কলকাতার সন্নিকটে হাইটেক নগরী নিউটাউন
।।হাইটেক নগরী নিউটাউন।।
গতকাল ও আজ একটা অফিসের কাজে গেছিলাম নিউটাউন৷ নিজের অফিসের কাজে মাঝেমাঝেই যাই। কলকাতায় এই জায়গাটি আজও দূষণমুক্ত ও অতিরিক্ত জানজটযুক্ত জায়গার তুলনায় একটু ভিন্নধর্মী। আসলে নিউটাউন শুধু আক্ষরিক ভাবেই নিউ নয়, প্রাকৃতিক ভাবেও নিউ৷ তাই এই জায়গাটিতে বাইক নিয়ে চলে গেলে একটা নির্মল প্রশান্তি ভর করে মনে৷ অফিসের কাজে মাঝেমাঝেই যেতে হয় নিউটাউন৷ রাজারহাট, এয়ারপোর্ট সন্নিকটস্থ এই জায়গাটি সবদিক থেকে সাজানো গোছানো৷ উঁচু উঁচু আকাশছোঁয়া বাড়ি থাকলেও তা ভীষণ পরিকল্পনা মাফিক। দেখলে মনে হয় তাকিয়ে থাকি একদৃষ্টিতে। সব বাড়িগুলিরই স্থাপত্যশৈলী অত্যাধুনিক ও অভিনব। এই অঞ্চলে প্রচুর কর্পোরেট অফিস ও বাণিজ্যিক হাব তৈরি হয়েছে। এখনো জায়গাটি আজও নির্মীয়মান বলে হয়ত কনক্রিটের জঙ্গল মাথাচাড়া দেয়নি। কিন্তু শহর কলকাতার জনসংখ্যা যে জায়গায় ছুঁতে চলেছে, তাতে কতদিন নিউটাউন অঞ্চল বাসযোগ্য থাকবে সে বিষয়েও সন্দেহ প্রবল৷
বর্তমানে নিউ টাউন এলাকা মূল কলকাতার সঙ্গে বিভিন্নভাবে সহজে যুক্ত হয়ে আছে। যদিও কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের অন্তর্গত ওয়ার্ডগুলির মধ্যে এটি পড়ছে না। এখানে নিউটাউন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি নামক সরকারি সংস্থা সম্পূর্ণ জায়গাটির দেখভালের দায়িত্বে আছে৷ তাদের তত্ত্বাবধানে এলাকাটির সৌন্দর্য রূপায়ণ করা হয়৷ বর্তমানে এই অঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরও অবস্থিত। দ্রষ্টব্য স্থান বলতে বিশ্ববাংলা গেট, বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টার, ইকো পার্ক, রবীন্দ্র তীর্থ, নজরুল তীর্থ, এয়ারক্রাফ্ট মিউজিয়াম বিখ্যাত।
এই অঞ্চল দিয়ে বাইক নিয়ে গেলে আমি মাঝেমাঝে থেমে যাই। আর উপভোগ করি আশপাশের নির্মল হাওয়া। ছবির মত সুন্দর আশপাশ যেন টেনে রাখে অহরহ। প্রযুক্তি বিজ্ঞানের যে প্রয়োগ শহরের এই অঞ্চলে করা হয়েছে তা প্রশংসার দাবী রাখে। সুন্দর পরিবেশে সাজানো রাস্তার মোড় এবং পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট এখানকার বৈশিষ্ট্য। গাড়ি চালাতেও কোথাও অসমান রাস্তাঘাটের আওতায় ফেঁসে যাবার ভয় নেই। ট্রাফিক সিগনালও যথেষ্ট সুব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত।
নিউটাউনকে আমার এক ভিন্নতর কলকাতা মনে হয়৷ সেখানে সন্ধ্যাবেলা আলোকোজ্জ্বল রাস্তা ও সাজানো ফুটপাথ ভীষণ আকর্ষণীয় লাগে। বিশ্ববাংলা সরণি দিয়ে গাড়ি নিয়ে সন্ধ্যাবেলা যাবার অভিজ্ঞতাই আলাদা। প্রথম যে ব্যক্তি কলকাতায় এসেছেন, তাঁর এই অভিজ্ঞতা চমকপ্রদ হবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। সাথে আছে হরেক খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থা। আছে এক্সিস মল, সেন্ট্রাল মল ইত্যাদি। পরিবার নিয়ে মাঝেমাঝেই স্থানীয় মানুষজনকে দেখি বিভিন্ন ভাবে সেইসব জায়গায় আনন্দে মেতে উঠতে। নিউটাইন মেলার মাঠে সবসময়ই লেগে আছে মেলার পসরা। কখনো এক্সপো, কখনো হস্তশিল্প মেলা, কখনো বইমেলার আয়োজন মাতিয়ে রাখে মেলা গ্রাউন্ডকে। সুতরাং এ যেন এক আনন্দ নগরী।
কলকাতার প্রাচীনত্ব এখানে মিশে নেই ঠিকই, কিন্তু আধুনিকতার মোড়কও যে একটা অঞ্চলকে কতটা আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে তার নিদর্শন এই নিউটাউন। বিশ্ববাংলা সরণির ওপর দিয়ে তৈরি হচ্ছে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ৷ বর্তমানে সম্পূর্ণ কলকাতা শহরই প্রায় মেট্রো নেটওয়ার্কের অন্তর্গত হতে চলেছে৷ নিউটাউনও তার বাইরে নয়। বর্তমানে সল্টলেক সেক্টর ৫ পর্যন্ত মেট্রো পরিসেবা অব্যাহত। এরপর সম্পূর্ণ নিউটাউন জুড়েই চালু হবে মেট্রো পরিসেবা। এখনই বিশ্ববাংলা সরণির মাথার ওপর মেট্রো করিডরের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। বাকিটা শুধু সময়ের অপেক্ষা৷
আজকের নিউটাউন কলকাতার এক হাইটেক পার্ট। আর এই সুপরিকল্পিত নগরায়ন আমাকে টানে। নিজের বাহনে চেপে এখানে দুদণ্ড দাঁড়িয়ে এককাপ ভাঁড়ে চা পান করবার সুযোগ আমি ছাড়ি না সচরাচর। প্রিয়জনের সাথে বসে মোমো আর কফি খাওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে বৈকি৷ পরিবেশ যদি মনের মত হয়, অভিজ্ঞতাও হয় স্মৃতিময়। আর জীবনের পথে তা থেকে যায় দীর্ঘ সময়৷ যদি সময় ও সুযোগ হয়, আসুন নিউটাউন। খোলা মাঠে আশপাশে সুসজ্জিত বহুতল দেখতে দেখতে সময়টা কিন্তু বেশ কেটে যাবে।
|
|
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।