খুব সহজ পদ্ধতিতে এবং ঘরোয়া উপকরণে সজনে ফুল রান্নার রেসিপি। ভিডিওগ্রাফি।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
এবার বাংলার বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে অর্থাৎ সরস্বতী পুজো ফুরোলেই দরজায় কড়া নাড়ে বসন্তকাল। বসন্ত আমাদের অনেকেরই পছন্দের ঋতু। শীত ফুরানোর তালে তাল রেখে ফাগুনের দোলা, পলাশের ঝকঝকে লাল ভালো না লাগে উপায় কি? এ বসন্তকালে প্রকৃতি যেমন নানান ধরনের লাল রঙের ফুল সেজে ওঠে ঠিক তেমনি ঘোলাটে সাদা রঙের মাথা ভর্তি সজনে ফুলের ভরা যৌবন।
ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি এমন দিনগুলোতে বাড়িতে নিম কুসি, সজনে ফুল, সজনে পাতা আর পরের দিকে সজনে ডাটা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। কেন এত খাওয়া দাওয়া হতো তা আগে বুঝতাম না তবে বড় হয়ে জেনেছি শীত ফুরানোর পরেই যেই অল্প অল্প করে গরম আসতে শুরু করে নানান ধরনের ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস নড়ে চড়ে ওঠে। ফলে এই সময় ঋতু পরিবর্তনের হাত ধরে নানান ধরনের ভাইরাস ঘটিত রোগ জীবাণুর বাড় বাড়ন্ত হয়। আর প্রকৃতি তার নিজের তৈরি করা সমাধান সূত্র অর্থাৎ এই সজনে ফুল নিয়ে আসে মানুষের জন্য। একে আমরা বলতেই পারি গিফট অফ নেচার বা প্রকৃতি মাতার উপহার। আসলে প্রকৃতি আমাদের সময় সময় সবকিছুই দেয় কিন্তু আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার মতো কোন কাজ করি না, উলটে অনেক ক্ষতি করে ফেলি। সাধে কি আর মনুষ্য প্রজাতি!
পুনেতে সেই ভাবে সজনে ফুল বা এই ধরনের ঘরোয়া রান্নার উপকরণ বাজারে পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের বিল্ডিং এর পেছনে বিরাট মাঠ জুড়ে রয়েছে বিশাল সজনে গাছের বাগান। আর প্রতিটি গাছেই মাথা ভর্তি ফুল। কিভাবে লোভ সংবরণ করি? তাই মাঝে মধ্যেই গাছ থেকে ফুল তুলে এনেছি। অনেকবারই বাড়িতে রান্না করেছি বলে মনে হলো আপনাদের জন্য একটি ভিডিও বানাই।
জানেন কি সজনে ফুলে এই বসন্তকালীন ভাইরাসের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বি সিক্স আয়রন ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ইত্যাদি মিনারেলস রয়েছে। এছাড়াও কোয়েরসিটিন এবং ক্লোরোজেনিক এসিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। শরীরে যেকোনো ধরনের প্রদাণাশ করে পাশাপাশি বাতের ব্যথা থেকে কার্ডিওভাসকুলার রোগ সবেতেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। মা বলতেন যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের সমস্যার ভুগছেন ভাত পাতে উচ্ছে নিম পাতার পাশাপাশি সজনে ফুল খেলে অনেক উপকার হয় কারণ সজনে ফুল ইনসুলিন হরমোন উৎপাদন এবং ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। তাহলে কি বুঝছেন সজনে ফুল তো আসলেই মহৌষধী। তাই না?
