলে পৃথিবীর সব কিছুই জয় করা যায় বলে আমি মনে করি।ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেওয়ার জন্য
জি ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।