দুঃসময়ে কেউ পাশে থাকে না

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমির সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

সুখের সময় সকল মানুষকে পাশে পাওয়া যায়। কিন্তু দুঃখের সময় কেউ পাশে থাকে না। আসলে সুখের আনন্দ এবং জীবনের হাসিখুশি মুহূর্ত সকলেই ভাগাভাগি করে নিতে চাই। কিন্তু কষ্ট এবং দুঃসময় কেউ পাশে থাকতে চায় না। এটাই যেন নিয়ম আর দুঃসময়ে যে বন্ধুগুলো পাশে থাকে তারাই যেন প্রকৃত বন্ধু। কিন্তু এমন কিছু দুঃসময়ে রয়েছে, যে সময়ে কাছের মানুষদেরও পাশে পাওয়া যায় না। আর এই হতাশা নিয়ে জীবনের সবচাইতে কঠিন মুহূর্ত গুলো পার করতে হয়। কেউবা এই কঠিন মুহূর্ত গুলো পার করতে পারে না। যার কারণে সে হতাশ হয়ে যায় এবং জীবনের বড় ধরনের একটা ভুল করে বসে। আসলে জীবনের কিছু কিছু দুঃখের সময় রয়েছে, এই সময়টাই প্রিয় মানুষ এবং কাছের মানুষদের সাপোর্ট লাগে। যাতা যদি সাহায্য এবং তারা যদি পাশে না থাকে তাহলে অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।


man-5846064_1280.jpg

Source

জীবনে অনেক দুঃখের সময় রয়েছে, তার মধ্যে বড় একটি দুঃখের সময় হলো এডমিশনের টাইম।যখন আমরা ভার্সিটি এবং মেডিকেলে এডমিশন পরীক্ষা দেই, সেই সময়টা যেন একদম অসহায় এবং দুঃখের সময় হয়ে যায়। কারণ যারা এডমিশনের টিকে যায় তাদের তো ভাগ্য খুলে যায়। তাদের সান্তনা দেওয়ার জন্য এবং তাদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য হাজারো মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু যে ছাত্র বা ছাত্রী হাজার চেষ্টার পরেও কোথাও কোন চান্স পায় না, তাকে যেন সমাজের সবচাইতে বড় বোঝা মনে হয় এবং কেউ তাকে ভালো চোখে দেখে না। সবাই তার প্রতি টিটকারি করে। আসলে কিভাবে কষ্ট করেছে এবং কতটা কষ্টের পরেও সে চান্স পাচ্ছে না এবং তার মনের ভিতর কেমন লাগছে, এই বিষয়টা কেউই জানতে চায় না। কিন্তু আপনি যদি টিকে যান বা চান্স পেয়ে যান, তাহলে আপনার প্রশংসা এবং আপনাকে নিয়ে গর্ব করার মতো হাজারো মানুষ রয়েছে।



আমি এবার অনেক জায়গায় এডমিশন পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিন্তু কোথাও চান্স পাইনি। মানে ভালো কোথাও চান্স পাইনি। ঢাকা রাজশাহী ইউনিভার্সিটিগুলোতে পরীক্ষা দিয়েছি, কোথাও চান্স পাইনি শেষমেশ ঢাকা কলেজে চান্স পেয়েছি। আর আমি যখন চান্স পেলাম না তখন আমার আশেপাশের মানুষগুলো কাছে যেন আমি বোঝা। কেউ আমাকে ভালো চোখে দেখে না। এমনকি নিজের মানুষ গুলোও। ঠিক আমার বন্ধুর রফিক রয়েছে, রফিকও ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েছে। মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়েছে এবং আরো অনেক জায়গায় পরীক্ষা দিয়েছে, ও কোথাও চান্স পায়নি। যার কারণে ওকে কেউ দেখতে পারে না। ওর আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব সকলেই যেন ওকে ছোট চোখে দেখে। এমনকি ওর মা বাবাও ওর সাথে ঠিকমতো কথা বলে না। আসলে একটা ছেলে হাজারো চেষ্টা করে,সবটক দিয়ে চেষ্টার পরে যখন চান্স পায় না, তার মনের ভিতর যে কেমন লাগে সেটা নিজেই আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি। আর যখনই আমার বন্ধু রফিক চান্স পেল না তখন ওর মনের ভিতর অনেক কষ্ট মজা হতে থাকে।


কোথাও যখন চান্স পায় না তখন পরিবারে মানুষগুলো তখন ভালোভাবে কথা বলে না। তারা যখন সাপোর্ট দেয় না তখন নিজেকে যেন অসহায় মনে হয়। আমার বন্ধু রফিক কেউ ওর বাবা-মা সাপোর্টও দূরের কথা ওর সাথে ভালোভাবে কথাই বলত না এবং ওর সাথে এমন একটা ব্যবহার করত মনে ওর অনেক কষ্ট জমে হয়ে যায়। যার কারণে ও খুবই বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। ভাবে যে আত্মীয়-স্বজনরা কেউ আমাকে দেখতে পারছে না। এমনকি মা-বাবা কথা বলছে না। যার কারণে ও সিদ্ধান্ত নেয় এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। অর্থাৎ আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এই আত্মহত্যা তো কোন সমাধান নয়। এটা যেন ও বুঝতেই পারেনা। ও একাকী হয়ে যায়, নীরবতা যেন ওকে এই ভুল পথের দিকে টেনে নিয়ে যায়।


