এসো নিজে করি সপ্তাহে বানিয়ে ফেললাম বোতল আর্ট৷ সাথে দাদাবৌদির জন্য জানালাম শুভেচ্ছাবার্তা |
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
শুরুতেই আমাদের সবার প্রিয় @rme দাদার বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে দাদা ও বৌদিকে অনেক অনেক শুভেচ্ছে জানাই। এমন দিন আরও অনেক অনেক আসুক আর দাদাবৌদি আনন্দে খুনসুটিতে কাটিয়ে দিন আজীবন। উপহার হিসেবে দেওয়ার মতো শুভকামনাই রয়েছে আপাতত৷ সাথে আমার একটি ছোট্ট লেখা আপনাদের সুন্দর মুহুর্তের কথা মনে করে দিলাম। দাদা, আপনি পড়লে তো খুশিই হবো৷ বৌদিকে দেখালে একটু বেশিই ভালো লাগবে।
ভালোবাসতে বলেছি বলেই যে ভালোবাসতে হবে এমনটা নয়, খানিকটা রোদ কিংবা অন্ধকারের ভেতর সামান্য হাত ছুঁয়েও থাকা যায়, আমরা তো আর হাঁটছি না, পরাগ মেখে পৃথিবীর রূপ দেখতে দেখতে কোথাও নয় হারিয়ে যাব, আর হঠাৎ করেই রেলগাড়ির হুইসেলে টনক নড়লে যদি জানতে চাও, পাহাড় নাকি সমুদ্র, আহ্লাদী ঠোঁটদুটো আলতো আলগা করে বলব, ফুল ফোটা ভোর...
এবার আসি আসল পোস্টে।
সুন্দর বোতল সংগ্রহ করা আমার শখের মধ্যে পড়ে। নানান বন্ধুর বাড়িতে বা অন্য কোথাও থেকে এমনও হয়েছে রাস্তা থেকে তুলে এনেছি কোন বোতল পছন্দ হলে। তারপর ভেবেছি কিছু একটা করব। কখনো গ্লাস পেইন্টিং করেছি, কখনো বা পাটের দড়ি দিয়ে সাজিয়েছি, কখনও টিস্যু পেপার দিয়ে। এই বোতলটা প্রায় বছর তিনেক আগে একটি বন্ধুর বাড়ি থেকে এনেছিলাম, পেন্টিং করবো করবো করেও করা হয়নি। মাঝে তো বেশ কিছুদিন মানি প্লান্ট রেখে দিয়েছিলাম। অবশেষে ভাবলাম পেইন্টিং করেই ফেলি। যেই ভাবা ওমনি কাজ। গতকাল রাত থেকে লেগে পড়লাম পেইন্টিং এর কাজে। বোতল পেইন্টিং করতে অনেক সময় লাগে। কারণ প্রথম কোড দেওয়ার পর প্রায় ৮-১০ ঘন্টা রাখতে হয়, সেটা শুকিয়ে গেলে তারপর কাজ শুরু হয়। ওই ৮-১০ ঘণ্টা সময় বাদ দিলে, এই বোতলটি পেইন্টিং করতে আমার লেগেছে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। কারণ আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন ছোট্ট ছোট্ট ঘর করা যার রং দিয়ে ভরতে অনেকটা সময় লাগে। আমি আসলে সুক্ষ্ম কাজ করতেই বেশি ভালোবাসি৷ আর ওই ভালোবাসা বা প্যাশন যাই বলুন তাকে কাজে লাগিয়ে যা হয় শেষমেশ আপনারা তো দেখতেই পান৷
তাহলে চলুন দেরি না করে প্রথমেই দেখে নিই কি কি লেগেছে।
কাঁচের বোতল
বিভিন্ন সাইজের তুলি
পছন্দমত রঙের এক্রেলিক রং
জেসো
স্পঞ্জ
আসুন এবার ধাপে ধাপে দেখে নিই কিভাবে এঁকেছি।
প্রথম মেয়ে বোতলটার উপর স্পঞ্জের সাহায্যে ড্যাপ করে করে জেসোটা পুরো বোতলে ভালো করে লাগিয়ে নিয়েছি। এরপর শুকিয়ে যাওয়ার জন্য রেখে দিয়েছি প্রায় আট থেকে দশ ঘণ্টা।
ভেতরের ফাঁকা অংশটা সবুজ রং দিয়ে ভরে দিলাম।
