পতাকা ছেলেখেলার বস্তু নয়|| ব্যবহারই শিক্ষার আসল পরিচয়||
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
বেশ কিছুদিন যাবৎ একটি ঘটনায় আবারও নড়ে উঠেছে সোসাল মিডিয়া মহল। যার প্রতিবাদ হিসেবে আমাদের কমিউনিটি ফাউন্ডার rme দাদা কবিতা লিখেছিলেন৷ ঘটনাটা কি কেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় গিয়ে নতুন শব্দ ব্যয় করব না। কারণ আপনারা আমার থেকে অনেক বেশি জানেন৷
আপনারা প্রত্যেকেই লিখেছেন পতাকার অপমান ঠিক করেনি, অশিক্ষিতের মতো কাজ। অথচ কিছু দিন আগেই ছাত্র আন্দোলনের শেষে সরকার পতনের পর নতুন স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দে বাংলাদেশ মেতে উঠেছিল৷ সেই আনন্দের স্ফুলিঙ্গ যদিও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ভাংচুরেও পৌঁছে গিয়েছিল৷ সাধারণ মানুষ চিরকালই যেন সাধারণ স্রোতে নৃত্যরত কাঠপুতুলই থেকে গেল৷ সাধারণ মানুষের কোন উন্নতি নেই৷ এই সমস্ত ঘটনায় একদল হেসেছে, একদল বাহবা দিয়েছে, একদল ধিক্কার জানিয়েছে আবার একদল নির্বিকার থেকেছে৷ এই চারদলই সাধারণ মানুষ। দেশের জনতা৷
এই সাধারণ মানুষ যখন পাক-অধিকৃত সময়ে ধুঁকছিল তখনও স্বাধীনতার মুখ দেখেনি, খেতে পেয়েছিল না, ঘর ছিল না, শিক্ষা তো দূরস্থ৷ আবার দেশ ভাগের সময়ও এই সাধারণ মানুষই ঘর হারা হয়েছে, স্বজন হারা হয়েছে একে অপরের প্রাণও কেড়েছেন। হ্যাঁ সবটাই সাধারণ জনতাই করেছে। তবে সাধারণ মানুষ কি আসলেই সাধারণ? আমার তো মনে হয় সাধারণ মানুষ অত্যন্ত বোকা সাধারণ হয়েই বেঁচেছিল অতীতে, আজও বাঁচছে, ভবিষ্যতেও বাঁচবে৷ আসলে সাধারণ মানুষকে দিয়ে অনেক কিছুই করিয়ে নেওয়া যায়৷ কারণ সাধারণ মানুষ তার নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।
সত্য স্বীকার করছি, যখন প্রথম পতাকার ওপর পায়ের ছাপ দেখেছিলাম আমিও আহত হয়েছিলাম। আমার দেশের পতাকার প্রতি এইটুকু আবেগ থাকবে এইটেই তো স্বাভাবিক। তারপর একটি ছবি দেখলাম লাল সোয়েটার পরা ফুলের মতো কয়েকটি শিশু নাচতে নাচতে পতাকা মাড়াচ্ছে৷ তখন আর কষ্ট হয়নি, বরং একটি জাতি, বাঙালি জাতির একটি বিরাট অংশ বর্তমান সমেত ভবিষ্যৎ নিয়ে ডুবে যাচ্ছে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেছিল।
আপনি বা আমি, আমরা প্রত্যেকেই সামান্য মানুষ যাদের কোনো ক্ষমতাই নেই একটি দেশকে বা তার পতাকা কে লাথি মেরে অপমান করে ফেলার। আমরা অনেকখানি আহাম্মক হলে এরকমটা ভাবতে পারি। দেশ বা দেশের পতাকা সহজ নয় ছেলেখেলার জিনিস নয়। নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে বাড়বাড়ন্ত দেখিয়ে আসলে নিজেদেরই নিকৃষ্ট সংস্কৃতির পরিচয় দেওয়া। বাঙালি ভুলে যায় বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মধ্যে একটি সংস্কৃতিবান শিক্ষিত জাতি হল বাঙালি জাতি। যে মুক্তমনস্ক যাদের কাছে ধর্মের মূল মন্ত্রই হলো মনুষ্য ধর্ম। কিন্তু এই সমস্ত চিন্তা ভাবনা ধ্যান ধারণা রাজনীতির পদতলে পৃষ্ঠ হয়ে আখেরে নিজেদের শেকড়কে পচিয়ে তুলেছে। যারা এই কাজ করছে তাদের আসলে কোন চোখেই নেই নিজেকে দেখবার। সামান্য উস্কানি পেয়েছে কি পায়নি তাথৈ তাথৈ করে নাচ্ছে।
