সারা বাংলা জুড়ে ধুমধাম করে পালিত হল বিশ্বকর্মা পুজো। সেই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।
বিশ্বকর্মা পুজোর হাল হকিকত
গতকাল সারা বাংলা জুড়ে ধুমধাম করে পালিত হলো বিশ্বকর্মা পুজো। বিশ্বকর্মা দেবশিল্পী। ঋগ্বেদ থেকে শুরু করে রামায়ণ মহাভারত সমেত প্রায় সমস্ত আদি গ্রন্থেই দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার উল্লেখ আছে। তিনি হলেন সত্য এবং সৃষ্টির দেবতা। রামায়ণ মহাভারতের মতো বিভিন্ন মহাকাব্যে সকল রকম নির্মাণে তাঁর ভূমিকা অগ্রণী। সারা ভারত জুড়ে, বিশেষ করে এই বাংলায় ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথিতে পালন করা হয় এই দেবতার পুজো। সাধারণত বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে, কারখানায়, বাস, অটো, রিক্সা স্ট্যান্ডে অথবা কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পালন করা হয় বিশ্বকর্মা পুজো। সারাদিন ষোড়শোপচারে পুজো হয় নিয়মবিধি মেনে। সঙ্গে থাকে ঢাকের বাজি এবং ঘন্টার ধ্বনি।
আসলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের একরকম সূত্রপাত হয় এই বিশ্বকর্মা পূজোর মাধ্যমে। দুর্গাপুজোর গন্ধ এবং পরিবেশে শরতের আবাহনের পরিচায়ক হল এই পুজো। তাই সকল মানুষের জীবনে সরাসরি কোন যোগাযোগ না থাকলেও এই পুজোয় মনন থেকে ভীষণ আনন্দে জেগে ওঠে বাঙালি। পুরাণের বিভিন্ন অধ্যায়ে আমরা দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখতে পাই। যেমন ব্রহ্মার জন্য পুষ্পক রথ তৈরি করেন তিনি। যদিও পরে ব্রহ্মা এটি কুবেরকে দান করেন এবং তারপর দশানন রাবণ কুবেরের থেকে এটি হস্তগত করেন। এছাড়া রাবণের স্বর্ণালঙ্কাও নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। যদিও সেটি তৈরি হয়েছিল কুবেরের জন্য। কিন্তু পরে রাবণ এই নগরীও কুবেরের থেকে কেড়ে নেন। রামায়ণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অস্ত্র নির্মাণ এবং স্থাপত্যে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার নাম শোনা যায়। যেমন রাম সীতাকে বিবাহ করতে এসে যে হরধনু ভঙ্গ করেছিলেন তা আসলে বিশ্বকর্মা বানিয়ে ছিলেন দেবাদিদেব শিবের জন্য। কিন্তু পরে শিব এটি পরশুরামকে দান করেন। আর সেই ধনুই ভঙ্গ করে পরশুরামের দর্প চূর্ণ করেন শ্রীরাম। এইসব গল্প শুনতে শুনতে যেন মিশে যেতে হয় পুরাণের বিভিন্ন আদি লোকগাথায়।
গতকাল বিশ্বকর্মা পুজোয় আমি বেরিয়েছিলাম আমার পেশাগত কিছু কারণে। আশপাশের পরিবেশ এবং বিভিন্ন দিক থেকে আসা ঢাকের বাদ্যি ভেসে আসছিল কানে। তারমধ্যেই ঢুকে পড়লাম কয়েকটি মন্ডপে মূর্তি দর্শনের জন্য। বিভিন্ন মণ্ডপে বিশ্বকর্মার বিভিন্ন রূপ। ব্লগে আপনাদের সামনে তুলে আনব বলে আমিও ক্যামেরাবন্দি করলাম কয়েকটি ছবি। এই উৎসবে সবথেকে ভালো লাগার বিষয়টি হলো ধনী-দরিদ্র, সামাজিক দিক থেকে বিভিন্ন স্তরের মানুষ মেতে ওঠে আনন্দে। সারা বছর তীব্র খাটুনির মধ্যে এই দুটি দিন যেন তাদের জন্য এক নিঃশ্বাস নেওয়ার ফুরসৎ। কাজের সাথে সাথে তারা মেতে ওঠে সেই আনন্দে। যদিও বাংলার বাইরে এই পুজোর খুব একটা প্রচলন নেই, তবু বাঙালির কাছে এই দিনটি হল উৎসব শুরুর মুহূর্ত।
বিশ্বকর্মা পুজো সংক্রান্ত এই পোস্ট আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। চেষ্টা করি আপনাদের সামনে তথ্যবহুল পোস্ট তুলে আনতে। সেই দিক থেকে এই পোস্ট কেমন লাগলো মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে অবশ্যই জানাবেন।
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1836291042754130348?t=yrUqiJ2EEG_8gpuIVX1LJA&s=19
বিশ্বকর্মা পুজো দিয়েই বাঙ্গালীর মনে শুরু হয় উৎসবের আনন্দ।তারপর একের পর এক আনন্দ উৎসব চলতেই থাকে কালী পূজো ভাইফোঁটা দিয়ে মোটামুটি উৎসবের আমেজ কমতে থাকে।যদিও বা আমাদের দেশে বিশ্বকর্মা পুজো সবার ঘরে ঘরে হয় না। তাই সেভাবে ঘটা করে কখনো বিশ্বকর্মা পূজো দেখতে যাওয়া হয়নি।দাদা আপনার মাধ্যমে বিশ্বকর্মা পুজো এবং এই সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরে খুবই ভালো লাগলো।অসম্ভব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই দাদা।
আমার পোস্ট মন দিয়ে পড়ে এমন সুন্দর একটি মন্তব্য করলেন বলে খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন সবসময়।