সুমির আত্মহত্যা

in আমার বাংলা ব্লগlast month
" আজ বুধবার ১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

dead-end-1529593_1280.jpg

source

আজ আবারও ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজ আমি আমার পাশের বাড়িতে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব কাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছি। কোথাও কোনো ঘটনা শুনলে কিংবা জীবনের কোন গল্প থাকলে, অথবা চোখের সামনে কোন ঘটনা ঘটলে সেসব বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে ভীষণ ভালো লাগে। কেননা আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আমরা সকলেই আমাদের সুখ-দুঃখের কথা ভাগাভাগি করে নেই। আর তাই আমিও চেষ্টা করি আমার ভালোলাগা ও খারাপ লাগা কথাগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে।

আজ আমি আমার পাশের বাড়ির, সুমি নামের একটি মেয়ের, জীবনের কাছে হেরে যাওয়ার গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। এই সুমি নামের মেয়েটি আমার বাসার সব ধরনের কাজে সহযোগিতা করতো। সেই সাথে আরো একটি বাড়িতেও কাজ করতো। একসাথে দুটো বাড়িতে কাজ করে সারাদিন খুব পেরেশানিতে থাকতো। তবুও সে তার স্বামীর সংসার নিয়ে বেশ ভালই সুখে দিন যাপন করতো। কিন্তু হঠাৎ করে সুমি ও তার স্বামীর মাঝে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়েছিল। যার কারণে সুমি একদিন রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল। আর যখন শুমি তার বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিল, তখন আমার বাড়িতে সাহায্য করার মত কেউ ছিল না, যার কারণে আমার অর্ধাঙ্গিনীর খুবই কষ্ট হয়েছিল।

মাঝে মাঝে আমার অর্ধাঙ্গিনী খুব দুঃখ করে বলতো, সুমি নেই তাই আমার খুব কাজের চাপ বেড়ে গেছে। মেয়েটি খুব ভালো কাজ করতো। আমার সংসারের সবকিছুই তার মুখস্থ ছিল। আমার অর্ধাঙ্গিনী বাড়িতে না থাকলেও, সে তার সকল দায়িত্ব খুব সুন্দর ভাবে পালন করত। আমার ছেলে ও মেয়ে দুটোকে দেখাশোনা করা, সেই সাথে রান্নার টুকিটাকি কাজ করায় ও ভালো সাহায্য করত। যাইহোক সুমি বাপের বাড়িতে গিয়ে প্রায় এক থেকে দেড় মাস থাকার পর, সুমির স্বামী আবারো তাকে বুঝিয়ে সাজিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।

তবে বুঝিয়ে সুুঝিয়ে বাড়িতে আনলে কি হবে, বাড়িতে নিয়ে আসার পর আবারও সুমির সাথে তার স্বামীর তুমুল ঝগড়া-বিবাদ লেগেছিল। আর এই ঝগড়া সুমির কিছুতেই ভালো লাগতো না। মাঝে মাঝে আমার বাড়িতে এসে, সুমি তার স্বামীর বিষয় নিয়ে খুব আফসোস করতো। হয়তো সুমির স্বামী সুমির সাথে মোটেও ভালো ব্যবহার করত না। আমি অবশ্য সুমির স্বামীকে খুব ভালোভাবেই চিনি, আমার কাছে কখনো তাকে দেখলে খারাপ লোক হিসেবে মনে হতো না। তবে কি জানি, হয়তো তাদের সম্পর্কটা ঠিকঠাক চলছিল না। আর কি কারনে তাদের এমন মনোমালিন্য হত, তাও স্পষ্ট ভাষায় কোনদিন সুমি বলতো না।