যার কারণে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নেয় ও অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ এবং আরো এন্টিবায়োটিক মিলে অনেকগুলো ওষুধ খেয়ে ফেলে রাতে। এই ওষুধগুলো খেয়ে ও ঘুমিয়ে যায়। আসলে বেশি ওষুধ খাওয়ার কারণে ও যেন অন্যরকম হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার কারণে ও পাগলের মত ছিটা ছিটি করে। তারপরে ওর রুমে ওর মা গিয়ে দেখে যে ছেলে কিরকম করছে এবং মুখ দিয়ে বমি বের হচ্ছে। এরকম দেখতে পেয়ে ওর মা-বাবা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হসপিটাল নিয়ে আসার পরে ডাক্তার বলে ও ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। ও মানসিকভাবে অনেক টেনশন করে। যার কারণে ওর এই অবস্থা তখন ডাক্তাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ওকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলে। তারপরে ডাক্তাররাসহ জানতে চাই ছেলের কি সমস্যা। তারপরে ডাক্তারের কাছে সকল ঘটনা ওর বাবা-মা বলে দেয়।আমাদের নিজেদেরও দোষ রয়েছে। ও হয়তো মানসিকভাবে অনেক টেনশন থাকে। এডমিশনে কোথাও টিকে নাই বলে এবং আমরা ঠিক ভাবে কথা বলিনি।ডাক্তার তখন অনেক বকাবকি করল ওর মা বাবাকে, যে আসলে আপনারা কি চান। আপনারা কি আপনার সন্তানকে চান না। নাকি কোথাও টিকলেই আপনাদের খুশি। আপনাদের মনের ভিতরে যে কষ্ট তার চায়তে হাজার কষ্ট ও নিজের। একজন মানুষ টিকতে পারছে না কোথাও ওর কেমন লাগছে এটা আপনারা বুঝবেন না।


তখন ওর মা-বাবা ও ভুল বুঝতে পারে। যে আসলে আমরা বুঝি নাই আমার ছেলের যদি আজ বড় কিছু হয়ে যেত তাহলে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারতাম না।যার কারণে ওর মা-বাবা ও গিয়ে ছেলেকে ধরে জড়িয়ে কান্না করলো। যে বাবা আজ থেকে তুমি আর কোন টেনশন করবে না। তোমার যা ভালো লাগে সেখানে খুশি ওখানেই ভর্তি করে দেবো।আমরা আর কোন চাপ দেবো না। আসলে একটা ছাত্র এবং ছাত্রী তার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যায়। কিন্তু কেউ কোথাও চান্স পায় তাকে সর্বোচ্চ সম্মান করে এবং মাথায় তুলে রাখে। আর কেউ যদি চান্স না পায়।তার চেষ্টাটা দেখবে না, তার পাশে কেউ থাকে না। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সকলেরই নিজের মনের অবস্থা এবং সকলকেই সাপোর্ট করা। সুখের সময় সাপোর্ট করবো দুঃখের সময় করবো না আসলে এটা কখনোই ভাল কাজ নয়। যদি সুখের সময়ও থাকে পাশে, তাহলে দুঃখের সময় তাদের সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকতে হবে।তাহলেই ভালো কিছু আশা করা যাবে।

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

IMG_20230821_180423.jpg

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবসি ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 7 days ago 

খুবই সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছেন। আসলে আমাদের এধরনের ঘটনা গুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আর একটু ভুলে হয়তো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। যাক অবশেষে তার বাবা মা বুঝতে পেরেছেন। তবে আপনি চমৎকার কিছু কথা শেয়ার করেছেন। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 6 days ago 

আপনার আজকের পোস্ট লেখার বিষয়টি আমরা কম-বেশী সবাই জানি।আমাদের সমাজে এমন আত্মীয়-স্বজন ও মা-বাবা আছেন এটা আমরা জানি।আমার কাছে মনে হয় একজন মানুষ আগে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকুক।পাবলিকে চান্স পাওয়াটা শুধু লেখাপড়ার মাধ্যমে ই হয়না।ভাগ্যের ও বিষয় থাকে।একটি ছেলে কিংবা মেয়ের মনের অবস্থা কেমন হয় তা মা-বাবার অন্তত বুঝতে হবে।আত্মীয়-স্বজন কে মা-বাবাই কিছু বলে থামিয়ে দিতে পারে।সবার আগে আমার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা আমার দেখতে হবে।এরপর লেখাপড়া। খুব খারাপ লাগলো আপনার লেখাগুলো পড়ে। সব মানুষ গুলোর মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এমনটাই কামনা করি।

 6 days ago 

আসলে সন্তানের সফলতায় যেমন খুশি হওয়া যায় ঠিক তেমনি ভাবে সন্তানের ব্যর্থতায় ও বাবা মায়ের বাবা মায়ের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। ভালো কোথাও চান্স না পেলে যদি কাছের মানুষের কাছে এমন ব্যবহার পাওয়া যায় তাহলে তো বেঁচে থাকার আশাটাই কমে যায়। আপনার বন্ধুর হয়েছিল সেটাই। ভাগ্যিস সময় মত হাসপাতালে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। আমাদেরও উচিত সফলতায় যেমন খুশি হওয়া ব্যর্থতায় তেমন নিজেকে শক্ত করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা ধন্যবাদ ভাইয়া, পোস্টটি ভাগ করে নেয়ার জন্য ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57340.70
ETH 3072.28
USDT 1.00
SBD 2.37