।।আমার কিছু পছন্দের ফটোগ্রাফি।।
।।আমার মোবাইল ক্যামেরায় গৃহীত কয়েকটি ছবি ও তার বিবরণ।।
আশা করি সবাই ভালো আছেন বন্ধুরা। আমার বাংলা ব্লগের জন্মদিন নিয়ে আমরা সকলে মেতে আছি এক সুন্দর সময়ে। তিনদিন ব্যাপি যে মনোগ্রাহী অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাতে মজার বিভিন্ন ইভেন্টে সবাই যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছেন এবং মেতে উঠছেন, তা সত্যিই চোখে পড়ার মত।
তারমধ্যেই চলে এলাম আমার তোলা কিছু ছবির পসরা সাজিয়ে৷ ঠিক করলাম সবার সামনে কিছু ফটোগ্রাফি পোস্ট করি৷ ছবি তোলাটা আমার কাছে নিতান্তই এক নেশা। সঙ্গে থাকে ৫০ মেগাপিক্সেল ইনফিনিক্স হট ৩০ মোবাইল ফোন৷ তাতেই মুহূর্ত বুঝে মাঝেমাঝে ক্লিক করে ফেলি৷ আর রেখে দিই নিজের শখের অ্যালবামে। তেমনই কয়েকটি ছবি আজ নিয়ে এলাম আপনাদের সামনে।
নিয়ে এলাম প্রথম ছবি। ছবিটি পশ্চিমবঙ্গে হুগলি জেলার গঙ্গার তীরবর্তী জনপদ কোন্নগরে ঘাটে তোলা। সময় তখন বিকেল৷ কাজ থেকে ফেরত আসার সময় গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবার মুহূর্তটুকু বন্দী করে রাখতে চেয়েছিলাম ক্যামেরায়। ভাগ্যিস তুলেছিলাম৷ তাই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম। (ছবিটি আনএডিটেড)
এই ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের সৈকত শহর বকখালির কাছে হেনরি আইল্যান্ডে তোলা। একটি মাছের ভেড়ির পাশে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। যা ক্যামেরাবন্দী করবার জন্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলাম কিছুক্ষণ। মুহূর্তটিকে ধরে রাখার লোভ সামলাতে পারিনি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। গোধূলিবেলায় এই মন ভালো করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম নিজের কাছে। (ছবিটি আনএডিটেড)
এই চিত্রটি দার্জিলিং পাহাড়ে অবস্থিত লামাহাট্টা গ্রামে তোলা। গ্রামটি ছবির মত সুন্দর। পাহাড়ের কোলে সাজানো পাইন গাছ যা প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে আছে মেঘেদের সাম্রাজ্যকে৷ আপন খেয়ালে মেঘ আসে, আবার স্বপ্নের মত ভেসে যায় নিজের গন্তব্যে। এ যেন এক মেঘেদের দেশ। এই গ্রামে পাইন গাছের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার নয়৷ জনবসতি এখনো এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভাগ বসাতে পারেনি৷ তাই আপনাদের কাছেও বলা রইল, দার্জিলিং পাহাড়ে ঘুরতে গেলে অবশ্যই ঘন্টাখানেক দূরত্বে ঘুরে আসবেন লামাহাট্টা গ্রাম। কথা দিলাম, স্মৃতি থেকে যাবে আজীবন। (ছবিটি আনএডিটেড)
এই ছবিটি একেবারে ভিন্নধর্মী। পুরনো স্থাপত্য আমায় টানে চুম্বকের মত। আর যেখানেই পুরনো চোখে পড়ে, ছুটে যাই তার আকর্ষণে৷ সেভাবেই ছুটে গেছিলাম এই পুরনো বাড়িটির ভেতরে৷ বাড়িটি হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় অবস্থিত৷ চুঁচুড়া অতি প্রাচীন একটি জনপদ। একসময় ভাগীরথী নদীর তীরে এই জায়গায় উপনিবেশ গড়েছিল ভিনদেশী ইউরোপীয়রা৷ আজও শহর জুড়ে সেইসব চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই বাড়িটি সেই সময়কালের বিখ্যাত বাঙালী ব্যবসায়ী শীল পরিবারের। এটি তাঁদের পুজোর মণ্ডপ। এখানেই একসময় পুজো উপলক্ষে গমগম করতো আশপাশ। আজ শূন্য চারপাশের দখল নিয়েছে ঝুরিবট আর অশ্বত্থের ঝোপ৷ তারমধ্যেও যেন অবশিষ্ট পড়ে আছে অসাধারণ এক সৌন্দর্য। এর ভেতরে গেলে যেন এককথায় বদলে যায় সময়। নিজের চারপাশে ঘিরে ধরে দুশো বছরের পুরনো দিনগুলো। (ছবিটি আনএডিটেড)
