আমার শৈশবে মায়ের সাথে কাটানো সময়।

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17365795942142362849338969665828.jpg



সোর্স



আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন মনে হতো বড়দের জীবনে অনেক আনন্দ। তারা যখন ইচ্ছা তখন বাইরে যেতে পারে, যা ইচ্ছা তাই করতে পারে, যখন ইচ্ছা তখন ঘুরতে যেতে পারে। তাই মনে হতো আমিও বড় হলে অনেক মজা করব অনেক ঘুরবো, যেখানে ইচ্ছা যখন ইচ্ছা যেতে পারব। কিন্তু আমি তখন বুঝতাম না যে আমার শৈশব টাই অনেক আনন্দের ছিল। তবে এখন আমার আনন্দের ওই সময়টা একটা স্মৃতি হয়ে থেকে গেছে। এখন বুঝলেও ফিরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। এটা প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষেত্রেই হয়তো সমান অনুভব হয়, প্রত্যেকটা মানুষই মনে হয় ভাবে যে তাদের শৈশবে ফিরে যেতে পারলে খুবই ভালো হত। আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম আমার মা-বাবা চাকরি করতে যেত, সেই সকালে যেত আর সন্ধ্যার সময় বাড়িতে ফিরে আসতো। আমি সারাদিন স্কুলে পড়াশোনা করে বাড়িতে এসে আবার টিউশন পড়ে বিকালবেলা খেলাধুলা করতাম আর বাবা মায়ের জন্য অপেক্ষা করতাম। অনেক সময় এমন দেখা যেত যে বাবা-মার আসতে আসতে ওই সন্ধ্যা পেরিয়ে যেত। তবুও যেন আমার রাস্তা থেকে চোখ সরাতে পারতাম না যতক্ষণ না আমার মা বাড়িতে আসতো ততক্ষণ আমি আমাদের বাড়ির উঠোনে বসে থাকতাম।


যখনই আমার মাকে রাস্তা দিয়ে আসতে দেখতাম আমি ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম আর একসাথে বাড়ির দিকে হেঁটে ঘরে ঢুকতাম। তখন যে মাকে দেখে কি আনন্দ হতো সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আর যেদিন বাবা মায়ের ছুটি থাকতো সেই দিনটা আমার অনেক ভালো আনন্দে কাটত। আমি আমার মার সাথে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতাম। আমার মা যখন রান্না করতে বসতো তখন সবসময় আমাকে ডেকে পাশে এনে বসাত। আর মা বলতো "আমার পাশে এখানে বসেই বই পড় আর আমি রান্না করি, কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আমাকে বলবে আমি বুঝিয়ে দেবো"। তবে মার পাশে বসে পড়াশোনা করতে গিয়ে আমার পড়াশোনা কম হতো আর মায়ের সাথে গল্প একটু বেশি হতো। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় বন্ধু যদি কেউ হয়ে থাকে সেটা হলো আমার মা। আমার জীবনে এমন কোন কথা ছিল না যেটা আমার মা জানতো না। আমার মনের কথা বলার একটাই জায়গা ছিল আর আমার সব সমস্যার সমাধান ছিল আমার মায়ের কাছে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় মা-বাবা এবং আমরা বোনেরা মিলে একসাথে হেঁটে হেঁটে দুর্গা পূজার প্যান্ডেল দর্শন করতে বের হতাম। আমার বাবা খুবই ফিট মানুষ হওয়া সত্বেও আমার মার সাথে হেঁটে পেরে উঠত না।