প্রতিবাদ করতে জানে বলেই আমিও বিশ্বাস করি। কোন তুলনামূলক আলোচনা সাহিত্যে যাবো না। কারণ কাউকে ছোট করে কাউকে বড় দেখানোটা সংস্কৃতিবান সাহিত্য নয়৷ কিছুদিন আগে ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি স্লোগান খুব বিখ্যাত হয়েছিল, আপোষ নয় সংগ্রাম/সংগ্রাম সংগ্রাম। কথাটা সংগ্রাম সন্ত্রাস নয়। প্রতিবাদের ভাষা কখনো সন্ত্রাসী পদক্ষেপ হতে পারে না। যদি হয় তবে সে প্রতিবাদ নয়, একটি জাতিকে শেষ করে দেওয়ার জন্য তলে তলে চারিয়ে যাওয়া আগুনের ফুলিঙ্গ।
আসলে সাধারণ মানুষ বলেই এই বোকামি। আপনারা কেউ দেখেছেন কোন রাজনীতিবিদ বা কোন নেতা এমন কাজ করেছে? রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। সাধারণ মানুষ ভারত বয়কটের নেশায় স্রোত তুলেছে এবং সেই স্রোতে ভেসে অনেক কিছুই করছে। মাঝে মাঝে এই বিষয়টা হাস্যকর লাগে, কারণ আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য তো করতেই হবে এবং আপনারা না চাইলেও আপনাদের দেশে ভারত ব্যবসা করবে এবং ভারতে বাংলাদেশ এসে ব্যবসা করে যাবে। এই ব্যবস্থা কেউ রুখতে পারবে না। দেশ যতদিন থাকবে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই তাকে থাকতে হবে। বিদ্বেষ সাধারণ মানুষকে দিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে আম খায় নেতারা ভোগান্তি কেবলমাত্র সাধারণ মানুষেরই হয়। নানান প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ যাতায়াতের কথা নতুন করে কি বলব? বর্তমান অবস্থা সেই সব বন্ধ করে দিয়েছে। ভাবতে পারেন একদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতের যাতায়াতের বাস চলাচল ছিল ফ্রী। মানুষ চাইলেই আসত চাইলেই যেত। সেই জায়গা থেকে কোন তলানিতে পৌছোলে আজকের এই ঘটনাগুলো সম্ভব হয়। তবে উন্নত হয়ে কি তলানিতেই পৌছে যাচ্ছে? এই উন্নয়নের খুব প্রয়োজন ছিল কি?
ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই। আমার ভারত আমার কাছে যতখানি প্রিয় বাংলাদেশও বাংলাদেশীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়৷ নিজের ভূমি যে। অন্যের মা কে অপমান করে কোন উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। সঠিক ধর্মের পথ মানুষকে সহনশীল করে তোলে, জীবনের পথ দেখায়।
আলোর পথে চলুক বর্তমান সভ্যতা এই কামনাই করি। সুসম্পর্কের অনেক বেনিফিট, সেই টুকু বোঝার বোধদয় হোক জাতির। ছাত্রসমাজ আগামীর ভবিষ্যৎ। কোন ভাবে অন্ধকারে বিষক্রিয়া ঢুকিয়ে দিলে আগামী বেশ কিছু বছরে নামতে নামতে হারিয়ে যাবে৷ এই ভালো মন্দের বিচার করে আসুন নিজেরাই নিজেদের বাঁচিয়ে রাখি আলোর ভেতর, ভালোর ভেতর৷ সম্পর্ক টিকে থাকুক শান্তিপূর্ণ সভ্যতায়।
আমরা দূর্বল হলে রাজনীতি আমাদের অস্তিত্বে ঘুন ধরিয়ে দেবে, যখন টের পাবো তখন জীবানু ছড়িয়ে ক্যানসার৷ অথচ ভাতৃত্বের বন্ধন আমাদের একে অপরকে আরও আরও শক্তিশালী করে। তাই কোন বাইরের উস্কানিমূলক প্ররোচনায় নিজেদের দুর্বল করে নোংরা প্রবৃত্তিতে মেতে উঠব না এই অঙ্গীকার নিজেদেরই নিতে হবে৷ তবেই জাতির উন্নয়ন।
নিজেরাই মনে রাখব, আমাদের ব্যবহারই আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিচয়...
পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
আসলেই পতাকা শুধু একটা নির্দিষ্ট মাপের কাপড় নয়। পতাকার মাধ্যমে অনেক কিছুই লুকায়িত থাকে একটি দেশের অর্জন গৌরব ও মহত্ব সব কিছুই বহন করে। আপনার লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু দারুন লিখেছেন। আসলেই আমাদের চিন্তাভাবনায় বৃহৎ পরিবর্তন আনা দরকার। ধন্যবাদ
হ্যাঁ দাদা ঠিকই বলেছেন আমাদের নিজেদেরই অনেকখানি বদলাতে হবে৷ ধন্যবাদ আপনাকে।
মানুষ কিন্তু সবাই সুশৃংখল নয় কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অশৃংখলতা সৃষ্টি করে এই সব কাজ করছে।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, পতাকা ছেলে খেলার বস্তু নয়। পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিক।কোন সুস্থ্য চিন্তার মানুষ অন্য দেশের পতাকা অবমাননা করবেন না। যারা করেছে তারা সুস্থ্য চিন্তার মানুষ না। যে কোন দেশের পতাকার অবমাননার তীব্র নিন্দা জানাই। শুধু দেশে দেশে নয়, মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব হোক আরো দৃঢ়। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপু ছাত্রছাত্রীদের আবেগকে ও ছেলেমানুষী মানসিকতাকে কাজে লাগিয়েছে কোন কুচিন্তক গোষ্ঠী। এটা যদিও আমার ব্যক্তিগত ধারণা। এতে করে তাদের স্বার্থসিদ্ধি হলেও আমাদের মতো সাধারণ মানুষ ভুগি। এটা আমাদের বুঝতে হবে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে৷ ধন্যবাদ আপু, মন্তব্য করলেন৷ ভালোবাসা নেবেন আপু।
https://x.com/neelamsama92551/status/1863986438439600501?t=yRJ0HxCmmbKW0RflsjWWRA&s=19
অসাধারণ একটি সৌভ্রাতৃত্বমূলক লেখা। পতাকার অবমাননা যারা করেছে তারা সত্যিই অর্ধশিক্ষিত। যে কোন দেশের পতাকায় অন্য দেশের কাছে সম্মানের। এটুকু বোধ যদি নাগরিকের মধ্যে না থাকে তাহলে সেই সুযোগ্য নাগরিক হয়ে উঠতে পারে না। একেবারে গুছিয়ে লিখলি সম্পূর্ণ নিবন্ধটি।
আপু আপনার লেখা গুলো সব সময়ই ব্যাতিক্রম এজন্য আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। আমরা সাধারণ জনগণ শুধু শান্তি চাই। সেই ছোটবেলায় থেকে শুনে আসছি ভারত আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু দেশ। বর্তমান পরিস্থিতি একটু অন্য দিকে গিয়েছে। এধরনের কাজ গুলো একজন সুস্থ মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো থাকুক এই কামনাই করি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
লিখতে ভালোবাসি দাদা, সেই কারণেই যে কোন বিষয় আমি একটু মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করি। আপনার যে ভালো লেগেছে এটাই আমার লেখার সার্থকতা। ধন্যবাদ নেবেন দাদা।
আসলে আপু পতাকা হচ্ছে একটি দেশের বড় সম্মান। আর যখন দেশের পতাকা অপমান করে তখন দেশ এবং জাতির কাছে খারাপ লাগে। সত্যি আপু ব্যাপারটি খুব দুঃখজনক। পতাকার উপর পায়ের চাপ না এটি মনে হয় কলিজার উপরে চাপ দেওয়া। আর যারা এই কাজ করেছে তারা মানুষ না অন্য কিছু সেটাই বুঝতে পারি না। তাই আমি মনে করি যারা পাতাকা সম্মান করতে পারে না তারা মনে হয় জংলি জানোয়ার।
একদম খাঁটি কথা বলেছেন। পতাকায় পা মানে কলিজাতে পা তোলার সমান। এই দৃশ্য ভাবলেই বুক কেঁপে ওঠে।