যে বক্স বক্স জায়গাগুলো দেখা যাচ্ছে সেইগুলো নানান কালার দিয়ে ভরে দেবো বলে প্রথমে সেই সবুজ রংটা দিয়ে শুরু করলাম যেটা ভেতরে বড় ফাঁকা জায়গাটাতে দিয়েছি।
এবার ব্যবহার করছি গ্লিটার দেওয়া নীল রং। মোটামুটি আন্দাজে কয়েকটা বক্স ছেড়ে ছেড়ে করছি যাতে একের পর এক রং গুলো আলাদা আলাদা হয়।
এবার আমি লেমন ইওলো রং ব্যবহার করছি। এটা আবার ম্যাট রঙ। আসলে গ্লসি আর ম্যাট রং মেশামেশি ব্যবহার করলে আমার মনে হয় যেন জিনিসটা দূর থেকে দেখতে ভালই লাগবে।
হলুদ সবুজ নীল অনেকটাই একই ফ্যামিলির। মানে হলুদ হার্নিল একসাথে মিশিয়ে দিলেই সবুজ রং হয়ে যায়। তাই ভাবলাম একটু অন্য রং ব্যবহার করি, তবে মাল্টি কালারে আমার খুব একটা ডিপ সেট ভালো লাগে না তাই আমি হালকা গোলাপি রঙ দিলাম। আমার কাছে হালকা গোলাপী রং ছিল না তাই সাদা সাথে সামান্য একটু লাল রং মিশিয়ে বানিয়ে নিয়েছি।
আবার অনেকটা হলুদের সাথে সামান্য একটু লাল মিশিয়ে হালকা কমলা রং বানিয়ে বাকি যে গ্যাপগুলো রয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণভাবে ধরে নিলাম। পেছনে টিভি চলছে সেখানে মহাভারতের পুরনো এপিসোড গুলো চলছে। আসলে আর্টের কাজ একদম শুকনো শুকনো করতে ভালো লাগেনা। গান বা কোন সিনেমা চলবে বেশ ভালোই লাগে।
রংয়ের কাজ পেছনদিকে করতে গিয়ে কখন ওই ফাঁকা জায়গাটাতে ব্রাসের একটা হালকা টান পড়ে গেছে সেটা বুঝতে পারিনি। যাইহোক পরবর্তীতে ওটা আমি মেকআপ দিয়েছি।
এই ধাপে আমি কারো রং দিয়ে ০০০ নম্বর ব্রাশ ব্যবহার করে প্রথমে ভেতরের অংশটার চারপাশে একটা বর্ডার টেনে নিয়েছি।
এরপর বক্সগুলোর ভেতর যেমন যেমন রং রঙ দিয়ে ভরেছি তার বর্ডারগুলোও ওই একই তুলি এবং কালো রং দিয়ে টেনে নিয়েছি।
এবারে ফাঁকা অংশটাতে ফুল বানিয়েছি। কি ফুল বানাবো ভেবে না পেয়ে, নিজের মত একটা স্ট্রোক দিয়ে দিয়েছি। ওই হালকা গোলাপি রঙ তার ওপরে সাদা এবং লালের শেড দিয়ে।
দুটো ফুল আর তিনটে কুঁড়ি।
এবার কালো রং দিয়ে প্রত্যেকটা ফুলের আলাদা আলাদা করে কান্ড এঁকে নিয়েছি।
তারপর হলুদ রঙের পাতা দিয়েছি, হলুদ রঙের পাতা হয়না সেটা আমিও জানি কিন্তু যেহেতু ব্যাকগ্রাউন্ডটা সবুজ তাই সবুজ রং ব্যবহার না করে হলুদ ব্যবহার করলাম।
হলুদ রংটা যাতে উজ্জ্বল দেখায় তাই মাঝখানে একটু কমলা রঙের শেড দিয়ে দিয়েছি।
আবার কালো রং দিয়ে ফুল গুলোর এবং পাতার চারপাশে হালকা করে বর্ডার টেনে একটা থ্রিডি লুক দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আসলে বর্ডার দিলে যেকোন আঁকাই দেখতে আরও সুন্দর হয়৷
ওপরে আর নিচে যে সাদা রঙের ফাঁকা জায়গাটা ছিল, সেই অংশটা আমি হলুদ রং দিয়ে ভরে দিয়েছি। আসলে ফাঁকা সাদা অংশটা একেবারেই দেখতে ভালো লাগছিল না। বাবা দেখে দেখে বলছিলেন গোল্ডেন রঙ দিতে কিন্তু আমার কাছে যেহেতু গোল্ডেন রং নেই তাই হলুদই ব্যবহার করলাম। কেমন হয়েছে বলুন তো? খুব খারাপ? ঘরে রাখলে ভালো লাগবে?
