শখের ফটোগ্রাফি
প্রথম ছবি
আপনাদের সাথে প্রথম যে ছবিটি শেয়ার করতে যাচ্ছি এটি আমার ফোনে ধারণ করা হয়তো সবচেয়ে ভালো লাগার মূহুর্তের ছবি। এই ছবিটির পেছনের কাহিনি না বললে হয়তো বুঝবেন না। তারিখটি ছিলো ৮ আগস্ট ২০২২ সাল, রাত ১০ টায় আমরা কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিলাম রাতে সাইকেল রাইড দিবো, সারারাত ঘুরবো।আমরা সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে প্রথমে গেলাম রাজশাহী সাহেব বাজার, সেখানে গিয়ে হালকা নাস্তা করলাম। সাহেববাজার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার। এর পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম রাজশাহী কোর্ট যাবো, সেখানেও গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরবো। রাত তিনটার দিকে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আই-বাঁধ যাবো। আই-বাঁধের পরেই ভারত, বর্ডারের বাতিগুলো তখনও দেখা যাচ্ছিলো। বলে রাখি আই-বাঁধ পদ্মা নদীর উপরে নদীভাঙন থেকে তীরের ঘরবাড়ি রক্ষা করার জন্য দেওয়া হয়েছে।আমরা আই-বাঁধে গিয়ে যতটা না ক্লান্ত হয়েছি তার চেয়ে বেশি উৎফুল্ল হয়ে গিয়েছি। কারণ তখন গিয়ে দেখি চাঁদ যেনো তার সবটা সৌন্দর্য পদ্মার জলে ঢেলে দিয়েছে। রাতে নদীতে চাঁদ এতো সুন্দর দেখা যায় আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
আমরা সেখানে প্রায় সাড়ে চারটা পর্যন্ত ছিলাম। নদীতে মনে হয় তখন জোয়ার আসছিলো, পানির শব্দটা এখনো কানে ভেসে আসে। শুনেছি জোয়ার ভাটার সাথে চাঁদের সম্পর্ক আছে, আর চাঁদটা নদীর অনেক কাছে ছিলো সেজন্য হয়তো পানির গতি বেশি ছিলো। আমরা বাঁধের নিচে পানির কাছেই বসছিলাম। যে যার মতো গানও গেলাম, আমার তখন আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায় গানটা মনে পড়ছিলো, গেয়েছিও সেদিন। এই সময়টা আর পাবো না, এখন শুধু স্মৃতি আছে ।
এই ঘুরাঘুরি হয়তো আর হবে না, তবে স্মৃতি গুলো এখনো স্পষ্ট মনে আছে।
দ্বিতীয় ছবি
দ্বিতীয় ছবিটি কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়ির পুকুরপাড়ে তুলা। ২৯ আগস্ট ২০২১ সাল,করোনার বিশাল ছুটি। পুরো দেশে লকডাউন, সীমিত ট্রেন চলে। বাড়িতে থেকে যখন বাইরে বের হওয়া নিষেধ, তখনই একদিন বাড়ি থেকে ঘুরতে বের হই কাউকে কিছু না বলে। নেত্রকোনা রেলস্টেশন আমাদের বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার, আমি স্টেশনে এসে আরেকজন বন্ধুকে বাসা থেকে নিয়ে আসি। এর পর ট্রেনে উঠে একেবারে বারহাট্টা স্টেশন চলে গেলাম। বারহাট্টা থেকে কবির বাড়ি হেটেই যাওয়া যায়। কবির বাড়িটি অবস্থিত বারহাট্টার কাশবনে। সেখানে একটি ছোট লাইব্রেরি আছে, তবে মনে হয় সবসময় বন্ধ থাকে কারণ এখানে কেউ থাকে না। পুকুরপাড়ের পরিবেশ ভালো লেগেছে, পাশে কিছু ফুলের গাছ, আর ঘাট ইট দিয়ে বাঁধানো। উপরে একটি বট গাছ চারপাশে ইটের বেড়ি দেওয়া,আর অন্যপাশে একটি উপশানালয় রয়েছে।
তৃতীয় ছবি
জানুয়ারি ০৪,২০২০; শীতের ছুটিতে বাড়িতে ছিলাম, একদিন বিকেলে বের হলাম ঘুরাঘুরি করতে। আমাদের বাড়ির পাশে বিল, ওইদিন বিলের দিকেই যাচ্ছিলাম, গিয়ে দেখি পাশের বাড়ির কিছু পোলাপান আগুন ধরিয়েছে ধানের খড়ের মধ্যে, আমিও বসছিলাম একটু আগুন পোহাতে, তখন সূর্য ডুবে ডুবে এমন সময় ছবির ছেলেটি,আমার চাচাতো ভাই নাম হিরন, বললো ছবি তুলে দিতে, আমি অবাক হলাম ছবিগুলো অনেক সুন্দর হচ্ছিলো। এরপর নাদিয়া, আমাফ ভাতিজি, নাম নাদিয়া সেও ছবি তুললো, ছবি গুলো তাদের দেওয়া হয়নি, ছোট ছিলো তখন ফোন ছিলো না তাদের তাই দেওয়া হয়নি। তবে এখনো বাড়িতে যখন যাই জিজ্ঞাস করে ছবিগুলো আছে কিনা। ছবি গুলো আছে শুনে অনেক খুশি হয়, আমারও দিতে মনে থাকে না।
চতুর্থ ছবি
এই ছবিটি তুলেছিলাম ১১ নভেম্বর ২০২০ সালে। গাছের আড়াল থেকে মনে হচ্ছে সূর্য নয় যেনো বিশাল বড় ডিমের কুসুম, আলো ছড়াতে ছড়াতে উঠছে। কুয়াশা কেটে যাচ্ছে, সূর্যের উজ্জীবিত সৌন্দর্য ধানের ক্ষেতেও প্রতিফলন হচ্ছে, এরকম মূহুর্ত গুলো কেবল শীতের সকালেই দেখতে পাওয়া সম্ভব।
