রাজার মেয়ে ও কুমিরের প্রেম

in আমার বাংলা ব্লগ17 days ago
আমার বাংলা ব্লগের সদস্যবৃন্দ আশা করি সকলেই ভালো আছেন, আমিও ভালো আছি।

আজকে আপনাদের সাথে আমি একটি গল্প নিয়ে এসেছি। আমি এই গল্পটি কল্পনার মধ্য দিয়ে বানিয়েছি। তো কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আজকের রাজার মেয়ে ও কুমিরের প্রেমের গল্প।
আমরা জানি বিশেষ করে ইরাকে বিভিন্ন কাল্পনিক গল্প প্রচলিত ছিল আমার গল্পটিও সেরকমই কল্পনার মধ্য দিয়ে লিখা। আসলে ভালোবাসার কোন সীমানা হয় না এটি মানুষ থেকে মানুষ, প্রাণী ও মানুষের মধ্যেও ভালোবাসা বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। ভালোবাসা এমন এক আবেগ এর গণ্ডি ছাড়িয়ে ও প্রাণীর মাঝেও ছড়িয়ে যেতে পারে।


1000219785.jpgPixabay

অনেক দিন আগের কথা। বাগদাদ শহরের অনেক দূরে একটি রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের প্রান্তে ছিল এক বিশাল জলাশয়। সেখানে ঘন জঙ্গলের মধ্যে বাস করত এক কুমির। এই কুমির অন্যদের মতো নয়, তার মধ্যে ছিল মানবিকতা এবং গভীর বোধশক্তি। তার নাম ছিল কর্ণ।

জলাশয়ের পাশেই ছিল রাজ্যের মহল। সেই মহলের রাজা,রাণী, একমাত্র রাজকন্যা ইলা বাস করতো। তাদের সৈন্য-প্রজারা এই জলাশয় থেকে মাছ ধরত, পানি আনত, আর গরম দিনে সেখানে বিশ্রাম নিত। ইলাও মাঝে মাঝে সেই জলাশয়ের ধারে গিয়ে বসে থাকতো অনেক সময়। রাজকন্যা ইলা ছিলো অত্যন্ত সুন্দরী, কিন্তু তার হৃদয়ে ছিলো এক অসীম একাকিত্ব। রাজপ্রাসাদের আলোকময় পরিবেশেও তার মন সবসময় উদাস থাকত। মূলত ইলার আর কোন ভাই বোন না থাকায় সে সব সময় তার সময়গুলো সঙ্গীহীনতায় কাটাতো ।

ইলার সবার থেকে আলাদা হওয়ার আরও একটি কারণ ছিল তার মনের জগৎ। সে প্রকৃতি ভালোবাসতো, প্রাণীদের সাথে কথা বলতো, গাছের ছায়ায় বসে বিভিন্ন কল্পনা করতো আর তা লিখে রাখতো । একদিন রাজকন্যা যখন জলাশয়ের পাশে বসে তার খাতায় কিছু লিখছিলো , হঠাৎ কর্ণের দৃষ্টি তার দিকে গেল।

1000219784.jpgPixabay

প্রথম দেখা

কর্ণ বহুদিন ধরে এই জলাশয়ে থাকে, সে মানুষ অনেক দেখেছে, কিন্তু ইলার মতো মায়াময় দৃষ্টি আর কোমলতা সে এর আগে কখনো দেখেনি। কুমির হওয়া সত্ত্বেও কর্ণের হৃদয় যেন স্পন্দিত হতে লাগল। সে ধীরে ধীরে পানির কাছাকাছি আসতে লাগল। ইলা প্রথমে ভয় পেলেও কর্ণের চোখে অদ্ভুত এক কোমলতা দেখে ভয় কাটিয়ে উঠল।

তুমি কি আমায় কিছু বলতে চাও? ইলা কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞাসা করল।

কর্ণ মাথা নাড়িয়ে জানাল, "না।" কর্ণ আরও বললো আমি শুধু শোনতে চাই।
ইলা অবাক হলো, বললো "কি শোনতে চাও?"
কর্ণ আর কিছু বললো না।

এরপর থেকে তাদের প্রতিদিন দেখা হতো। কর্ণ পানির ধারে অপেক্ষা করত, আর ইলা এসে তাকে তার গল্প শোনাত। ইলার বেড়ে উঠা ও একা থাকার অভিজ্ঞতা বেশি সময় ধরে বলতো।

এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব

ইলার গল্প শুনে কর্ণ মুগ্ধ হয়ে যেত। একসময় তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে লাগলো। তাদের দেখা না হলে অস্বস্তি লাগতো । ইলা কর্ণকে নিজের একাকিত্বের কথা বলত, আর কর্ণ শোনাত তার জীবনের কথা—কিভাবে সে সবার থেকে আলাদা।

কর্ণ একদিন বলল, "ইলা, তুমি কখনো ভেবেছো, আমরা যদি মানুষ আর কুমির না হয়ে দুজনে একই জাতির হতাম?"