এবার চলুন দেখি নি ফাইনালি আমার বোতল আর্ট কেমন দেখতে হয়েছে।
বন্ধুরা, আপনাদের কেমন লাগল আমার আজকের নিবেদন? সত্যি বলতে কি এক্রেলিক রং দিয়ে এরকম টানা বোতল পেইন্টিং এই প্রথমবার করলাম। আজকাল ব্লগের জন্য অনেক রকম আর্টের কাজ আবার করছি। মাঝে বেশ কিছু বছর কোন কিছুই করতাম না। মনে হত আমি বোধহয় কিছুই পারি না। সত্যিই তো পারি না। আপনারা কত গুণী, সবার থেকে নিত্য শিখি৷ আমিও চেষ্টা করি একটু ভালো করার। আপনারা মন্তব্য করে উৎসাহ দেন এই আমার কাছে অনেক পাওয়া৷
টা টা
পোস্টের ধরণ | আর্ট পোস্ট |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আইফোন ১৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | কেবলমাত্র ক্রপ করেছি দু একটা ছবি ইনশটের সাহায্যে৷ বাকি কোন এডিট নেই |
১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1864321050823065795?t=ZB-QAgJlKXUVhFGp3xVHXg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অসাধারণ দিদিভাই অসাধারণ আপনি অনেক সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে বোতল এবং এক্রেলিক রং এর সাহায্যে অনেক সুন্দর একটি বোতল পেইন্টিং আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন যা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনোমুগ্ধকর একটি ইউনিক বোতল পেইন্টিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার দক্ষতা পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাছাড়া আপনার বোতল পেইন্টিং এর কালার কম্বিনেশনটা ছিল অনেক সুন্দর দেখার মত। সবশেষে নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগিয়ে এত সুন্দর একটি বোতল প্রিন্টিং আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদিভাই।
দাদা বরাবরের মতো গুছিয়ে মন্তব্য করলেন৷ আপনার মন্তবে আমি ভীষণই উৎসাহ বোধ করি৷ অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন দাদা৷
দাদা বৌদির জন্মদিন উপলক্ষে খুবই সুন্দর একটা জিনিস তৈরি করে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু। বোতলের ওপরে তৈরি করা এই আর্ট আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন সুন্দর চিত্র অঙ্কন করে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ দাদা। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগল। ভালো থাকবেন দাদা৷
বাহ, দারুন একটি আর্ট তৈরি করেছেন আপু। আপনার তৈরি করা পেন্টিং দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। খুবই সুন্দর এবং দক্ষতার সাথে নিখুঁতভাবে আপনি আর্ট সম্পন্ন করেছেন। খুবই ভালো লাগলো আপু আপনার আর্ট ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
চেষ্টা করেছি আপু। অনেকটা সময় লেগে গেছে নিপুন করে তোলার জন্য৷ আপনার ভালো লেগেছে এটাই আমার কাছে আনন্দের৷ ধন্যবাদ নেবেন৷
আচ্ছা আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর ভাবে বোতলের আর্ট করে দেখিয়েছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো আমার। আর এরই পাশাপাশি দাদা বৌদির বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে আপনার শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন যেনে আরো বেশি ভালো লাগলো। আপনার আর্ট কিন্তু আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। দারুন ছিল।
অনেক ধন্যবাদ দাদা। অনেকটা সময় ধরে করেছি। তাই আপনার ভালোলাগা শুনে বেশ আনন্দিতই বোধ করছি। ভালো থাকবেন দাদা৷
দাদা বৌদিকে উদ্দেশ্য করে যে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন সেটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপু। আশা করছি যদি এটা তারা দেখেন খুবই খুশি হবেন। আর তাছাড়া এই বোতলের পেইন্টিংটা অসাধারণ হয়েছে। সব মিলিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
হ্যাঁ আপু, ওই দু'কলম লেখাই উপহার দিলাম৷ আমি আর কিই বা পারি৷ ওনাদের জন্য শুভকামনা জানালাম৷ ওনাদের ভালো লাগলে তো অবশ্যই আনন্দিত হব৷
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু৷ ভালোবাসা নেবেন৷
কী সুন্দর কালারফুল একটি DIY তৈরি করেছেন আপনি! বাহ! আসলে এমন কালারফুল জিনিসগুলো দূর থেকেই আকর্ষণ কেড়ে নেয়। ভীষণ সুন্দর হয়েছে। আমিও আপনার মতো অনেক বোতল জমিয়ে রেখে দেই, পরে অবশ্য ফেলেই দেয়া হয় বেশি।
ঠিক বলেছেন, রঙিন হলে আর ঠিক ঠিক রঙ ব্যবহার করলে দেখতে অপূর্ব হয়৷ এটা যদিও আমি আমার পছন্দেই করেছি। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালোবাসা নেবেন৷
বোতলের মধ্যে আপনি খুবই চমৎকার একটা পেইন্টিং করেছেন। বোতলটাকে এত সুন্দর করে সাজিয়েছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো। কালার কম্বিনেশন টা অনেক বেশি সুন্দর ছিল। অনেক সুন্দর এবং নিখুঁত হাতে কাজটি সম্পূর্ণ করেছেন আপনি। এরকম সুন্দর দক্ষতা মূলক কাজগুলো দেখলে প্রশংসা না করে থাকাই যায় না।
আপু, কী বলি, খুব খুশি হয়েছি৷ আপনি নিজেই মস্ত আর্টিস্ট৷ আপনার থেকে মন্তব্য পেয়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগছে৷ ধন্যবাদ নেবেন আপু।