গ্রিফিন্স-যাকে নোটিফিকেশনে দেখলেই আনন্দে লাফিয়ে উঠি|| জেনারেল রাইটিং
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
ভারতবর্ষে যেমন পৌরাণিক কাহিনী বা গল্পের ব্যাপক বিস্তার তেমনি গ্রীস, মিশর, ইরানও পৌরাণিক গল্প কাহিনীতে ঠাসা৷
পৌরাণিক গল্প বা কাহিনীগুলো আদৌ সত্যি নাকি শুধুই মিথ্যে কল্পনার ওপর রচিত হয়েছিল তা আলোচনা সাপেক্ষ। আমার তো বহু বার মনে হয়েছে প্রতিটা গল্পই আসলে এক একটি ধাঁধা, যার ভেতর শুয়ে আছে সৃষ্টির বিশাল ব্যপ্তি ও যুগের উন্নয়ন। তবে এই সব কিছুর সাপেক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমান বা ব্যখ্যা নেই৷ তবুও আমরা গোগ্রাসে গিলে নিই৷ কারণ আমাদের মনের পুষ্টি হয়।
ভারতীয় পুরান সম্পর্কে আমরা ছোট থেকেই নানান গল্প ঠাকুমাদের মুখে শুনেই বড় হয়েছি। সেখানে সব থেকে আশ্চর্য লাগত গণেশ, নরসিংহ, গড়ুড় এদের দেখে। বার বার ভাবতাম তবে কি প্রাচীনকালে হেড ট্রান্সপ্লান্ট হত? উত্তর দেওয়ার কেউ নেই আমার ভাবনা আমার ভেতরেই থেকে গেছে৷
এখানে যখন থেকে কাজ করি গ্রিফিন চোখে পড়ার পর থেকেই ভেবেছি ঈগলের মুখকে গ্রিফিন কেন বলে? একদিন গুগুল করলাম। দেখলাম সিংহের শরীরে ঈগলের মুখ বসানো প্রাণীটির নামই হল গ্রিফিন। কে এই গ্রিফিন?
গ্রীক মাইথলজিতে এর উল্লেখ পাওয়া গেলেও গ্রিফিন ছিল মধ্য প্রাচ্যের আলঙ্কারিক মোটিফ। গুগুলের নানান ওয়েব সাইট থেকে পড়ে যা বুঝেছি সেই অনুযায়ী, খ্রীস্টপূর্ব দুই সহস্রাব্দে লেভান্টে উদ্ভব হয় গ্রিফিনের, পশ্চিম এশিয়াজুড়ে এর ব্যপ্তি ছিল। তবে খ্রীস্টপূর্ব চোদ্দ শতকের মধ্যেই গ্রিফিন ছড়িয়ে পড়ে গ্রীসে৷ ইরান পারস্য মিশর এই সমস্ত দেশেই গ্রিফিনের নানান স্থাপত্য ছিল৷ গ্রীক গ্রিফিন দেখতে একটু অন্যরকম, এশিয়ার গ্রিফিনের মাথা ছিল ক্রেস্টেড মানে মাথার ওপর পালক ছিল মুকুট বা চুড়ার মতো কিন্তু গ্রীক গ্রিফিন সর্পিল। আরও পরের দিকে পার্শিয়ান সাম্রাজ্যে গ্রিফিন ব্যবহৃত হয় শয়তান, জাদুবিদ্যা ও মিথ্যাচার এসবের বিরূদ্ধে রক্ষাকর্তা হিসেবে৷
সিংহ আর ঈগলের মিশ্রণ এই গ্রিফিন। সিংহ হল পশুদের রাজা৷ আর ঈগল পাখিদের৷ রাজা তো আর এমনি এমনি নির্বাচিত হয়না, তার গুণ, ক্ষমতা সব মিলিয়েই বাকিদের থেকে সেরা তাই সে রাজা। সিংহ বা ঈগল নিজ নিজ রাজ্যে সেরা। এই দুই সেরাকে মেশালে আরও শক্তিশালী কিছু তৈরি হতে পারে, তাই হয়তো এমন প্রচেষ্টা৷
গ্রিফিনের কথা হেরোডেটাসের লেখাতেও পাওয়া যায়৷
But in the north of Europe there is by far the most gold. In this matter again I cannot say with assurance how the gold is produced, but it is said that one-eyed men called Arimaspians steal it from griffins. But I do not believe this, that there are one-eyed men who have a nature otherwise the same as other men. The most outlying lands, though, as they enclose and wholly surround all the rest of the world, are likely to have those things which we think the finest and the rarest.” (Herodotus, The Histories , 3.116)
পৌরাণিক প্রাণী থেকে বেরিয়ে এলে স্পষ্ট বোঝা যায় বহু বহু বছর আগেও ক্রিপ্টো জুলজিস্ট বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার ছিল। যারা এক প্রাণীর সাথে আরেক প্রাণীর মিশ্রণ ঘটাত কিংবা ঘটানোর কথা ভাবত৷ কারণ সংকরজীবগুলোর বৈশিষ্ট্য অনেকক্ষেত্রেই বেশি উন্নত হয়৷ বর্তমানে আমরা অনেক ক্রসব্রিড প্রাণী দেখি। যেমন খচ্চর, স্ত্রী ঘোড়া ও পুরুষ গাধার মিশ্রণে তৈরি হয়েছে। লাইগার, পুরুষ সিংহ ও স্ত্রী বাঘের মিশ্রণ। শুধু প্রাণীতেই না, ক্রসব্রিড ঘটানো হয়েছে অনেক গাছেও৷