ইলা হেসে বলল, "তাহলে হয়তো আমাদের এই বন্ধুত্বটা রাজ্যের জন্য স্বাভাবিক মনে হতো ।"

রাজ্যের সন্দেহ

তাদের এই নিয়মিত দেখা রাজ্যের লোকের নজরে পড়ল। সৈন্যরা এসে রাজাকে জানাল, "মহারাজ, রাজকন্যা প্রতিদিন জলাশয়ের এক কুমিরের সাথে সময় কাটায়। এটি রাজপরিবারের মর্যাদার পরিপন্থী।"

রাজা বিষয়টি প্রথমে অবিশ্বাস করলেও পরে রাজকন্যাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন। ইলা প্রথমে কিছু বলতে চাইল না। কিন্তু রাজা যখন কঠোর হয়ে উঠলেন, তখন ইলা তার মনের কথা খুলে বলল।

"পিতা, কর্ণ আমাকে কখনো আঘাত করেনি। সে আমার বন্ধু। আমি একা ছিলাম, আর সে আমার সঙ্গী হয়েছে।"

রাজা রেগে উঠলেন। "এক কুমির তোমার সঙ্গী? এটি অসম্ভব! তুমি জানো না, এটি তোমার ক্ষতি করবে!"

রাজা সৈন্যদের আদেশ দিলেন, "কুমিরটিকে হত্যা করো।"

কুমিরের ত্যাগ

ইলা এই খবর শুনে কাঁদতে কাঁদতে কর্ণের কাছে ছুটে গেল। "তোমাকে এখান থেকে পালাতে হবে! রাজা তোমাকে মেরে ফেলবে।" কর্ণ এমন কিছু হবে আগেই অনুমান করতে পেরেছিলো কিন্তু তার কিছু করার নেই।

কর্ণ শান্ত স্বরে বলল, "ইলা, আমি পালাতে পারি না। তুমি জানো, এই জলাশয়ই আমার ঘর।এই জলাশয়ের বাইরে আমি কিছু চিনি না, আর জলাশয় থেকে বের হয়ে যাওয়াও আমার জন্য বিপদজনক। কিন্তু আমি চাই না তোমার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ুক।"

ইলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।"

কর্ণ এক গভীর দৃষ্টি দিয়ে ইলার দিকে তাকাল। তুমি বাঁচবে, ইলা। কারণ তোমার জীবন অনেক বড়। তুমি রাজ্যের ভবিষ্যৎ।তুমি এই রাজ্যের একমাত্র উত্তরসূরি। আর আমি তো শুধু এক জলাশয়ের বাসিন্দা।

ভালোবাসার পরীক্ষা

পরের দিন সৈন্যরা কুমিরটিকে ধরার জন্য জলাশয়ে গেল। কর্ণ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ার আগে কর্ণ ইলার দিকে শেষবারের মতো তাকাল। তার চোখে ছিল ভালোবাসার অশ্রু।

কর্ণকে ধরে নিয়ে আসার পর ইলা তার পিতার সামনে এসে বলল, পিতা, আপনি কর্ণকে মেরে ফেললে আমার জীবনও শেষ হয়ে যাবে।

রাজা তখন প্রথমবারের মতো তার মেয়ের চোখে ভালোবাসার গভীরতা দেখলেন। তিনি বুঝলেন, এই ভালোবাসা কেবল একজন মানুষ আর এক কুমিরের নয়, এটি দুই আত্মার মিলন।

রাজা বললেন, তাহলে কর্ণকে মুক্ত করে দাও। আর শর্ত দিলেন কর্ণকে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে।

1000219786.jpgPixabay

নতুন শুরু

কর্ণ মুক্তি পেল। কিন্তু সে আর রাজ্যের জলাশয়ে ফিরল না। সে দূরের এক অজানা জায়গায় চলে গেল, ইলার সুখের জন্য।

ইলা তাকে হারিয়ে দুঃখ পেলেও কর্ণের স্মৃতি তার হৃদয়ে রয়ে গেল। সে তার সমস্ত জীবন কর্ণের গল্প লিখে কাটিয়ে দিল। রাজ্যের মানুষও এই কাহিনি জানল, আর কর্ণ ও ইলার ভালোবাসার গল্প কালক্রমে সবারই কাছেই প্রিয় হয়ে উঠলো।


আমার পরিচয়ঃ


আমার পুরোনাম জোনায়েদ আহমদ । স্টিমিট আইডি @junaidahmed
বাসা নেত্রকোনা সদর নেত্রকোনা । আমি অর্থনীতি বিভাগে অনার্স কমপ্লিট করেছি, বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছি। আমার প্রকৃতির ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।বিভিন্ন বিষয়ে গল্প লিখতেও ভালো লাগে। হলের বারান্দায় আমার কিছু গাছ আছে এগুলোর সাথে মাঝে মাঝে সময় কাটাই। আমি স্টিমিটে জয়েন করি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আমার এই স্বল্প সময়ে আমার বাংলা ব্লগে ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরে খুবই আনন্দিত অনুভব করছি। আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে।


১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।


|| আমার বাংলা ব্লগ ||
break .png
>>>>>|| ডিসকর্ড চ্যানেলে ||<<<<<
break .png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 17 days ago (edited)
 17 days ago 

দারুণ লিখেছেন রাজকুমারী ইলাও কুমির কর্ণের গল্পটি।রাজকুমারীর সাথে কর্ণের ভালোবাসার জন্য কর্ণকে শেষ পর্যন্ত জলাশয় থেকে চলে যেতে হবে জেনে খারাপ লাগলো। ধন্যবাদ সুন্দর গল্পটি ভাগ করে নেয়ার জন্য

 17 days ago 

কাল্পনিক গল্পটি আপনার মন্তব্যে গ্রহণযোগ্য পেয়েছে শুনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন।

Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.25
JST 0.038
BTC 98646.90
ETH 3511.62
USDT 1.00
SBD 2.98