শুধু বলতো সুমির সাথে তার স্বামী খুবই খারাপ ব্যবহার করে। যাইহোক একদিন সকালবেলা সুমি তার স্বামীকে বাজারে মুরগির মাংস আনতে পাঠিয়েছিল। আর ঠিক সেই সময় তার স্বামী ঘরে না থাকা অবস্থায়, সুমি গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। সুমি যখন আত্মহত্যা করেছিল তখন আমরা বাড়ির সকলে মিলে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা যখন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম, তখন তার নিথর দেহটি মাটিতে শুয়ে রেখেছিল। খুবই খারাপ লেগেছিল সুমিকে দেখে। সুমির লাশ দেখতে গিয়ে জেনেছিলাম, রাতের বেলায় স্বামীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ হওয়ার কারণে, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে স্বামীকে বাজারে পাঠিয়ে দিয়ে, সুমি আত্মহত্যা করেছে।

কি এমন কারনে, কি এমন অভিমানে, এত বড় সিদ্ধান্ত সুমী নিয়েছিল তা আজও জানা হয়নি। অভিমান ও রাগ, এই দুটো খুব খারাপ জিনিস। যারা কন্ট্রোল করতে পারে তারা কখনোই এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনা। আর যারা নিজেদেরকে কন্ট্রোল করতে পারেনা, তারা হয়তো সুমির মতো আত্মহত্যা করে অকালেই ঝরে যায়। আজ সকাল বেলায় আমার অর্ধাঙ্গিনী স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল, আর সুমির কথা ভীষণ মনে করছিল। যতদিন সুমি আমাদের বাড়িতে ছিল, ততদিন আমার অর্ধাঙ্গিনী রিলাক্সে তার চাকরিটি করতে পেরেছিল।

আর যখন থেকে সুমি নেই, তখন থেকে আমার অর্ধাঙ্গিনীর কাজের চাপ ভীষণ পরিমাণে বেড়ে গেছে। কেননা এখন সাহায্য করার মত ঠিকঠাকভাবে তেমন একটা লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। আর যাদের পাওয়া যায়, তারা হয়তো বিশ্বস্ত হয় না। এদিক থেকে সুমি খুবই নিরীহ, দয়ালু ও বিশ্বস্ত ছিল। যাকে চোখ বন্ধ করেই বিশ্বাস করা যেত। আজ হঠাৎ করে তার কথাগুলো মনে পড়তে, মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। তাই ভাবলাম সুমির এই অকাল মৃত্যুর কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নেই। যদিও বা ঘটনাটি অনেকদিন হয়ে গেল, তবুও মনে হচ্ছে এই যেন চোখের সামনে কিছুদিন আগেই ঘটনাটি ঘটে গেল।

তবে আমি সবাইকে বলবো, কেউ যেন কখনো মান-অভিমান করে, রাগের বশবর্তী হয়ে, ভুল করেও কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে না নেই। কেননা আত্মহত্যার পথ কখনোই সমস্যার সমাধান দিতে পারেনা। বরং যুদ্ধ করে হলেও সমস্যার সমাধান করতে হবে। জীবনে বেঁচে থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব, আর যদি জীবনটাই না থাকে তাহলে তো সব বৃথাই হয়ে গেল। যাইহোক বন্ধুরা, সুমির কথা ভীষণ মনে পড়ে যাওয়ায় আপনাদের মাঝে সুমির কাহিনীটি শেয়ার করে নিলাম।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPzTvQMACwKNFZQJ7pxggdSjJrTwUPfvw5ACADZkgZp15JNSrbbA8JDhreM215...mPystgVQensArHCRKjKxdTTn4z8CzJ75SPGztHTdSBvh83QCCwXGdUrNq1FfjRoQgWa5hQQVU76dcRdC6dVc5ZVufX6xZjgEMFGu7VP2WDvjx9TwsukxXrdyyg.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 last month 

গতকালই এই বিষয়টি নিয়ে আমি একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করেছিলাম। আর আজ তো দেখছি আমার মিয়া ভাই সুমীর আত্মহত্যার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছে। বেশ খারাপ লাগলো সুমীর জন্য। ধন্যবাদ মিয়া ভাই এমন একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last month 

