গতকাল অনেক ব্যস্ততার মধ্যে পার করছিলাম। কারণ সারাদিন বাসা খুঁজেছি। অবশেষে অনেক খোঁজাখোঁজি করার পর মোহাম্মদপুরে এক রুমের একটি বাসা পছন্দ করি। পছন্দ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়িওয়ালাকে অ্যাডভান্স দিয়ে আসি। সন্ধ্যা বেলায় বাসায় ফিরে আসার সময় হঠাৎ করে আমার খালাতো ভাই @rayhan111 আমাকে কল করে বলল, সে নাকি তার আম্মা অর্থাৎ আমার বড় খালাকে নিয়ে কক্সবাজার তার ছোট বোনের বাসায় যাবে। রায়হান বলল, ওদের বাস নাকি রাত দশটায় সিরাজগঞ্জ থেকে ছাড়বে। তখন সে আমাকে বলল, “ফয়সাল, তুই আসবি নাকি?”যেহেতু বাসা খুঁজে পেয়েছি, তাই ঢাকায় তেমন আর কোনো কাজ ছিল না। তখনই মনে হলো, কক্সবাজারে যাওয়া একটা দারুণ সুযোগ। এখানে আমি নতুন কিছু দেখার, কিছু সময় কাটানোর এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাব।যেহেতু এর আগেও অনেকবার কক্সবাজার গিয়েছি তাই মনে সাহস পেলাম।সেজন্য সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম।কিছুক্ষণ পর আমি ভাবতে শুরু করলাম, কক্সবাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। এই প্রথমবার আমি একা একা যাত্রা করব, যা আমাকে নতুন কিছু শিখতে এবং ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
কথা বলা শেষ করেই ঢাকা ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে Soudia বাসে রাত ১১ টায় টিকিট কাটলাম। যথাসময়ে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আমি বাসে উঠলাম। এর আগে কখনো এরকম পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া একা একা এত বড় জার্নি করিনি। আজকেই প্রথম একা একা কক্সবাজার যাচ্ছি। আমার অনুভূতি ছিল পুরোই ভিন্ন রকম। একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে কিছুটা ভয়। মনে হচ্ছিল, নতুন একটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। বাসের ভিতরে আমি নিজেকে অন্যরকম অনুভব করছিলাম; চারপাশের যাত্রীরা, বাসের আলো, সবকিছুই নতুন লাগছিল। কখনো ভাবিনি, একা ভ্রমণ আমার জন্য এতটা উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে। ভয় ও আনন্দের এই মিশ্রণে আমি কক্সবাজারের দিকে রওনা দিলাম, মনে মনে নতুন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে।
একটানা তিন-চার ঘন্টা যাত্রা করার পর অবশেষে রাত ২ টায় কুমিল্লার টাইমস্ স্কয়ার রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতি দিল। সেখানে বাস থেকে নেমে আমি একটু ফ্রেশ হলাম। একটু ক্ষিদে লাগছিল, তাই একটা স্যান্ডউইচ এবং কফি কিনলাম। তবে এখানে খাবারের দাম কল্পনার বাইরে ছিল; অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে দাম দ্বিগুণ। আমি ভাবছিলাম, কীভাবে এখানে খাবারের দাম এত বেশি হতে পারে! সেইসঙ্গে এই দাম শুনে আমি অবাকও হলাম। যদিও খাবারের মান ভালো ছিল, তবুও আমার কাছে মনে হচ্ছিল, এই দামে কিছুটা অসুবিধা হবে। যাই হোক, দ্রুত খাবার খেয়ে আবার বাসে উঠতে প্রস্তুত হলাম, কারণ কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার উত্তেজনা যেন আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
| |
আমাদের যাত্রা বিরতি ছিল ২০ মিনিট। ওই ২০ মিনিটের মধ্যে আমি স্যান্ডউইচ এবং কফি খেয়ে আবার বাসে উঠলাম। বাসে উঠেই আমাদের যাত্রা শুরু হলো। বাসের গতি দেখে আমি পুরোই অবাক হয়ে গেলাম; দ্রুতগতিতে বাস ছুটতে লাগল। আমার মনে হচ্ছিল, যেন আমরা বাতাসের মতো চলে যাচ্ছি। রাস্তার দুপাশের দৃশ্যগুলো মুহূর্তে বদলে যাচ্ছিল, আর আমি সেই মুহূর্তগুলোতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা ছিল, যা আমাকে নতুন ভ্রমণের স্বাদ দিচ্ছিল।
