আমার লেখা প্রথম কাল্পনিক উপন্যাস:- “নীলাঞ্জনার অপেক্ষা”

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

আজকে আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম আমার লেখা প্রথম কাল্পনিক উপন্যাস। এই নতুন যাত্রায় আমি খুবই উচ্ছ্বসিত, কারণ এই প্রথম একটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্পের জগতে প্রবেশ করেছি। এতদিন বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেছি, কিন্তু নিজের কল্পনায় ভর করে একটি নতুন গল্প তৈরির চেষ্টা এবারই প্রথম। আশা করছি, এই যাত্রায় আপনারা সবাই আমার পাশে থাকবেন এবং আমার এই গল্পটি পড়ে আপনারা আনন্দ পাবেন।

1000038442.png

সোর্স

উপন্যাসের গল্পটি শুরু হয় এক ছোট্ট শহর থেকে। আমাদের মূল চরিত্রের নাম আদিত্য। আদিত্য একজন সাধারণ ছেলে, শহরের মাঝেই বড় হয়েছে, আর জীবনের সাধারণ নিয়মে চলে এসেছে। তবে তার মনের ভেতর সবসময়ই কেমন যেন একটা অজানা রহস্যের আগ্রহ কাজ করত। পড়াশোনা শেষ করে, সে একটি অফিসে চাকরি করছে। জীবন যেমন চলছিল, ঠিক সেভাবেই চলছিল, কিন্তু একদিন তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় একটি অদ্ভুত ঘটনা দিয়ে।

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আদিত্য লক্ষ্য করে, তার আশেপাশে কিছু লোক খুব উত্তেজিতভাবে কথা বলছে। কেউ একজন নাকি শহরের কাছে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে কিছু রহস্যময় ঘটনা দেখেছে। কথাগুলো শুনে আদিত্যর মনের মধ্যে যেন আগ্রহের আগুন জ্বলে ওঠে। সে ঠিক করে, এই বাড়ির রহস্য সে নিজেই উদঘাটন করবে। এই কৌতূহল থেকেই আদিত্য পরের দিন সকালে বাড়িটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরিত্যক্ত বাড়িটিতে পৌঁছানোর পর, আদিত্য দেখে সবকিছুই একেবারে নিস্তব্ধ এবং রহস্যময়। বাড়িটির চারপাশে অনেক পুরনো গাছ, যেন বছরের পর বছর ধরে কেউ এখানে আসেনি। বাড়ির গেটটা আধখোলা ছিল, আর ভেতরের সবকিছুই ধুলা আর মাকড়সার জালে ঢাকা। এই নীরব পরিবেশে দাঁড়িয়ে আদিত্যর গা শিউরে ওঠে, কিন্তু সে তার মনের জোর ধরে রাখে।

ভেতরে প্রবেশ করে আদিত্য দেখল, বাড়ির প্রতিটি রুমের দেয়ালে কিছু রহস্যময় চিহ্ন আঁকা। দেখে মনে হলো যেন বহুদিন আগে এখানে কিছু ঘটেছিল, যা কেউ জানে না। হঠাৎ, সে একটি পুরনো ডায়েরি খুঁজে পায়, যা ধুলোমাখা একটা আলমারিতে পড়ে ছিল। ডায়েরির পাতাগুলোতে হাতে লেখা কিছু লাইন পড়ে আদিত্য অবাক হয়ে যায়। সেখানে লেখা ছিল এক নারীর কাহিনী, যার নাম ছিল নীলাঞ্জনা। এই ডায়েরিতে নীলাঞ্জনার দুঃখের কাহিনী ছিল, তার ভালোবাসার গল্প আর তার হারিয়ে যাওয়ার বেদনাবোধের কথা।

নীলাঞ্জনা এক সময় এই বাড়িতে থাকত, আর সে এক ছেলের প্রেমে পড়েছিল, যার নাম ছিল অয়ন। তাদের সম্পর্ক খুব গভীর ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি আর কিছু অজানা কারণে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। নীলাঞ্জনা এই বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারেনি এবং একদিন সে নিজেই নিঃশেষ হয়ে যায়। এই ডায়েরিতে তার শেষ লেখা ছিল, "আমি তোমার প্রতীক্ষায় রইলাম, অয়ন।"

এই কথাগুলো পড়ে আদিত্যর হৃদয়ে কেমন যেন একটা ব্যথা অনুভব হলো। সে বুঝতে পারল, এই বাড়িতে এমন এক ভালোবাসার কাহিনী ছিল, যা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে। তবে আদিত্য অনুভব করল, এখানে কোনো এক অদ্ভুত শক্তি এখনো বিরাজমান। সে যেন অনুভব করল, নীলাঞ্জনা তার কাছেই আছে, তার উপস্থিতি যেন বাতাসের প্রতিটি কণায় মিশে আছে।

আদিত্য ডায়েরিটি সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় এবং এর প্রতিটি পাতার কথা পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তার মনে হয়, নীলাঞ্জনার গল্প যেন তাকে নিজের মাঝে টেনে নিচ্ছে। তার স্বপ্নে নীলাঞ্জনা আসতে শুরু করে, আর প্রতিদিন তার মনে হয় যেন তার জীবন থেকে কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে।

এভাবে চলতে চলতে একদিন আদিত্য ঠিক করে, সে এই রহস্যের শেষ পর্যন্ত পৌঁছাবে। সে আবার সেই বাড়িতে যায় এবং সেখানে অয়নের শেষ চিঠি খুঁজে পায়, যা ডায়েরির শেষ পাতায় রাখা ছিল। অয়ন লিখেছিল, "নীলাঞ্জনা, তুমি চলে গেলে, কিন্তু আমার মন তোমাকে কখনো ভুলতে পারবে না। একদিন হয়তো আমরা আবারও দেখা পাবো।"

এই চিঠি পড়ে আদিত্যর হৃদয়ে গভীর দুঃখের বন্যা বয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, কিছু ভালোবাসা হয়তো জীবনের সব বন্ধন পেরিয়ে চিরকাল থেকে যায়, সময় যতই এগিয়ে যাক না কেন। আদিত্য নিজেও যেন এই ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে যায়, আর নীলাঞ্জনার স্মৃতির প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করে।

এই প্রথম উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে আমি নিজেও উপলব্ধি করেছি ভালোবাসা আর স্মৃতির এমনই এক অদ্ভুত শক্তি, যা কোনোভাবেই আমাদের মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। এই উপন্যাসের গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং এই গল্পের মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের এক গভীর শিক্ষা—ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যায় না, তা কেবল রয়ে যায় স্মৃতির পাতায়।

আশা করছি, আমার লেখা এই প্রথম কাল্পনিক উপন্যাসটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা আমার সাথে এই নতুন যাত্রায় থাকবেন।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 yesterday 

ভাইয়া আপনার এই উপন্যাস পড়ে আমিও যেন আদিত্যের মতো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। নীলাঞ্জনার ডায়রিতে লেখা তার প্রেমের কাহিনী যেনে নীলাঞ্জনার জন্য সত্যি খুব খারাপ লাগছে। এমন অনেক ভালোবাসা রয়েছে যা পূর্ণতা পায়নি আর সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকে নীলাঞ্জনার মতো এভাবেই হারিয়ে গিয়েছে। আপনার এই গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। পরবর্তীতে কি হলো জানার অপেক্ষায় রইলাম।

 yesterday 

আমার লেখা প্রথম কাল্পনিক এই উপন্যাস আপনি পড়েছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো আবার।আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.18
JST 0.034
BTC 89422.86
ETH 3144.72
USDT 1.00
SBD 2.76