শৈশবে শীতকাল: "সকাল বেলায় বাড়ির উঠোনে ভাই-বোনদের দৌড়াদৌড়ি"

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।


শৈশবের স্মৃতি আমাদের জীবনের অমূল্য রত্ন, যেগুলো কখনোই মুছে যায় না। শীতকাল, বিশেষ করে সকালে, আমাদের বাড়ির উঠোনে ভাই-বোনদের সাথে খেলাধুলা আর দৌড়াদৌড়ি করার যে আনন্দ, তা আমি কখনো ভুলতে পারি না। একদিনের কথা মনে পড়ে, যখন শীতের সকালটা ছিল বেশ ঠাণ্ডা, আর সূর্যের আলো আসতে আসতে বাড়ির উঠোনে নানা ধরনের খেলাধুলা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

1000039920.jpg

সোর্স

আমাদের বাড়ি ছিল একেবারে গ্রামে, যেখানে উঠোনটা ছিল বিশাল। উঠোনের মাঝখানে ছিল একটি বড় গাছ, যার ছায়ায় আমরা বসে গল্প করতাম, আর তার চারপাশে ছোট ছোট ফুলের গাছ ছিল। শীতকালে, সকালবেলা ওই ফুলগুলো আরও সুন্দর হয়ে উঠত, যেন প্রকৃতি আমাদের জন্য সাজানো ছিল। তখন, ভাই-বোনদের মধ্যে কেউ ছিল ছোট, কেউ ছিল বড়, কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না।প্রথমে ছিল দৌড়াদৌড়ি। সকালে উঠোনে আমাদের দৌড়ানোর জন্য প্রচুর জায়গা ছিল, আর শীতের সকালে ঠাণ্ডা বাতাসে দৌড়ানো যেন আরও মজার হয়ে উঠত। আমার ছোট বোন, কানিজ, ছোট হলেও অনেক দ্রুত দৌড়াতে পারত। সে আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বলত, "তোমার থেকে আমি দ্রুত দৌড়াবো!" তখন আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসতাম, কারণ আমি জানতাম, কানিজ ছোট হলেও, তার মাঝে এক ধরনের দৌড়ানোর উৎসাহ ছিল যা বড়দের মাঝেও বিরল। দৌড়াতে দৌড়াতে কখনো কখনো আমরা সবাই একে অপরকে পেছনে ফেলে দিতাম, আবার কখনো পরস্পরকে ছুটে যাওয়ার জন্য সাহায্য করতাম।

আমাদের দৌড়াদৌড়ির পর, শুরু হতো খেলাধুলা। একদিন সবার মধ্যে পাথর ছুড়ে মারার খেলা শুরু হল। যেহেতু উঠোনটা বেশ বড় ছিল, তাই আমরা সবাই যে যার অবস্থান থেকে পাথর ছুড়ে লক্ষ্যভেদ করছিলাম। শীতকালীন সকালটা ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ, আর ওই মুহূর্তগুলো আমাদের একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করে তুলত। আমি কখনোই ভুলব না, কিভাবে আমার বড় ভাই, শিহাব, এক হাতে পাথর ছুড়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারত, আর আমরা সবাই তার এই দক্ষতায় মুগ্ধ হতাম। কিন্তু আসল মজা ছিল যখন কেউ লক্ষ্যভেদ করতে পারতো না, তখন সবাই একে অপরকে হাসিয়ে তুলতো।এরপর, কখনো আমরা খেলতাম ছো-ছি (hide and seek)। বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা জিনিসপত্র এবং গাছপালায় লুকিয়ে পড়ে, এই খেলা আমাদের মাঝে এক ধরনের মজা এনে দিত। বিশেষ করে শীতের সকালে, যখন হালকা কুয়াশা ঢাকা উঠোনটায় আমরা একে অপরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম, তখন এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হত। কখনো আমি লুকিয়ে পড়তাম গাছের পেছনে, আর ভাইরা আমাকে খুঁজে পেতেই না, তখন তারা একে অপরকে বলত, "ওর তো চোখের পেছনে লুকিয়ে পড়েছে!" আর আমাদের হাসির রোল শুনে গোটা বাড়ির আশেপাশের মানুষও হাসত।

এমনকি, কখনো কখনো, দুপুরে ঠাণ্ডা খেতে আমরা ছোট ছোট কাঁটাবিড়াল বানিয়ে খেলতাম। আমরা যে গাছের পাতা দিয়ে কাঁটাবিড়াল বানাতাম, তা মনে হলে এখনও হাসি পায়। খুব মজা হত, কারণ কেউ যখন বলে, "আমার কাঁটাবিড়ালটা বড় হয়েছে," তখন সে গর্বিত হয়ে উঠত। আমাদের খেলার মাঝে কখনো ছোট বাচ্চাদের জন্য খেলার নতুন উপায় নিয়ে আসত আমাদের মা, এবং আমরা মেতে উঠতাম তার সঙ্গেই।

এইসব ছোট ছোট খেলা আর দৌড়াদৌড়ি শৈশবে আমাদের একত্রিত করে রাখত, আর শীতকাল ছিল সেই সময় যখন বাড়ির উঠোনে আনন্দের কোনো সীমা থাকত না। ছোটরা বড়দের সঙ্গে খেলে, বড়রা ছোটদের সঙ্গে আনন্দিত থাকত। সেই সময়গুলো এখনো মনে পড়লে, মনে হয় যেন কোন এক ভাললাগা হয়ে উঠেছিল। প্রাকৃতিক শীতল পরিবেশ, সূর্যের রৌদ্র, আর ভাই-বোনদের হাসি আমাদের জীবনের এক অমূল্য অংশ হয়ে উঠেছিল।তবে, শীতের সেই সকালগুলো কেবলই একটা সময় ছিল, যা ফিরে আসবে না। আর আমরা বড় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, বাড়ির উঠোনে সেই খেলা আর দৌড়াদৌড়ি সম্ভব নয়। তবে, সেই সময়গুলোর স্মৃতিগুলো আজও আমাদের জীবনে সুরের মতো বাজে।

বাড়ির উঠোনে ভাই-বোনদের সঙ্গে শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে, একটা অদ্ভুত আনন্দ অনুভব হয়। জীবনের চ্যালেঞ্জ আর কঠিন সময়ে এই স্মৃতিগুলো আমাদের প্রেরণা দেয়, এবং বুঝতে সাহায্য করে, প্রকৃত সুখ কখনোই বাহ্যিক জিনিসের মধ্যে নয়, বরং আমাদের অন্তরে এবং কাছের মানুষের সাথে থাকার মধ্যে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

1000039950.jpg

 3 months ago 

ভাইয়া গ্রামের বাড়ির উঠোন গুলো এমনিতে বড় হয়। বিশেষ করে জায়গা থাকে অনেক। তবে শৈশবের কথাগুলো মনে পড়লে অনেক ভালো লাগে। তবে আপনার মত আমরা ছোটকালে দৌড়াদৌড়ি বেশি করতাম খেলাধুলা করতাম। আর সবাই মেতে উঠতাম আনন্দ করতাম। ভালো লাগলো আপনার শৈশবের শীতকাল পোস্টটি পড়ে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 95567.78
ETH 2722.86
SBD 0.43