অবশেষে সকাল সাতটার একটু পরেই আমরা এসে পৌঁছালাম কক্সবাজারের ডলফিন মোরে। ডলফিন মোরে নেমে আমি একটি অটো নিলাম। আমার খালাতো বোনের বাসা সুগন্ধা বিচের একদম সামনেই। অটোতে চড়ে আমি ডলফিন মোড় থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে সুগন্ধা বিচের সামনে পৌঁছালাম। সেখানকার পরিবেশ দেখে আমার মন আনন্দে ভরে উঠল। কক্সবাজারের নীল জল এবং সাদা বালির সৈকত কল্পনার মতো সুন্দর। সকালবেলার হালকা বাতাস আমাকে স্বাগত জানাল।
যেহেতু গতকাল সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছি এবং রাতভর জার্নি করে এসেছি, তাই সকালে আর বিচে গেলাম না। সরাসরি আপুর বাসায় চলে গেলাম। আপুর বাসায় এসে রায়হান, বড় খালা, আপু এবং দুলাভাইয়ের সাথে দেখা হলো। তারা কেউ জানত না যে আমি হঠাৎ করেই বাসায় চলে আসব, তাই সবাই বেশ অবাক হয়ে গেল। তাদের মুখে আনন্দ ও বিস্ময়ের মিশ্রণ ছিল। খালার কাছে আমি উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলাম, আর আপুর কাছে ঘরোয়া পরিবেশে ফিরে আসার অনুভূতি সত্যিই বিশেষ ছিল। সবাই মিলে কিছু সময় গল্প করলাম এবং হাসাহাসি করতে করতে সকালে একটি স্বস্তিদায়ক মুহূর্ত কাটালাম।
তারপর আমি কিছু খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রায়হানকে সাথে নিয়ে সাগর পাড়ের দিকে রওনা দিলাম। সাগর পাড়ে গিয়ে আমরা দারুণ সময় কাটালাম, উন্মুক্ত আকাশের নিচে বাতাসে মিশে ছিল আমাদের হাসি আর আনন্দ। সেখানকার মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম, যাতে পরবর্তীতে স্মৃতি হিসেবে এগুলো শেয়ার করতে পারি। সাগরের নীল জল, বালির ওপর খেলা, আর আমাদের হাসাহাসির ছবিগুলো সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। ইনশাল্লাহ, এগুলো আপনাদের সাথে পরবর্তী দিনে শেয়ার করব এবং সবার সাথে সেই আনন্দময় মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করব।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
ধরণ | পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া একাই চলে এলাম কক্সবাজার |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | ঢাকা টু কক্সবাজার |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।
https://x.com/mohamad786FA/status/1837089135200457188?t=MmLCjqEP6CFTC33CQa47uw&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এরকম হঠাৎ প্ল্যান করে যে কোন জায়গাতে যেতে আসলেই ভালো লাগে। আর আপনারা তো কক্সবাজার চলে গিয়েছেন। আপনি এবং আপনার খালাতো ভাই মিলে সেখানে আপনাদের ছোট বোনের বাসায় গিয়েছেন। যাত্রাপথের মুহূর্ত গুলো দেখে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আমাদের সাথে এগুলো শেয়ার করার জন্য।
ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। আমিও ভ্রমণ করতে খুবই পছন্দ করে থাকি। অনেক অনেক ভালো লাগলো আপনার হঠাৎ করে এই কক্সবাজার ভ্রমণ করতে আসার অনুভূতি দেখে। আশা করব এরই মধ্য দিয়ে বেশ ভালো কিছু দেখার সুযোগ করে দিবেন আমাদের। কারণ কক্সবাজার বলে কথা।
পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া একাই চলে গিয়েছেন কক্সবাজারে। তবে আমি কিন্তুু ঢাকা আপনার পাশেই ছিলাম। আমাকে বললে হয়তো আমার একটু ভালো লাগতো। আমিও ছুটিতে ছিলাম ভাই। যাইহোক তারপরেও সকল জরতা কাটিয়ে অবশেষে আপনি আপনার বোনের বাসায় পৌঁছাতে পেরেছেন জানতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনার জন্য অনেক দোয়া রইল কক্সবাজারের যাত্রা যেন অনেক আনন্দময় এবং সুখকর হয়ে ওঠে।
আমারা সবাই ভ্রমন পিপাসু। ঘুরতে সবারই ভালোলাগে। একা ভ্রমণের মধ্যে রয়েছে আলাদা অনুভূতি। আপনি একা ভ্রমণ করছেন, মনের মধ্যে একটু ভয়,সাহস, জড়তা নিয়ে ভালো লাগলো শুনে।আপনার যাত্রা শুভ হোক দোয়া করি।