ভাষা বা ধর্ম বিপন্ন নয়, যদি কেউ বিপন্ন হয় তা হল শিক্ষা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
টাইটেল দেখেই বুঝতে পারছেন আমি আজ গুরুগম্ভীর আলোচনা করব৷ এই আলোচনার খুবই প্রয়োজন কারণ বর্তমানে অধিক শতাংশ মানুষ নিজের মাতৃভাষা বাঁচাতে বা ধর্ম বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছে৷ এই সব দেখে আমার তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন, "আপনি কে? আপনাকে কে বাঁচাচ্ছে?"
শুনতে খারাপ লাগলেই এটাই সত্য। সবার ওপরে প্রকৃতি৷ যখন সময় আসবে সে নিজেই সব কিছু পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে নেবে। তার ছত্রছায়ায় থাকা দু পেয়ে প্রাণী অর্থাৎ মানুষ এক তুচ্ছ প্রাণী ছাড়া আর কিছুই না৷ নিজেদের অবস্থান ভুলে সব কিছু বাঁচাতে ছুটছে যারা তারা আহাম্মক ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমাদের এই মুহুর্তে বিচার করা উচিত আমরা কতটা মানুষ অর্থাৎ মান ও হুঁশ সম্পন্ন প্রাণী যে কোন কিছুকে বাঁচিয়ে রাখবে বা ধ্বংস করবে? খুব সাধারণ বিষয় হল, আমরা কেবল মাত্র আমাদেরই ধ্বংস করছি৷
একটা সময় ছিল যখন বাংলা উর্দু আরবি মালায়ালাম হিন্দি ইত্যাদি ভাষার উৎপন্নই হয়নি, তখন মানুষ কথা বলত মাগধি বা দেবনগরী ভাষা কিংবা ইশারায়। যুগের পরিবর্তনের সাথে সে ভাষা হারিয়ে গেছে৷ এই ভাবেই অনেক সংস্কৃতির যেমন আগমন ঘটেছে তেমনি অনেক সংস্কৃতি একেবারে লোপ পেয়ে গেছে৷ এ প্রকৃতির ঘুর্ণাবর্ত। কোন কিছুই জোর করে আটকানো যায় না আবার জোর করে চালুও করা যায় না৷ প্রকৃতির আর পাঁচটা সাধারণ জিনিসের মতো মানুষও অত্যন্ত তুচ্ছ। তাও শ্রেষ্ঠ বুদ্ধি সম্পন্ন হিসেবে সমাজ গঠনে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে অহংকারের কোন শেষ নেই। এই অহংকারে পাহাড়ে আবৃত হওয়ার সময় নিজেকে একবারও জিজ্ঞেস করিনি আমি কে?
এই প্রশ্ন জন্মানো ও উত্তর খোঁজা সোজা নয়৷ যদি কেউ নিজেকে খুঁজতে শুরু করে তবে তার পার্থিব মোহ মায়ায় ঘেরা কোন অনুভূতিই থাকার কথা নয়। এই উত্তর খুজতে চাই না বলেই আমরা একে বা ওকে বাঁচিয়ে মহানুভবতা প্রমান করতে চাই, সে প্রয়োজন হোক বা না হোক ৷ অথচ এই বাঁচাতে চাওয়ার অযুহাতে আসলেই আমরা কাউকে ছোট করছি, কাউকে টেনে নীচে নামাচ্ছি কিংবা কাউকে মাটি ভেবে তার ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করছি৷ নিজেদের বড় হওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও সবাইকে ছোট করে নিজেকে বড় দেখাই৷ এ কি ধর্ম বা ভাষা বাঁচানোর প্রক্রিয়া? নাকি বড় কাউকে চাঁটি মেরে ফাঁদে ফেলে ছোট করাই উদ্দেশ্য৷
আসলে, শিক্ষা হল জ্ঞানের আধার৷ জ্ঞান আলোর বিশেষ রশ্মি৷ অজ্ঞ মানুষরাই একে ওকে ছোট করে সাথে এও বুঝিয়ে দেয় তাদের অশিক্ষা তুলনাহীন৷ জুড়ি মেলা ভার।
তাই নয় কি? নইলে তো নিজেকে বড় দেখানোর দৌড়ে আসলেই বড় হতে পারত৷
এখন যদি আমি ধর্মের কথা বলি, প্রকৃত ধার্মিকরা কোনদিনই কারও পরিচয় নিয়ে টানাটানি করে না। আবার রাস্তার ধারে অনেক ধার্মিক গড়াগড়ি খায় তারা নিজের ধর্মের রক্ষার্থে সাংবিধানিক অধিকার নিজেদের ব্যক্তিগত বলে মনে করে নিচ্ছে৷ কিন্তু এতো কিছুর মাঝে সত্যিই কি ধর্ম রক্ষা হয়? ধর্ম কি তবে এতই সস্তা? নাকি ভাষা? কালের স্রোতে যখন বহু কিছু হারিয়ে গেছে তখন যে কোন কিছু কে আমরা বাঁচানোর কে?
কেউ না। তাও প্রকৃত শিক্ষার কথা বেমালুম চেপে যাই৷ অহেতুক ধার্মিক আচরণকে মাথায় তুলে আসলেই অশিক্ষার গঠন সংক্রান্ত কথা বলি।
শিক্ষা হবে স্বচ্ছ, শিশুর মতই প্রাঞ্জল৷ সঠিক শিক্ষা থাকলে সমাজে কেউই বিপন্ন হবে না৷ এমন কি ভাষা বা ধর্মও নিজ নিজ জায়গায় মাথা তুলেই বাঁচবে৷ কারণ শিক্ষার মতো স্বাধীনতা বোধহয় আর কিছুতে নেই। তাই বলি শিক্ষাকে ছোট করার মতো আচরণ না করে, অযুহাত না দেখিয়ে আমরা বরং প্রকৃত শিক্ষিত হক্যার চেষ্টা করি৷
শিক্ষার জয় হোক, বাকি সকলে এমনিই শিক্ষার দড়ি হয়ে টানা হয়ে যাবে।
আনন্দম। উল্লাস।
জয়তুঃ ভব
পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1862559016993296462?t=UF67WxF9g6s1HcsaPzPoug&s=19
আজকের টাস্ক
এটা হলো সব কথার এক কথা। আমরা আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য প্রকৃতির নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছি। আর এইটা বুঝতে পারছি তখন যখন সেটার ভুক্তভোগী আমরা নিজেরাই হচ্ছি। এমন টা খুব কম মানুষই চিন্তা করে। চমৎকার লিখেছেন আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।।
হ্যাঁ। আমরাই আমাদের ধ্বংসের কারণ।