কলকাতা অঙ্কুরোদ্গম আয়োজিত কবিতা কল্লোলের মঞ্চে একটি দিন
|
আজ আপনাদের সাথে একটা সুন্দর অনুভূতি ও অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি চত্ত্বর জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সারা বাংলা শিল্প সংস্কৃতি মঞ্চের অন্তর্গত সংস্থা অঙ্কুরোদ্গম আয়োজিত কবিতা কল্লোল। এই উপলক্ষে সারা বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে বহু কবি শিল্পী সাহিত্যিক এসে জড়ো হয়েছিলেন কলকাতায়। অঙ্কুরোদ্গমের কর্মকাণ্ড সারা বাংলা জুড়ে৷ এর জেলাভিত্তিক শাখাগুলি সবসময় অক্লান্ত পরিশ্রম করে সারা বাংলার শিল্পী কবি ও সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলাতেও আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। সেখানে মিলিত হয় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীরা।
আমি বহুদিন ধরেই যুক্ত রয়েছি অঙ্কুরোদ্গমের এই কর্মযজ্ঞের সাথে। একসময় ছিলাম হুগলি জেলা সম্পাদক৷ এরপর যুক্ত হয়েছি সংগঠনের কেন্দ্রীয় শাখায়৷ সেই হিসাবে আমন্ত্রিত হয়ে ৯ তারিখ ও ১১ তারিখ হাজির ছিলাম যথাক্রমে কলকাতা শিশির মঞ্চে ও অবনীন্দ্র সভাগৃহে। ৯ তারিখ শিশির মঞ্চে সাক্ষী রইলাম সব জেলা থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া অসাধারণ গানের অনুষ্ঠানের৷ সেই দিন আমার একমাত্র কন্যারত্নটিকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে পৌঁছে গেছিলাম আমি। সকল শিল্পী নিজেদের মত করে সাজিয়েছিল তাদের অনুষ্ঠান। দলবদ্ধ সংগীতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল শিশির মঞ্চ। সভাগৃহ ভর্তি দর্শক দুলে উঠছিলেন গানের তালে তালে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সংগীতের তালে মেতে ছিল মঞ্চ। আর আমরাও দুলেছিলাম সেই তালে। এরপর নন্দন চত্বরটুকু একটু বিচরণ করে দুজনে ফিরে এসেছিলাম ঘরে।
এরপর ১১ তারিখ ছিল কবিতাপাঠের আমন্ত্রণ। সেই উপলক্ষে আমি একা পৌঁছে গেছিলাম অবনীন্দ্র সভাগৃহে। সেখানে পৌঁছে পরিচিত কবিদের সাথে সাহিত্যের ভাব বিনিময় বরাবরের মতোই সমৃদ্ধ করলো৷ কবিতা ও সাহিত্যের পরিমণ্ডল সবসময়ই আলোর উৎসপথ। সেই আলোটুকু নিয়ে পথ হাঁটলে যেন মসৃণ হয় সবকিছু। অবনীন্দ্র সভাঘরে পৌঁছানোর পর যথাসময়ে আমাকে ডাকা হল মূল মঞ্চে। আমার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করলেন কবি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এবং কবি দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্চালক সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। একে একে ডেকে নিলেন সব কবিদের। প্রত্যেকে স্বরচিত কবিতা এবং আবৃত্তির মাধ্যমে দর্শকদের মধ্যে তুলে ধরলেন তাদের নিজস্বতা ও সৃষ্টির আনন্দ। আমি বরাবরই অনুষ্ঠানে ছোট কবিতা পড়তে ভালোবাসি। দর্শক ছোট কবিতা শুনে তা আত্মস্থ করতে পারে সহজে। সেখানেও দুটি ছোট কবিতা পড়ে কবিতা ও লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলন নিয়ে দুই চার কথা বললাম। বাংলা আকাদেমির সভাগৃহগুলিতে কবিতা পাঠ করা যেকোনো বাংলা ভাষাভাষী কবির জন্য ভালোলাগার একটি বিষয়। অবনীন্দ্র সভাঘর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্তর্গত বাংলা চারুকলা পর্ষদের একটি মঞ্চ। কবিতার আড্ডা বা আলোচনার জন্য এমন সভাঘর কলকাতায় খুব কম আছে। সুন্দর সুসজ্জিত হলঘরে ঘরোয়া কবিতাপাঠের আসর হয়৷ তাই এই সভাঘরের চাহিদা সবসময়ই আকাশছোঁয়া থাকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি অনেক সভাঘর কলকাতায় থাকলেও এমন সরকারি সভাগৃহ প্রায় হাতেগোনা। আমার সৌভাগ্য হয়েছে সেখানে বহুবার কবিতাপাঠ করবার। এবারেও মঞ্চে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে স্মরণ করেছিলাম বাঙালির ভাষাকে নিয়ে চিরস্মরণীয় আন্দোলনকে। আর তারপর নিজের কবিতা পাঠ। সম্প্রতি কিছু লেখা থেকে বাছাই করে দুটি কবিতা পাঠ করলাম৷ কবিতা পাঠের পরে অঙ্কুরোদ্গম কলকাতার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা স্বরূপ হাতে তুলে দেওয়া হল 'অ' চিহ্নিত স্মারক।
এভাবে কেটে গেল কবিতাকে নিয়ে একটি দিন। সারাদিনের পরে যখন ঘরে ফিরে এলাম, সঙ্গে তখন অঙ্কুরোদ্গমের কবিতা কল্লোলের স্মৃতি। এমন ছোট ছোট কবিতা সভাগুলি দৈনন্দিন জীবনের মাঝখানে কিছুটা ভিন্নতা নিয়ে আসে বৈকি। শিল্প ও সংস্কৃতি বাঙালির মনন। আর তাই দৈনন্দিন কাজের সময়ের বাইরে পুরো সময়টাই জুড়ে থাকি শিল্প-সংস্কৃতির আঙিনায়। আর সেখানেই আলো হয়ে আসে ১১ই জুন এর মত আরও অসংখ্য দিন।
আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম কয়েকদিন আগে কাটিয়ে আসা সেই দিনের স্মৃতিটুকু। সকলে ভালো থাকুন। ব্লগিংয়ে থাকুন। আর মেতে থাকুন আমার বাংলা ব্লগের রঙিন পাতায়৷
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
কবিতা কল্লোলের মঞ্চে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে আপনি বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি আপনার গভীর ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা প্রকাশ করেছেন। আপনার লেখা পাঠকদের মনে সাহিত্যের প্রতি আরও আগ্রহ জাগাবে এবং বাংলা কবিতার প্রতি তাদের ভালোবাসা বাড়াবে। ধন্যবাদ এমন সুন্দর পোস্টের জন্য ভাইয়া।
পোস্টটি পড়ে আপনার মনোজ্ঞ মন্তব্য ভালো লাগলো। কবিতার জন্য বাঁচি৷ কবিতাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি। শিল্প সংস্কৃতি মানুষের দিনযাপনের সঙ্গী হয়ে উঠুক। এতে স্থুল ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই মানুষ হতে পারব। ভালো থাকুন।