কালীপূজা ২০২৫- পর্ব-১
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আশ্বিনমাসে মা দূর্গা বাপেরবাড়ি চলে যাবার পর আসে মা লক্ষ্মীর পালা আর তার ঠিক পনের দিন পর হয় দীপাবলি। শরৎকাল মানেই উৎসবের মরসুম। প্রবাসে দূর্গাপূজা কেবলমাত্র বাঙালি কমিউনিটির উদ্দ্যোগে হয় ঠিকই তবে এই সময় এখানে নবরাত্রি পূজা হয়৷ কিন্তু তা বাঙালির মতো এতো জাঁকজমক না। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে গণপতি অর্থাৎ গণেশ পুজোর পর এই নবরাত্রি পূজো হয় তবে গণেশ পুজোর রমরমা অনেক বেশি। আর দীপাবলিতে এখানে সেরকম বিশেষ কোন পুজো আচ্ছা হয় না। কারণ কালীপুজোর জল পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কোথাও নেই সেইভাবে। বিভিন্ন জায়গাতে কালীবাড়ি রয়েছে যেখানে কালী মন্দির বা কালী মূর্তির পুজো হয় তা একেবারেই বাঙ্গালীদের প্রতিষ্ঠা করা।
দীপাবলি অনুষ্ঠান ভারতবর্ষের নানান জায়গায় পালন হয় নতুন বছরের শুরু হিসেবে। ঠিক যেমনটা আমাদের পহেলা বৈশাখে নববর্ষ হয়। সাজগোজের দিক দিয়ে ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্য দীপাবলীর সময় একেবারে পিছিয়ে থাকেনা বরং বলা চলে অনেকটা এগিয়ে থাকে। নববর্ষ হেতু এখানে প্রত্যেকটা বাড়ি ঘরদোর আগে থেকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নতুন করে সাজানো হয়। চারপাশে আর্টিফিশিয়াল ফুল কিংবা নানান ধরনের ঘর সাজানোর জিনিস দিয়ে সাজিয়ে তোলে। এছাড়াও আবিরের রঙ্গলি এবং আলোর কোন অভাব হয় না। এই সমস্ত অভিজ্ঞতা অনেক বছর হলেও দীপাবলীর সময় যেহেতু বেশ ভালো দিনের ছুটি থাকে তাই আমরা প্রতিবছরই দেশের বাড়ি চলে যাই। সেখানে দুর্গাপুজো দেখতে পাই না ঠিকই কিন্তু কালীপুজো দেখতে বেরোই।
তবে কি দীর্ঘদিন ভিড়ের মধ্যে না বেরিয়ে আমারও একটা কেমন অনভ্যাস তৈরি হয়েছে। তাই পর পর বেশ কয়েকদিন না দিয়ে অন্তত একদিন আমরা সব ভাইবোন ও সবারই পরিবারবর্গ মিলে কালী ঠাকুর দেখতে বেরোই।
কলকাতার মতো বিরাট জাকজমক করে পুজো না হলেও আমাদের এখানে খুব একটা খারাপ পূজা হয়না। পূর্ব মেদিনীপুরের সদর হল তমলুক। যাকে মহাকুমা বলি। তমলুকে বরাবরই অনেক কালি ঠাকুর হয়। আর ছোটবেলায় আমরা অনেক দেখতে আসতাম। এখনো সময় সুযোগ হলে যাই। তবে সেই আগের মত সুন্দর সুন্দর বেরিয়ে পড়া হয় না। কারণ এত ভিড় থাকে আমাদের আর ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখতে মন করে না।
এবার তাই আমরা রাত্রি বারোটার দিক করে বেরিয়েছিলাম। এত রাত করে বেরোনোর একটা কারণ রয়েছে। তমলুকে এত ভিড় হয় যে প্রায় প্রত্যেকটা রাস্তাই ব্লক করে দেয়া হয়। ফলে সবটা হেঁটে ঘুরে দেখতে হয়। আসলে তমলুক তো অনেক পুরনো শহরতলী। তাই এখানে অনেকটা জায়গার যে রয়েছে বা খোলামেলা এমনটা নয়। প্যান্ডেলগুলো রাস্তার ওপর বেশ কায়দা করেই বানানো।
তাও এসবের মাঝে আমরা বেশ কিছু ঠাকুর দেখে নিয়েছিলাম। তারই কয়েকটি ছবি আগে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছিল, এখানে প্রত্যেকটা প্যান্ডেল পরিবেশ বান্ধব। সমস্ত প্রাকৃতিক জিনিস দিয়ে ঠাকুর ও তৈরি হয়েছে এমনকি প্যান্ডেল গুলো। এক একটা প্যান্ডেলে পুরোটাই হাতে কাজ আবার কোথাও হাতে পেইন্টিং করা। মানুষ যে এতখানি পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠেছে তা দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।
কারণ বর্তমানে আমরা যে পরিমাণ পরিবেশ দূষণ করি তা হিসেবহীন। আর পরিবেশ বান্ধব জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি হওয়ায় মানুষ সহজে সেই সব জিনিস ব্যবহার করতে চায় না। কারণ পরিবেশে গাছ কিংবা নানান ধরনের খড়কুটো পাতা লতা ইত্যাদি কেটে সাফ করে দেওয়ার কারণে সহজে অনেকটা পরিমাণে পাওয়া যায় না। তবুও এখানে করা হয়েছে দেখে ভালো লাগলো। তাহলে চলুন দেরি না করে দেখুন কালীপুজোর প্যান্ডেল এবং ঠাকুরের ছবিগুলো।
এই প্যান্ডেলটা পুরোটাই একধরণের বুনো ঝোপ যাকে শুকনো করে ব্যবহার করা হয়েছে। আর গায়ে টিস্যু পেপার ও ফুচকা খাওয়ার বাটি দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে।
ঠাকুরটা মাটির। আর পেছনে পাট কাঠির ডেকোরেশন।
এই প্যান্ডেলের পুরোটাই নানান মাপের কাঠ দিয়ে তৈরি।
এইগুলো পুরোটাই কাপড়ের ওপর রঙ করে ডিজাইন করা৷ কী অপূর্ব পটশিল্প এবং মধুবনি প্রিন্টের কাজ৷ পুরোটাই হাতে করা।
মাটির সরার ওপর পেইন্টিং করে সাজানো।
তা কেমন লাগল বলুন? মাঝরাতে মানুষের এমন সুন্দর হাতের কাজ দেখে আমাদের ক্লান্তি একেবারেই উবে গেছিল৷ যন্ত্রের যুগে এখনও যে শিল্পীরা বেঁচে আছে এই বা কম কি?
তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই থাক৷ আবার আসব আগামীকাল অন্য কোন পোস্ট নিয়ে।

পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আইফোন ১৩ |
লোকেশন | তমলুক, পশ্চিমবঙ্গ (https://what3words.com/uncountable.wrongful.sparing) |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1898080536289239474?t=OJhI4lbs2KiPhcgbvc6_Qg&s=19