গ্রিফিন সত্যি ছিল কিনা আমি জানি না৷ তবে নানান স্থাপত্যে গ্রিফিনের মুর্তি দেখা যায়৷ একটি প্রতিবেদনে পড়েছিলাম কলকাতার ইন্দ্রকুমার কারনানি লেনের একত্রিশ নম্বর বাড়ির মাথায় রয়েছে একটি গ্রিফিনের মুর্তি৷ কলকাতায় হয়ত আর কোথাও এমন নেই, আবার থাকতেও পারে৷ কারণ কলকাতায় পারস্যদেশের লোকেদের বাস তো ছিলই একসময়৷ তাদের হাত ধরেই হয়তো এই মুর্তি স্থাপন। কারণ গ্রিফিন ছিল শক্তি সাহসের প্রতীক, এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপে গ্রিফিন ছিল রাজপরিবারের প্রতীক। অনেকে আবার গ্রিফিনকে ধনসম্পদের রক্ষাকর্তা হিসেবেও ভাবত।
আসলে সিংহ আর ঈগলের ক্রসব্রিড তা তো শক্তিশালী হবেই৷
তবে গ্রিফিন সত্যিই ছিল বা কাল্পনিকও হয় আমার ধারণা যুগের ধ্বংস বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ধ্বংস ঘটিয়েছে৷ সেই যুগের আবিষ্কারগুলোই হয়তো আজকের মিথ। আজ নতুন করে যদি প্রমাণিত হয় মানুষের মাথায় হাতি বা সিংহ বসানো যায় কিংবা সিংহের মাথায় ঈগল। তবে এইধরণের মিথের আসল শেকড় খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
মিথ যাইহোক আমাদের কমিউনিটির গ্রিফিন আরই বুভুক্ষু থাকুক আর ক্ষিদে মেটাতে সোনা আনুক। যার কিরণে আমরাও আলোকিত হতে পারি নিয়মিত৷ এটাও ভুললে চলবে না গ্রিফিন কোথাও কোথাও সূর্য ও যুগের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হত৷ আমরাও নয় আমাদের হাংরি গ্রিফিনের ছায়ায় থেকে যুগের কথা আলোর কথা অন্ধকারের কথা এই কমিউনিটিতে লিখে কমিউনিটির মান বাড়িয়ে যাবো, যা কোন একদিন যুগের পরিচয় পেতে কেউ না কেউ খুঁজে বার করবে৷
কি বলেন আপনারা?
তথ্যসূত্র -

পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
লেখিকা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | মহারাষ্ট্র |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
https://x.com/neelamsama92551/status/1855872079888859614?t=oqSJbMILsxhrdf-TQg0-xQ&s=19
একই আমার অনুভূতি দিদি। যদিও আমি আজকাল এই মামা কে নোটিফিকেশনে দেখি না। কিন্তু যতবার মামা কে আমার নোটিফিকেশনে দেখেছি ততবারই আমি একটি ডান্স দিয়েছি। যাই হোক খুব সুন্দর করে নিজের অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
হ্যাঁ। গ্রিফিন আমাদের আনন্দই দেয়। ভালো থাকবেন আপু৷
দারুন একটি কোয়ালিটি লেখা পোস্টের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলি। গ্রিফিন দেখলে সত্যিই মনটা নিচে ওঠে। এর সম্বন্ধে জানতে খুব ভালো লাগলো। এত কিছু তো জানাই ছিল না। পোস্টটি ভীষণ প্রাসঙ্গিক। মাইথোলজির ব্যাখ্যা গুলো খুব ভালো লাগলো।
মাইথলজির এই দিকগুলো আমার বেশ ভালোই লাগে৷ জানোই তো। গ্রিফিন সম্পর্কে পড়ে যা জানলাম পরের বার কলকাতা গেলে ওই গ্রিফিনের মুর্তিওয়ালা বাড়িটা দেখে আসব। কেমন?
গ্রিফিন্স সম্পর্কে সেদিন কমিউনিটি হ্যাংআউটের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে আলোচনা করা হয়েছিল। তবে, আমি সেই আলোচনা থেকে তেমন একটা কিছু বুঝতে পারিনি। আপনি দেখছি আজকে খুবই সুন্দর গ্রিফিন্স এর বিস্তারিত তথ্য আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার মাধ্যমে গ্রিফিন্স এর বেশ কিছু জানার সুযোগ হলো।
সেদিন দাদা কুইজের প্রশ্ন করেছিলেন যারা হাইব্রিড বা ক্রশব্রিড প্রাণী নিয়ে গবেষণা করেন তাদের কি বলে। তখন আমিই গ্রিফিনের ছবিটা দিই৷ কারণ কয়েকদিন ধরেই আমি গ্রিফিন সম্পর্কে লিখব বলে পড়াশুনো করেছি। ছবিও বার করেছি অনেক৷
ঐদিন হ্যাংআউটে দাদা টা নিয়ে বেশ অনেক কিছু বলেছিলেন। সত্যি এগুলো শুধুই মিথ না। হয়তো এর কিছুটা হলেও সত্যতা আছে। আমরা হয়তো ঐসব দেখে দূরে আছি। তবে আমাদের hungry grifin তুলনা হবে না হা হা। তার নোটিফিকেশন একেবারে মন আনন্দিত করে দেয়।
গুলো আমিও করি আপনারই মতন। এমনি এমনি তো আর কল্পনা এতদূর বিস্তার পায় না। তবে প্রমাণ যেহেতু কিছুই নেই তাই বলারও জায়গা নেই।