পঞ্চম ছবি
এই ছবিটি ১লা ডিসেম্বর, ২০২০ সালের। তখন প্রায় নিয়মিত সকালে দৌড়াতে বের হতাম, আর সূর্যের বিভিন্ন মূহুর্তের ছবি তুলতাম। কুয়াশার আড়ালে সূর্যের হাসি মনে হয় কুসুম ফুটে আছে আকশে,কিংবা একটুকরো সোনার মুদ্রা যা থেকে দীপ্তি ছড়াচ্ছে। এই ছবিটি আমায় মনে করিয়ে দেয় একসময় আমি সকালে উঠতে পারতাম, এখন ঘুমাই দেরিতে, উঠিও দেরিতে, ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।
ষষ্ঠ ছবি
এই ছবিটি আমাদের বাড়ির প্রবেশপথের উপরের আকাশের ছবি। সুপারি গাছের সাড়ি এরপরেই আমাদের বাড়ি। এই গাছ গুলোর উপর দিয়ে শরৎকালের মেঘ যখন উড়ে যায় তখন আমার অসম্ভব ভালো লাগে। যখন ছবিটি নিয়েছি তখন শরৎকাল। শরৎকাল আমার এজন্যই প্রিয় ঋতু।
সপ্তম ছবি
এই ছবিটি একটি বেলিফুলের ছবি। ১১ আগস্ট ২০২০, আমি আমার মামাতো ভাই আর খালাতো ভাই তিনজন গিয়েছিলাম মামার নানা বাড়িতে , মানে আমার নানুর বাবার বাড়ি। উনাদের সাথে এখনো আমাদের যোগাযোগ আছে। বেলিফুলের গাছটি ছিলো আন্টির, আমি যে ছবিটি নিয়েছি এটি উনাদের বাড়ির সামনের দিক, আরও অনেক গাছ আছে আন্টির। আমি আসার সময় এই ফুলটি নিয়্র এসেছিলাম আর সাথে একটি গাছের ডাল আমাদের এখানে বাড়িতে লাগানোর জন্য।
আমার বাংলা ব্লগের প্রতিটি সদস্যের জন্য শুভকামনা জানিয়ে আমার আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি। আশা করি শীগ্রই আপনাদের মাঝে আবারও আরও নতুন নতুন ফটোগ্রাফি নিয়ে হাজির হতে পারবো। আজকে বেশির ভাগ ছবি দিয়েছি আমার এলাকার কিংবা বাড়ির, কারণ আজকে বাড়ি যাচ্ছি, তাই ভাবলাম বাড়ির কিছু স্মৃতির মূহুর্ত শেয়ার করি। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা।
আমার পুরোনাম জোনায়েদ আহমদ । স্টিমিট আইডি @junaidahmed।
বাসা নেত্রকোনা সদর নেত্রকোনা । আমি অর্থনীতি বিভাগে অনার্স কমপ্লিট করেছি, বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছি। আমার প্রকৃতির ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।বিভিন্ন বিষয়ে গল্প লিখতেও ভালো লাগে। হলের বারান্দায় আমার কিছু গাছ আছে এগুলোর সাথে মাঝে মাঝে সময় কাটাই। আমি স্টিমিটে জয়েন করি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আমার এই স্বল্প সময়ে আমার বাংলা ব্লগে ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরে খুবই আনন্দিত অনুভব করছি। আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে।
শখের ফটোগ্রাফি অ্যালবামে আজকে আপনি দুর্দান্ত সব ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। আপনার শেয়ার করা ফটোগ্রাফি গুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বিশেষ করে প্রথম ফটোগ্রাফিটি অর্থাৎ চাঁদনী রাতের ফটোগ্রাফিটি আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য! চাঁদনী রাতের ফটোগ্রাফিটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই খুব আনন্দ পেলাম। এমন মুগ্ধতা ধরে রাখার জন্য ভবিষ্যতে আরও সুন্দর ফটোগ্রাফি শেয়ার করার চেষ্টা করবো। আপনাকে ধন্যবাদ আমায় মন্তব্য করে ফটোগ্রাফিতে উৎসাহ প্রদান করার জন্য।
Twitter promotion https://x.com/Junaid_2208/status/1862744963278413993
ভাইয়া আপনার সখের ফটোগ্রাফিগুলো কিন্তু বেশ সহজে আমার নজর কেড়েছে। দারুন সুন্দর ফটোগ্রাফি করেন আপনি। আপনার এমন সুন্দর ফটোগ্রাফি দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। ধন্যবাদ সুন্দর করে ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করার জন্য।
আপনার সুন্দর মন্তব্য আমাকে আরও ছবি তোলায় আগ্রহী করে তুলবে , চেষ্টা করি ভালো ছবি তুলার। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আপনার ফটোগ্রাফি পোস্ট এর মাধ্যমে ভিন্ন রকম কিছু ফটোগ্রাফি দেখলাম। ছোট দের হাতের মাঝে দিয়ে সূর্য দেখতে অসাধারন লাগতেছে। সুপারি গাছের ছবি নিচ থেকে তোলার কারনে দেখতে ব্যাতিক্রম লাগতেছে। ভালো ছিলো ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার মন্তব্য পড়ে সত্যিই ভালো লাগলো! আপনার প্রশংসা আমার কাজকে আরও নিখুঁত করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
