বাসস্ট্যান্ডের আগন্তুক : পর্ব ১

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)


Copyright free Image : Pexels

নমস্কার বন্ধুরা,

সবাই কেমন আছেন? আশা করছি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা সকলেই ভালো। আজ থেকে আমি নতুন প্রচেষ্টার শুরু করলাম। ঘাবড়াবেন না, নতুন প্রচেষ্টা বলতে আমি গল্প লেখার চেষ্টা করছি মাত্র। আশা করি "আমার বাংলা ব্লগে" আমার প্রথম গল্প আপনাদের ভালো লাগবে, ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আর যদি ভালো নাও লাগে তাহলেও কমেন্টের মাধ্যমেই জানাবেন। আর দেরী করাটা ঠিক হবেনা, চলুন শুরু করা যাক।


বাসস্ট্যান্ডের আগন্তুক : পর্ব ১


অফিসের কাজ শেষ করতে করতে অমিতের বেশ রাতই হয়ে গেলো। বছরের শেষের এই দিনগুলোতে ব্যাংকে কাজের চাপ অনেকটাই বেশি থাকে। যদিও মাসের শুরু হতেই অমিত তার ম্যানেজারের কাছে আজকের দিনটায় একটু আগে বেরোনোর আর্জি দিয়ে রেখেছিল তবুও শেষমেশ কাজ শেষ করতে দেরীই হয়ে গেলো।

আসলে আজ পুটুর জন্মদিন। ঠিক দু বছর আগে আজকের তারিখে অমিতের মেয়ে পুটু জন্মেছিল, তার জন্যই বাড়িতে ছোটো করে জন্মদিনের আয়োজন হয়েছে। কিন্তু কাজের চাপে অমিতের আজকেও সেই দেরী হয়ে গেলো। অমিতের ব্যস্ততা কারণে পুটুর মা একা হাতেই সব কিছুর আয়োজন করেছে। কি করতে যে ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকেছিলো, গজরাতে গজরাতে অফিসের ব্যাগটা গুছিয়ে ফেললো অমিত।

এইতো সেদিনের কথা যখন পুটুকে কোলে করে অমিত হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে এলো। বাড়ির সবাই যার পরনাই না খুশি। আর সেই পুচকে পুটু দেখতে দেখতে দুটো বছর কাটিয়ে ফেললো। গুটি গুটি পায়ে বাড়িতে ঘুরঘুর করে বেড়ায়। আর সবে অল্প অল্প কথা বলতে শিখেছে, তাতেই বাড়িসুদ্ধ সব্বাইকে মাতিয়ে রাখে। অমিত সেসব ভেবে হাসতে হাসতে ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লো।


অফিসের বহুতল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসতেই অমিতের যেন হুঁশ ফিরলো। রাস্তায় উঠতেই অফিসের গমগমে ব্যাপারটা নিমেষেই উধাও হয়ে গেলো। চারিদিকে চোখ ফিরিয়ে দেখলো রাস্তা ঘাট পুরো শুনশান করছে। কাছে পিঠে কোনো জন মানুষের দেখা নেই। শুধু কয়েকটা কুকুর রাস্তার মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে।

অন্যদিন অফিস থেকে বেরোনো মাত্র হাজার খানা অটো যেন গায়ের উপরে চড়ে আসে, আজ ব্যাটাদের একটারও দেখা নেই। অটো না পেয়ে অগত্যা অমিত অফিসের গেটে দাড়িয়ে থাকা গার্ডকে গিয়ে অটোর কথা জিজ্ঞেস করলো। গার্ড বলে উঠলো,

"ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অটো অ্যাসোসিয়েশন সন্ধ্যে ছটা থেকেই বনধ ডেকেছে।"

বাধ্য হয়েই অমিত অফিসের গাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলো। অমিত যেটা আশঙ্কা করছিলো গার্ডও সে কথাই জানালো,

"অফিসের গাড়ি বেরোতে আরো ঘন্টাখানেক সময় লাগবে।"


অমিত কথা না বাড়িয়ে আবার রাস্তা মুখো হলো। হঠাৎই সে সময়ে রাস্তায় শুয়ে থাকা কুকুর গুলো বেশ নড়েচড়ে উঠে বাসস্ট্যান্ডের দিকটায় তাকিয়ে সমানে ঘেউ ঘেউ করতে করতে সেদিকে ছুটে চলে গেলো। সেদিকে বিশেষ খেয়াল না করে অমিত বাসস্ট্যান্ডের দিকেই হাঁটতে শুরু করলো। এমনিতেই অনেকটা দেরী করে ফেলেছে আর দেরী করলে হবেনা, এইবার তাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতেই হবে। ওদিকে পুটু অপেক্ষা করছে যে।



Copyright free Image : Pixabay


বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অমিত ভাবতে শুরু করলো যে গত ছয় বছর চোখের নিমিষেই কেটে গেছে তার। বিয়ে হওয়া পাঁচ বছর হয়ে গেলো অথচ তার কাছে সময়টা যেন অল্পই ঠেকছে। এইতো সেদিন পৌলমীর সাথে পরিচয় হলো। তারপর বিয়েটাও ঝট করে হয়ে গেলো।

বছর ছয়েক আগে, এক বন্ধুর বিয়েতে পৌলোমীকে দেখেই অমিতের খুব ভালো লেগে যায়। পছন্দের কথা বন্ধুকে জানালে সেই বন্ধুই দায়িত্ব নিয়ে দুজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুজন ধীরে ধীরে একে অপরকে চিনতে শুরু করে। ফের মাস ছয়েকের দেখা সাক্ষাৎ। তারপর দু জন বাড়িতে জানিয়ে পারিবারিক ভাবেই বিয়ের জন্য যোগাযোগ হয়। দু তরফের পরিবারের সম্মতি হতেই চার হাত এক করে দেওয়া হলো।

মাস ছয়েকের প্রেমেই অমিত বুঝতে পারে পৌলমী মানুষটা খুব ভালো। সন্তানের জন্মদিনেও অমিত যে কাজ করবে সেটা আগে থেকে জেনেও পৌলমী এক ফোঁটাও রাগ করেনি। অমিতের কাজের গুরুত্বটা সে বোঝে। উল্টে জন্মদিনের সব কাজ নিজের হাতে সামলেছে। কেক কেনা থেকে শুরু করে, ঘর সাজানো। রান্না বান্না। সব নিজের হাতে।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে অমিত বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গেলো...


