ঐতিহাসিক লালবাগ ভ্রমন : পর্ব ১ (১০% বেনিফিসিয়ারি @shy-fox এবং ৫% @abb-school এর জন্য)
নমস্কার, সকলে কেমন আছেন? আশা করি ভালোই আছেন। আমি বাস করি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়। এই মুর্শিদাবাদ জেলা এক ঐতিহাসিক জেলা। অবিভক্ত বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজধানী ছিল এই মুর্শিদাবাদ। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর নাম অনুসারে এই জেলার নাম হয়েছে মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ শহরের বর্তমান নাম লালবাগ। এটি এখন এই জেলার একটি মহকুমা শহর। তবে এই শহরের রেল স্টেশনের নাম মুর্শিদাবাদ রাখা হয়েছে। লালবাগের পশ্চিম প্রান্ত বরাবর বয়ে চলেছে ভাগীরথী নদী। এই নদী ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী। আমি দুটি পর্বে এই লালবাগের ঐতিহাসিক কাঠগোলা বাগান ও হাজারদুয়ারী প্যালেস ভ্রমণের কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
লালবাগ যাওয়ার উদ্দেশ্য আমি আর আমার স্ত্রী সকাল ৯.১৫ তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরি। পদব্রজে মাত্র১০ মিনিটে পৌঁছে যাই নিকটবর্তী রেল স্টেশন নিউ বলরামপুর হল্ট এ। সেখান থেকে আমরা লালগোলা গামী ৯.৪০ এর রাণাঘাট মেমু লোকালে উঠে পড়ি। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাই মুর্শিদাবাদ স্টেশনে। স্টেশন থেকে বাইরে বেরোলেই চোখে পড়বে অজস্র টাঙ্গা (ঘোড়ার গাড়ি), ব্যাটারি চালিত টোটো গাড়ি। তার মধ্যে থেকে একটি টোটো গাড়ি ভাড়া করলাম শহরের একেবারে উত্তর প্রান্তে অবস্থিত ঐতিহাসিক বাগান বাড়ি কাঠগোলার বাগান দেখব বলে। তবে যারা দূর থেকে আসবেন তারা সারাদিনের জন্য টোটো অথবা টাঙ্গা ভাড়া করে নিতে পারেন। তারা সারাদিন ঘুরে ঘুরে দেখাবে লালবাগ এর ঐতিহাসিক স্থান গুলো।
ডানদিকে চিড়িয়াখানা আর বামদিকে সুরঙ্গ পথ।
লোকেশন - লালবাগ
ডিভাইস - ভিভো জেড ১ প্রো
ফটোগ্রাফার - @pap3
দেখতে দেখতে আমাদের টোটো স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাজার দুয়ারী প্যালেস ছাড়িয়ে এগিয়ে চললো কাঠগোলার বাগানের দিকে। মিনিট পনেরো পরে আমাদের টোটো থামলো কাঠগোলা বাগানের মেন ফটকের সামনে। সেখান থেকে হেঁটে কিছুটা ভিতরে ঢুকতেই রাস্তার বাম দিকে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। সেখান থেকে দুজনের দুটো টিকিট কেটে এগিয়ে আসতেই ডান দিকে দেখতে পেলাম চিড়িয়াখানায়। যেখানে ছিল নানা রকমের পাখি, মাছ, খরগোশ ও দুটি জলের ফোঁয়ারা।
কথিত আছে এই বাগানে এক সময় কাঠ গোলাপের চাষ হত। সেই থেকে এর নাম হয় কাঠগোলার বাগান। তবে এখনো এখানে কিছু গোলাপের বাগান রয়েছে।
চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে আসতেই উল্টো দিকে দেখতে পেলাম একটি বাঁধানো সুরঙ্গ পথ। যেখান থেকে একসময় সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যেত গঙ্গার ঘাটে। বহুবছর আগে বন্যার সময় গঙ্গার জল ঢুকে যাওয়ায় এই সুরঙ্গ এখন জলে ভর্তি। এর পাশেই রয়েছে মাইকেল এঞ্জেলোর একটি প্রস্তর মূর্তি।
এখান থেকে এগোলেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য এক প্রাসাদ। এই সুউচ্চ প্রাসাদটি তিনতলা। এটি তৈরি করেন জিয়াগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীপৎ সিং এর পূর্বপুরুষ লছমীপৎ সিং। এর সামনে রয়েছে এক বিশাল পুকুর, যেখানে নানান রঙিন মাছ খেলা করছে। প্রাসাদের ভিতরে রয়েছে অসংখ্য পুস্তক, বিলিয়ার্ড বোর্ড, দামী আসবাবপত্র, আরও নানান মূল্যবান ঐতিহাসিক জিনিস।
লোকেশন - লালবাগ
ডিভাইস - ভিভো জেড ১ প্রো
ফটোগ্রাফার - @pap3
লোকেশন - লালবাগ
ডিভাইস - ভিভো জেড ১ প্রো
ফটোগ্রাফার - @pap3
প্রাসাদ ছেড়ে একটু এগিয়ে গেলেই ডান দিকে দেখা যায় এই সিংহের মূর্তিটি। পুকুরের দুপাশেই এমন দুটি সিংহ আছে।
এই প্রাসাদে সিনেমার শুটিং হয় মাঝে মাঝেই। কিছুদিন আগে নুসরত জাহান ও অঙ্কুশ হাজরা অভিনীত 'বলো দুগ্গা মাইকি' সিনেমা ও ধারাবাহিক 'আমি সিরাজের বেগম' এর শুটিং এখানে হয়েছিল। আরো এগোলে ডানদিকে একটি নাচ মহল ও বাম দিকে একটি কুয়ো দেখা যায়। মাঝের রাস্তা ধরে সামনে এগিয়েই বাম দিকে দেখতে একটি লক্ষ্মী - নারায়ণ মন্দির । আর সব শেষে আছে পরেশনাথ মন্দির।
