কেরালায় বেড়াতে গিয়ে নানান কেরালিয়ান খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Beige Aesthetic Photo Collage Phone Wallpaper_20250103_205719_0000.png






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



কোন একটা জায়গায় বেড়াতে যাওয়া মানেই নানান অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। আমি তো বেড়াতে যাইই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে। নানান জায়গা ও সেখানকার সংস্কৃতি উপভোগ করা আমার বিশেষ পছন্দের কাজ৷ যখন মুম্বাইতে থাকতাম ওই দিককার গ্রামাঞ্চলে যেতাম, হোমস্টে ভাড়া করে থাকতাম আর লোকাল খাবার ও শিল্প সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতাম। সে এক একবার দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে এবার সেই ধরণের কিছুই হয়নি। কারণ হোমস্টে তো দূরের সমস্ত স্টার ওয়ালা হোটেল নেওয়া হয়েছিল৷ গ্রুপে বেড়াতে গেলে নিজেরটা এভাবেই স্যাক্রিফাইস হয়ে যায়। আর দাঁতে দাঁত চেপে মেনে নিতে হয়৷ তবে আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম যে কদিন কেরালায় থাকব রোজ কেরালার খাবার খাবো। কিছু ছবি তুলে রেখেছি আর কিছু তোলা হয়নি। তাও আপনাদের সাথে পুরো অভিজ্ঞতাই শেয়ার করব।

তাহলে চলুন আসল গল্পে যাই।

InShot_20250103_205318634.jpg

সারাদিন ঘুরে খাবার না পাওয়ার পরেও আমি যখন ধোসা খুঁজছি তখন আমার শাশুড়ী মা বললেন ওনাকে মশলা ছাড়া ধোসা খাওয়াতে। ভালো কথা অর্ডার করলাম পেপার ধোসা। কিছুক্ষণ পর দেখলাম একটা ছেলে দুটো থালা নিয়ে আসছে, দূর থেকে বুঝতে পারিনি, ভেবেছি দুটো ধোসা আসছে৷ কারণ আমি ও বাকিরা মশালা ধোসা অর্ডার করেছিলাম। সামনে আসতে দেখলাম দুটো বিরাট থালা জুড়ে শুয়ে আছে একটি ধোসা! ওমা এ কি ধোসা না ধোসার রেলগাড়ী! দেখে তো হতবাক, উৎফুল্ল হয়ে নাম দিলাম রেলগাড়ী ধোসা! হা হা হা৷ এখানে অনেক রকমের ধোসা পাওয়া যায়। আমি মূলত মশালা ধোসাই খেতাম। মাইসোর মশালা ধোসা একদিন খেয়েছি। কিন্তু এতো ঝাল আমার অবস্থা কাহিল হয়ে গিয়েছিল।

যাইহোক চলুন পরের খাবারে যাই।

IMG-20250103-WA0033.jpg

আমার সাথে ঘোরা মানেই প্রচুর পরিশ্রম। সারাদিন বেশিরভাগই খাবার সময়টুকুও দিই না৷ আর বেশি খেয়ে ফেললে সবাই বসে যাবে ভেবেই ডাব, ফ্রুটজুস আইস্ক্রিম চকলেট এই সব খাইয়ে রাখতাম। আমার মা মাসিরা কিছু বলতে চাইলেও সুযোগ দিতাম না। বলতাম চলো ওইখানে দারুণ জিনিস আছে। দেখে আসি। খাওয়াবো। এই বলে সারাদিন কাটিয়ে দিতাম। এভাবেই যেদিন আমরা ভারকালা থেকে কোচি এলাম সবাই ভাত খাবার জন্য অস্থির। কারণ আগের দুই দিন কেউ ভাত পায়নি। এদিকে মাছে ভাতে বাঙালি বলে কথা। হোটেলে চেক ইন করার পরেই চলে গেলাম একটি ভেজ রেস্টুরেন্টে। অর্ডার করলাম ভেজ থালি। আহা কী সুন্দর করে পরিবেশন করেছে বলুন। এতে রসম, সম্বর, ক্যড়ি থেকে শুরু করে পায়েস সবই রয়েছে৷ এরপর একটা পাঁপড় ভাজা, ভাত ও ঘি লাগানো রুটি একটা দিয়েছিল। এতো বুভুক্ষু আত্মা ছিল যে সেই ছবি তোলার সময় জোটেনি। হে হে হে।

