গল্প পোস্ট- অবশেষে মানসিক হাসপাতালই হলো ছেলেটির ঠিকানা-শেষ পর্ব || written by@maksudakar ||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আমার মত বেশ ভালোই আছেন। ভালো থাকেন, প্রফুল্ল থাকেন আর সুস্থ জীবন যাপন করেন এতটুকু দোয়া সবার জন্য। যতই ব্যস্ত থাকি না কেন , কেন জানি দিনে দিনে আপনাদের সাথে মিশে যাচিছ একাকার হয়ে।বন্ধুরা আজও চলে আসলাম আপনাদের মাঝে। আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া হাজারও গল্প হতে একটি বাস্তব জীবনের গল্পের শেষ পর্ব আপনাদের মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে। বন্ধুরা আপনাদের কি মনে আছে গত সপ্তাহে আপনাদের মাঝে ‘’ অবেশেষে মানসিক হাসপাতালই হলো ছেলেটির ঠিকানা নামে একটি গল্প শেয়ার করে ছিলাম। গল্পটির প্রথম পর্ব আপনাদের মাঝে অনেক সাড়া ফেলেছিল। সবাই বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন গল্পটির শেষ পরিনিতি জানার জন্য। তাই তো আজ আপনাদের সকলের শত আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়ে চলে আসলাম আপনাদের মাঝে সেই গল্পটির অন্তিম পর্ব শেয়ার করার জন্য। আশা করি গল্পটি আপনাদের মনে সামান্য হলেও দাগ কাটবে।

👌গল্পটির প্রথম পর্বের লিংক

অবশেষে মানসিক হাসপাতালই হলো
"ছেলেটির ঠিকানা-শেষ পর্ব"

দু চোখে ঘুম আসে না (6).png

Banner credit --@maksudakawsar

বেশ আদর করে মিনার স্বামী তাদের একমাত্র সন্তানের নাম রেখেছিলেন মানিক। কিন্তু সেই মানিকের জীবন টাকে সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে দূর্বিসহ করে দিয়ে এক সময়ে মিনা চলে গেলেন অন্যের হাত ধরে। হুম সত্যিই কিন্তু তাই হয়েছে। একদিন মিনার স্বামী অন্যদিনের তুলনায় একটু আগেই বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে ভদ্রলোক দেখতে পায় যে তার ঘরের মেইন দরজাটা খোলা। তখন তিনি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে তার সন্তান মানিক বেশ সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। ভদ্রলোক মনে করেন যে মিনা হয়তো ওয়াশ রুমে গেছে। তাই তিনি মানিকের পাশেই বসে থাকে। কিন্তু প্রায় দুই ঘন্টা পরও যখন মিনার কোন সাড়া শব্দ পায় না তখন সে মিনা কে খোজঁ করতে থাকে। কিন্তু না মিনা কে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অবশেষে বাধ্য হয় যে মিনার বাবা মাকে জানাতে। মিনার বাবা মা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।

এদিকে মিনার খোঁজ জানার জন্য মিনার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে ধরে নিয়ে আসে মিনার বাবা এবং তার বোনেরা। রাতভর অসহায় মেয়েটিকে মারধর আর অত্যাচার করেও কোন সন্ধান তারা পাননি। আর পাবেনই বা কেমনে? মেয়েটি তো এ বিষয়ে কিছুই জানতো না। এদিকে মিনার স্বামী তার ঘরের সব কিছু খোঁজ করে দেখে যে তার আলমারীতে যে ত্রিশ ভরি স্বর্ণ এবং মিনার নামে দলিল ছিল তার কিছুই নেই। তখন মিনার স্বামী মিনার নামে মামলা করেন। এরপর মিনার বাবা মা আরও খোজঁ করে জানতে পারে যে মিনা তাদের যে গৃহ শিক্ষক ছিল তার সাথে পালিয়ে গেছে। আর মামুনের সাথে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মামুনের পরিবারও জানে। তাদের কথা মিনা এবং মামুন দুজনেই সাবালক। তারা চাইলে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এদিকে মিনার এমন কান্ড দেখে মিনার বাবা সমাজে মুখ দেখাতে পারে না। যে কারনে এক সময়ে মিনার বাবা স্টক করে মারা যান। তখন মিনার বাকী ভাই বোনেরা সিদ্ধান্ত নেন যে জীবনে কোনদিনও এমন বোনের চেহারা দেখবে না। এদিকে মিনার প্রাক্তন স্বামী মিনা কে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। আর মিনা মামুননের সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করতে থাকে। এরপর মিনা তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে থেকে যে ত্রিশ ভরি গহনা এনেছে তা সে মামুনের বাবা হাতের তুলে দেয়। কারন মামুনের বাবা আমেরিকা যাওয়ার ‍সুযোগ পেয়েছে। আর এই জন্য মিনা তার নামে যে জমিটি ছিল সেটাও বিক্রি করে দেয়।আর মামুনের বাবা মিনার সব টাকা গুলো এক সাথে করে ছোট দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমায়।কথা থাকে পরে তিনি মিনা এবং তার স্বামী কে নিয়ে যাবে।

