ঈশ্বরের নিজের দেশ। কেরালা ভ্রমণ। পর্ব-২
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
খাওয়া দাওয়া করে দুপুরবেলায় সামান্য একটু রেস্ট নিয়েই আমরা বিকেলের দিকে বেরিয়ে পড়েছিলাম কন্যাকুমারীর মূল দর্শনস্থানে। অর্থাৎ যেখান থেকে বিবেকানন্দ রক যাওয়ার জেটি ছাড়ে। গিয়ে দেখলাম বিরাট লাইন। সেই লাইন কোনভাবেই সম্ভব নয় শেষ করে সেই মুহূর্তে বিবেকানন্দ রক দেখবার। খবরটা লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে আমরা সামনেই চলে গেলাম কন্যাকুমারী দেবীর মন্দির দর্শন করতে। কিন্তু সাড়ে চারটা না বাজলে সেই মন্দির খোলা হবে না তাই বেশ কিছুক্ষণ আমাদের দাঁড়াতে হলো।
সাড়ে চারটা বাজতেই লোকজন হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করতে শুরু করল। আমরা যেহেতু লাইনে শুরুতেই ছিলাম তাই আমাদেরকে খুব একটা বেশি ভিড়ের মধ্যে পড়তে হয়নি। ভেতরে ব্যাগ রাখবার জায়গা রয়েছে প্রতিটা ব্যাগ বেশি ১০ টাকা করে ভাড়া। আর জুতো রাখবার জায়গা মন্দিরের সামনে ছিল। দক্ষিণ ভারতের এই মন্দির গুলোর বিশেষত্ব হলো এখানে মেয়েরা যেমন তেমন যা কিছু ড্রেস পড়ে গেলেও ছেলেরা কোনভাবেই জামা পড়ে যেতে পারে না। বেশিরভাগ জায়গাতেই ধুতি এবং খালি গায়ে যেতে হয়। এই মন্দিরে প্যান্ট পরলেও চলবে তবে গেঞ্জিটুকু গায়ে রাখতে দেওয়া হয়নি।
লাইনে খুব বেশি দাঁড়াতে হয়নি আমরা চটপট ভেতরে ঢুকে গেলাম। ভেতরে মন্দিরের গায়ে অসম্ভব সুন্দর সুন্দর পাথর খোদাই করা মূর্তি রয়েছে। তবে সব জায়গাতে ফটোগ্রাফি করা বারণ। কিছু মানুষজন তুলছিল দেখে আমি গোটা দুই তিনে ফটো তুলেছি তবে একেবারে মন্দিরের ভেতরে কোনভাবেই কোন ছবি তোলার নির্দেশ ছিল না। আমিও সেই নিয়ম লংঘন করতে চাইনি।
মন্দির মোটামুটি আমরা ভালোই দেখলাম। তারপর বেরিয়ে এসে সমুদ্রের ধারে চলে গেলাম সুর্যাস্ত দেখতে। কন্যাকুমারীর একটি বিশেষত্ব হলো এখানে সূর্যোদয় যেখান থেকে হয় সূর্যাস্ত সেখান থেকেই দেখা যায়। ভারতবর্ষের নানান সমুদ্রের উপর আমি সূর্যাস্ত দেখেছি তবে কন্যাকুমারী আমার সব দিনের প্রিয় কারণ এখানে সূর্যটা যখন অস্ত যায় মনে হয় পুরোপুরিভাবে সমুদ্রে ডুবে গেল। আর সেই ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে সমুদ্র এবং পুরো আকাশে যে রংয়ের ছটা থাকে তার চোখে লেগে থাকার মতন।
বেশ কিছু সময় ধরেই আমরা সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম তারপর সামনে মার্কেটে আমরা কিছুটা সময় ব্যয় করলাম অনেকেই আমাদের মধ্যে টুকটাক হার মালা চুড়ি ইত্যাদি কেনাকাটা করছে। আমি আবার বেড়াতে গেলে খুব একটা বেশি কিছু জিনিস কেনাকাটা করতে পারিনা। বাচ্চাদের সাথে বেশ খানিকটা কোয়ালিটি টাইম কাটিয়ে আমরা ডোসা খেয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম। সেটা বেশ তাড়াতাড়ি। কারণ আমরা ঠিক করেছিলাম পরের দিন ভোর বেলায় লাইন দিয়ে জেটির টিকিট কেটে বিবেকানন্দ রকে যাব আর সূর্যোদয় দেখব।