IMG-20250103-WA0032.jpg

কেরালার সব থেকে প্রিয় লেগেছে এই খাবারটি। এর নাম হল আপ্পাম। কিভাবে বানায় সে সব বোঝার ক্ষমতা সেই মুহুর্তে ছিল না। কারণ যেই ঘরোয়া দোকানে খেতে উঠেছিলাম সেখানের মেয়েরা মালায়ালম ছাড়া কিছুই বোঝে না আর বলেও না৷ হ্যাঁ বন্ধুরা খাবার দোকানটি চালায় চারটে মেয়ে মিলে। দেখে মনে পড়ে গেছিল ওমেনস পাওয়ার! যাইহোক আপ্পাম কিন্তু একদম নরম তুলতুলে৷ ভেজ হোটেলে গেলে ছোলার তরকারি সহযোগে দেয় আর ননভেজ হোটেলে মাংস৷ আমি যেহেতু বাইরে গিয়ে ভেজই বেশি খাই আর ননভেজের মধ্যে কেবল মাছ আর ডিম সেদ্ধ তাই মাংস দিয়ে আপ্পাম খাওয়া হয়নি।

IMG-20250103-WA0031.jpg

এই খাবারটির নাম হল পুট্ট। এটিও চালের তৈরি। চালের গুঁড়োকে কোনভাবে গ্লাসের মতো কিছু একটাতে ভরে নিয়ে মুখগুলোতে নারকেল করে আটকে বাষ্পে সেদ্ধ করা হয়েছে। আপকামের মতো এটি ও একেবারে তেল ছাড়া খাবার। পুট্টু খেয়েছিলাম ছোলার তরকারি ও ডিমের কারি/ভুনা দিয়ে৷ একটা গোটা পুট্টু একা খাওয়া যায় না। দুজনে একটা ঠিকঠাক। কেরালা তে যেহেতু ধান বেশি উৎপন্ন হয় তাই আমার ধারণা সমস্ত খাওয়ার চালের ওপর নির্ভর করে তৈরি। আর গরম বেশি হওয়ার কারণে এখানে টক জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয়।

IMG-20250103-WA0030.jpg

রেলগাড়ি ধোসার মতো এই ধোসাটির নাম দিয়েছিলাম পর্বত ধোসা। প্রথম যেদিন ভেজ থালি খেয়েছিলাম আমাদের পাশের টেবিলে একজন নিয়েছিল। সেই দেখে আমার মেয়ের তো বিশাল আগ্রহ মাউন্টেন (পর্বত) ধোসা খাবার। একদিন ডিনারে ওর জন্য অর্ডার করে দিলাম। এটি আসলে কিছুই না ঘি তে বানানো রোস্টেড পেপার ধোসা৷

InShot_20250103_205747094.jpg

ভারতের পশ্চিম উপকূলের একটি রাজ্য হল কেরালা, তাই এখানে সমুদ্র তটের কোন অভাব নেই। আর সামুদ্রিক অঞ্চল মানে মাছের বাহার। বেরোনোর দিনগুলোতেই একদিন আমরা সমুদ্রের ধারে বসেছিলাম। আর পাশেই একটি ঠেলাগাড়িতে মাছ ভাজা বিক্রি হচ্ছিল। ঘটনাটি হিন্দিতে বোঝাতে পারলো যে ওরাই মাছ তুলে এনে ভেজে সন্ধ্যেবেলায় বিক্রি করে। যেহেতু মাছ প্রিয় বাঙালি তাই সকলেই দৌড়োলো। এদিকে আমার আবার সামুদ্রিক মাছে মারাত্মক এলার্জি হয়। বেশ খানিকক্ষণ দেখার পর ভেবেচিন্তে অল্প একটু খানি খেয়েও নিলাম। লোভ সামলানো দায়। তবে সামান্যই খেয়েছি ফলে কোন অসুবিধে ঘটেনি।