আমার মার ঘুরতে খুবই ভালো লাগতো পুরো আমাদের মত। আমরা যেখানেই ঘুরতে যেতাম আমাদের আর কোন সঙ্গীর প্রয়োজন হতো না যদি মা সঙ্গে যেত। আমরা মায়ের সাথে ঘুরে এতটাই আনন্দ পেতাম যে আমাদের কোন বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কারো প্রয়োজনই হতো না। এখনো মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে ছোটবেলায় যখন মা কোন সুস্বাদু খাবার রান্না করত, বা কখনো মাংস রান্না করলে মাংস কষানোর সময়ই বাটি নিয়ে হাজির হয়ে যেতাম মায়ের পাশে। মা বাটি হাতে আমাকে দেখে সেই যে সুন্দর একটা হাসি দিত সেই হাসিটা এখনো মাঝে মধ্যে মনে পড়ে। বড় হয়ে যতই মায়ের হাতের সেই রান্নার হুবহু করা হোক না কেন তবুও মায়ের হাতের সেই রান্নার স্বাদ কখনোই ফিরে পাওয়া যায় না। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে রাস্তা থেকেই জোরে জোরে মাকে ডাক দিতে থাকতাম আর বলতাম গেট খুলতে। আর বাড়ি ঢুকেই আগে দেখতাম মা কি রান্না করেছে। মায়ের রান্নার গন্ধ যেন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে থাকতো। তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে যেতাম আর মনে হতো যেন সারাদিন বাদে কি একটা অমৃত খাচ্ছি। মায়ের হাতের রান্নার কোন তুলনাই হয় না।


মায়েদের ধৈর্যের কখনোই তুলনা হয় না, ছোটবেলায় এ কথা বুঝতাম না। এখন বড় হয়ে মাঝেমধ্যে ভেবেই অবাক লাগে যে আমার মায়ের এত পরিমান ধৈর্য কোথা থেকে আসতো? কারণ আমরা আমাদের মাকে প্রচুর পরিমাণ জ্বালাতন করতাম। অফিস থেকে আসার পর মা বসতে না বসতেই সারাদিনে কি হয়েছে কি ঘটেছে আমাদের সাথে, সব বলতে শুরু করতাম। তারপর একের পর এক আবদার শুরু করে দিতাম মায়ের কাছে। কিন্তু মাকে কখনোই অধৈর্য হতে বা আমাদের ওপর রাগারাগি করতে কখনোই দেখিনি। এমনকি আমাদের সারা জীবনে কখনো মা আমাদের একটু গায়ে হাত তোলেনি অর্থাৎ মারধর করেনি। সারা জীবন নিজের চাকরি সামলে সংসার সামলে আমাদের খুবই যত্ন সহকারে মানুষ করেছেন আমার মা। সবাই বলে মায়ের ঋণ কখনো শোধ করা যায় না এটা যেমন সত্যি কথা তেমন মা কে ভোলাও কখনোই যায় না। পৃথিবীতে সবাই হারিয়ে গেলে এক না একসময় তাকে হয়তো ভুলে যাওয়া যাবে। কিন্তু মা এমন একজন ব্যক্তি যাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভুলে থাকা যায় না। মায়েরা অনেক ত্যাগ করে এবং অনেক কষ্ট সহ্য করে তাদের সন্তানকে মানুষ করে তোলে, তাই আমাদের সন্তানদেরও কর্তব্য যে তার মায়ের সব শখ, ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করা। ভালো থাকুক সব মায়েরা।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Sort:  
 3 days ago 

আসলে আপু প্রত্যেকটা সন্তান চায় নিজের পিতা-মাতার সাথে সময় কাটাতে। হামারা যারা পিতা মাতার কোলে মানুষ হয়েছি প্রতিনিয়ত চোখের সামনে পেয়েছি তখন মা-বাবার গুরুত্ব বুঝতাম না। হয়তো অনেকে মা-বাবার গুরুত্ব বুঝেছে যাদের পিতা-মাতা চাকরিতে বাইরে থাকতেন দিনশেষে বাড়ি ফিরতেন। তবে আরো অনেকেই মিস করে পিতা-মাতাকে যাদের পিতা-মাতা নেই। যাই হোক আপনার পোস্ট পড়তে খুবই ভালো লাগলো আমার। যেন পিতা-মাতার প্রতি আরো সম্মান মায়া-মর্যাদা বেড়ে গেল।

 3 days ago 

আসলে মা সাথে থাকলে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করা সম্ভব। আর বিশেষ করে মেয়েদের জন্য সুবিধাটা একটু বেশি। মা যেন নিজের বান্ধবীর মতো হয়ে যায় এবং ইচ্ছেমতো মায়ের সাথে অনেক জায়গাতে চলা যায় অনেক কিছু বলা যায়। ভালো লাগলো অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করতে দেখে। দারুন ভাবি আপনি আম্মা সম্পর্কে লিখেছেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.23
JST 0.038
BTC 96602.58
ETH 3230.90
SBD 6.12