ঘুর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সারাদিনব্যাপী ভয়ঙ্কর দুর্গতি। একটি অভিজ্ঞতা।
দানার প্রভাবে সারাদিনব্যাপী ভয়ংকর দুর্গতি
পশ্চিমবঙ্গের উপর সরাসরি প্রভাব না পড়লেও একটি পরোক্ষ প্রভাব নিয়ে হাজির হয়েছিল দানা। এটি একটি বঙ্গোপসাগরীয় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। বঙ্গোপসাগরের উপরিতলের উষ্ণতা এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মাঝে মাঝেই তৈরি করে এক অতি উচ্চচাপ বলয়ের। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় একের পর এক ঘূর্ণিঝড়। ভেরি সিভিয়ার সুপার সাইক্লোন হয়ে তারপর এটি ধেয়ে আসে ভারতের পূর্ব উপকূল ভাগে। আর ঠিক সেই জায়গাতেই অবস্থিত আমাদের দুই বাংলা এবং উড়িষ্যা। তাই প্রতিবারই একটি বিপদের ভ্রুকুটি নিয়ে বসবাস করতে হয় আমাদের।
এবারেও ঘূর্ণিঝড় দানা আসার আগে থেকেই সমস্ত সাবধানমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ট্রেন এবং প্লেনও বন্ধ রাখা হয়েছিল সেই সময়। ঝড়ের দাপট সরাসরি কলকাতার উপর না পড়লেও সারাদিনব্যাপী বৃষ্টিতে রীতিমতো নাজেহাল দক্ষিণবঙ্গ। বিগত দুদিন আমার স্কুল ছুটি থাকার দরুন ঘর থেকে বের হতে হয়নি। কিন্তু আজ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম স্কুলের উদ্দেশ্যে। আকাশে রোদ উঠলেও বিভিন্ন রাস্তায় এতটাই জল দেখতে পাই, যে আমার বাইকটি নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কা ভিড় করে বুকে। জলের মধ্যে বাইক চালাতে এমনিতেই অসুবিধা হয়। দুই চাকার যানটি জলের তলায় কোনো গর্তে পড়লে নিজেকে রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। আর আজ ঠিক ততটাই চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেমে পড়েছিলাম রাস্তায়। এ যেন 'খতরো কি খিলাড়ি'র অডিশন। প্রায় এক হাঁটু জল টানা রাস্তা দিয়ে বাইক চালানো খুব সহজ বিষয় নয়। সকালে স্কুল যাওয়ার সময় টানা প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জলের মধ্যে দিয়ে চালাতে হয়েছে। আর সেখানে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল চামড়ার বুট পরিহিত পা দুটি কোনভাবেই বাইক থেকে না নামানো। অবশেষে পুরো মিশনটা সাকসেসফুল করে পৌঁছতে পারলাম স্কুলে। ইউরেকা।
![]() | ![]() |
---|
কিন্তু তারপর ফেরার পালা। সে আর এক চ্যালেঞ্জ। ছাত্রের বাড়ি পড়াতে যাওয়ার আগে জুতো খুলে ব্যাগে নিয়ে খালিপায়ে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতাও এই প্রথম। তারপর সেই একই দুর্গম পথে বাড়ি ফেরা।
সবকিছু মিলিয়ে আজ সারাদিন শুকনো আবহাওয়াতেও দুর্ভোগ। তবে সারাদিনব্যাপী এই দুর্ভোগটি সঙ্গে নিয়ে ঘোরবার পর এখন সবটাই বেশ উপভোগ্য লাগছে বৈকি। তাই ঘটা করে আপনাদের সামনে গল্প লিখতে বসে গেলাম। স্বাভাবিক জীবনের বাইরে কোন কিছু ঘটলেই ইচ্ছে করে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে। আমার বাংলা ব্লগ এমনই এক জায়গা যেখানে জীবনকে নতুন করে বাঁচতে শেখা যায়। আর তার জন্য সকলকে আপন করে প্রাত্যহিক গল্প শোনাতে খুবই ইচ্ছে করে। আজকের আমার এই দুর্গম গিরি কান্তার মরু, ও থুড়ি, দুর্গম জলে যাতায়াত করবার অভিজ্ঞতা মনে থাকবে বহুদিন। সঙ্গে বাহনটি থাকার ফলে সুবিধা যেমন লাভ করি, তেমনভাবে অসুবিধার মধ্যেও পড়তে হয় বিভিন্ন সময়ে। আজ ছিল ঠিক তেমনই একটি মুহূর্ত।
![]() | ![]() |
---|
যাই হোক, এখন নিশ্চিন্তে ঘরে বসে আপনাদের সামনে তুলে আনলাম রাস্তার সেই পরিস্থিতির কয়েকটি ছবি। ছবিগুলি দেখে আন্দাজ করবার চেষ্টা করুন এগুলি রাস্তা নাকি নদী। আসলে আমিও রাস্তায় নামবার আগে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। আর এক সময় ভাবছিলাম আজ আমাদের চিরপরিচিত কলকাতা হয়তো ভেনিস শহরে পরিণত হলো। তাই আজ বাইকের বদলে একখানি নৌকা নিয়ে স্কুল গেলে হয়তো অনেক সুবিধা হত চলাফেরায়।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
x promotion
হাহা। দাদা, আমাদের দেশে সামান্য বৃষ্টি হলেই আমরা এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। তাই এই ঘটনা আমাদের জন্য খুবই কমন। লেখার ভঙ্গিমায় মজা পেয়েছি খুব।
আমার পোস্ট পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকবার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
রাস্তার এমন অবস্থা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন না ভাই। বিশেষ করে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের রাস্তার ঠিক এমন অবস্থা হয় হা হা। তবে আপনাকে বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে আমাদের এখানেও বেশ ভালো বৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টি যেখানে এতো হয়েছে সেখানে চামড়ার জুতো পরে কে বেরয়? আমার এইটে জানার ভারী ইচ্ছে৷ 😂😂
পুসের আর্নিং অনেক হচ্ছে মনে হয় তাই বাড়িতে শ্রীলেদার্সের শোরুম খুলেছ। নইলে চামড়ার জুতো পরে বৃষ্টিতে! 😜
কলকাতার জল নিকাশি কোনদিনই ভালো না৷ তবে দানার ঝড় বিরাট না হলেও বৃষ্টিটা মারাত্মক হয়েছে। সে কারণেই এমন অবস্থা। চমৎকার রসিয়ে লিখেছ।
আসলে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় খেয়াল ছিল না যে রাস্তায় জল হতে পারে। আমি তো এমনই কিনা! আকাশের রোদ দেখে বাকি সব ভুলে গেছিলাম।
সবেতে এতো ভুলো হলে এরপর কোনদিন জুতো মাথায় নিয়েই হাঁটতে হবে কবি৷