এদিকে মিনার কোল জোড়ে আসে মামুনের সন্তান। আর মিনা তার সেই সন্তান নিয়ে তার মা এবং বোনদের কাছে যেয়ে পায়ে ধরে কান্না করে। তার বোনেরা প্রথমে মেনে না নিলেও মিনার নতুন শ্বশুড় শ্বাশুড়ী যে আমেরাকায় গেছে সেটা জেনেই ‍ ‍মিনাকে মেনে নেয় । এরপর মিনার কোল ঝুরে একে একে তিন সন্তান আসে। এক সময়ে মিনা এবং তার পুরো পরিবার আমেরিকায় চলে যায় মামুনের পরিবরের সাথে। সে আমেরিকায় বেশ বিলাশ বহুল জীবন যাপন করছে আজও। তার কখনও সেই মানিকের কথা মনে পড়ে না। মিনা এখন তার নতুন জীবন নিয়ে বেশ সুখে আছে। ভালো সম্পর্ক আছে তার বোনদের সাথেও। বেশ সুন্দর করে মিনার জীবন কেটে যাচেছ

এদিকে মানিকের বাবাও আবার বিয়ে করে নেয়। কিন্তু সৎ মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে তো দূরের কথা। মানিকের কপালে এখন দু মুঠো ভাতও জোটে না। বেশ কষ্টে কাটে মানিকের জীবন। দিনে দিনে মানিক বড় হয়ে যায় এবং নেশার পথে পা বাড়ায়। এক সময়ে নেশা করতে করতে মানিকে হয়ে যায় পাগল। আর তাই তো মানিকের স্থান আজ হলো মানসিক হাসপাতালের বিছানায়।

image.png

শেষ কথা

সত্যি বলতে কি জানেন মানিকের জন্য কিন্তু আমার বেশ মায়া লাগছিল। কি দোষ ছিল মানিকের? আর কেনই বা মানিকের স্থান আজ মানসিক হাসপাতালে? মিনা কি পারতো না মানিক কে সাথে করে নিয়ে যেতে? আসলে মাঝে মাঝে ভেবেই কুল পাই না যে এমন কেন হয়? কেন মানিকের মত সন্তান রেখে মিনা কে মামুনের হাত ধরে চলে যেতে হবে? যদি মামুন কে মিনার ভালোই লেগে থাকে , তাহলে মানিকের বাবা কে কেন বিয়ে করেছিল? আর মানিক কেনই বা আজ মানসিক হাসপাতালে। এসব প্রশ্ন রইল জাতির কাছে।

image.png

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

image.png

Screenshot_1.png

Sort:  
 last year 

আপনার এই গল্পটির প্রথম পর্ব আমার পড়া হয়েছিল, যার কারণে এই কয়েকদিন পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে গল্পটার শেষ পর্ব আমাদের মাঝে শেষ করেছেন, সেটা পড়ে সত্যি আমার অনেক খারাপ লেগেছে। মিনা তো এখন তার নতুন জীবন নিয়ে সুখেই আছে। তবে মানিকের জীবনটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে একেবারে। এখন সে মানসিক হাসপাতালে, এটা ভাবতেই কষ্ট লাগছে। মিনা যদি মামুনকে এতটাই ভালোবাসতো, তাহলে মানিকের বাবাকে কেন বিয়ে করেছিল? এবং মানিকের জীবনটাই বা কেন নষ্ট করেছিল? আসলে এরকম প্রশ্নগুলো আমাদের মনে থেকে যায়।

 last year 

ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটি পড়ে সুন্দর একটি মতামত করার জন্য।

 last year 

একজন মা কি করে পারে সন্তান কে ফেলে নিজের সুখের জন্য অন্য কারো হাত ধরে পালাতে।মিনা খুব বাজে একটা কাজ করেছে। মিনার কুকর্মের কারণে আজ মিনার সন্তানের জিবনটা নষ্ট। মিনার বাবার মৃত্যু।মিনার বান্ধবী মিনার অপকর্মের জন্য শাস্তি পেলো।মানিকের জিবনটা নষ্ট হয়ে গেলো খুব র্মামন্তিক ঘটনা।ধন্যবাদ পোস্ট টি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

জি আপু এই ঘটনাটি ছিল তখনকার সময়ের বেশ আলোড়িত ঘটনা। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.14
TRX 0.24
JST 0.032
BTC 88442.96
ETH 2187.19
SBD 0.87