।।অপরাজিতাকে লেখা চিঠি।। (৫% এবিবি স্কুল ও ১০% সাইফক্সকে বেনিফিশিয়ারি)
।।আজ পত্রসাহিত্যের পাতা।।
আজ আমার বাংলা ব্লগ পরিবারে নিয়ে এলাম তেমনই একটি চিঠি। যা একান্তই আমার, কেবল আমার। নিজের সেই কথাগুলো আপনাদের সামনে তুলে আনলাম পত্র সাহিত্যের আকারে। যদি আপনাদের ভালো লাগে তবে অবশ্যই জানাবেন। আমার সংলাপ চিরন্তন। বাকিটুকু অব্যক্ত থাক আপনাদের অনুভূতির অপেক্ষায়।
প্রিয় অপরাজিতা,
জানো, আজ তোমায় একবার সামনে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে। শুধু একটি বার। সমস্ত আড়াল সরিয়ে একা তোমার ব্যক্তিগত চিঠি নিজের কাছে রেখে দেব, সেই অধিকার আমার নেই। কিন্তু নদীকে থামতে বললে সে আমায় দেখায় তোমার পায়ের ছাপ। এই ছাপে একরাশ নির্জনতা গোধূলির চিহ্ন রেখে যায়। হলুদ পাতারা তখনই খোঁজে নিরাপদ আড়াল। তবে একেই কি চোখে হারানো বলে? কারা যেন কথা বলে চলেছে কানের দুপাশে। আমি কি শুনতে পাচ্ছি? কেন আমার মন পড়ে থাকে দূরে৷ কী চাই আমি? একনিষ্ঠ দুটো ডানা নাকি মেঘলা একটা দিন? আজ সত্যিই তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে নুইয়ে পড়া গুল্মলতার চোখে ভেঙে ফেলি সংযম। ঝকঝকে নদীর একটা পাড় বাঁধানো৷ আর একটা পাড়ে কাঁচা মাটির ঢাল। তাই গাছের আধিক্য সেইদিকেই। ভাঙন বাঁধনহারা। একদিক ভাঙবে আর একটা দিক গড়বেই৷ এটাই তো নিয়ম। তুমি কি সেই নিয়ম জানো না? যেমন তুমি ঘুমিয়ে থাকলে নির্লিপ্ত চোখের পাতায় গড়ে তুলি কবরস্থান। তাতে কোনো বাধা নেই৷ সেই গণতান্ত্রিক নির্মাণে প্রতিবাদ করারও মানুষ নেই৷ থাকবেই বা কিকরে? কবরের কোনো দরজা হয় না। যাঁরা সমাধির পথ চেনেন, তাঁদের সংকল্প থেকে বেছে রাখি রোদ্দুর। আমি জানি রাতের সমাধি বিপদসংকুল। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে একা লাগে ভীষণ। কিন্তু সমস্ত অন্ধকার পরস্মৈপদী। এসবের চেয়ে আঁকড়ে থাকা ভালো৷ একবার তোমার গাল, চোখ আর ঠোঁটের মাঝখানে একা দাঁড়ানোর অপেক্ষায়। এবার গাছ থেকে প্রথম যে পাতাটা হলুদ হয়ে ঝরে পড়বে, কুড়িয়ে রাখব যত্ন করে। পাতারাই তো সাহসী হতে শেখায়। আর তুলনাহীন সেই সাহসে অবশেষে ঠোঁট ডোবাই আমি। যতটা রং লেগে যায় আপামর বাহ্যিক কাপড়ে, সেই অংশে লিখে রাখি পাশে বসার তারিখ। তুমি তো জানো জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করি আমি। তাই প্রতিটি দিন নক্ষত্রের কাছে চেয়ে রাখি শূন্যস্থান। বিপন্ন নগরায়নের মুখে লাগিয়ে দিই আগামী জন্মের শপথ। জমকালো কলোনিয়াল রেখাচিত্রে ফুটিয়ে তুলেছি নদীমাতৃক প্রেম। চাঁদের শরীরে চেয়ে থাকা হয়নি আর। পরিবর্তে জলজ নির্ভরতা। আর পুরনো শ্যাওলার গায়ে প্রতীকী নগর। বাকিটা ব্যক্তিগত। বুঝে নিও তুমি। আপাতত নিজের দিকে তাকানোর সাহস নেই আমার। নিজস্ব সমাধির অহংকারও নেই আর। তুমি আসবে? বেঁধে নেবে আমায় নিজের পারমার্থিক জিভে?
ইতি,
তোমার রডোডেনড্রন
আমার চিঠি শেষ হলো। আজ ব্লগটিকে একটু অন্যরকম করতে চাইলাম। তথ্যবহুল পোস্ট বা কবিতার বাইরে তুলে আনতে চাইলাম পত্র লিখনের একটি সম্পূর্ণ দিক। আপনারাও চিঠি লিখুন। চিঠিকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। বাঁচিয়ে রাখতে হবে সাহিত্যের আকারে।
(প্রচ্ছদের ছবিটি আমার ইনফিনিক্স হট ৩০ মোবাইলে গৃহীত)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আহা। চমৎকার চিঠিটি৷ পত্রসাহিত্য যেখানে উঠে যাচ্ছে কমে যাচ্ছে সেখানে এমন কাজ উল্লেখযোগ্য। খুব ভালো লেগেছে। তোমার হাতে আরও অনেক অনেক চিঠি পড়ার দাবী রাখলাম।
আমার চিঠি ভাললাগায় আনন্দ পেলাম। সত্যিই পত্রসাহিত্য আজ উঠে যাচ্ছে। আমরা যারা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছি, আমাদের উচিত সাহিত্যের এই বিভাগকে আবহমান ধারায় বাঁচিয়ে রাখা। এ যেন মানব জীবনের অত্যাবশ্যক এক হারিয়ে যাওয়া অধ্যায়।
অপরাজিতা কে নিয়ে চিঠিখানা বেশ হয়েছে দাদা। এখন তো আর সেই চিঠির যুগ নাই। তবে তুমি একদম ঠিক বলেছ চিঠি কে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। ভাবছি আমি একদিন চিঠি লিখব কাকে লিখব ভেবে পাচ্ছি না। তোমার আজকের তথ্য বহুল পোস্টটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। নিলমদি ও মনে হয় আজকে চিঠি লিখেছিল।পড়েছি কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি এখনো। অনেক অনেক শুভকামনা তোমার জন্য 💞
ঠিক বলেছ। চিঠির যুগ শেষ হয়ে গেছে৷ আজকাল আর কেউ চিঠি লেখে না। তুমিও চিঠি লেখো৷ কাউকে না পেলে নিজেই নিজের জন্য লেখো। আকাশ বাতাসকে লেখো৷ নদী সাগরকে লেখো৷ তবু লেখো৷