এই ছবিটি হুগলির আর এক প্রাচীন শহর শ্রীরামপুরের রাজবাড়ীর (গোস্বামী বাড়ি) অন্দরমহলে তোলা। রাজবাড়ীটি অন্তত কমবেশি তিনশ বছরের প্রাচীন। এটি বাড়ির ভেতরে অবস্থিত একটি চাঁদনির ছবি৷ শোনা যায় এই অংশটিতে একসময় ছিল জলাশয়৷ কখনো পরিবারের এক শিশুর আকস্মিক দুর্ঘটনার পর সেই জলাশয় বুজিয়ে তৈরি হয় এই চাঁদনি। এর সামনেই আছে দুর্গামণ্ডপ। সেখানে ফি বছর অনুষ্ঠিত হয় দুর্গোৎসব। আর এই চাঁদনি তখন মেতে ওঠে বহু মানুষের কলতানে৷ পরিবারের সদস্যদের থেকে জানা যায় এই স্থাপত্য নির্মাণ করেন সেইযুগের ইউরোপীয় শিল্পীরা (মুলত ড্যানিশ)। আজ স্থাপত্যটি বিপদজনক অবস্থায় হলেও এর শোভা একটুও কমেনি৷ সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল কিছু বছর আগের বিখ্যাত হিট সিনেমা 'ভূতের ভবিষ্যৎ' এর শ্যুটিং হয় এই বাড়িতেই।(ছবিটি আনএডিটেড)
এই ছবিটিও শ্রীরামপুর রাজবাড়ীর অন্দরমহলে তোলা। অতি প্রাচীন স্থাপত্যে যেদিকেই তাকানো যায়, সেদিকেই যেন চমক। এটি একটি স্তম্ভের গায়ে লাগানো লোহার স্থাপত্য। এভাবেই আগের যুগে সাজানো হত রাজবাড়ী। আজও যেসব স্থাপত্য রীতিমতো চমকে দেয় সকলকে। (ছবিটি আনএডিটেড)
এই ছবিটি গঙ্গার উপরে কলকাতা ও হাওড়ার সংযোগকারী সেতু বিবেকানন্দ সেতুতে তোলা (বালী ব্রিজ)। একদিন গোধূলি লগ্নে নিজের বাহনে চেপে ব্রিজ পেরোনোর সময় এক প্রাকৃতিক শোভা নজরে আসে। সাথে সাথে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেই শোভা ক্যামেরাবন্দী করে রাখি। তারপর থেকে এটি আমার অন্যতম প্রিয় একটি ছবি৷ মাঝেমাঝে এই ছবি যেন মননের সঙ্গী হয়ে ওঠে। আজ শেয়ার করলাম আপনাদের সকলের সাথে। (ছবিটির কালারটোন এডিট করা হয়েছে কিছুটা)
আজ এই পর্যন্তই৷ সকলে ভালো থাকুন৷ সুস্থ থাকুন।
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার লেগেছে প্রতিটা ফটোগ্রাফির সৌন্দর্য উপভোগ করেছি তবে পাহাড়ি সৌন্দর্যটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। যাইহোক আপনার ফটোগ্রাফি করার দক্ষতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ দাদা।
আপনার মন্তব্য আমায় প্রেরণা দিল ছবি তোলার। ছবি তোলাটা শখের বশেই করি৷ ভালো বললেন বলে খুব ভালো লাগলো।
এলোমেলো ভাবে কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন, ফটোগ্রাফি গুলো সত্যিই দারুণ ছিল। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দৃশ্যের ফটোগ্রাফি গুলো আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ফটোগ্রাফিটা নেহাতই শখের বশে চলে। ভালোলাগা আর ভালোবাসা বলা চলে৷ আপনার ভালোলাগার মন্তব্য অনুপ্রেরণা দিল৷ আরও ছবি নিয়ে আসব ব্লগে। ভালোলাগা অনেক।
দাদা তোমার করা প্রতিটি ফটোগ্রাফি জাস্ট অসাধারণ হয়েছে। আমি তো দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে এবং শুভকামনা তোমার জন্য। এত চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করবার জন্য
তোমার ভালোলাগায় আমি খুব খুশি। এমন সুন্দর করে মন্তব্য লিখলে, খুব ভালো লাগলো৷ আরও ছবি নিয়ে পোস্ট করার চেষ্টা করব ভবিষ্যতে। ভালো থেকো। তোমার পোস্টও আমি ফলো করি।
ভালোবাসা অবিরাম দাদা 🥀🥀
গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে করা প্রথম ফটোগ্রাফি টা অসাধারণ ছিল ভাই। সত্যি বেশ চমৎকার লাগছে। দার্জিলিং থেকে করা ফটোগ্রাফি টাও অনন্য ছিল। ঐটা যেন প্রকৃতির রুপের বহিঃপ্রকাশ করছে। পাশাপাশি অন্য ফটোগ্রাফি গুলো বেশ সুন্দর ছিল। সবমিলিয়ে দারুণ করেছেন ফটোগ্রাফি গুলো। ধন্যবাদ আমাদের সাথে ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
যেভাবে ভালোলাগার অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন এবং ছবিগুলো উল্লেখ করে ভালোলাগার কারণ জানালেন তাতে খুব ভালো লাগলো। বোঝা গেল সবকটি ছবি খুব খুঁটিয়ে দেখেছেন ভাই৷ ধন্যবাদ