আপনি আজকে বেশ সুন্দর সুন্দর কিছু ভিন্ন ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন। আপনার তোলা প্রতিটা ফটোগ্রাফি দারুন হয়েছে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের ফটোগ্রাফি টি আমার অনেক ভালো লেগেছে। ফটোগ্রাফির সাথে বেশ সুন্দর বর্ণনা শেয়ার করছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
আপনার এরকম আন্তরিক মন্তব্যে সত্যিই খুশি হলাম। সূর্যাস্তের ছবিটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আপনার মন্তব্য আমায় ভবিষ্যতে আরও ভালো ছবি তুলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
খুব সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি দিয়ে আজকের সাজিয়েছেন। প্রতিটি ফটোগ্রাফি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। বিলে ঘুরতে গিয়ে সেখানে ঘুরতে যাওয়া ছোট বাচ্চাদের অসাধারণ কিছু ছবি ক্যামেরা বন্দি করেছেন। বেশ ভালো লাগলো।শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে যখন সূর্য উঁকি দেয় দৃশ্যটি দেখতে অপূর্ব লাগে। ধন্যবাদ সুন্দর ফটো রাখি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনার এমন সুন্দর মন্তব্যে আমি সত্যিই মুগ্ধ! প্রকৃতির ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় বন্দি করার চেষ্টা করি । বিলে ঘুরতে যাওয়া ছোট বাচ্চাদের ছবি আর শীতের সকালে কুয়াশার ভেতর দিয়ে সূর্যের উঁকি দেওয়ার দৃশ্য—এই মুহূর্তগুলো আমারও বেশ সুন্দর লাগে। । এত সুন্দরভাবে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!
শখ না থাকলে কোন কাজই ভালোভাবে করা সম্ভব হয় না। শখ আছে বলেই আপনি এত সুন্দর ফটোগ্রাফি ধারণ করেছেন আর সেগুলো আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। সূর্য নিয়ে খেলা করা ছেলেমেয়েদের ফটোগ্রাফি এবং সুপারি গাছের সারির ফটোগ্রাফি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
শখই আমাদের প্রতিটা কাজকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আমার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমি অনেক খুশি হয়েছি । সূর্য নিয়ে খেলা করা ছেলেমেয়েদের এবং সুপারি গাছের সারির ফটোগ্রাফি আপনার ভালো লেগেছে, এটা আমার ছবি তুলার প্রতি ভালোবাসাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন উৎসাহ দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
ভাই আজকে শেয়ার করা আপনার প্রত্যেকটি ছবি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। রাতের চাঁদের ছবি তারপর সূর্যের ছবি ফুলের ছবি সবকিছুই অসাধারণ ছিল। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট বিস্তারিত ভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ ভাইয়া। রাতের চাঁদের ছবিটি আমারও অনেক ভালো লেগেছিলো, আসলে বাস্তবে এত সুন্দর লাগছিলো বলে বুঝানো যাবে না।
প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি বেশ দক্ষতার সাথে ক্যাপচার করেছেন। সুপারি গাছের ফটোগ্রাফি টা অনেক বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। সূর্যাস্তের ফটোগ্রাফি এবং বেলি ফুলের ফটোগ্রাফি দেখে জাস্ট মুগ্ধ হয়ে গেলাম। প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি অসাধারণ ছিল। চমৎকার ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য! আপনার প্রশংসা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করল। সুপারি গাছের ফটোগ্রাফি এবং সূর্যাস্ত ও বেলি ফুলের ছবি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই খুশি হলাম। প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ !