সাহিত্যের টানে বাংলাদেশ সফর - ১
কৌশিকের দুনিয়ায় স্বাগতম্ বন্ধুরা
সকলে ভালো আছেন নিশ্চয়। আমার বাংলা ব্লগে এসে নিজে লিখে ও আপনাদের লেখা পড়তে পড়তে সময় বেশ কাটছে৷ সারাদিন কাজের ফাঁকে এ যেন এক বসন্তের সুবাস।
![IMG_20240227_181243_749.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmcstYxp4MTKpZdv9BiLnCmQmvoWBYtHdR7b9tLCmdhYhT/IMG_20240227_181243_749.jpg)
আমার ক্যামেরায় শহীদ মিনার
আজ ঠিক করলাম আপনাদের সামনে কয়েকটি পর্বে নিয়ে আসবো সম্প্রতি আমার ঢাকা শহরের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত। মাসখানেক আগে কয়েকটি সাহিত্য অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে পৌঁছে গেছিলাম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। এ আমার প্রথম বাংলাদেশ যাত্রা। এই আট নয় দিনের অভিজ্ঞতা বিভিন্নভাবে নিজের মধ্যে গুছিয়ে রেখেছি একটু একটু করে। শুনেছিলাম ঢাকা হল আমার শহর কলকাতার যমজ সিটি। গিয়ে অভিজ্ঞতা হলো কিছুটা তেমনই। দুটো শহরের মধ্যে সামান্যই কিছু ফারাক৷ ফারাক অবশ্যই অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের। কিন্তু বাঙালির আর ভাগ কিসে? যা কলকাতা তাই ঢাকা। যা নন্দন, তাই শাহবাগ। সেখানে কলকাতার মতোই পথঘাট, মানুষজন, ঘরবাড়ি এবং যানবাহন। এমনকি মেট্রোরেলও রয়েছে দুই শহরেই। তাই বাঙালির এই দুই প্রাণের শহর যমজ বৈকি।
![IMG_20240303_100254_757.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWZq5XchMw22W69UY1nwgv2vpRXfhZQnb7rjfr8kZDKe7/IMG_20240303_100254_757.jpg)
আমার ক্যামেরায় ঢাকা শহর
যাত্রা শুরু
কলকাতা থেকে ঢাকা পৌঁছেছিলাম মৈত্রী এক্সপ্রেসে। অভিজ্ঞতা খুব ভালো। কলকাতায় চিৎপুর টার্মিনাল থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সকাল সাতটায়। কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনের জন্য দু'ঘণ্টা আগে পৌঁছতে হয় কলকাতা স্টেশনে। বাকি সব ডোমেস্টিক প্ল্যাটফর্মের থেকে একেবারে আলাদা সেই ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাস। একমাত্র লিগাল পাসপোর্ট ছাড়া কেউ সেখানে ঢুকতে পারে না। একেবারে কাকভোরে সেই টার্মিনাসের লাইনে দাঁড়িয়ে আমি যে প্রথম বাংলাদেশ সফরের জন্য বেশ উত্তেজিতই ছিলাম সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। লাইনেই আলাপ জমাতে শুরু করলাম বাংলাদেশী বন্ধুদের সাথে। যাই হোক কাস্টমস ইমিগ্রেশন এর সমস্ত সরকারি নিয়ম-কানুন সেরে চড়ে বসলাম মৈত্রী এক্সপ্রেসের কামড়ায়। সে অভিজ্ঞতা বলে ব্যাখ্যা করবার নয়। আমরা ভারতীয় বাঙালিরা একটা মাল্টিলিঙ্গুয়াল পরিবেশে বড় হই। সেখানে হিন্দি, ইংরাজি ও বাংলা ভাষার একটা মিশেল আমাদেরকে বেড়ার মত ঘিরে রাখে। আজকাল তো কলকাতা শহরেও হিন্দিতে সবাই বেশ সাবলীল। পেশাগত ভাবে সারাদিন ইংরাজির সাথে সহবাস। তাই বহুদিন ধরেই নিজের দেশ থেকে দুর্ভাগ্যক্রমে আলাদা হয়ে পড়া আরেকটি নতুন দেশকে ছুঁয়ে আসার ইচ্ছে তাড়া করে বেড়াতো নিজের মধ্যে। তাও যেখানে একমাত্র ভাষা হল আমার মায়ের ভাষা বাংলা। ভাবছি মৈত্রী এক্সপ্রেসে চড়ে বসবার পরে মাত্র তিন ঘন্টায় পেরিয়ে যাব ভারত বাংলাদেশ বর্ডার। নিজের দেশ থেকে গিয়ে ঢুকবো আরো একটি আপন দেশে। শুধু কষ্টের জায়গা এটুকুই যে সেখানে যেতে হলে পেরোতে হয় দীর্ঘ আইনের জট। কিন্তু ট্রেনে যেতে যেতে ভাবছি অভিন্ন বাংলা ও বাঙালির কথা। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে বাঙালি নেই। আর বাঙালি মানেই পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গ। বাংলা ভাগ হতে পারে, কিন্তু বাঙালির কোন ভাগ হয় না। বাঙালি মানেই পিঠে, পায়েস আর পয়লা বৈশাখ। তাই বাঙালির যে আপন অংশটুকু এতদিন অধরা ছিল সেইটুকু ধরার ইচ্ছেই যেন জাঁকিয়ে বসেছে মাথায়। এসব ভাবতে ভাবতে ট্রেন কখন ছুটে চলেছে যেন বুঝতেই পারিনি। ভারতের শেষ পয়েন্ট হলো গেদে। আর বর্ডার পেরোলেই বাংলাদেশের দর্শনা। মাঝে কাঁটাতারে মোড়া নো ম্যানস ল্যান্ড। এক সময় শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নিয়মিত ট্রেন আসতো দর্শনায়। অথচ সময়ের সাথে কিভাবে যেন পিছিয়ে গেছি আমরা। আজ দিনে হাতে গুনে দুটি ট্রেন। তাও কত সরকারি নিয়মকানুন মেনে। এই কষ্ট কি কোন বাঙালিকে আমৃত্যু ছেড়ে যাবে কখনো? ভারতের গঙ্গা আছে, বাংলাদেশের আছে পদ্মা। ভারতের ব্রহ্মপুত্র, বাংলাদেশের যমুনা। একই জল পান করি আমরা। শুধু কেউ বলি জল, কেউ বলি পানি। তাই ভেদাভেদের রাজনৈতিক বেড়া কখন যে মৈত্রী এক্সপ্রেস এক টানে মুছে দিয়েছিল অনায়াসে, বুঝেই উঠতে পারিনি। সেটুকু ঠাওর করবার আগেই ছুঁয়েছি বাংলাদেশের সীমানা। এক দেশ ছেড়ে আর এক দেশে ছুটে চললেও বিভেদ বুঝিনি এতটুকু। সেই আল দেওয়া সবুজ ধানমাঠ, সেই পুকুরঘাট আর তার চারপাশে অসংখ্য গরু ঘাস খায় আপনমনে। আকাশে বকের সারি সাক্ষী দিয়ে জানান দেয়, "এ তোমার নিজের দেশ৷ এ তোমার মাতৃভাষার দেশ।"
![IMG_20240226_113029_681.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmVEhgKswRRxGZHowJB5rxwXUrmkKnYqqaJGaQkxnpspBL/IMG_20240226_113029_681.jpg)
এই ছিল ট্রেনের ফুড প্যাকেট
![IMG_20240226_061555_309.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZDc8F9KXP9LDKdPvgW1osMgUCz8ksZJqRsqj9Mr4kFdD/IMG_20240226_061555_309.jpg)
কলকাতা স্টেশন
![IMG_20240226_164223_330.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmXphVfFdqtt7tTXMveQrBuhqmuvSZQfqQVWSEy77pzAJq/IMG_20240226_164223_330.jpg)
ঢাকা নেমেই
![IMG_20240226_164119_544.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmU7F8TVLaV6fPeCyQkChbeLP7kTjMQcYkwSFwyA3Qf6AY/IMG_20240226_164119_544.jpg)
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
স্বপ্নপথে
এভাবেই একরাশ বিস্ময় ও আনন্দ বুকে নিয়ে এক এক করে পেরিয়ে গেলাম ছেলেবেলা থেকে স্বপ্নের ঘোরে লালন করা জায়গার নামগুলো৷ ঈশ্বরদী, টাঙ্গাইল, টোঙ্গী। যেন খিদে তেষ্টা ভুলে তাকিয়ে রয়েছি বাইরের জল হাওয়ার দিকে। এই সব নামগুলো একদিন আমার দেশের অংশ ছিল। আজ বিচ্ছিন্ন। আজ আমরা বিভাজিত। তবু আমি ছুঁতে পেরেছি সেই সিঁড়ি। কিন্তু দুই বাংলার কত বাঙালি আমৃত্যু শুধু বুকে স্বপ্ন লালন করেই বেঁচে থাকে নীরবে৷ ছুঁয়ে দেখতে পারে না অবিভক্ত বাংলার প্রতিটি প্রান্তর। সমস্ত আবেগ বুকে ধরেই পেটের খিদে মেটাতে দর্শনা স্টেশন ছাড়ার পর কিনলাম মুর্গ পোলাও৷ বাংলাদেশী টাকায় ২০০ টাকার বিনিময়ে পেট ভরা লাঞ্চ প্যাকেট। খেতেও অভিনব লাগলো। বেশ অন্যরকম। বলা বাহুল্য, পরে বুঝলাম এই মুর্গ পোলাওটা বাংলাদেশে খুবই প্রসিদ্ধ। কারণ বাংলাদেশে থাকা দিনগুলোয় আমি বহুবার এই পদটির শরণাপন্ন হয়েছি। এভাবেই ট্রেনে পেট পুজো সম্পন্ন করে আবার গিলতে শুরু করলাম বাংলার মাটি, জল, হাওয়া। সাথে ভারতীয় রুপির সাথে বাংলাদেশী টাকাও ছিল। যাত্রার আগেই কলকাতা থেকে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করে নিয়েছিলাম। গান্ধীজীর বদলে হাতে পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুকে। তাই তাঁর কৃপায় কোনো অবস্থাতেই অসুবিধায় পড়তে হয়নি কখনো। স্বচ্ছন্দে বিকেল ৪-৩০ এ এসে পৌঁছলাম বাঙালির আর এক স্বপ্নের নগরী ঢাকায়। আজ এই পর্যন্তই থাক। আবার পরের অংশ নিয়ে আসছি শীঘ্রই।
সকলে ভালো থাকুন। গরমে বেশি করে জল পান করুন। পারলে লেবু জল ও গ্লুকোজ সাথে রাখবেন। আজকের মত টাটা বাই বাই। 🙏🙏