এই জন্যই সজনে ফুলকে বিরাট কিছু মসলা দিয়ে রান্না করে তার খাদ্যগুণ নষ্ট না করে খুব কম মশলা এবং কম আঁচে খাদ্য গুন বজায় রেখেই রান্না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই কথাটি মাথায় রেখেই আজকের রেসিপি আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম।
সব সময় খাওয়ার সুস্বাদু হতে হবে এবং চটপটা হতে হবে যা অস্বাস্থ্যকর তা কিন্তু কখনোই ভালো নয়। মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হয়।
তাহলে চলুন দেরি না করে দেখে নেই কি কি উপকরণ লেগেছে।
সজনেফুল— ৫০ গ্রাম মতো
আলু— মাঝারি সাইজের ২টি
মটরশুঁটি - ১ কাপ
আদা বাটা— ১ চা-চামচ
নুন হলুদ তেল ঝাল— পরিমান মতো
ঘি- ১/২ চা চামচ
কালোজিরে — ১/২ চা চামচ
চলুন দেখে নিই কিভাবে বানালাম।
মাত্র কয়েক মিনিটে এই রান্নাটা হয়ে গিয়েছিল। তবে রান্না করার ছোট ছোট টিপস আপনাদের জন্য দিয়ে রাখি। যেমন রান্নাটিতে কোনরকম জল ব্যবহার করিনি, কম আছে ঢাকা দিয়ে রান্না করেছি। গরম গরম ভাত পাতে শুরুতেই খেতে হয় এই সজনে ফুলের রান্নাটি।
রান্নাটা কিভাবে করলাম তার বিস্তারিত না বলে আপনাদের জন্য লিংকটি দিয়ে দিলাম। আশা করি দেখলে ভালই লাগবে। খুব ছোট্ট ভিডিও,দেখতে খুব একটা সময় লাগবে বলে আমার মনে হয় না।
এই ভিডিওটি আমি ইনশট অ্যাপে এডিট করেছি। যে ভয়েস ওভার রয়েছে সেটা আমার নিজের। আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এ যেটা রয়েছে তার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান রূপে তোমায় ভোলাব না। গানটি সরোদে বাজানো। বাজিয়েছেন পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য। মিউজিকটি আমি ইউটিউব থেকে নিয়েছি।
ভিডিওগ্রাফির লিংকটি নিচে দিলাম।
এখন ভিডিও দেখে আপনারা নিশ্চয়ই মন্তব্য করবেন এবং আমাকে জানাবেন রান্নাটা আসলে কেমন হয়েছে বা আরো অন্য কিছু করলে ভালো হবে নাকি। ভিডিও কেমন কম্পস হয়েছে সে সম্পর্কেও জানাবেন। আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
আচ্ছা, আবার আগামীকাল আসব নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভীষণ ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন। আজ এ পর্যন্তই...
টাটা

পোস্টের ধরণ | রেসিপি পোস্ট |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪, আইফোন ১৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
আমি প্রথম সজনে ফুল খেয়েছি আমার শ্বশুরবাড়িতে।তাও বড়া করে। তবে খেতে বেশ ভালো লেগেছিলো। তবে আমার কাছে তেলে ভাজা খাবারের চেয়ে কম তেলে এমন রেসিপি বেশি ভালো লাগে। বেশ হয়েছে আপনার রেসিপিটি। মশলার ছড়াছড়ি নেই। তাই খেতে বেশি মজা লাগবে আমার কাছে। এবার ঈদে বাড়িতে গেলে বানাবো। ঢাকায়তো সজনে ফুল আর পাওয়া যাবে না।
শহরাঞ্চলে এসব পাওয়া যায় না আপু। তবে আমি যেখানে থাকি সেটা শহর থেকে একটু দূরে আর ভাগ্যবশত আমাদের ফ্ল্যাটের পেছনে বেশ খানিকটা জমি রয়েছে যেখানে টুকটাক চাষাবাদ হয়। সেখানেই সজনে গাছের বাগান। বিগত ১৫ বছরের প্রবাস জীবনে এই প্রথম সজনে ফুল পেলাম।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন আপু। ভালোবাসা নিন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1891792202851848516?t=nrO2aOZE2O578CJWaC0PBw&s=19
আপু আপনার কাছ থেকে একদমই ইউনিক একটি রেসিপি শিখতে পারলাম। সজনে ফুল দিয়ে এভাবে মজাদার রেসিপি তৈরি করা যায় জানাই ছিল না। ঢাকাতেও সজনে ফুল পাওয়া যায় না। যদি পাওয়া যেতো তাহলে অবশ্যই আমি আপনার এই রেসিপি তৈরি করে নিতাম। মটরশুটি আলু দেওয়াতে বুঝতে পারছি এর স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। আহ, আমার তো দেখেই খেতে ইচ্ছে করছে। গাছ ভর্তি সজনে ফুল দেখে আমারও তুলতে ইচ্ছে করছিল। ধন্যবাদ আপু লোভনীয় রেসিপি ভিডিওগ্রাফি শেয়ার করার জন্য।
আসলে আপু আমরা কিছুই বাদ দিই না। যাই পাই তাই খাই৷ না পাইলেও খেতে আমরা সবই পারি। বাঙালি এরমই এক জাতি৷