সুমির এমন করুন মৃত্যুর জন্য আমাদের কাছেও খুবই খারাপ লাগে আপু। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 last month 

কিছু মানুষ রয়েছে তার পরিবারের সাথে অকারনে খারাপ আচরণ করে থাকে। এ সমস্ত বিষয়গুলো ভাবতে খুবই খারাপ লাগে। সুমি কঠোর পরিশ্রম করতে দুই বাড়িতে। তার সংসার টিকিয়ে রাখত তারপরেও তার স্বামীর খারাপ আচরণের জন্য তার আজকের এই পরিণতি। ঠিক এভাবে অনেক মেয়ের জীবন চলে যায়। আমাদের এই বিষয়ে খুবই সজাগ হতে হবে এবং দেশের আইন যেন এ বিষয়ে আর কঠোর হয়।

 last month 

ঠিক বলেছেন আপু, সুমি কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালাত। তবুও স্বামীর কাছ থেকে সে ভালো ব্যবহার কখনো পায়নি। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last month 

ভাইয়া আত্মহত্যা কোন সমাধান না। সুমি তার স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়েছে সংসার জীবনে এরকম মাঝেমধ্যে হয়ে থাকে। সে রাগ করে তার বাবার বাড়িতে গেল তাকে বুঝি আবার স্বামী নিয়ে আসলো। আসলে সে আত্মহত্যা করে নিজের জীবন নষ্ট করেছে। সেই ইচ্ছা করলে পারতো সমাধা খুঁজে বের করার জন্য। আসলে নিজের জীবন দিয়ে সে এই দুনিয়া থেকে চলে গেল। অথচ তার পরিবার মা-বাবা যতদিন বেঁচে থাকবে তারা তার কথা মনে করে কান্নাকাটি করবে। এরকম আত্মহত্যা যেন কেউ আর না করে এটাই চাই। হয়তোবা আপনার বাসায় কাজ করতো বিদায় আপনাদের পরিবারে একটু সুবিধা হত। বাস্তব একটি কাহিনী শেয়ার ধরার জন্য ধন্যবাদ।

 last month 

ঠিক বলেছেন ভাই, আত্মহত্যা কখনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 last month 

ভাইয়া সুমি মেয়েটির আত্মহত্যার কথা শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো। এই সমাজে এমন অনেক সুমি রয়েছে যারা অকালেই তাদের জীবন ত্যাগ করেছে কিন্তু কেন করেছে তা আজও কেউ বলতে পারে না। সামান্য ঝগড়ায় কেউ এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। হয়তো সুমির সাথে এমন কিছু হয়েছে যা সে মেনে নিতে পারেনি। তবে আত্মহত্যার মতো এত বড় একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সে খুব খারাপ কাজ করেছে। তারজন্য আমাদের সবার উচিত রাগ অভিমান কন্ট্রোল করা তা না হলে সুমির মতোই অবস্থা হবে। আপনাদের বাড়িতে কাজ করতো বলেই হয়তো সুমি কেমন মেয়ে ভালো করে জানতে পেরেছেন। কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা চলে গেলেও তাদের কে মানুষ সবসময়ই মনে রাখে।

 last month 

হ্যাঁ আপু, সুমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে খুবই ভুল করেছিল। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 last month 

খুব দুঃখজনক ঘটনা ভাইয়া।আসলে ভালো মানুষ বেশিদিন থাকে না পৃথিবীতে। কি এমন কষ্ট কি এমন অভিমান যে চিরদিনের জন্য এতো সাধের মানুষ্যজন্ম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।আপনার গল্পটি পড়ে আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।আসলে কিছু কিছু অকাঙ্খিত মৃত্যু আমাদের কে সারাজিবন কষ্ট দেয়। সেরকম সুমির মৃত্যু তে ভাবিও আপনি কষ্ট পাচ্ছেন।ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 29 days ago 

ঠিক বলেছেন দিদি, কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মানুষকে সারা জীবন কাদায়। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 62770.12
ETH 3467.22
USDT 1.00
SBD 2.53