আজকের মুক্তগদ্যের পাতায় স্বাগত৷ নারী বিষয়ক একটি মুক্তগদ্য।
আজকের মুক্তগদ্যের পাতায় সকলকে স্বাগত
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই🙏
আজ আপনাদের যে বিষয়টি পড়াব সেটি বাংলা সাহিত্যের একটি নব্য ধারা। যাকে বলা হয় মুক্তগদ্য৷ অর্থাৎ মুক্ত চিন্তায় গদ্য নির্মাণ। যেমন আমি এই মুক্তগদ্যটি লিখেছিলাম একটি কেন্দ্রীয় চিন্তাকে মাথায় রেখে৷ নারী। এই শব্দটা খুব ছোট হলেও আসলে পৃথিবীর বুকে এর গুরুত্ব সর্বাপেক্ষা বেশি। নারী যেমন পুরুষ ভিন্ন অসম্পূর্ণ, ঠিক তেমন পুরুষও নারী ভিন্ন অসম্পূর্ণ। অর্থাৎ উভয় উভয়ের পরিপূরক। তবু আমরা বিভিন্ন ভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়ে উঠি স্বার্থচিন্তা করে। যা একেবারেই অভিপ্রেত নয়৷ আপনারা অনেকেই মহাভারত পড়েছেন না তার মূল ঘটনাক্রম জানেন। সেখানে দ্রৌপদী চরিত্র হল নারী হিসাবে বহুল চর্চিত একটি চরিত্র৷ কত বৈচিত্র তাঁর চরিত্রে৷ কতরকম স্তর। আমরা একদিকে দেখি এক পুরুষ দুঃশাসন তাঁর বস্ত্রহরণ করে ভরা কুরু রাজসভায় তাঁর তীব্র অপমান করছেন, আবার বিপরীতে দেখেছি শ্রীকৃষ্ণ সেখানেই তাঁকে কাপড় জুগিয়ে সাহস ও বরাভয় দিয়ে ইজ্জত রক্ষা করছেন। অর্থাৎ ভিন্নধর্মী দুই পুরুষের ভিন্ন দুই কার্যক্রম। অথচ তাঁরা উভয়েই তো পুরুষ। আমরা বলে থাকি ধর্ষক কখনো পুরুষ নয়৷ এটি একটি বিকৃত জাতি, যা সমাজের লজ্জা হিসাবেই পরিচিত৷ দ্রৌপদীরা আজও বিভিন্ন ভাবে সমাজে বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হন। বিভিন্ন সময় লড়াই করতে হয় পরিস্থিতির সাথে। খবরের কাগজে চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাই সেসব ঘটনা। সমাজ পরিবর্তনশীল। কিন্তু যুগে যুগে নারীর অবস্থান কী বদলেছে? আজও দ্রৌপদীরা বিপদে পড়েন যত্রতত্র। আবার পুরুষেরাই ঘিরে রাখে নিজের মতো। এটাই সমাজের নিয়ম। কিন্তু আমরা চাই বিপদমুক্ত সমাজ। যেখানে রাতে হেঁটে চলাফেরা করতে হলে নারীদের নিরাপদ মনে হবে। যেখানে তাঁরা চিৎকার করে বলতে পারবেন, যে সব পুরুষই নিরাপদ।
আসুন এই বিষয়ে একটি মুক্তগদ্য পড়াই৷ যেখানে দ্রৌপদীর জবানিতে কিছু কথা বলা রইল আজকের রমনীদের উদ্দেশ্য করে।
☘️মুক্তগদ্য☘️
হে আর্যসমাজ, চিৎকার করে বলো তুমি কার? যে হাতে বস্ত্র ধরে আমার সম্ভ্রম বাঁচালে, তার দায় কার? পুরুষের হাতে লাঞ্চিত হয়ে পুরুষের হাতেই তার নিরাময় পেয়েছি। তাহলে পুরুষ কে?
হে করুণাসিন্ধু, তোমার হাতে যে অন্ধকারে আলো ফুটেছিল, তার সর্বশেষ কিরণে আলোকিত হোক সমাজ। তুমি আজও তোমার চওড়া কাঁধে তুলে নাও সমাজের দায়ভার।
হে আজকের রমণী, তুমিও বিদুষী। নিজের অধিকার ছিনিয়ে নাও দুহাতে। শিখে নাও সমস্ত সংকল্পকে চিনে নিতে। যে হাতে তুমি বইতে পারো সন্তানের ছায়া, সেই হাতেই প্রয়োজনে তুলে নাও অস্ত্র। ঝাঁসির রাণীর ঘোড়ার গতিবেগ তুমি ভুলোনা। ভুলো না প্রীতিলতার বন্দুক থেকে নির্গত বুলেটের আওয়াজ। সবকিছু নিয়ে তুমিই এযুগের ধারক ও বাহক।
সবশেষে কিছু নিজের কথা বলি। ভরা কুরুসভায় মাধব আমার সম্ভ্রম বাঁচিয়েছিল। তোমরাও একা নয়। নিজের অন্তরের শক্তি প্রয়োগ করে তোমরাও ভেঙে দিতে পারো অসংখ্য দুঃশাসনের কালো হাত। এগিয়ে যাও। সামনে তাকাও। অনেক আলো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Daily tasks-
https://x.com/KausikChak1234/status/1877325271734349894?t=PiooQbjqA_jb44uS1CD9fg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এই গদ্যটার কথা তোমার মুখে আগে অনেকবার শুনেছি কিন্তু কখনো পড়া হয়নি। আজকে পোস্ট করলে আর বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। আমার প্রিয় বিষয়ের উপর লিখেছ জানি আপাতত দিন রাত কেটে যাচ্ছে। সত্যিই দারুণ হয়েছে বিশেষ করে দূত সবার চিত্র তুলে ধরেছে বলেই আরো বেশি মন ছোঁয়া হয়েছে।
চেষ্টা করেছি লেখাটার মাধ্যমে বর্তমান নারী সমাজকে একটা বার্তা পৌঁছে দিতে। আর সেটার জন্য দ্রৌপদীকে ব্যবহার করেছি বক্তা হিসাবে। দ্রৌপদী আসলে এক প্রতিবাদী নারী সমাজের প্রতিমূর্তি। আর তাই তিনি এই সমাজকে একা হাতে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন আজও।
আপনি এখানে মহাভারত কে উপজীব্য করে গদ্য কবিতা টা লিখেছেন। সত্যি আমরা কেউই একা নয়। আমরা চাইলেই নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ টা দিয়ে নারীদের অত্যাচারিতদের পাশে দাঁড়াতে পারি। বেশ দারুণ লিখেছেন আপনি ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।।
আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই
আমরা চাইলেই অত্যাচারিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে সাহস জোগাতে পারি। আসলে এই স্বার্থপর সমাজে হয়তো এই কাজটাই সবার আগে প্রয়োজন। আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করল।