এছাড়াও কেরালিয়ান খাবার-দাবার এর মধ্যে ভালো লেগেছিল ইডিয়াপ্পাম, চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি নুডুলসের ইডলি। এবং বিখ্যাত কেরলের লাচ্ছা পরোটা। খুবই নরম তুলতুলে এবং ছেঁড়া ছেঁড়া দেখতে। এই দুটো খাবারের ছবি তোলা হয়নি। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। এছাড়াও মেদু বড়া আর ইডলি, উথাপ্পাম তো আছেই। কেরালার খাবার পরিবেশনের উল্লেখযোগ্য বিষয়টি না বললে পোস্ট সম্পূর্ণ হয় না৷ তা হল বেশিরভাগ হোটেলেই স্টিলের থালার ওপর কলাপাতা বিছিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়।

কি বুঝলেন পোস্ট পড়ে? হ্যাঁ আমি ভোজনরসিক মানুষ। তাই সব সময়ই যেই দেশ যাই সেই ফল খাই। নিত্য নতুন খাবার খেতে আমার বেশ ভালোই লাগে৷ তাই তো এই দশ দিন একবারও বাঙালি খাবারের কথা ভাবিনি৷ আর সত্যি বলতে কি প্রতিটি খাবার আমি ভীষণ উপভোগ করেছি। দেখব বাড়িতে বানাতে পারি নাকি। তবে জানেন তো ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফিরেই কিন্তু বাঙালির সেরা খাবার মাছের ঝোল আর গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত খেয়েছি৷ যেন মায়ের কোলে ফিরলাম৷

আজ তবে এ পর্যন্তই থাক। আবার আসব আগামীকাল নতুন পোস্ট নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন।

টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণলাইফস্টাইল ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন ১৪
লোকেশনকেরালা, ভারতবর্ষ
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল এবং গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 days ago 
1000368325.jpg1000368324.jpg1000368323.jpg1000368322.jpg1000368049.jpg
 4 days ago 
 4 days ago 

আপনি তো দেখছি বেশ ভালোই পরিশ্রম করাইছেন একদম ভালোভাবে কেটেও দেন নাই। তবে দিন শেষে আমরা যা খাই না কেন বাঙালি বলে কথা আমাদেরকে মাছ ভাত খেতে হয়। সত্যি খাবারের পরিবেশনাগুলো অসাধারণ। আমার তো সবগুলো দেখেই লোভ লেগে গেল। এত মজার মজার খাবার খেলেন নিশ্চয়ই তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলেন দিদি।

 3 days ago 

হ্যাঁ আপু, বেশ তৃপ্তি ভরেই খাওয়া দাওয়া করেছি৷ আসলে এখানে বেশিরভাগ রান্নাই তেল ছাড়া হয়৷ তাই খেয়ে হজম করতেও সুবধে হয়। বয়স্ক মায়েরা ছিলেন তো৷ তাদের দিকটাও ভেবেছি৷ সকলেই ভীষণ আনন্দ করেছেন৷

 2 days ago 

কোন অঞ্চলে ঘুরতে গেলে ঐ অঞ্চলের খাবার খাওয়া উচিত। এতে করে তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি খাদ‍্য অভ‍্যাস অনেক কিছু জানা যায়। পাহাড় আকৃতির ধোসা ওটা বেশ দারুণ লাগছে। আপনার পোস্ট টা পড়ে এবং কেরালার খাবার গুলো দেখে বেশ ভালো লাগল। সবমিলিয়ে চমৎকার ছিল। ধন্যবাদ আমাদের সাথে পোস্ট টা শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।

 2 days ago 

ঠিকই বলেছেন। আমিও তাই লোকাল খাবার খাই। কিন্তু সব জায়গার খাবার যে উপভোগ করতে পারি তা নয়। কিন্তু কেরালার খাবার দাবার বেশ ভালো ছিল। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.31
TRX 0.27
JST 0.045
BTC 102228.51
ETH 3688.34
SBD 2.80