চিড়িয়াখানার এই ম্যাকাওটি খুব সুন্দর।
এই সাদা শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরটির সামনের ও ভিতরের অংশ শ্বেত পাথরের তৈরি। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে পরেশনাথ ও মহাবীরের মূর্তি সহ আরো অনেক মূর্তি। মন্দিরের বাইরের ও ভিতরের কারুকার্য খুবই সুন্দর। এই মন্দিরের উল্টোদিকে আছে আরো একটি পুকুর, যেখানে বোটিং করার ব্যবস্থা আছে।
লোকেশন - লালবাগ
ডিভাইস - ভিভো জেড ১ প্রো
ফটোগ্রাফার - @pap3
লোকেশন - লালবাগ
ডিভাইস - ভিভো জেড ১ প্রো
ফটোগ্রাফার - @pap3
এই সেই প্রধান ফটক।
মন্দিরে কিছুক্ষণ সময় কাঠিয়ে আমরা বেড়িয়ে এলাম পরবর্তী গন্তব্যস্থল হাজার দুয়ারীর উদ্দেশ্যে রওনা হব বলে। পরবর্তী পর্বে তুলে ধরব হাজার দুয়ারী প্যালেস ভ্রমণের কাহিনী।
সকলে ভালো থাকবেন।
লালবাগ ভ্রমণের মুহূর্তগুলো বেশ অসাধারণ ভাবে কাটিয়েছেন। আপনার ফটোগ্রাফি গুলো বেশ দুর্দান্ত হয়েছে। খুব চমৎকারভাবে আপনি ভ্রমণ কাহিনী আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। দেখে খুব ভালো লাগলো পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।
লালবাগ ভ্রমনের মুহূর্তটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন। আসলে লালবাগে আমিও ভ্রমণ করেছি। আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনার ফটোগ্রাফি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, শুভকামনা রইল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।
ভালো লাগলো ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লাটি দেখে, খুব সুন্দর এবং পুরনো। মুর্শিদাবাদের কথা শুনে গোপাল ভাঁড়ের কথা মনে। সে গোপাল ভাঁড়ে শুনতাম মুর্শিদাবাদ এর কথা।সেখানে গিয়ে আপনারা খুব ইনজয় করেছেন। এবং সর্বশেষ ফটোগ্রাফি দুটি অনেক ভালো লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ। তবে এটা লালবাগ কেল্লা নয়। লালবাগের বিখ্যাত প্যালেস হাজার দুয়ারী ওটা পরের পোস্টে দেখতে পাবেন।
ছাত্রজীবনে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা এবং মুর্শিদাবাদ নিয়ে যে কত পড়াশোনা করেছি বলে শেষ করা যাবে না তবে চোখে দেখিনি। আপনার পোস্টের মাধ্যমে কিছু ছবি দেখার এবং কিছু তথ্য জানার সুযোগ হল। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আমারও ভাল লাগে। সোনালী রঙের তিন তলা বড় ভবনটি খুবই সুন্দর দেখতে। সাদা শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরটিও দেখতে সুন্দর লাগছে। চিড়িয়াখানার ম্যাকাও পাখির সাথে সবুজ সুতা বাধা আছে কেন আমার কৌতুহল। ধন্যবাদ দাদা আপনাকে দেখে সুন্দর ঐতিহাসিক একটি জায়গার সাথে আমাদের পরিচিত করারনোর জন্য।
সুযোগ পেলে একবার লালবাগ ঘুরে যাবেন। ঐ সুতোটা পাখির খাঁচার বাইরের আচ্ছাদনের। পাখিটি স্বেচ্ছায় ঐ সুতো টেনে নিয়ে খেলা করছিল।
বাংলাদেশ থেকে কোলকাতা গিয়েছি কয়েকবার কিন্তু সময় সল্পতার জন্য অন্য কোথাও যেতে পারিনি। পরবর্তীতে কোলকাতা গেলে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার প্ল্যান রাখব।
অবশ্যই ঘুরে যাবেন। খুব ভালো লাগবে। তবে শীতে আসার চেষ্টা করবেন।
খুব সুন্দর উপস্থাপনা হয়েছে। প্রতিটা ছবি নীট এবং ক্লিয়ার ভাবে তোলা হয়েছে। আরো এই ধরণের পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ আপু। চেষ্টা করব আরো ভালো করার।
আমিও গিয়েছি একবার, দারুন জায়গা, খুব উপভোগ করেছিলাম। স্মৃতি গুলো তাজা হয়ে উঠলো।
ধন্যবাদ। সকলের ভালো লাগবে এমন জায়গা এটি।
আপনি খুবই চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে লালবাগ ভ্রমণের কিছু সুন্দর মুহূর্ত এবং সেই সাথে কিছু চমৎকার চমৎকার ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন দেখে অনেক বেশি ভালো লাগলো ভাইয়া। এরকম সুন্দর কিছু দৃশ্য পরবর্তী পর্বে দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি চেষ্টা করব সব সময় ভালো ভালো ছবি সহ পোস্ট করতে।