প্রতিযোগিতা- ২২ | আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি ||@shy-fox🦊10% beneficiary @abb-school 5%

আমার সকল প্রিয় ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন সবাই আশা করছি সৃষ্টিকর্তা অসীম রহমতে সবাই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভাল আছি। আপনারা সবসময় ভাল থাকুন এবং সুস্থ এটাই কামনা করি।

সোর্স

প্রতিযোগিতা-২২ শেয়ার করো তোমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি। আজ এই প্রতিযোগিতা অংশ গ্রহণ করতে পেরে নিজের কাছে খুব ভাল লাগছে। আমি বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এই প্রতিযোগিতার বিচারক মন্ডলীদের এতো সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। আমার পক্ষ থেকে বিচারক মন্ডলীদের জানাই অভিরাম ভালবাসা।

আমার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি

দরিদ্র পরিবারের জন্ম আমার। আমার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। মা ছিলেন একজন গৃহিণী। আমি দরিদ্রতার মাঝেই বড় হয়েছি। আমি জীবেন আভিজাত্য ছুঁয়া কখনো পায়নি। বাবার যেটুকু রোজগার ছিলো তাই দিয়ে আমাদের সংসার কোন রকম চলে যেত। বাবার কাছে কোন কিছুই চাওয়ার সাহস হয়নি আমার। যদিও বাবার কাছে কোনো কিছু চেয়েছি। বাবা আমাকে কখনো না করেননি। শুধু বলেছে টাকা হলে তোমাকে কিনে দিবো। আমিও বাবার কাছে কোন কিছু জন্য জোর করিনি।

যাইহোক, ঘটনাটা ২০০৬ সালে আমি তখন নবম শ্রেনীর ছাত্র ছিলাম। আমার এক বন্ধুর বড় ভাই বিদেশ থেকে একটি মোবাইল পাঠায় তার বাড়ীর জন্য। সেই মোবাইল টা আমার বন্ধু ব্যবহার করতো। একদিন আমার বন্ধু মোবাইল টি আমাকে দেখানোর জন্য নিয়ে আসে। সে খুব খুশি ছিল। আমার বন্ধু আমাকে বলল, ভাইয়া এই মোবাইলটি পাঠিয়েছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কেমন হয়েছে? আমি বললাম, খুব ভালো হয়েছে। তারপর আমার বন্ধু বলল, আমার বাবা মা মোবাইল চালাতে পারবে না তাই এই ফোনটি সবসময় আমার কাছে থাকবে।

আমি বন্ধুকে বললাম, মোবাইলটি একটু হাতে নিয়ে দেখতে পারি। সে বলল, দেখতে পারিস কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিনের উপর হাত লাগাবি না। বললাম ঠিক আছে, আমি মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে দেখালাম। আমি বন্ধুকে বললাম তোর ফোন দিয়ে কি আমার মামার সাথে কথা বলা যাবে। আমার বন্ধু বলল হে যাবে কিন্তু রিসার্চ কার্ড কিনতে হবে। আমার বন্ধু আমাকে বলল, তোর মামা কোন দেশে থাকে। আমি বললাম, জর্ডানে থাকে বেশি দিন হয়নি। কয়েক মাস হয়েছে গিয়েছেন। আমার কাছে নাম্বার রয়েছে। আমার বন্ধু বলল, ১০০ টাকার রিচার্জের কার্ড কিনতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে রাতে কথা বলব মামার সাথে।

তারপর বিকেল বেলা বাবা কাজ থেকে বাসায় ফিরেন। আমি বাবাকে বললাম, বাবা আজ আমাকে ১০০ টাকা দিতে পারবেন। বাবা বললেন, টাকা দিয়ে কি করবে। মামার সাথে কথা বলব আমার বন্ধুর মোবাইল দিয়ে। বাবা বললেন, একশো টাকা হবে না ৫০ টাকা হলে চলবে। আমি বাবাকে বললাম, পঞ্চাশ টাকায় চলবে। আমি বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে মোবাইলের কার্ড কিনার জন্য বাজারে যাই। মোবাইলের কার্ড কিনে আমার বন্ধুর সাথে দেখা করি। আমার বন্ধু বলল, রাতে কথা বলতে হবে দিনে নেটওয়ার্ক কম থাকে। আমি বললাম ঠিক আছে রাতে মাকে নিয়ে তোদের বাসায় আসবো।