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। আন্তরিক ধন্যবাদ নেবেন
সজনে ফুল ভাজা আমার দিদার হাতে খেয়েছিলাম। আপনি রেসিপি টা একটু অন্যরকম ভাবে তৈরি করেছেন। তবে দিদি আপনার উপস্থাপন আমার কাছে বেশ লেগেছে। দারুন ভাবে রেসিপি রান্নার প্রতিটি ধাপের বর্ণনা করেছেন। ঠিকই বলেছেন, বাঙালির রান্না তো আলু না হলে ঠিক জমে না। মটরশুঁটিতে এরকম সজনে ফুল রেসিপিটি ভালো লাগলো। একদিন বাড়িতে তৈরি করে দেখব। রেসিপিটি শেয়ার করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিদি।
সজনে ফুলের অনেক রকমের রেসিপি হয়। আমি এটা সহজ পদ্ধতিতে কম উপকরণে এবং কম সময়ে ঝামেলা বিহীন রান্না করার জন্য করেছি। আপনি রান্না করে দেখবেন ভালো লাগবে।
আমরা সব সময় রেসিপি পোষ্ট গুলো ফটোগ্রাফির মাধ্যমেই শেয়ার করি। আপনি আজকে ভিডিওর মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং খুব সুন্দর ভয়েস কভার দিয়ে পুরোটা উপস্থাপন করলেন। জাস্ট মুগ্ধ হয়ে গেলাম আপনার রেসিপি দেখে। সজনে ফুল রান্না করা যায় এটা জানা ছিল না। আমরা সজনে পাতা ভর্তা করি সেটা খেতে খুব দারুণ আর এটা অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তবে সজনে ফুলের রেসিপি জানা ছিল না। সম্ভব হলে একদিন চেষ্টা করে দেখব তৈরি করার। ধন্যবাদ আপু।
ঠিক বলেছেন আপু, ফটোগ্রাফির মাধ্যমে এই রেসিপি পোস্ট শেয়ার করে থাকি। তবে মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে রান্নার ব্লগ মানুষ যেভাবে করে বা ভিডিও যেভাবে করে সেই ভাবে করি। সেগুলো দেখে দেখেই আমি জাস্ট চেষ্টা করেছি। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আন্তরিক ধন্যবাদ নেবেন আপু।
আজকে আমার কাছে আপনার এই রেসিপি একদম নতুন লেগেছে আর সব থেকে ইউনিক লেগেছে আপনার ভিডিও কভার করাটি। পুরো ভিডিও দেখে আমার এতো ভালো লেগেছে বলার মতো নাহ আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম আর দেখছিলাম।বর্ণনাও গুছিয়ে দিয়েছেন।
সবার রান্নার ব্লগ দেখে আমিও চেষ্টা করেছিলাম সুন্দর করে ভিডিওগ্রাফি করে ব্লক কি করতে। আর যেহেতু চ্যানেলটি রয়েছে এবং ব্লগে ভিডিওগ্রাফি আপলোড এর জন্য নিয়মিত ব্যবহার করি তাই একটু গুছিয়ে করতে চেষ্টা করলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
অসাধারণ একটি রেসিপি সেই সাথে তোমার মিষ্টি মধুর কণ্ঠ এবং মিউজিক সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি মুহূর্ত উপভোগ করলাম।সজনে ফুল দেখেছি কিন্তু কখনো খাওয়া হয়নি।আজ তোমার রেসিপি দেখে শিখে নিলাম এরপর এভাবেই রান্না করে খাবো।তোমার উপস্থাপনা অতুলনীয় যা বলে প্রকাশ করতে পারবো না অসম্ভব রকমের সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।শুভকামনা নিরন্তর বন্ধু। ❤️❤️❤️
তাহলে ভিডিওগ্রাফির ব্লগ ঠিকমতো হচ্ছে বল? চেষ্টা করি আমি তো নিয়মিত আপলোড করতে পারি না তাও যখন সেরকম কিছু রান্নাবান্না করি তখন চ্যানেলে আপলোড করি। তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালোবাসা নিও।
আপু রেসিপিটি যেমন ইউনিক লাগছে তেমনি অনেক লোভনীয় লাগছে। দারুন একটি রেসিপি আপনার মাধ্যমে শিখে নিতে পারলাম। সজনে ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন।মটরশুঁটি আলু সজনে ফুল সবকিছু মিলে রেসিপিটি অসাধারণ। এই রেসিপি বাসায় আমি একদিন ট্রাই করবো। ধন্যবাদ আপু লোভনীয় একটি রেসিপি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
বসন্তকাল এই সজনে ফুল খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। কিছু কিছু খাবার মসলার চাবি তার খাদ্যগুণ নষ্ট না করে খাওয়াই আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো। এই সবকিছু মাথায় রেখেই এই রেসিপিটি করেছিলাম। একবার নয় বাড়িতে তো অনেকবারই রান্না করেছি তবে আপনাদের জন্য একবারের ভিডিও করেছিলাম। আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।