সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অভূতপূর্ব ছবি। যে ছবি বদলে দিতে পারে বহু মানুষের চিন্তাভাবনা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি আদর্শ ছবি
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
আজ একটি অদ্ভুত জিনিস আপনাদের দেখাবো। আমরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা হানাহানি এবং বিবাদ করে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলি। আর ধর্মের আসল সারবক্তব্যটুকু ভুলে গিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা তৈরি করি। কিন্তু এই ধরনের আচরণ অন্তত শিক্ষিত মানুষের শোভা পায় না। মানুষ বড় বিচিত্র এক জীব। সে যেমন সকল প্রাণীর থেকে উন্নত তেমনি হিংসা এবং রেষারেষিতে বহু প্রাণীর থেকে অনেক উপরে। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঈর্ষা এবং কলহতে সময় ব্যয় করে ফেলি। আর এই বিবাদের মূল একটি বিষয় হলো ধর্ম। ধর্ম আসলে মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখবার একটি আধ্যাত্মিক চেতনা। আমি মনে করি কোন ধর্মই কখনো খারাপ কথা বলে না। যদি খারাপ কথা বলত তবে তার নাম অধর্ম হতো। ধর্মের অর্থই হলো মানুষের প্রেয় বোধ এবং শ্রেয় বোধের মধ্যে একটি সুন্দর সামঞ্জস্য তৈরি করা। আর এই সামঞ্জস্যটুকু রেখে চলতে পারলে নিজের ধর্মের প্রতি যেমন বিশ্বাস জন্ম হবে ঠিক তেমনভাবে অন্য ধর্মের প্রতি জেগে উঠবে সম্মান। আর মনুষ্যত্ব প্রকাশ করতে অন্য ধর্মের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদান করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা অত্যন্ত লঘু চিন্তায় নিজেদেরকে ব্যস্ত করে রাখি বলে ধর্মকে একটি হানাহানির পর্যায়ে নিয়ে চলে গেছি। ফলে বর্তমানে সকল ব্যাখ্যা বদলে গেছে এবং মানুষ স্বার্থপরের মত শুধু নিজের দিকটি নিয়েই ভাবতে শিখেছে।
আজ আপনাদের এমন একটি ছবি দেখাবো যে ছবি দেখলে সমস্ত ধারণা বদলে যাবে। কী মন্দিরার কী মসজিদ? কেউ কখনো তার সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে? কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন
মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান,
মুসলিম তার নয়নমণি হিন্দু তাহার প্রাণ।
তাঁর এই কথাকে যথাযোগ্য সম্মান আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি তা নিয়ে তর্ক বিতর্কের অবসান নেই। আসলে ভারতবর্ষ সাম্যবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। বিভিন্ন জাতি এবং ধর্মের মানুষ এখানে পাশাপাশি সহাবস্থান করে। সেখানে কোন দাঙ্গা বা হানাহানির ঘটনা থাকবার কথা নয়। একসময় যেমন ভারতবর্ষে মুসলিম রাজত্বে হিন্দুরা ভালো ছিল, আবার তেমনি হিন্দু রাজত্বেও বহু মুসলিম নিশ্চিন্তে দিনযাপন করেছেন। আজও কোথাও কোথাও সেই সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কোনো ধর্ম নিয়ে হানাহানি হবার কথাই নয়। কারণ যে যার ধর্ম নিশ্চিন্তে পালন এবং ধারণ করবে এটাই তো স্বাভাবিক। সেখানে কোন চাপিয়ে দেওয়া বা জোরপূর্বক কোন কিছু ধারণ করানো সম্পূর্ণ অনুচিত বলেই মনে করি।
আমাদের বাড়ির আশেপাশেই আমরা এমন অনেক কিছু দেখতে পাই যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু আমাদের সেই সব ছবি ব্যাখ্যা সমেত তুলে আনতে হবে মানুষের সামনে। তবে মানুষ সঠিক পথে চলবার দিশা লাভ করবে। আর যদি ধর্মীয় গুরুরা মানুষকে ভুল দিকে চালনা করে নিয়ে যায়, তবে তার সুদূরপ্রসারী ফল সরাসরি পড়বে সমাজের উপর। তাই আমার মনে হয় সব সময় সবকিছু যুক্তি এবং ব্যাখ্যা দিয়ে গ্রহণ করাই আধুনিকমনস্ক মানুষের কর্তব্য। হিন্দু ধর্মের একটি নারকীয় প্রথা সতীদাহ যেমন ভাবে রাজা রামমোহন রায় উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় তুলে দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনভাবেই বর্তমান যুগেও সমস্ত ধর্মের সকল কুসংস্কারের থেকে মানুষের সরে আসা উচিত। আধুনিক যুগে মানুষ ধর্ম নিয়ে নিজেদের মধ্যে হানাহানি করবে এবং পরস্পর বিবাদে লিপ্ত থাকবে তা কখনোই আধুনিক পৃথিবীর চিত্র হতে পারে না।
আজ আপনাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি আদর্শ চিত্র দেখাবো। যেখানে একই দেয়ালের দুই পাশে মন্দির এবং মসজিদ গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ একটি দেয়ালের একপাশে তৈরি হয়েছে শিব মন্দির, এবং অন্য পাশে গড়ে উঠেছে একটি মসজিদ। সেই দেয়ালের দুপাশেই দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষ তাদের নিজের মত প্রার্থনায় ব্যস্ত থাকেন। সেখানে কোন বিবাদ নেই বা হিংসার বাতাবরণ নেই। একসাথে একটিমাত্র দেয়াল সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে মন্দির এবং মসজিদ গড়ে তুলতে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এর থেকে ভালো উদাহরণ আর কি হতে পারে। প্রার্থনা করবার সময় কেউ কারো ব্যক্তিগত ধর্মে হাত দেয় না। সেখানে নিশ্চিন্তে সকলে মেতে থাকতে পারে তাদের নিজস্ব ধর্মে। আধুনিক পৃথিবীর ছবি তো এমনই হওয়া উচিত। তাই না? আসলে যে পদক্ষেপ মানুষে মানুষে বিবাদ তৈরি করে তা অচিরেই ত্যাগ করা উচিত। ধর্মের অর্থ কোনদিনই বিবাদ নয়। হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় এই মন্দিরটি দেখলে আমাদের সেই কথাই যেন বারবার মনে হয়। হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, জৈন, শিখ সকলের রক্তের রং লাল। তাই যন্ত্রণা যেমন সকলের কাছেই বেদনাদায়ক, তেমনি আনন্দ এই সকল ধর্মের মানুষের কাছেই হর্ষের কারণ। তাই আজ এই প্রতিকী ছবিটি দেখে হয়তো অনেক কিছুই বুঝতে পারছেন। কারণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে বার্তা এই ছবিটির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তা হয়তো খুব সহজে অন্যান্য কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়। তাই রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে এমন সুন্দর মন্দির ও মসজিদটি দেখে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারিনি। সাথে সাথে যে ছবিগুলি তুলে ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম, সেগুলিই আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে মনের কিছু কথা বললাম। আপনাদের মতামত নিশ্চয় কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1899528946632609875?t=oFl3kvGLgvt9IL0Po8mnow&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily tasks-
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন উদাহরণ সত্যিই অনন্য।ধর্ম মানুষকে বিভক্ত করার জন্য নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়। এই মসজিদ ও মন্দিরের সহাবস্থান শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক। এমন দৃষ্টান্ত সবার সামনে এলে বিভাজনের রাজনীতি কমে যাবে। চমৎকার টপিক শেয়ার করেছেন দাদা।।