গ্লেন ম্যাক্সওয়েল - ওয়ান ম্যান আর্মি
নমস্কার বন্ধুরা,
২০২৩ এক দিবসীয় ক্রিকেট বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তানের ৩৯ তম ম্যাচ বিশ্বকাপ ইতিহাসে স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। মনের জোর থাকলে কতটা দূর এগিয়ে যাওয়া যায় সেটা আজকের ম্যাচে আবার প্রমাণ হলো। যেখানে অস্ট্রেলিয় ব্যাটিংয়ের ২০ ওভার শেষে ম্যাচ তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছিলো, মনে হচ্ছিলো আফগানিস্তান খুব সহজেই জিতে যাবে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে, কিন্তু বাঁধ সাধলো ম্যাক্সওয়েল নামক এক অদম্য যোদ্ধার। আফগানিস্তানের মুখ থেকে একপ্রকার জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসলো।
মুম্বাইয়ের টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহীদি। বিগত ম্যাচে গুলোতে ভালো খেলে আসা আফগানিস্তান অনেকটাই মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামে যেটা তাদের ব্যাটিংয়ে পরিস্কার ছিলো। ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালই হয়। ৩৮ রানে ওপেনার গুরবাজ আউট হলেও আরেক ওবেনার জারদান রহমতকে নিয়ে জুটি বাঁধে। দুজনে ৮৩ রানের পার্টনারশিপ করে। ১২১ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে আউট হয় রহমত। দ্বিতীয় উইকেট পড়লে ব্যাট করতে নামে আফগানিস্তান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহীদি। জারদানের সাথে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেও ২৬ রানের মাথায় স্টার্কের শিকার হয়ে যায়।
তারপর আজমত উল্লাহকে সঙ্গে করে আরো কিছুটা রান করে জারদান। অস্ট্রেলীয় বোলাররা পরপর দুটো উইকেট ফেললে আফগানিস্তান অল্প চাপে চলে যায়। ইনিংসের শেষভাগে রাশিদ খান নেমে ঝড়ো ব্যাটিং করলে আফগানিস্তানের ৫০ ওভার শেষে স্কোর দাড়ায় ২৯১। জারদান ব্যক্তিগত ১৪৩ রান করে যা কোনো আফগান ক্রিকেটারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি।
ওয়ানখেড়ের কালো পিচে ২৯১ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নামে ফর্মে থাকা অস্ট্রেলিয় ব্যাটিং লাইন। মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া খুব সহজে লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। ক্রিকেট দেবতা যে অন্যরকম চিন্তাভাবনা করে রেখেছিলেন সেটা আফগানিস্তানের বোলার নভিন উল দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার ট্রাভিস হেডকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে বুঝিয়ে দেয়। ডেভিড ওয়ার্নার মার্শের সাথে জুটি বাঁধে। ৪৩ রানের মাথায় মার্শকেও নভিন উল প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখায়। তারপরে আজমত উল্লাহ রশিদ খানদের সামনে অস্ট্রেলীয় ব্যাটাররা খেই হারিয়ে ফেলে।
অল্প বিরতিতে অস্ট্রেলিয়া ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে।অষ্টম উইকেটে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয় অধিনায়ক প্যাট কামিনস, অপরদিকে তখন আরেকটি মাত্র ব্যাটার ৬ নম্বরে নামা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২২ তম ওভারে ম্যাক্সওয়েল ব্যক্তিগত ৩৩ রানে থাকাকালীন মুজিব সহজ ক্যাচ মিস করে। সেই মিস আফগানিস্তানের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ২৩-তম ওভার থেকেই ম্যাক্সওয়েল দ্রুত ব্যাট চালানো শুরু করে। ফলে পরের দশ ওভারে বিনা উইকেটে ৭১ তুলে নেয়। ৩০ ওভার শেষে শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান দাঁড়ায় ১৭৯। তারপর প্রথম ২০ ওভারে জাদু চলতে থাকা আফগানিস্তানের বোলাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ৪০ তম ওভার শেষ হতে হতে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয় ৭ উইকেটে ২৩২।
অপরদিকে উইকেট ধরে রেখে যোগ্য সঙ্গত দিতে থাকে অস্ট্রেলিয় অধিনায়ক। খেলার মাঝে ম্যাক্সওয়েল চোট পেলেও তার ব্যাটের গতি থামেনি। ৪৭ তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে লেগে বল উড়ে বাউন্ডারি পেরোতেই অস্ট্রেলিয়ার জেতার জন্য ২৯২ রান তুলে নেয়।

সত্যি কালকে যখন খেলা দেখছিলাম তখন রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম অবস্থায় ভেবেছিলাম অস্ট্রেলিয়া হয়তোবা পারবে না কারণ তাদের যে বেহাল দশা হয়ে গিয়েছিল তাতে কেউই ভেবেছিল না যে অস্ট্রেলিয়া গতকালকের ম্যাচ জিততে পারবে। শেষ পর্যায়ে এক ম্যাক্সওয়েল যে এরকম তান্ডব শুরু করবে সেটা কি কেউ ভেবেছিল..?? ম্যাক্সওয়েল দারুণ একটি ম্যাচ উপহার দিয়েছে সেই সাথে এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ হাই স্কোর এর মালিক। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি রিভিউ তুলে ধরার জন্য।
আসলেই দাদা গতকালকের ম্যাচে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যা করে দেখালো সেটাকেই বলে ওয়ান ম্যান আর্মি। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসে এরকম ম্যাচ খুবই কম দেখা যায়। সাতটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও এত বড় রান চেস করে জেতাটা সত্যি অতি মানবীয় ব্যাপার। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা সুন্দর একটি পোস্ট বিস্তারিতভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ম্যাক্সওয়েল এর এই খেলা আজীবন মনে রাখবে অস্ট্রেলিয়ানরা। এমন ম্যাচ এর আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। একটা সময় ভেবেছিলাম অস্ট্রেলিয়া ১৫০ রানের আগেই অলআউট হয়ে যাবে। আসলেই ম্যাক্সওয়েল একজন দেশপ্রেমিক। নিজের দেশকে জিতানোর জন্য পায়ের ব্যথা নিয়েও একাই যুদ্ধ করে গিয়েছে। তবে আফগানিস্তান দল নিঃসন্দেহে ভালো খেলছে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।