তারপর রাতে মাকে নিয়ে আমার বন্ধুর বাসায় যায়। তারপর ফোন দিলাম মামার কাছে। মামা ফোন ধরে বললেন, কেমন আসো বাবা মামা কেঁদে ফেললেন। আমিও কেঁদে কেঁদে মামাকে বললাম কেমন আছেন? মামা বললেন ভালো আছি তারপর মামা বললেন, আমি ১০ মিনিট পরে কল দিচ্ছি। দশ মিনিট পর মামা ফোন দেন। তারপর আমার মার সাথে কথা বলেন।

তারপর মা মামার সাথে কথা শেষ করেন। আমি আবার মামার সাথে কথা বলি। মামাকে বললাম, আমার জন্য একটা মোবাইল পাঠিয়ে দিয়েন। মামা বললেন, আমি একটু সমস্যায় রয়েছি আর এখন তো কেউ দেশে যাবে না। যদি কেউ দেশে যায় তাহলে আমি তোমার জন্য একটা মোবাইল পাঠিয়ে দিবো। আরো বললেন, ভালো করে লেখা পড়া করিবে। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে মামা বিদায় নিলেন।

এরপর থেকে মামার সাথে যতদিন কথা বলেছি। ততো দিন মামাকে বলেছি। মামা আপনার কাছ থেকে লোক কবে বাংলাদেশে আসবে। মামা বলেছেন কেউ গেলে অবশ্যই তোমার জন্য মোবাইল পাঠাবো। আমি একটি মোবাইলের জন্য দুটি বছর অপেক্ষা করেছি। কারণ আমার বাবার আমাকে মোবাইল কিনে দেয়ার সমর্থ ছিল না। বাবাকেও বলতে সাহস পায়নি। মামা মোবাইল পাঠিয়ে দেয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। প্রতিনিয়ত মামার সাথে কথা বলে যায়। আমার বন্ধু ফোন থাকাতে মামা সময় পেলে ফোন করেন। একদিন আমার বন্ধুর সাথে নদীর ধারে বসে ছিলাম। হটাৎ বন্ধুর ফোনটি বেজে উঠলো।

আমার বন্ধু বলল তোর মামার ফোন করেছেন। আমি ফোনটা রিসিভ করলাম মামা বললেন, তোমার জন্য একটা মোবাইল কিনেছি। মামার কথা শুনে আমি লাফাতে লাগলাম। তারপর মামা বললেন, পনেরো দিন পর আমার এক কলিক বাংলাদেশে যাবে তার কাছে পাঠিয়ে দিবো। তোমার বাবার সাথে ঢাকায় এসে বিমান বন্দর থেকে মোবাইল নিয়ে যেও। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে মামাকে বললাম কি মোবাইল কিনেছেন। মামা বললেন, ১১০০ মডেলের নোকিয়া মোবাইল। মামা বললেন, এখন রেখে দেই পরে কথা বলব। মামা ফোন রেখে দিলেন। তারপর আমি আমার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার এমন মনে হচ্ছিল চিক্কার দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে। সেদিন আমি এতো খুশি হয়ে ছিলাম।

পনেরো দিন টিকমত ঘুমাতে পারিনি। পনেরো দিন আমার কাছে মনে হচ্ছিল পনেরো বছর। তারপর মোবাইল হাতে পাওয়ার একদিন আগে বাবার সাথে ঢাকায় আসি। আমার এক আত্মীয় বাসায় রাতটি কোনরকম কাটিয়ে খুব সকালে বাবাকে বললাম চলেন বিমান বন্দরে যাবো। বাবা বললেন, লোকটি আসতে দেরি আছে পরে রওনা দিবো। আমি কোনরকম মানতে চাচ্ছিলাম না। আমি বাবাকে বললাম, আমরা দরকার হলে তার আসার অপেক্ষা করবো। বাবাকে জোর করে বিমান বন্দরে নিয়ে আসি। বিমানবন্দরে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর আমি মোবাইল হাতে পাই। সেইদিন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে ছিলাম।

আমার জিবনে প্রথম মোবাইল পেয়েছিলাম আমার মামার কাছ থেকে। আমি মামাকে অনেক ভালোবাসি। মামাও আমাকে অনেক ভালোবসেন। আমার জীবনে দ্বিতীয় মোবাইলটি পেয়েছিলাম আমার মামার কাছ থেকে।

আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পেরে আমার খুব লাগছে। আশা করছি আপনাদের ও ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ সবাইকে

🌹আমার পরিচয়🌹

ধন্যবাদ

@mosarofhosen