পরের দিন মানুষের ভিড়ের মধ্যে সূর্যোদয় তো ঠিকঠাক ভাবে দেখলাম না কারণ লাইন ছেড়ে দিলে আর লাইনে পেতাম না। যেহেতু ভোর চারটের সময় এসে লাইন দিয়েছিলাম তাই খুব একটা বেশিক্ষণ দাড়াতে হয়নি আমরা চলে গেলাম বিবেকানন্দ রকে। ভারতবর্ষের নানান স্থানের মধ্যে বিবেকানন্দ রক আমার অন্যতম প্রিয় জায়গা। এখানে স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকেই এসে বসে ধ্যান করেছিলেন৷ তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যেই এই মেমোরিয়ালটি বানানো।
এখানে একটি ধ্যানগৃহও রয়েছে৷ আমরা সকলেই অনেকটা সময় ধরে চোখ বন্ধ করে শান্ত মনে মনঃসংযোগ করতে চেষ্টা করেছিলাম। সবকিছু শান্ত হয়ে যাওয়ার পর শুনলাম ওখানেই ওম শব্দ ধ্বনিত হচ্ছে। খুবই শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ। যা ভাষায় বর্ণনা করা সহজ না। এখানে বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক জিনিসপত্রের ছোট্ট ছোট্ট আউটলেট রয়েছে। এছাড়াও বিবেকানন্দ রকের সামনেই রয়েছে কন্যাকুমারী মাতার পাদুকালয়। এবং তামিল কবি তিরুভাল্লুভারের বিশাল মুর্তি৷ এই মূর্তিতে আগে ছিল না। সাম্প্রতিককালে তৈরি হয়েছে।
ঘোরাঘুরি যত ভালই হোক না কেন বেলা বাড়তি প্রবল রোদে আমাদের ক্লান্তি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল। তাই অনেকটা সময় কাটানোর পর আর বেশি দেরি না করে জেটিতে করে ফিরে এলাম।
তারপর কি কি করলাম তা আপনাদের সাথে পরের পর্বে ভাগ করে নেব। আসলে বইমেলাতে টানা বসতে বসতে প্রচন্ড ক্লান্তি এসে গেছে। এত ধুলো আর মানুষের সমাগম সবকিছুর মধ্যে কথা বলতে বলতে গলায় বসে আছে। তাই ক্লান্ত শরীর নিয়ে আপনাদের সাথে কেরালা ভ্রমণের আরো কিছু গল্প শেয়ার করলাম। আশা করি আপনাদের ভালই লাগবে । বাকি গল্প নিয়ে আসবো আবার পরবর্তী পর্বে । এখন আসি।
টাটা
পোস্টের ধরণ | ভ্রমণ ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আইফোন ১৪ |
লোকেশন | কন্যাকুমারী https://what3words.com/impersonates.posing.brandy |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1886485138391159273?t=nIhFDBGLsdpshJ6Wp00Lrg&s=19
দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলোতে ছেলেদের জন্য দেখতেছি একটি নিয়মের ধরা বাধা রয়েছে। যেখানে মেয়েরা যে কোনো পোশাক পরে যেতে পারলেও ছেলেদের ধুতি সহ ঐ প্রজাতির পোশাক পরে যেতে হবে।কন্যাকুমারীর চমৎকার ফটোগ্রাফি গুলি শেয়ার করেছেন আমাদের সাথে। অবাক হয়ে গেলাম এটা শুনে যে কন্যাকুমারীতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই একই জায়গা থেকে দেখা যায়। যেই হোক আপনার আজকের ভ্রমণ পোস্টটি পড়ে ভালোই লাগলো।