খেলাধুলা।

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।

17362332578782996882602324896108.jpg


সোর্স


আগেকার সময় বিকাল হওয়া মানে কোন ছোট বাচ্চাদের বা একটু বড় হয়ে গেলেও ঘরে থাকতে ভালো লাগতো না মাঠে যেতেই হবে। মাঠে গিয়ে বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা করতে দেখা যেত তখনকার সময়ের বাচ্চাদের। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম খেলা দেখা যেত যেমন শীতকালে এক ধরনের খেলাধুলা ছিল গরম কালে আরেক ধরনের খেলাধুলা ছিল। সময় যত যাচ্ছে তত আমাদের জীবন থেকে খেলাধুলা নামক জিনিসটাও হারিয়ে যাচ্ছে। আগেকার সময়ে এত আধুনিক না হওয়ায় একদিক থেকে ভালোই ছিল কারণ তখন মোবাইল ফোন ছিল না আর মানুষ অতটা টেলিভিশনও দেখতে পছন্দ করত না। তারা সব সময় একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে গল্প করতে এবং খেলাধুলা করতেই বেশি পছন্দ করত। স্কুল-কলেজ থেকে এসে কোনরকমে একটু খেয়ে দৌড়ে চলে যেত মাঠে খেলাধুলা করার উদ্দেশ্যে। আর এই খেলাধুলা করার জন্য সবচেয়ে বড় যে উপকারটা ছিল সেটা হচ্ছে এখনকার মত আগে এত ব্যায়াম করার বা শরীর চর্চা করার আলাদা করে প্রয়োজন হতো না। খেলাধুলার মাধ্যমেই শরীরচর্চা হয়ে যেত। তাই আগেকার সময়ে মানুষের মধ্যে এত রোগ ব্যারাম ছিল না বললেই চলে।


খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয়ে থাকে। আর সেই কারণেই আমাদের শরীরের গ্রোথ ভালোভাবে হয়। এখনকার সময়ে আমাদের চারপাশে কোন খেলার মাঠ দেখতেই পাওয়া যায় না যে সেখানে গিয়ে বাচ্চারা বিকালবলা খেলাধুলা করবে। বাচ্চাদের এখন বেশিরভাগ সময় কোন এক স্থানে শান্তভাবে শুয়ে বা বসে মোবাইল ফোন নিয়ে গেম খেলতেই দেখা যায় অথবা বিভিন্ন রকমের ভিডিও দেখতেই তারা ব্যস্ত থাকে। আর এই শান্তভাবে শুয়ে বসে থাকার কারণে এখনকার সময়ে বাচ্চাদের মধ্যে তাড়াতাড়ি মোটা হয়ে যাওয়া এবং অলসতা খুবই চোখে পড়ে। আর বেশি ফোন দেখার কারণে বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি চোখ খারাপ হয়ে যাওয়ার বিষয়টাও খুবই বেড়ে যাচ্ছে চারিদিকে। আগেকার সময়ে বাচ্চারা সারাদিন পড়াশোনা এবং খেলাধুলা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতো। একটু সময় পেলেই দেখা যেত, তারা মাঠে চলে যেত খেলাধুলা করতে। যে কারণে তাদের শারীরিক গ্রোথের সাথে সাথে মানসিক বিকাশ ও ভালো হতো। বাচ্চাদের খেলাধুলা করার কারণে মন ভালো থাকতো এবং সবাই মিলে মিশে থাকার সুন্দর মানসিকতাও তৈরি হতো।


এখনকার সময় দেখা যায় যেহেতু আশেপাশে কোন খেলার মাঠ নেই সেই জন্য কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এমন করা হয়েছে যে, সেখানে টাকার মাধ্যমে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা আছে। আমরা এখন এতটাই আধুনিক হয়ে গেছি যে খেলাধুলা করতে গেলেও আমাদের এখন টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ এই খেলাধুলাও একটি অর্থ উপার্জনের রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগেকার সময়ে দেখা যেত গরম কালে বাচ্চারা রুমাল চুরি, কুমিরডাঙ্গা, কিৎ কিৎ , মার্বেল গুলি, ক্যারাম বোর্ড, লুডো, লাট্টু, ফুটবল, ক্রিকেট, কানামাছি, দড়ি লাপ, বুড়ি বসন্ত, লাঠি দিয়ে টায়ার নিয়ে দৌড়ানো, একের পর এক হাত তুলে সেই হাতের উপর দিয়ে লাফ দেওয়া ইত্যাদি আরো কতইনা খেলাধুলা ছিল তখনকার সময়ে। বর্ষাকালে বৃষ্টির মধ্যেও খেলাধুলা বন্ধ হতে চাইত না তখনও দেখা যেত কিছু ছেলেরা ফুটবল খেলতো। মেয়েরা জলের মধ্যে নৌকা তৈরি করে ভাসিয়ে দিত। শীতকালে বিভিন্ন রকমের খেলার মাঝে ব্যাডমিন্টন খেলা সব থেকে প্রধান স্থান অধিকার করত। চারিদিকে দেখা যেত খেলার মাঠে রাস্তায় অলিতে গলিতে একটু জায়গা পেলেই সেখানে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হয়ে যেত।


আগেকার সময় দেখা যেত স্কুলে যদি কোন ক্লাস মিস যেত তখনও আমরা চোর পুলিশ, কাটাকুটির মত এমন নিজের বেঞ্চে বসে বসে কিছু খেলাধুলো করতে লাগতাম। আগেকার সময়ের অনেক খেলাধুলা এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সময় যত যেতে থাকবে সব খেলাধুলাই আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে থাকবে। কারণ মানুষ খেলাধুলা থেকে অনেকটাই আস্তে আস্তে দূরে সরে আসছে এবং ঘরকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এখনকার মানুষরা প্রচুর পরিমাণে ডিজিটাল জিনিসপত্রে আসক্ত হয়ে পড়েছে এবং যত সময় যাবে ভবিষ্যতে মানুষ আরো ডিজিটাল জিনিসে আসক্ত হয়ে পড়বে। আর চারপাশে ফাঁকা জমি খেলার মাঠ সব জায়গায় ঘর বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার কারণে খেলাধুলার ও জায়গার অভাব পড়ে যাচ্ছে। এমন একটা দিন আসতে চলেছে ভবিষ্যতে যে, খেলাধুলাটা আমাদের স্মৃতিতেই থেকে যাবে এবং নতুন জেনারেশন এর মানুষেরা এইসব পুরনো খেলাধুলার কথা জানতেই পারবে না। আর যেসব জায়গায় অর্থের বিনিময়ে খেলাধুলা করা যায় ভবিষ্যতে তাদের সেখানে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে খেলাধুলা করতে হবে।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.24
JST 0.041
BTC 94527.30
ETH 3297.48
USDT 1.00
SBD 7.84