চলবে....





Support @heroism by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

|| Join HEROISM ||

Sort:  
 2 years ago (edited)

ব্যাংকের চাকরিতে একটু চাপ বেশি থাকে মাঝে মাঝে। অমিত তো খুব লাকি পৌলমীর মত একটি বউ পেয়েছে জীবনে তার কাজের ব্যস্ততার রেসপেক্ট করতে জানে সে । অমিতের বন্ধুরাও খুব ভালো দেখছি, অমিতের দুই হাতকে বন্ধুরা মিলে চার হাত করেছে অতঃপর এই চার হাত আরো দুই হাত বাড়িয়ে সর্বমোট ছয় হাত করল। যাইহোক জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল পুটুর জন্য। অমিতের বাস স্ট্যান্ডের কাহিনী রোমাঞ্চকর হতে চলেছে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ,দাদা।

 2 years ago 

বন্ধুরা তো ভালোই হয়। বাঁশ দিতে 🤪

 2 years ago 

হিহি... সেটা তো নরমাল বিষয় এবং চিরন্তন ধ্রুব সত্য কথা দাদা।

 2 years ago 

দাদা আপনার লেখা গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। অমিতের বাসস্ট্যান্ডের কাহিনী, খুবই রোমাঞ্চকর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অমিতের সাথে পৌলমীর পরিচয় এর পরের বিষয়টা খুবই চমৎকার ছিল। দাদা পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

ধন্যবাদ বিদ্যু ভাই 😇

 2 years ago 

অমিতের মত অনেক বাবারাই এইরকম মনের অজান্তে পুটুদের নিয়ে হাসে। ব্যাংকের চাকরিতে সারাদিন যেভাবে অনেক মানুষের ভিড়ে থাকতে হয় সেইজন্য অফিস থেকে বের হতেই গমগমে ভাবটা চলে গেল। পৌলমি আসলেই ভাল বউ কারন আজকালকার বৌরা ত জামাই এর সাহায্য ছাড়া বাসার কোন কাজই করতে চায় মা। ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

দুজনে মিলে কাজ করলে কাজটা হালকা হয়েই যায়।

 2 years ago 

দাদা গল্পটি পড়ে আমার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে পরবর্তিতে কি অমিতের সাথে পল্লবীর প্রেম বা বিয়ে হবে?

 2 years ago 

হ্যাঁ। হয়েছে।

 2 years ago 

পড়েছি বেশ কিছুক্ষণ আগেই,এখন কমেন্ট করছি।গল্প পড়তে বরাবর ই ভালো লাগে আর তার মাঝে রহস্য থাকতে আরো বেশি ভালো লাগে।অনেকদিন পর গল্প পড়তে পারলাম।দ্রুত আপডেট দিয়েন,ভালো হচ্ছে।

 2 years ago 

আপডেট দিয়েছি 🤪

 2 years ago 

যারা ব্যাংকে জব করে তারা বলে ব্যাংকে কেন জব হলো আর যারা অন্য সেক্টরে জব করে তারা বলে ব্যাংকে কেন জব হলো না। সপ্তাহে দুইদিন ছুটি। যায়হোক ভাইয়া পুটু নামটা ভালই লাগছে। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

সবার সেক্টরেই দুঃখ লুকিয়ে আছে

গল্পটা বেশি ইন্টারেস্টিং হতে শুরু করেছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। অমিতের সাথে পল্লবীর সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এটা জানার ইচ্ছে রইল।

 2 years ago 

বিয়ে হয়েছে পাগলা, নইলে পুটু হলো কিভাবে 🤪

তাহলে আমি কি পড়লাম। জ্বর হয়েছে তো সব উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে। দাড়াও পরের পর্ব পড়ে নেই।

 2 years ago 

তাড়াতাড়ি লেখা চাই। টান টান উত্তেজনা অনুভব করছি।নতুন লেখা কিন্তু মোটেই বুঝতে পারছি না। একদমই পরিপক্ক লাগছে। বেশ ভালো। চালিয়ে যান।

 2 years ago 

লিখে ফেলেছি 😝

বনধের দিন সত্যিই হয়রানি হয় সাধারণ মানুষের। যাই হোক আপনার গল্পটা সাধারণ হয়েও যেনো পড়ার উৎসুকতা টা বাড়িয়ে দিচ্ছে, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

নতুন পর্ব চলে এসেছে

বাহ খুব ভালো

 2 years ago 

বাসস্ট্যান্ডের আগন্তুক : পর্ব ১ গল্পের সূচনা ও ভূমিকা অত্যন্ত দারুন হয়েছে দাদা। আপনার আগামী পর্বগুলো দেখার অপেক্ষায় রইলাম। নির্দ্বিধায় লিখতে পারেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

ধন্যবাদ অমিতাব বাবু।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 60745.98
ETH 2342.23
USDT 1.00
SBD 2.52